আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমেই বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠা সম্ভব

লেখক
এইচ.এন. মাহাত

মোদিজীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৈন্যদশা শুরু হয়৷ ভারতবাসীকে পৃথিবীতে জগতশ্রেষ্ঠ হিসাবে পরিচিত করেছিল ভারতীয়দের সহনশীলতা, সবমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভাতৃত্ববোধ৷ ভারতের ঐতিহ্য আজ ধবংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণছে৷ যে দেশটি বাঙালীর সেই বাঙালীকেই কিনা আজ ভারত ভূমি  থেকে বিতাড়িত করতে চাইছে গুজরাটের বেনিয়ারা৷ আজ তাদের  দেওয়া ভারতের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-গণতান্ত্রিক ও ধর্মীয় মতবাদের বেড়াজাল এমন একটি নব্যমনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার জন্ম দিয়েছে যেখানে দেশভক্তি বা ত্যাগতিতিক্ষা সবকিছুই ধনতন্ত্রের পদতলে সমর্পিত৷

ঐতিহাসিকগণ বলেন অতীত থেকেই ভারত ছিলো একটি সামাজিক অর্থনৈতিক, সাংসৃকতিক দিক দিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক ভিত্তিক দেশ৷ এদেশের মানুষের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা হলো বিশ্বজনীন অর্থাৎ সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে৷  এখানে উঁচু নিচু, জাত পাত, ধনী দরিদ্র,শিক্ষিত অশিক্ষিত যত রকমের  ভেদাভেদ থাকুক না কেন আমরা সবাই ভারতীয়৷ স্বামী বিবেকানন্দ বিদেশে গিয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন ‘‘মুর্খ দরিদ্র ভারতবাসী আমার ভাই আমার বোন৷ তিনি বার বার বলেছেন ভারত একটি সনাতনী ভাগবত ধর্মের দেশ৷ তিনি বৈদিক মতবাদ যা মনকে বর্হিমুখী করতে চায় তার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কাছ থেকে তন্ত্র ভিত্তিক যোগ সাধনায় সমৃদ্ধ হয়ে ছিলেন৷

ভারতের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হলো বিভেদের প্রাচীরকে ভেঙে এক ও অবিচ্ছেদ্য মানব সমাজ তৈরী করা৷ ভারতীয়দের এই উদার  মানসিকতার জন্যেই বাইরে থেকে শক হুন মোগল পাঠান ফরাসি পর্তুগীজ বৃটিশরা এদেশে এসে সহজেই ভারতের সংস্কৃতি, ধর্মীয়বোধ ইত্যাদিতে নিজেদেরকে স্নাত করতে পেরেছে৷ তবে ভারতীয়দের অতিরিক্ত সরলতার সুযোগ নিয়ে এদেশের সম্পদ লুটপাট করে নিয়ে গেলেও ভারতকে কিন্তু নিঃশেষ করতে পারেনি৷ অবশ্য শেষের দিকে ভারতের কিছু বিশ্বাসঘাতক বা মীরজাফরের জন্যে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়৷ অর্থাৎ বণিকেরা রাজদণ্ডে রূপান্তরিত হয়৷

অন্যদিকে যাদের অবদানে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন, সেই বাঙালী জাতিকে এখন বারবার বলা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত, ঘুটপেটিয়া ইত্যাদি৷ ৭৪ বছর পরেও তাদেরকে নাগরিকত্বের প্রমাণ করতে হবে! আশ্চর্যের বিষয়, যে গুজরাট থেকে এখন এই স্লোগান উঠেছে তাদেরকে কিন্তু দেশ ভাগের বলি বা পাকিস্তান ও চীনের যুদ্ধে স্বজন হারা হতে হয়নি৷ আজ সেই গুজরাটি ঔপনৈশিকতাবাদীরা তথা সাম্রাজ্যবাদী বর্গীরা সমগ্র ভারতে টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে আমাদের উপর শোষণ ও শাসন করার অধিকার নিতে চলেছে৷ আগামীতে গুজরাটিদের এই ঔপনৈশিকতাবাদের জন্যেই বর্তমানে ভারতের ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ধবংসে পরিনত হতে চলেছে৷

বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, ভারতের এই সু-মহান ঐতিহ্যই রক্ষা পেতে পারে মহান দার্শনিক ও ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রদত্ত প্রাউট দর্শন মোতাবেক সম-নৃতাত্ত্বিক,ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতি সমস্যা সম্ভাবনা ও সাংবেদনিক উত্তরাধিকারের সাদৃশ্যতা অনুযায়ী সমাজ পুর্নগঠন করতে পারলে৷ উপরোক্ত সূত্রানুসারে ভারতে সর্বাধিক ৪৪ টি সামাজিক আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণ অঞ্চল গড়ে উঠতে পারে৷ আর যদি তা করা যায় তো ৪৪টি সমাজ নিয়ে ভারতবর্ষ তৈরী হবে একটি সুদৃশ্য মালার মতো৷ প্রকৃতপক্ষে সমাজের বুকে শোষণ বঞ্চনার অবসান তখনই হবে যখন গোটা দেশের প্রতিটি অঞ্চল শোষণমুক্ত ও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখন৷ আপত বিচারে তা আঞ্চলিকতাবাদ মনে হলেও প্রাউট তত্ত্ব মোতাবেক স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক -অর্থনৈতিক-সাংসৃকতিক শোষণমুক্ত অঞ্চল তৈরী হলে ও অধ্যাত্মবাদ তথা নীতিবাদ ভিত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলেই ঔপনিবেশবাদ দুরে সরিয়ে সমাজে বিশ্বৈকতাবাদ প্রতিষ্ঠা হবে৷