অর্থনৈতিক বৈষম্যের করুণ চিত্র - অর্থনীতির কেন্দ্রীকরণ, পুঁজিবাদী শাসনব্যবস্থার পরিণাম

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

লকডাউনের সময় যখন দেশের সাধারণ মানুষের জীবন দুঃসহ হয়ে উঠেছে, কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন হয়েছে, সেই সময় দেশের ধনকুবেররা ফুলে ফেঁপে উঠেছে৷ অর্থনীতির মানচিত্রে যখন জিডিপির মান শূন্যের নীচে, তখন দেশের ধনকুবেরদের  ভান্ডার উপচে পড়েছে৷

সম্প্রতি অক্সফ্যাম ‘ইনইকুয়ালিটি ভাইরাস’ নামে একটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ ওই প্রতিবেদনে ভারতের অর্থনৈতিক বৈষম্যের  করুণ চিত্রটি প্রকাশ পেয়েছে৷ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে লক্‌ডাউনের সময় ভারতের ১০০ জন ধনকুবের ৩৫ শতাংশ সম্পদ বাড়িয়েছে লক্‌ডাউন চলাকালীন৷ যার পরিমাণ ১৩ লক্ষ কোটি টাকা৷ এই টাকায় দেশের ১৩ কোটি ৮০ লক্ষ দরিদ্রতম মানুষের হাতে  প্রত্যেককে ৯৪ হাজার টাকা দেওয়া যেত৷ প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে ধনকুবেরদের ভাণ্ডার ভরে উঠলেও লকডাউনের সময় কর্মহীন হয়েছে ১২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ৷ ভারতের ধনীতম ব্যষ্টি মুকেশ আম্বানি প্রতি সেকেন্ডে যা আয় করেন, একজন শ্রমিকের সেই পরিমান অর্থ আয় করতে তিন বছর  লাগবে৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রথম সারির ১১ জন ধনকুবের লকডাউনে যে সম্পদ বাড়িয়েছে তা  দিয়ে আগামী ১০ বছর ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চলে যাবে৷ লকডাউন চলাকালীন মুকেশ আম্বানি প্রতিঘন্টায় ৯০ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন৷ অথচ সাধারন মানুষের ২৪ শতাংশের মাসিক আয় তিন হাজার টাকার নীচে ছিল৷ এই হচ্ছে প্রধান মন্ত্রীর ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশে’র হাল চিত্র৷

অক্সফ্যামের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ লকডাউনে মুকেশ আম্বানির  বর্দ্ধিত সম্পদে  দেশের ৪০ কোটি দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের মুখে পাঁচ মাস অন্নতুলে দেওয়া যেত৷ লক্‌ডাউনে  ফুলে ফেঁপে ওঠা ধনকুবেরদের তালিকায় মুকেশ আম্বানি ছাড়াও রয়েছেন--- গৌতম আদানি, সাইরাস পুনাওয়ালা, শিব নাদার,আজিম প্রেমজি, সুনীল মিত্তল, উদয় কোটাক, রাধাকৃষ্ণন দামানি, কুমার মঙ্গলম বিড়লা, লক্ষ্মী মিত্তল প্রমুখ৷

প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের সাধারণ সচিব  আচার্য রবীশানন্দ অবধূত বলেন, অর্থনীতির কেন্দ্রীকরণ ও পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিষময় ফল অর্থনীতির এই বৈষম্য৷  তিনি বলেন৷ পুঁজিবাদ বজায় রেখে এই বৈষম্য দূর করা কখনই সম্ভব নয়, বরং দিন দিন বৈষম্য আরও বাড়বে৷ পুঁজিবাদী শাসন ব্যবস্থা বজায় রেখে আত্মনির্ভরতার কথা পাগলের প্রলাপ৷

আচার্য রবীশানন্দ অবধূত বলেন---প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের (প্রাউট) বাস্তবরূপে দিয়ে অর্থনীতির এই সমস্যার সমাধান সম্ভব৷ তিনি বলেন প্রাউটের নীতি অনুযায়ী সমাধান হ’ল--- অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণ, প্রতিটি মানুষের হাতে ক্রয়ক্ষমতা, বিচার সম্মত বন্টন ব্যবস্থা, সমস্ত রকম জাগতিক ও মানব সম্পদের সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ, সৎ ও আদর্শ মানুষের নেতৃত্ব---প্রাউটের ভাষায় যাদের বলা হয়-সদবিপ্র৷

তিনি প্রাউটিষ্টদের আহ্বান জানিয়ে বলেন -গতানুগতিক জীবন কাটিয়ে  সময় নষ্ট করবেন না৷ এই বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনতে ভৌতিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সার্বিক বিকাশ আনার লক্ষ্যে মানুষকে  সচেতন করার কাজে নেমে পড়তে হবে প্রাউটিষ্টদের৷ একাজ অসম্ভব মনে হলেও নিষ্ঠার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করলে কোন কাজই অসম্ভব নয়৷ প্রাউটিষ্টরাই পারবে শোষণ মুক্ত সমাজ গড়তে৷