আদর্শ নেতা হতে গেলে কী প্রয়োজন

লেখক
এইচ.এন.মাহাত

 অতীতে ভারতের রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীরা একটি সঠিক আদর্শের মধ্যে দিয়ে চলার চেষ্টা করতো-সেটা ভুল বা ঠিক হোক৷ আমরা ভারতের স্বাধীনতায় আত্মবলিদানের মত সংগ্রামী বিপ্লবীদেরও দেখছি৷ আবার এই বিপ্লবীদের মধ্যেও মিরজাফর বা বিশ্বাসঘাতকেরও  দেখেছি৷ এদের সংখ্যাটি খুবই নগণ্য ছিলো৷ আমরা প্রফুল্ল চাকী বা ক্ষুদিরামের মত কিশোর বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ দেখেছি তেমনি বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেরণা নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু’র মত নিষ্ঠাবান দেশভক্তি আমাদের কাছে অতিবিরল সম্পদ৷ তাই এইসব শ্রদ্ধাস্পদ প্রাতঃস্মরণীয় ব্যষ্টিদের জীবনাদর্শই অনুসরণযোগ্য৷

কিন্তু বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীদের অবস্থা দেখুন--- ক্ষুদ্রস্বার্থ অর্থাৎ কিছু টাকা অথবা ক্ষুদ্র মতবিরোধের জন্য দেশ, জাতীয়সত্বা বা জাতিকে জলাঞ্জলি দিতে এরা কুন্ঠাবোধ করে না৷ রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মীদের কাছে আজ আদর্শের প্রয়োজনীয়তা ছিটেফোঁটা নেই৷ এমনকি জনগণের প্রতি মানবিক মূল্যবোধ অথবা দলের প্রতি আনুগত্য নিষ্ঠা, দেশ ও দলের জন্য ত্যাগ তিতিক্ষা এদের চরিত্রে লেশমাত্র দেখতে পাই না৷ বর্তমান রাজনৈতিক নেতাদের ডাল (দল) পরিবর্তনের অবস্থা দেখে মনে হয় শুধুমাত্র ক্ষমতা, অর্থ ও নিজের  অন্যায় পাপকে ঢাকবার জন্যে কতটা নীচে নামতে পারে অথবা বিপথগামী হতে পারে তারই প্রতিযোগিতা৷ সিপিএমের অপশাসন থেকে বাঙলাকে মুক্ত করতে যারা সর্বস্ব ত্যাগ করে নির্যাতনের স্বীকার হোলো তারা কী পেল? সেই ডাল বদল করা নেতা বা কর্মীরা তার চিন্তা করেন কী? পাশাপাশি দেখুন কিছু সহযোদ্ধা উচ্চ অভিলাষী হওয়ার জন্য অথবা নিজেদের অপকর্মকে ঢাকতে এমন একটি দলের সঙ্গে হাত মিলালেন যে দলটার জন্মই হয়ে ছিলো বাঙলা ও বাঙালীকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করার উদ্দেশ্যে৷ তাদের সঙ্গেই তারা হাত মেলালেন৷

বর্তমান বিজেপি সরকারের গত ছয় বছরের অপশাসন সারা ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও গণতান্ত্রিকভাবে একটি পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে৷ প্রথমত বিজেপির নীতিই হলো ভারতের ঐতিহ্য বৈপ্লবিক চেতনা, সমাজ সংস্কার, ভাতৃত্ববোধ ও ধর্মীয় মতবাদের গোঁড়ামীর নামে জাতীয়তাবোধকে ভুলুন্ঠিত করা৷ এছাড়াও নোটবন্দি, জিএসটি, ভারতের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলের দরে দেশী ও বিদেশী পুঁজিবাদী বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রি করা৷ অন্যদিকে ভারতীয় পুঁজিবাদীদের কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করে বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে আবার ধরে আনবার জন্য নাটক করা, লকডাউনের মধ্যে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই একটার পর একটা ভারতের ঐতিহ্য বিরোধী আইন পাস করে প্রয়োগ করতে গিয়ে মুখথুবড়ে পড়া৷ এন.আর.সি ও নাগরিক সংশোধন আইনের মাধ্যমে বাঙালীকে ভারতভূমি থেকে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা করা৷ আমরা অসমে দেখেছি ভোটের আগের নাগরিক, ভোট পেরিয়ে গেলে বিদেশী হিসেবে ব্যবহার করা৷ এ কেমন আইন বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটা কমন স্লোগান তৈরী করে প্রচার করচ্ছে, বাঙালী মানেই বাংলাদেশী, ঘুসপেটিয়াস বহিরাগত  ইত্যাদি৷ আজ নব্য বিজেপি নেতাদের উক্তি দেখে মনে হয় ভারতে বাঙালীর অস্তিত্ব কোনোকালেই ছিলো না৷ স্বাধীনতায় বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও বাঙালী বিদ্বেষীরা বাঙালীকে আঘাত করে যাচ্ছে৷ সাধারণ বাঙালী সাবধান৷ মুখোশের আড়ালে মিরজাফর বাঙালীর ফাঁদে পা না দিয়ে আসুন বাঙালীর বেঁচে থাকার ভূমি বাঙালীস্তান তৈরী করি৷ তবে আগামীতে আজকের এই বুর্র্জেয়া শোষক নেতৃত্বের অধীনে নয়৷

নেতা মানে সু-মহান দায়িত্ব নিয়ে যে ব্যষ্টি সকলকে শুভের দিকে অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধার্মিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, কৃষি শিল্প কারখানা, দৈনন্দিন জীবনে মানুষের বুজরুকি আর কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে আধ্যাত্মিক পথের পরিকাঠামো তৈরী করে সমাজ জীবনে ব্যষ্টি ও সমষ্টির উন্নতিকে ত্বরাম্বিত করে এগিয়ে নিয়ে যাবে৷

প্রাউট প্রবক্তা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তার অমোঘ সৃষ্টি পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধানের মকরধবজ ‘‘কণিকায় প্রাউট’’ (২১ খণ্ড) বইতে বলেছেন, নেতা হতে গেলে প্রথমেই নিজেকে শারীরিক সক্ষম, মানসিক দৃঢ় সংকল্পযুক্ত অর্থাৎ সকল রকমের শোষণ ও সন্ত্রাস থেকে চরাচরের সব কিছুকে মুক্তি দেওয়ার অদম্য মনোবল থাকা ও আধ্যাত্মিক উন্নতি তথা অন্তর্নিহিত ধর্মবোধের সাধনার অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে যম ও নিয়মে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নিরন্তর প্রয়াস চালাতে হবে৷ একব্রহ্মে বিশ্বাসের মাধ্যমে নিঃস্বার্থভাবে ঈশ্বর জ্ঞানে জীবকে সেবা করা৷ নিজেকে পরোপকারী মানসিকতা তৈরী করা৷ মনকে সকল প্রকার  কলুষ মুক্ত রাখা ও ত্যাগের ভাবনায় নিজের লক্ষ্যে ব্রতী হওয়া৷