আসন্ন নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তুতি ও ভারতের ভবিষ্যৎ?

লেখক
অমৃতাবোধানন্দ অবধূত

সম্প্রতি খবরে প্রকাশ ২০১৯-এ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা জোটের দলনেতা তথা প্রধানমন্ত্রী প্রোজেক্ট না  করেই প্রথমে মোদী পরিচালিত বিজেপিকে গদিচ্যুত করার লক্ষ্য নিয়ে ঝাঁপাবেন৷ এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাধুবাদ  যোগ্য-কারন দেশের স্বার্থে সবাই প্রধানমন্ত্রী পদের লোভ সংবরণ করেছেন৷ কিন্তু  প্রশ্ণ হল পরস্পর  আদর্শগত বিরোধিতা ভুলে কোন ঘটনামূলক যৌথ কর্মসূচী ছাড়া শুধুমাত্রমোদী হটানোর সেন্টিমেন্টে কয়েক ডজন দল আপাতত এককাট্টা হলেও তাদের সুশাসন ও ভবিষ্যতের  স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ণ থেকেই যাবে৷ তাছাড়া মোদী  যদি হটে যান, তাহলে মোদি হটানো জনিত সেন্টিমেন্টের ও তাৎক্ষণিক অবলুপ্তি ঘটবে৷ আর সেই সেন্টিমেন্টের উপর  গড়ে ওঠা কৃত্রিম সাময়িক একতাটাও ভেঙে গিয়ে ক্ষমতামুখী হয়ে গদি দখলের নগ্ণ খেলায় নিজেরা পরস্পরের বিরুদ্ধে  প্রতিযোগিতায় মেতে উঠবেন৷ জনসমক্ষে তাদের নকল একতার  বিবর্ণ রূপটা বেরিয়ে পড়বে৷ তাহা মনস্তাত্ত্বিক কার্য কারন নিয়ম অনুসারেই ঘটবে৷ তাই  শুরুতেই  ক্ষমতা দখলের  প্রতিযোগিতার ফলে দলগুলো পরস্পরের  মধ্যে যে  মানসিক দুরত্ব তৈরি হবে তাতে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে  কোন সার্বজনীন সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে৷ দেশ এখন কঠিন  সংকটের মধ্যে দিয়ে চলছে, বিশেষ  করে বহিঃশত্রু চীন ও পাকিস্তানের  দিক থেকে  আক্রমণের সম্ভবনা৷  বহিশত্রু সাধারণত দেশের দূর্বল সরকারের আমলকেই  আক্রমণের মাহেন্দ্রক্ষণ হিসাবে বেছে নেয়৷ সেটাই ইতিহাস৷ মানুষ একটা ডাল ধরে অন্য ডালটা ছাড়ে৷ পরবর্তী  নূতন সরকারের কান্ডারী কে হবেন? তার নীতি বা রূপরেখা কী হবে তার পূর্বাভাস জনগণ  অর্থাৎ নির্বাচক মন্ডলী না পেলে কীসের ভিত্তিতে তারা  সিদ্ধান্ত নেবেন? শুধুমাত্র মোদী হটানোর মত একটা নেতিবাচক আবেগমথিত উদ্দেশ্যহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে  কোন সুশাসন উপহার দেওয়া তো দূরের কথা, সরকারের একতা ও স্থায়ীত্বই প্রশ্ণের সম্মুখীন হয়ে পড়ে৷ আবার প্রশ্ণ আসে  দল বদল কী আজকের ভারতের  সমস্যার একমাত্র সমাধান?

অতিতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে কোন জোটসরকারই পূর্ণন্যাদ পূরণ করতে পারে নি৷ ১৯৯৬ জুনে দেবগৌড়া সরকার ক্ষমতায়  আসে ও ৯৭ এপ্রিল পতন ঘটে৷ এরপর আসেন আইকে  গুজরাল তিনি একবছর পার করতে পারেননি  ১৯৯৮ মার্চ  তার পতন হয়৷ এরপূর্বে ১৯৮৮-৮৯ সাড়া জাগানো ভিপি সিং এর জাতীয়  ফ্রন্ট সরকার ও খুববেশী দিন স্থায়ী হয়নি৷

পুঁজিবাদ নির্ভর বর্তমান কেন্দ্রের মোদীর  নেতৃত্বে চলা এন.ডি.এ সরকার ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে একপেশে নীতি নিয়ে চলছে৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে বেশী নেতৃত্ব দেয়া,  জীবন দেয়া, বাঙালী জনগোষ্ঠীকে অসমসহ  উত্তর পূর্ব ভারত থেকে এন.আর.সি  নামে বিদেশী তকমা  দিয়ে রাষ্ট্রহীন নাগরিকে  পরিণত  করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে৷ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের  মূলশরিক  বিজেপির নেতৃত্বে  পরিচালিত  এন.ডি.এ সরকার  ও যে তার পূর্বসুরিদের মত চিরাচরিত বাঙালী বিদ্বেষের পুরনো কুভ্যাস থেকে এখনও  মুক্ত  হতে পারে নি, তার প্রমান রাখছে৷ আমরা  দেখতে পাই আমাদের  এই দেশে কোন কোন  সরকার হন সংখ্যালঘু তোষক কেহরা সংখ্যাগুরু  তোষক,কেহবা শুধু নিজের দলের স্বার্থে কাজ করেন, কিন্তু আমজনতার পক্ষে কাজ করেন এমন সরকার  এখনও দেখা যায় নি৷

তাই আজ সম্প্রদায় ধর্মমত তথা দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত জনগণের  সরকার দরকার৷ রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধোঁকাবাজি প্রয়োজন অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার৷ কম্যুনিজমের  অকাল মৃত্যু হয়েছে৷ পুঁজিবাদ  অমানবিক, তার পরিবর্তে মহান দার্শনিক প্রভাতরঞ্জন সরকার প্রদত্ত  সামাজিক  অর্থনৈতিক  দর্শন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব (প্রাউট) ও তাহাতে  বর্ণিত নীতিবাদী নেতৃত্বই আজকের সকল সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি৷ যা আঞ্চলিক  শ্রীবৃদ্ধির পথ ধরে বিশ্ব ঐক্যতাবাদের প্রতিষ্ঠার প্রাকৃতিক নিয়মকেই অবলম্বন করে এগিয়ে  চলছে৷  দান খয়রাতি নয় এখানে সকল মানুষের  নূন্যতন প্রয়োজন  অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চিততা প্রদান করা হয়েছে৷