বাংলা-বাঙালীকে ধবংস করার  সাম্রাজ্যবাদী কলা-কৌশল

লেখক
একর্ষি

বাঙলার অতুল ঐশ্বর্য ও অফুরন্ত সম্পদ যুগে যুগে সাম্রাজ্যবাদীদের লোভের শিকার হয়েছে৷ বিদ্যায়, বুদ্ধিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, সংসৃকতিতে, শিল্প-,সাহিত্যে, শৌর্য-বীর্যে বাঙালীর  অগ্রণী সত্তার জন্য অন্যদের মনে পরশ্রীকাতরতা থেকে বিদ্বেষ, ঈর্র্ষ থেকে প্রতিহিংসার  জন্ম নিয়েছে৷ তদুপরি বাঙালীর  আধিপত্যবাদ-বিরোধী জেহাদী মানসিকতা, তথা প্রতিবাদী চরিত্র, বিপ্লবী চেতনা ও আপোষহীন সংগ্রামের মানসিকতা সাম্রাজ্যবাদীদের  মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে৷ তাই বাংলা-বাঙালীকে ধবংস করার প্রয়াস বহুদিনের৷ দেশী-বিদেশী সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তের শেষ নেই৷ সাম্রাজ্যবাদের নানারূপ-সামরিক সাম্রাজ্যবাদ, অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ, ভাষা-সাংসৃকতিক  সাম্রাজ্যবাদ আরো কত কী৷ কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের রূপটা ভিন্ন ভিন্ন হলেও  প্রকৃতিটা একই ছাঁচে ঢালা৷ সাম্রাজ্যবাদ কায়েম তথা দৃঢ়মূল করতে সাম্রাজ্যবাদীরা প্রথম যে কাজটা করে--- তা হল প্রভাবাধীন বা অধীনস্থ বা বিজিত দেশ বা জনগোষ্ঠীর প্রাণধর্মকে শেষ করে দেওয়ার  চেষ্টা করা৷ ব্যষ্টি-মানুষের চরিত্র বৈশিষ্ট্যের মতই একই ভৌগোলিক পরিবেশে একই ঐতিহাসিক  ও সাংসৃকতিক  আবেষ্টনীর মধ্যে  যাদের জন্ম ও  লালন-পালন  সেই জনগোষ্ঠী  অপর জনগোষ্ঠী থেকে ভিন্নতর গোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য অর্জন করে৷  এতে করে একটা জাতীয় স্বভাব তৈরী হয়, একটা বিশেষ জাতীয় দৃষ্টিকোণ গড়ে ওঠে যা সেই জাতিকে অন্য জাতি থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্য দান করে৷ ‘এই স্বাতন্ত্র্য চিহ্ণিত বৈশিষ্ট্যই জাতি বা জনগোষ্ঠীর প্রাণধর্ম৷ এই প্রাণধর্মই একটা জাতিকে একটা সংহত শক্তিতে রূপান্তর করে, প্রাণোচ্ছল করে ও উদ্বর্তনায় এগিয়ে যেতে  চালিকা শক্তিরূপে কাজ করে ৷ প্রাণধর্মহীন  জাতি  নির্র্বেধ পশুর মতো, মৃত মানুষের জড়পিন্ড  শবের মতো৷ বাংলা তথা ভারতের প্রাণধর্ম হ’ল পরাভিমুখী-আত্মাভিমুখী ভাবনা,অন্তরমুখী জীবনধারা অর্র্থৎ আধ্যাত্মিকতা ভিত্তিক জীবনচর্র্য-জীবনধারা৷  ধূর্ত-সুচতুর ইংরেজ বাঙলা তথা ভারতে ব্রিটিশরাজ কায়েম করতে প্রথমেই নিশানা করে বাঙালী তথা ভারতীয়দের ‘‘প্রাণধর্ম’’৷ চক্রান্ত করল-ভারতীয়রা জন্মের দিক দিয়ে ও শারীরিক বর্গের বিচারে থাকবে বাঙালী বা ভারতীয় কিন্তু আদব-কায়দা, শিক্ষায়, রুচিতে ও সংসৃকতিতে হবে সম্পূর্ণ ইয়ুরোপীয়৷ নয়া আদলে (মডেলের)  ওই ইয়ুরোপীয়-ভারতীয়রাই হবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বস্ত স্তম্ভ৷

