‘‘২১শে ফেব্রুয়ারী’’- তুমি এসো বারবার

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্হা

একুশ ফেব্রুয়ারী ক্যালেণ্ডারের পাতায় একটি খোপ কাটা দিনের পরিচিতি নয়, ২১শে ফেব্রুয়ারী হলো বাংলা ভাষার সম্মান রক্ষার্থে সংগ্রামের এক অগ্ণিক্ষরা  ইতিহাস, একটা আদর্শ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আত্মবলিদানের মূর্ত্ত প্রতীক৷ এই দিনটিকে স্মরণ করলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাজার হাজার মুষ্টিবদ্ধ হাত, দৃঢ়প্রত্যয়ী মুখ আর মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার দুরন্ত সংগ্রামে সর্বস্ব পণ করা বাঙালীর রণহুঙ্কার৷ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার নামে অনৈতিক, অবৈজ্ঞানিক ও অমানবিকতার নিদর্শন রূপে কেটে দেওয়া অখণ্ড বাঙলার পূর্বাংশ ও যাকে অন্যায়ভাবে পাকিস্তান রাষ্ট্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল---তার অধিবাসী বাঙালীদের মাতৃভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকবর্গ উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দিয়েছিল৷ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঊর্দু ভাষাতেই পূর্ব ও পশ্চিম অর্থাৎ সমগ্র পাকিস্তানে সমস্ত কাজকর্ম সম্পাদিত হবে---এই মর্মে নির্দেশনামা জারি হয়েছিল৷ পূর্ব পাকিস্তানের আত্মসচেতন বাঙালীরা তাদের মাতৃভাষা বাংলার অবদমনের এই প্রচেষ্টা মেনে নিতে পারেনি৷ তারা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-যুব-শিক্ষিত সম্প্রদায় দুর্বার আন্দোলন সংঘটিত করে৷ এই আন্দোলনের  একটি আর্থ-সামাজিক কারণও ছিল৷ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু হলে বাংলা ভাষাভাষী পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের লেখা পড়া,উচ্চশিক্ষা, চাকুরী ও জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা ও অসুবিধার সম্মুখীন  হওয়ার আশঙ্কা ছিল৷ এছাড়া বাঙালীরা পাকিস্তানের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক  হিসেবেই চিহ্ণিত হয়েছিলেন যেহেতু তাঁদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা ভাষা৷ প্রশাসনের তরফে শুরু হয় শাসানি, দমন-পীড়ন৷ ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রতিবাদ আন্দোলনের উদ্দেশ্যে ডাকা (ঢাকা) বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লক্ষ লক্ষ ছাত্র, যুব ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হন৷ ঊর্দু সাম্রাজ্যবাদীদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সশস্ত্র পুলিশবাহিনী প্রথমে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছঁুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে৷ পরে তাঁরা আবার ঢাকা মেডিকেল হোষ্টেল  প্রাঙ্গনে সমবেত হন৷ এইসময় বিকেল ৩টে নাগাদ  কোন রকম হুঁশিয়ারি ছাড়াই জমায়েতের  ওপরে সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়৷ বহু আন্দোলনরত মানুষ হতাহত হন৷ সেই ঘটনায় শহীদ হন পাঁচ বাঙালী---আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমেদ, সফিউর রহমান, আব্দুস সালাম ও আবদুল জববর৷ শুধুমাত্র মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে সর্বব্যাপী আন্দোলনে এতগুলি আত্ম বলিদান পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা৷ প্রথমে এই আন্দোলন ছাত্রযুবদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এই ২১শে ফেব্রুয়ারীর গুলি চালনার পর একটি গণআন্দোলনের চেহারা নেয়৷ সংঘটিত হয় সর্বাত্মক হরতাল ও প্রকাশ্য রাজপথে বিশাল বিশাল মিছিল৷ ২৩শে ফেব্রুয়ারী রাতে মেডিকেলের ছাত্ররা মিলে মাত্র একরাত্রের পরিশ্রমে স্থাপন করে শহীদ-স্মারক৷

