আগামী পৃথিবীর ভরসা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায

বর্তমানে একটি খুবই আলোচিত হচ্ছে, তা হলো সামাজিক  দূরত্ব সমাজবদ্ধ জীব হয়েও আজ আমাদের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচার জন্য চিকিৎসকগণ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে বলেছেন সাথে সাথে  একথাও তাঁরা বলছেন মানসিক দূরত্ব যেন তৈরি না হয় আমাদের মধ্যে কিন্তু বাস্তবে যে ছবি  দেখছি তা একদিকে যেমন ভয়ঙ্কর, অন্যদিকে তেমনি মর্মান্তিক বাজার, দোকান বাসস্ট্যাণ্ড ইত্যাদি যেসব স্থানে সামাজিক দূবত্ব বজায় রাখার দরকার সেখানে আমরা চিকিৎসক গণের নির্দেশ কে থোড়াই  কেয়ার করে নিজেদের মতো চলছি উল্টে ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, কর্মী বা করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি বা তার বাড়ির লোকের সাথে  অমানবিক আচরণ করছি যারা সামনে থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুস্থ  তোলার জন্য লড়াই করছেন তাঁদের প্রতি  একশ্রেণীর মানুষ যে  আচরণ করছেন তাকে অমানবিক বললেও কম বলা হয় ডাক্তার বাবুগণ আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলেছেন  অধিক সংখ্যক মানুষ যাতে এই রোগে আক্রান্ত না হয় সেই কারণে তাছাড়া এই রোগের ওষুধ এখনো ডাক্তার বাবুদের হাতে নেই।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বহু আগে থেকেই অবশ্য আমাদের  মধ্যে সামাজিক ও মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, সাদা-কালোর মধ্যে যে কেবলমাত্র ব্যবধান আছে তা নয় বিভিন্ন ধর্মমতের ও বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের মধ্যেও ব্যবধান স্পষ্ট এর থেকেও আরো  দুঃখজনক আজ পরিবারের মধ্যেও এই দূরত্ব প্রকটতর হয়ে উঠেছে একই বাবা মায়ের সন্তানেরাও আজ পরস্পর মিলেমিশে থাকতে পারছে না পরিবারগুলো ও ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে অনেক সময় শুনি ভাইয়ে-ভাইয়ে বা  বোনে বোনে মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অবশ্য সব পরিবারই যে এমনতর তা নিশ্চয়ই নয়, একই পরিবারের অন্তর্গত সদস্যরা যদি মিলেমিশে  থাকতে না পারেন তাহলে তাঁরা সমাজের অন্য মানুষদের নিয়ে চলবেন কীভাবে আসলে যতদিন যাচ্ছে মানুষের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা যেভাবে বেড়ে উঠেছে তাতে অন্য মানুষের কথা ভাবার সময় তাদের  হাতে নেই এই সংকীর্ণ মানসিকতার জন্যই সমাজের আজ এই দুরবস্থা যাঁরা শিক্ষা দীক্ষায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন তাঁদের কী উচিত নয় পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে হাত ধরে টেনে তুলে সামনের সারিতে নিয়ে আসা সবার মিলেমিশে একসাথে  থাকার নামই তো সমাজ পরিবারের সদস্যদের সাথে যারা একসাথে থাকতে পারেন না তাঁদের কাছে কী আশা করতে  পারি সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষজনকে সামনের সারিতে নিয়ে আসবেন আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছি তাই এখন করোনা যোদ্ধা ও রোগী বা তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণ করে চলেছি জানি না কবে এই সমস্ত  মানুষের বিবেক জাগ্রত হবে চারিদিকে ঘোর অন্ধকার এর মধ্যেও আমি আশার আলো দেখতে পাচ্ছি কিছু সমাজ সচেতন ও সহৃদয় মানুষজনকে দেখে তাই সমস্ত মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস হারাতে চাই না এখনও অনেক মানুষ কে দেখেছি সব বিভেদ ভুলে যাঁরা সবাইকে আপন করে নিতে পারেন এঁরা বৃহতের ভাবনা নিয়ে চলেন এঁরা মনে করেন বিশ্বের  সকল মানুষই আমার আপনজন শুধু মানুষ কেন বলব, পশু পাখি, গাছপালা সবাইকে  তাঁরা আপন বলে ভাবেন এঁদেরকেই আমরা নব্য মানবতাবাদী বলতে পারি এই নব্য মানবতাবাদীরাই আগামী দিনে পৃথিবীর ভরসা।