অস্পৃশ্য

লেখক
রত্নেন্দু দাশ

আমার এক ছাত্র আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, স্যার!! কিছু মানুষ আছে যারা ছোঁয়াচে , তাদের ঘরে যদি আমরা যাই আমাদের সামনেই কি কি করে,  এতে আমরা অপমান অনুভব করি৷ এমনটা কেন? সত্যি তো প্রশ্নগুলো খুব সুন্দর৷ আসলে কিছু মানুষ আছে যারা শুচিতার অর্থই জানে না ভালো করে৷ যারা বাহ্যিক শৌচ পালন করে তারা জানে না আভ্যন্তরীণ শৌচও আছে ও সেই শৌচও পালন করা উচিত৷

মনকে বড় করাই আভন্তরীণ শৌচ৷ আর এই মন বড় হয় যখন আমরা ভূমামনের সাধনা করি৷ ভূমামনের সাধনা করতে করতে অনুমন আর অনুমন বা ক্ষুদ্র মন থাকে না, সে পরমপুরুষের বৃহৎ মনের সাথে মিশে যায়৷ তখন আর কারুর মনে অমুক শুচি আর অমুক ছোট এমন ভাব আসে না৷ আমরা সবাই এক সেটা কিছু মানুষ ভুলে যায়৷ মানুষের ধর্মমত বা বিশ্বাস আলাদা হতে পারে কিন্তু মানুষ আলাদা কি করে হবে? কোল্ড ড্রিংক্সের উদাহরণ যদি আমরা নিই তাহলে দেখতে পাই প্রত্যেক কোল্ড ড্রিংক্সের নাম ও রঙ আলাদা হলেও ধর্ম কিন্তু একই থেকে যাচ্ছে৷ তারা চান্স পেলেই নীচের দিকে যাবে, ছিদ্র হলেই বেরিয়ে যায়, গরম হলেই বাষ্প হয়ে যায় ও  এটা অপরিবর্তনীয়৷ যদি আমরা হাওয়াকে নিই তাহলেও সেই একই জিনিস দেখতে পাই৷ এরা সামনে কিছু পেলেই দূরে সরিয়ে দেয়, কেউ আস্তে নয়তো বা কেউ জোরে৷ সবার সেই একই ধর্ম৷ মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সবার ধর্ম এক সেই অনন্ত চাহিদা৷ আর এই অনন্ত চাহিদা পূরণের জন্য সে ছুটে বেড়ায় এই দিক থেকে সেই দিক৷ মানুষ যেদিন শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রভাত সঙ্গীতের ভাষাটি বুঝতে পারবে তখন আর হানাহানি করবে না৷ সেখানে বলা হয়েছে৷

‘‘মানুষ সবাই আপন

                        একই মর্মে গাঁথা সবার হিয়া,

সবাকার একই আয়োজন৷৷

                        দুঃখে কাঁদি মোরা, সুখে হাসি,

প্রিয়জন প্রিয়মুখ ভালবাসি৷

                        মোরা ক্ষুদার অন্ন-জল মিলেমিশে খাই৷

বুঝি সবাকার তাহা প্রয়োজন৷৷

                        সবাই ভালবাসি এই ধরণী,

আকাশের চাঁদ-তারা, অরণ্যানী৷

                        একই ছাঁদে নাচি মোরা, একই প্রাণে গাই,

ডাকি পরমপুরুষের হয়ে একমন৷৷’’

কারুরই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আজ যাকে তাড়িয়ে দিচ্ছি হয়তোবা একদিন তার কাছে আমায় যেতে হবে৷ এটা নির্দিষ্ট কোন ধর্মমতের ক্ষেত্রে নয়৷ সবার ক্ষেত্রেই প্রযুজ্যমান৷ সবাইকে নিয়ে আমাদের এই সমাজ৷ যদি কেউ বলে ধর্মমতের জন্য আমি এমনটা করছি তাহলে বলব ধর্মমতও তো পরিবর্তন করে, তা কেন করে? বৃত্তির তাড়নায় বা ভুল বিশ্বাসের জন্য (যেখানে বিচার করে দেখা হয় না) মানুষ কত রক্তপাত ঝরিয়েছে আর এখনও ঝরাচ্ছে৷ তাই আসুন হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান নয়, আমরা সবাই এক ও এক হয়েই এক শোষণমুক্ত নোতুন সমাজ গড়ি৷ তবেই সবার কল্যাণ৷