এই ভাষা আন্দোলনের মধ্যেই নিহিত ছিল বৃহত্তর সম্ভাবনার বীজ৷ ভাষা শহীদদের রক্তে ভেজা বাঙলার উর্বর মাটিতে সেই বীজের অঙ্কুরোদ্গম শুরুহ’ল কালের ধারাপ্রবাহে৷ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তারা ক্রমশঃ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে নদীমাতৃক সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা বাঙলার উৎপাদিত শস্য ও সম্পদ লুটে নিয়ে উর্দু সাম্রাজ্যবাদীর দল নিজেদের কোষাগার সমৃদ্ধ করছে৷ আর বাঙলার তথা বাঙালীদের জন্যে পড়ে থাকছে ছিবড়েটুকু৷ পশ্চিম পাকিস্তানীদের শাসন ও শোষণের চক্রান্তে বাঙালীরা বঞ্চিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত হচ্ছে৷ বিদ্যা, বুদ্ধি ও সংগ্রামী চেতনায় দীপ্ত বাঙালী বুঝেছিল, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে গেলে বাঙালীর হাতেই আত্মনিয়ন্ত্রণের ভার পেতে হবে আর তা হতে পারে একমাত্র সর্বাত্মক স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পথেই৷ সেই কারণে একদা ভাষা আন্দোলনের একনিষ্ঠ সৈনিক শেখ মুজিবর রহমানের নেত্বত্বে বাঙালী আবার মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ল৷ প্রতিদানে তাদের ওপর নেমে এল উর্দিধারী উর্দু সেনাদের অকথ্য অত্যাচার ও উৎপীড়ন৷ বাঙালী দেশপ্রেমিকরা মৃত্যুর পরোয়া না করে মরণপণ যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন৷ ওপার বাঙলার ভাইবোনেদের সাহায্যে এপার বাঙলা অর্থাৎ ভারতের বাঙালীরাও চুপ করে বসে রইলেন না৷ তারাও বিভিন্নভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন৷ পশ্চিমবাঙলার বাঙালীদের আগ্রহের আতিশয্যে ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারতীয় নেতৃত্বও এগিয়ে এলেন৷ ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনার যৌথ আক্রমণে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা পর্যুদস্ত হয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হ’ল৷ আত্মপ্রকাশ করল নতুন রাষ্ট্র, ‘বাঙলাদেশ’, যার একশত শতাংশ অধিবাসী বাঙালী ও বাংলা ভাষী--- যে দেশের শিক্ষা- দীক্ষা, সরকারী ও বেসরকারী সমস্ত রকম কাজকর্মের মাধ্যম বাংলা ভাষা৷ মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী আন্দোলন, ভাষা শহীদদের আত্মবলিদান ও পরিশেষে একটি ভাষাভিত্তিক জাতির নিজস্ব বাসস্থান হিসেবে নতুন রাষ্ট্রের সৃৃষ্টি পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম৷

