২০শে অক্টোবর ‘আমরা বাঙালী’র অসম মেঘালয় সীমান্তে বিক্ষোভ অভিযান

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

দীর্ঘদিন ধরে মেঘালয়ে বাঙালীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চলছে৷ শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি বাঙালীদের ব্যবসা বাণিজ্য ও জীবিকা নির্বাহের সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ মেঘালয়ের বিজেপি জোট সরকার ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এখনও পর্যন্ত নির্যাতন বন্ধ করতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি৷

মেঘালয়ে বাঙালী নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৭ই অক্টোবর শিলচর শহরে শহীদ ক্ষুদিরামের মূর্ত্তির পাদদেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন  করে ‘আমরা  বাঙালী’র অসম রাজ্য কমিটি৷

 দলের রাজ্যসচিব শ্রী সাধন পুরকায়স্থ মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীকে এক পত্রে অবিলম্বে বাঙালী নির্যাতন বন্ধ করতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন৷

কিন্তু, অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ বরং খাসি ছাত্র ইয়ূনিয়নের  প্ররোচনা ও নৃশংসতায় বাঙালীদের অবস্থা আরও দুর্বিসহ হয়েছে৷

পরবর্তী পর্যায়ে অসম মেঘালয়ে আন্তঃরাজ্য সীমান্ত মালিডহরে আগামী ২০শে অক্টোবর বিক্ষোভ অভিযানে কর্মসূচি নিয়েছে আমরা বাঙালী রাজ্য কমিটি৷ সেই উপলক্ষ্যে গত ১১ই অক্টোবর রাজ্যসচিব সাধন পুরকায়স্ত, কাছাড় জেলা কমিটির সচিব দেবব্রত দেব রায়  ছাত্র-যুবসমাজের আহ্বায়ক পার্থপ্রতীম দেব প্রমুখ অসম-মেঘালয় সীমান্তবর্তী অঞ্চল পরিদর্শন করেন৷ সাধন পুরকায়স্থ জানান বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিতে সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যষ্টিদের সঙ্গে আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা করেন৷ বিশিষ্টজনের মধ্যে  ছিলেন সুব্রত চক্রবর্তী, তপন দাশ, কনকনাথ, মুকুন্দ মালাকার শিক্ষাবিদ নিশিকান্ত দেব প্রমুখ৷

বিক্ষোভ সফল করতে ‘আমরা বাঙালী’ অসম রাজ্যসচিব সাধন পুরকায়স্তের আবেদন--- ভারতের মেঘালয়ে রাজ্যে শিলং-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিটিশ রাজত্বের আগে থেকেই বাঙালীরা বসবাস করছেন৷ ১৮৭৪ সালে মেঘালয়ের পার্শ্ববর্তী পূর্ব-বাংলার শ্রীহট্ট জেলাকে অসমের সঙ্গে যুক্ত করে অসম প্রদেশ ঘটন করা হয়৷ শিলং অবিভক্ত অসমের রাজধানী থাকার সুবাদে শিক্ষিত বাঙালীরা চাকুরী সূত্রে শিলং শহরে বসতি স্থাপন করে৷ শিলং শহর নির্র্মণে বাঙালীদের অবদান ঐতিহাসিক সত্য৷ কিন্তু আজ মেঘালয় থেকে আইনের প্যাঁচে বাঙালীদের বিতাড়ন করা হচ্ছে৷ শিক্ষা, চাকুরী,ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে৷ আজ পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার ইচ্ছামতী, ভোলাগঞ্জ-সহ জয়ন্তিয়া পার্বত্য জেলার ক্লেরিয়েট, লেডরিম্বাই, সোনাপুর, উমকিয়াং ইত্যাদি অঞ্চলে বাঙালী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে৷ তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ৷ কেন্দ্রীয় সরকার আনলক ঘোষণা করার পরও বাঙালীদের দোকান বন্ধ রাখতে  হচ্ছে৷ খাসিয়াদের জন্য এই প্রক্রিয়া প্রযোজ্য নয়৷ এই পরিস্থিতিতে শুধু বাঙালী নয়৷ অসংখ্য অ-উপজাতিরা বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, শ্রমিকরা মেঘালয়ে কোনও কাজে যোগ দিতে পারছে না৷ তাতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে৷ শিশুরা ক্ষুধায় জ্বালায় কাঁতরাচ্ছে৷ খাসি ছাত্র ইয়ূনিয়ন ফরমান জারি  করেছে বাঙালীদের কাছে চুনা পাথর-সহ অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করা যাবে না৷ তাই আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের চার শতাধিক লরি বন্ধ করে রাখা হয়েছে৷ ব্যাঙ্কের লোন নিয়ে কেনা লরিগুলির কিস্তির টাকা জমা দিতে পারছেন না৷ ব্যবসার  লাইসেন্স নবীকরন করা হচ্ছে না৷ উদ্দেশ্য মেঘালয় থেকে  বাঙালীদের চিরতরে উৎখাত করা৷

স্বাধীনতার পর মেঘালয়ে যে বাঙালীর সংখ্যা ছিল, তা এখন আর নেই৷ জনসংখ্যার তুলনায় নগণ্য৷ এই পরিস্থিতিতে আমরা নীরব থাকতে  পারি না৷  তাই আমরা মেঘালয় সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার সবাইকে স্মারকপত্র দিয়ে এই পরিস্থিতির প্রতিকার চেয়েছি৷ কিন্তু সুরাহা হয়নি৷ ইছামতীতে খাসি ছাত্র ইয়ূনিয়নের প্ররোচনায় আত্মরক্ষার্থে গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটেছে৷ তা নিয়ে বাঙালীদের উপর পুলিশি  জোর জুলুম চলছে৷ ২৮ জন মেঘালয়ের জেলে বন্দি৷ ৭৮ জনের উপর হামলা হয়েছে৷ বাকিরা পলাতক৷ ঘরে ঘরে তল্লাশি চলছে৷ মহিলা ও শিশুরা না খেয়ে মরছে৷ ভীত-সন্ত্রস্ত্র হয়ে দিন কাটাচ্ছেন বাঙালীরা৷

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে বাঙালীরা সবচেয়ে বেশি রক্ত দিল সেই বাঙালী ভারতবর্ষের রাজ্যে রাজ্যে মার খাচ্ছে৷ আমরা  নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বীর বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশের বংশধর৷ আমাদের অতীত ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস৷ অতীতের এই বিপ্লবী ঐতিহ্যকে জাগ্রত করে আমাদের প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে৷

আগামী ২০শে অক্টোবর  দক্ষিণ অসমের মেঘালয়  সীমান্তে বিক্ষোভ অভিযানে  দলে দলে যোগ দিয়ে বাঙালী নির্যাতনের প্রতিবাদে গর্জে উঠুন ও আমাদের এই কর্মসূচীকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে সবার কাছে সহযোগিতা চাইছি৷

আমাদের দাবী ঃ ১) গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি,২০২০ ইছামতির অবাঞ্চিত ঘটনা কাদের প্ররোচনায় সংঘটিত হয়েছে, এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোকে (সিবিআই) দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করা৷

২)ইছামতি,ভোলাগঞ্জ এলাকায় সরকারি তরফে সভা ডেকে শান্তি-সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা৷

৩) ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাস করা বাঙালীদের অধিকার সুনিশ্চিত করা৷