মুক্তিযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলে বাঙালীরা ছিনিয়ে আনল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অর্থাৎ সার্বিক স্বাধীনতা--- ভারতবর্ষের এই সর্বাত্মক স্বাধীনতা বা পূর্ণ স্বরাজই চেয়েছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, যিনি ছিলেন একজন বাঙালী জননায়ক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিচক্ষণ নেতা৷ কিন্তু তৎকালীন অপরিণামদর্শী, হীন স্বার্থ বুদ্ধি পরিচালিত অবাঙালী নেতৃত্ব দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দ্বিজাতিতত্বের ধুয়ো তুলে দেশভাগের বিনিময়ে শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন৷ আর তাদেরই অসহযোগিতা মূলক চক্রান্তে সুভাষচন্দ্রকে দেশত্যাগী হয়ে ভিন্ন পথে দেশের মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে হয়েছিল৷ তৎকালীন ভারতীয় নেতৃত্ব সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার প্রকৃত মূল্যায়ন করে যদি পূর্ণ স্বরাজের দাবীতে সর্বাত্মক আন্দোলনে এগিয়ে আসতেন তাহলে হয়তো দেশভাগের মত কলঙ্কজনক অধ্যায়ের অবতারণা হতো না আর লক্ষ লক্ষ দেশবাসীর রক্তে হোলি খেলার কারণ থাকত না৷ যাইহোক, ‘বাঙলাদেশ’ রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর সে দেশের বুদ্ধিজীবীরা ও প্রশাসকবর্গের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ভাষা আন্দোলনের শহীদগণের আত্মোৎসর্গের দিন ২১শে ফেব্রুয়ারীকে রাষ্ট্রসংঘ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ও ২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী সারা বিশ্বে প্রথম ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হয়৷ বাঙালী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের গর্বের বিষয় এই যে, আমাদের মাতৃভাষা বাঙলার মর্যাদা রক্ষায় যে আন্দোলন সংঘটিত হয় তারই ফলশ্রুতিতে আজ সমগ্র পৃথিবী ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করছে ও বিশ্বের সব মানুষের মাতৃভাষা বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছে৷ অপরপক্ষে ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলিতে বসবাসকারী বাঙালীরা অন্যান্য ভাষার আগ্রাসনে মাতৃভাষা বাঙলার ব্যবহার প্রায় ভুলতে বসেছে৷ বিদ্যালয়গুলিতে বাংলা ভাষা শেখানো বা পড়ানোর পরিসর ক্রমশঃ সংকুচিত হয়ে চলেছে৷ তাদের বাধ্য হয়ে অন্যান্য ভাষা মূলত হিন্দী, ওড়িয়া, অসমিয়া ইত্যাদি ভাষায় লেখাপড়া করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই৷ শুধু তাই নয়, পশ্চিম বাঙলার শহরাঞ্চলে হিন্দী ও ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়ের রমরমা৷ সেখানেও বাঙলা পড়ানো বা শেখানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে বাংলা ভাষার অবদমন চলছে৷ অভিভাবক অভিভাবিকারা এ বিষয়ে বিশেষ সচেতন না হওয়ায় ছাত্রছাত্রারাও ক্রমশঃ নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছে৷ পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসক বর্গ এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ না নেওয়ায় হিন্দী আগ্রাসন ও অসংসৃকতির প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে৷ বাঙলাদেশের প্রশাসন ছয় মাসের মধ্যে উচ্চশিক্ষা,অফিস,আদালত, সরকারী-বেসরকারী সব কাজ বাংলা ভাষার মাধ্যমে করতে পেরেছে৷ কিন্তু পশ্চিম বাঙলায় স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও সব ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চালু হয়নি৷ মাঝে মাঝে নামকে ওয়াস্তে বিজ্ঞপ্তি জারী করে প্রশাসন তার কর্তব্য সমাধা করেছে৷ ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাঙলার অংশ কেটে জুড়ে দেওয়ার ফলে সেই সব অঞ্চলের বাঙালী মাতৃভাষা তো ভুলেইছে, বর্তমানে তারা বিভিন্ন অছিলায় বিতাড়নের মুখে, নিজভূমে পরবাসী হয়ে অনিশ্চিত ভবিতব্যের সম্মুখীন৷ সম্প্রতি অসমে এন আর সি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর নামে লক্ষ লক্ষ বাঙালী বিতাড়িত কিংবা ডিটেনশন ক্যাম্প বা ‘অনাগরিক শিবির’গুলিতে স্থানান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে৷ এছাড়া পশ্চিম বাঙলার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল, এমনকি রাজধানী কলকাতাও অবাঙালী অধ্যুষিত, যেখানে বাঙালী ও বাঙলা ভাষীর সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রসমান৷

এমতাবস্থায় অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা বাঙালীর বাসযোগ্য থাকবে কি না এ বিষয়ে প্রতিটি বাঙালীর ভেবে দেখার সময় এসেছে৷ এখন থেকে সতর্ক না হলে পশ্চিমবাঙলার বাঙালীর দুর্দিন খুব বেশী দুরে নেই৷

এই মুহূর্ত্তে বাঙালীকে অতীতের ঘটনাপ্রবাহ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঙলার ঐতিহ্য, সংসৃকতি, কৃষ্টিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতে হবে৷ কারণ বাঙলাকে একমাত্র বাঙালীরাই বাঁচাতে পারে৷ রবীন্দ্রনাথ, অরবিন্দ, বিবেকানন্দ, সুভাষচন্দ্রের বাঙলা,বিনয়-বাদল-দীনেশ-সূর্য সেন-ক্ষুদিরামের বাঙলা কিছুতেই ধবংসের  দিকে এগিয়ে যেতে পারে না৷ বাঙলার শিক্ষা-দীক্ষা, বিজ্ঞান-সাহিত্য, জ্ঞান-গরিমা,  ত্যাগ -আধ্যাত্মিকতা, শৌর্য-বীর্য আর বৈপ্লবিক চেতনা বাঙালীকে সর্বদাই সকলের ঊধের্ব তুলে ধরেছে৷

অতীতের গৌরবময় অধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় বাঙালীকে আবার সর্বপ্লাবী আন্দোলন গড়ে তুলতেই হবে৷ মানুষ মাতৃদুগ্দ পান করে শক্তিশালী হয়, মায়ের মুখের ভাষা থেকে মাতৃভাষা শেখে---আর এই মাতৃভাষাতেই সে সবচেয়ে বেশী সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ৷ বলা হয়, ‘মাতৃভাষা মানুষের মাতৃদুগ্দ সম’৷ মাতৃভাষার অবদমন কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না৷ কারণ, মাতৃভাষার অবদমন হলে মানুষের প্রাণধর্মে আঘাত লাগে, ব্যক্তিসত্ত্বা সংকুচিত হয়৷ সেই ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ওপর ক্রমে ক্রমে নেমে আসে মানস অর্থনৈতিক শোষণ ও ভীতম্মন্যতা, হীনম্মন্যতা৷ প্রতিটি বাঙালীকে উপলব্ধি করতে হবে যে, বাংলা ভাষা যদি না বাঁচে তবে বাঙালী বলে পরিচয় দেওয়ার মত কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না--- বাঙালীও বাঁচবে না ও ক্রমশঃ একটা ভাসমান জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়ে যাবে৷ সুতরাং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রতি,ভাষা শহীদদের প্রতি, প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হলে মাতৃভাষা বাঙলার মর্যাদা রক্ষার চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রতিটি বাঙালীকে সামিল হয়ে বাঙলার প্রতি বঞ্চনা ও শোষণের অবসান ঘটাতেই হবে৷ ভাষা শহীদদের আত্মবলিদানের মহান আদর্শকে স্মরণ করে, তাঁদের প্রদর্শিত সংগ্রামের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাঙলার বিজয়কেতন সর্বোচ্চ শিখরে তুলে ধরতেই হবে৷ আর তখনই ‘বাঙলা আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে’৷ তাই ২১শে ফেব্রুয়ারীর মশাল বার বার বাঙালীর অন্তরে প্রেরণার দীপমালা জ্বালিয়ে পৃথিবীর আকাশ উজ্জ্বল আলোয় ভাস্বর করে তুলবে---এটাই হোক আজ সব বাঙালীর আন্তরিক প্রার্থনা৷ এই মর্মে স্মরণ করি ত্রিকালদর্শী মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের আশ্বাসবাণী--- ‘‘বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী অতীতে জীবিত ছিল, আজও জীবিত আছে,আর আমি আশা করব ভবিষ্যতে আরও দুর্দান্তভাবে জীবিত থাকবে৷’’ এই বাণীকে বাস্তবে রূপায়িত করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব একমাত্র বাঙালীদেরই৷ বাঙালীকেই আর একবার প্রমাণ করতে হবে যে তারাই পারে পৃথিবীর বুকে নোতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে, আর বিশ্বের মধুরতম ভাষা বাংলা, যে ভাষায় রচনার জন্যে এশিয়ায় সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার এসেছে, যে ভাষায় রচিত গান দুইটি রাষ্ট্রের (ভারত ও বাঙলাদেশ) জাতীয় সঙ্গীতের সম্মান পেয়েছে তার যথোচিত মর্যাদা ও গৌরব নব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে৷ তাই বিশ্বের সব বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এই মর্মে শপথ নিতে হবে ও বাংলা তথা বাঙালীর প্রতি যথাযথ সুবিচারকে ত্বরান্বিত  করতে হবে৷