ব্রিটিশ তার দুরভিসন্ধি বাস্তবায়িত করতে দুটো পথ বেছে নিল৷ --- এক,দেশীয় ভাষা সাংসৃকতির গঙ্গাযাত্রা ঘটাল৷ দুই, ‘বিভেদ কর শাসন কর’ নীতি৷ আর ব্রিটিশের  এই সাঁড়াশি  অভিযানের প্রধান অস্ত্র হল তাদের নিজের দেশের শিক্ষাপদ্ধতি যা এ দেশে প্রচলন করল৷ নয়া শিক্ষা ব্যবস্থার ফলও হাতেনাতে ফলল৷ নব্য শিক্ষিত সমাজ দেশীয় স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ভুলে সম্পূর্ণ পশ্চিমী মনোভাবাপন্ন হয়ে উঠল৷ হয়ে উঠল সন্দেহবাদী, জড়বাদী ও নাস্তিক৷ বন্ধ হয়ে গেল ভারতীয় শিক্ষাপদ্ধতি সম্বলিত ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক গুণাবলীর উন্মেষ-বিকাশের পথ৷ ইংরেজের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল৷ একদল ব্রিটিশ-ভারতীয় উৎপন্ন হল৷ এরা না হল ভারতীয় না হল ইংরেজ৷ ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য সুদৃঢ় হল৷ ইংরেজের  কুটনৈতিক বিভেদ চালে  নব্য-ঈঙ্গ-বঙ্গ শিক্ষিত মানুষের সম্প্রদায় দেশের মূল জনজীবন থেকে  বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল৷ কেননা  সিংহভাগ মানুষের  আচার-আচরণ, আদব-কায়দা, চিন্তা-চরিত্র, পাশ্চাত্য শিক্ষায়  শিক্ষিত মানুষের থেকে  সম্পূর্ণ আলাদা৷  বাঙলা তথা ভারতীয় সমাজ  স্পষ্ট দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেল৷  ইংরাজী শিক্ষায় শিক্ষিত ও অশিক্ষিত-দুটি শ্রেণী৷  নব্য শিক্ষিত বাবুর দল সাধারণ মানুষকে আপন করে নিতে পারল না, অন্যদিকে নব্য বাবুরা সাধারণ মানুষের কাছে যেন গ্রহান্তরের জীব৷ ব্রিটিশের কুট চালে  নব্য-ঈঙ্গ-বঙ্গ বাবুদের কাছে ব্রিটিশ-শাসকই বেশী আপন হয়ে উঠল৷ একটা উগ্র উন্নাসিকতা  জন্ম নিল-ব্রিটিশের সব কিছু ভালো...... স্বদেশের সব কিছুই খারাপ৷

ব্রিটিশের সাঁড়াশি  অভিযানে ভারতবর্ষের মধ্যে বাঙলা-বাঙালীরই সর্বনাশ হয়েছে সবচেয়ে বেশী৷ এই অভিযানের ফলে বাঙলার হাজার হাজার বছরের সমুন্নত সাংসৃকতিক পরিমন্ডলই গেল পাল্টে৷ বাঙালীর বুকেরভাষা, মুখেরভাষা বাংলাভাষা শিক্ষিত বাঙালীর উন্নাসিকতায় ও অমর্র্যদায় পড়ল অস্তিত্ব সংকটে৷ ভাষা-সংসৃকতিই জাতির প্রাণধর্মের ধারক ও বাহক৷সেই প্রাণধর্মকে হরণ করে কুটকৌশলে  ব্রিটিশ অসংসৃকতির জোয়ারে বাঙালীর  আত্মাভিমুখী সাংসৃকতিক জীবনকে ভাসিয়ে দিল৷  ব্রিটিশের যোগ্যউত্তরসূরী হিন্দী ভাষা সাম্রাজ্যবাদীরা বাঙলার ভাষা সংসৃকতিকে অবক্ষয়ের শেষ স্তরে পৌঁছে দিল৷ আর বাঙালী প্রাণধর্মকে হারিয়ে, ভাষা-সংসৃকতিকে অবক্ষয়ের ফাঁসে ঝুলিয়ে অনিকেত  জীবন বোধে অন্তিম মুহূর্তের প্রহর গুনছে৷

প্রাণধর্মে উচ্চকিত ভাষা-সংসৃকতি বহতা নদীর মতো৷ জলের প্রবাহ যেমন  নদীর শক্তি --- নদীর প্রাণ তেমনি বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা-বনিয়াদ ভাষা-সংসৃকতির সঞ্চালক শক্তি৷ বাঙলার স্বয়ম্ভর আর্থ-ভৌগোলিক পরিমন্ডল তার কোমল-শান্ত-স্নিগ্দ-শ্যামল- চিক্কন রূপ যুগযুগ ধরে বাঙালীকে করেছে উদার, ভাবপ্রবণ, চিন্তাশীল, আত্মমুখী৷ এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই বাঙালীকে করেছে প্রতিবাদী, বিপ্লবী চেতনাদীপ্ত৷ তাই বাঙলা থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থান হলেও বাঙলাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের  মৃত্যুঘন্টা বাজিয়ে দেয়৷ বাঙালীর এই শক্তির উৎস কী? ধুরন্ধর ব্রিটিশ বুঝেছিল বাঙলার বলিষ্ঠ স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক বনিয়াদ তার মূল৷ ইংরেজ চক্রান্ত করল--- বাঙালীর শক্তির যোগান বন্ধ করতে হবে৷ বাঙলাকে টুকরো টুকরো করে বাঙালার ঐশ্বর্যের সুদৃঢ় বনিয়াদকে ধবংস করতে হবে৷ যেমন ভাবনা তেমন কাজ৷ বাঙলার বুকে ছুড়ি চালিয়ে অসংখ্য খন্ডে ভেঙ্গে দেওয়া হল৷ ৷ দিল্লীর মসনদ ছেড়ে গেল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ, তার স্থান দখল করল হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ৷ দমন, অবদমন, প্রদমন, ও শোষণ ও বঞ্চনার ইতিহাস দীর্ঘতহর হল৷ ব্রিটিশ ভারত ও স্বাধীনোত্তর ভারতে ওই কলঙ্কময় কর্মকান্ডের যোগ্য ধারক ও বাহক হয়ে উঠল কমিউনিষ্ট-কংগ্রেস সহ সব সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল৷

এখন দেখা যাক ব্রিটিশ  ও তার তল্পীবাহক কমিউনিষ্ট-কংগ্রেসের চক্রান্তের ফলে বাঙলা ভাগে তাদের কী কী অভিসন্ধি সফল হল, আর কীভাবে বাঙলা-বাঙালীর দুর্র্ভগ্য-দুর্দশা চরমে উঠল......... প্রথম কথা ঃ বাঙলাকে খন্ড-বিখন্ড করে বাঙালী রিক্ত-নিঃস্ব-সর্বস্বান্ত করে দেওয়া হয়েছে৷ কার্যত বাঙলা হয়ে উঠেছে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের উপনিবেশ৷ দ্বিতীয় কথা ঃ এত ভঙ্গ বঙ্গে বাঙালী নিজস্ব সংসৃকতিই ভুলে গেল ৷ বাঙালী মায়ের কী গর্ব!-‘আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’৷ এটা যে ‘গিনেস-বুকে’ নাম তোলার মতো লজ্জা-সে বোধটাও হারিয়ে গেছে৷ বাঙালীর বাঙালীয়ানা অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়৷ দিল্লীর দেওয়া জনসংখ্যা পরিসংখ্যানে ও পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাইরের সাবেক বাঙলার অধিকাংশ বাঙালীকে নির্লজ্জ ভাবে অবাঙালী রূপে দেখানো হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়  পশ্চিমবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে জাত বাঙালী কুর্মীমাহাতোদের অবাঙালী উপজাতি হিসাবে দেখানো হচ্ছে৷ অন্যান্য বাঙালী জনজাতি গুলিকে  অবাঙালী তকমা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের ওপর জোর করে  ভিন্ন গোষ্ঠীর ভাষা-সংসৃকতি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ আবার আসামের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া সাবেক বাঙলার বাঙালীদের বিদেশী বলেও  চিহ্ণিত করা হচ্ছে৷ বাঙালীর ভাষা গেল-সংসৃকতি গেল- পায়ের নীচের মাটিও গেল৷ বাঙালী নিজভূমে পরবাসী, প্রাণধর্ম হারিয়ে একটা আত্মপরিচয়হীন জাতিতে পরিণত৷  তৃতীয় কথা: ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালী৷  শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেরই নয়,  পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী৷ চীনদের পরেই বাঙালীর স্থান৷ বাঙালী একটা মিশ্র জনগোষ্ঠী৷ বাঙলার মানুষগুলো --- অষ্ট্রিকো-নিগ্রো-দ্রাবিড়-মঙ্গোলয়েড৷ এর সঙ্গে রয়েছে আর্য রক্তের মিশ্রণ৷ কৈবর্ত, নমঃশুদ্র, গোপ, মাহাতো ও রাজবংশী এই পাঁচটি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অসংখ্য  উপগোষ্ঠী নিয়েই তৈরী বাঙালী জনগোষ্ঠী৷ মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীভুক্ত চাকমা, ত্রিপুরী, বোড়ো, কোচ, কিরাত, হাজং, ডালু দ্রাবিড় গোষ্ঠীভুক্ত কৈবর্ত, বাগদী, দুলে, শবর, লোধা, ডোম, হাড়ি, ঢোল, পুলিন্দ,খেড়িয়া ও অষ্ট্রিক ভাবপ্রধান সাঁওতাল, হো, সিংথুড়া, খাঙার, মুড়া, খেলিয়া মুড়া, কুশমেট মুড়া ইত্যাদি এরা  সবাই সাবেক বাঙালী৷ এলিট বাঙালীরা এদের থেকেই সৃষ্ট৷ দার্শনিকশ্রেষ্ঠ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ভাষায়‘‘এই বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী হঠাৎ জেগে ওঠা নোতুন একটা বাউন্ডারী পাওয়া রাষ্ট্রকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠী নয়৷ এর রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভাঙাগড়া হয়েছে  অনেকবার৷ কিন্তু জনগোষ্ঠীটি অনেকদিনের৷ তিন হাজার বছরেরও বেশী পুরানো৷ জনজাতি গুলি সাম্রাজ্যবাদীদের গভীর চক্রান্তের শিকার৷ অধিকাংশ জনজাতিরই বাঙালী জাতিসত্তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ জুড়ে দেওয়া হয়েছে তালিকাভুক্ত অবাঙালী জাতি-উপজাতি-আদিবাসী তকমা৷ অর্র্থৎ একটা বৃহত্তম জনগোষ্ঠীকে ভুল তথ্য ও মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীরূপে দেখান হচ্ছে৷ এরফলে একদিকে যেমন বাঙালী জাতিসত্তা সংকুচিত হল, সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারাল, অন্যদিকে বাংলা ভাষা-ভাষীর সংখ্যা গেল কমে৷ বাংলা ভাষার পরিধিও সংকুচিত হল৷ চতুর্থ কথা : বাঙলা ভেঙে বাঙালীর ভাষাগত-জাতিসত্তাগত  ঐক্য বিনষ্ট করে ধর্মের দিক থেকেও  বাঙালীর ঐক্য ধবংস করা হল৷ দুঃশাসনের কুটনীতিতে বাঙালীকে এক ভয়াবহ বিপন্নতা গ্রাস করেছে৷  বাঙালীর জাতিসত্তার বুকেই ছুরি চালান হয়েছে৷  এমন পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে যে মাঝে মাঝেই শোনা যায়-‘‘ওরা কী বাঙালী? ওরা তো মুসলমান’’৷ পঞ্চম কথা : কথাই বলে ‘ঐক্য যেখানে, শক্তি সেখানে’’৷  ‘সংহতিই শক্তি’’৷ কিন্তু সাবেক বাঙলা-বাঙালী কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে,  ত্রিপুরায়, বাঙলাদেশে ,ওড়িশায়, ঝাড়খন্ডে, বিহারে, আসামে, নেপালে (ঝাঁপাজেলা), আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, আরাকানে, মেঘালয়ে (মিকির পাহাড়ের পাদদেশের সমতল অংশে)৷ বাঙলার মাটি ও বাঙালীকে ‘হরির-লুঠ’- এর মতো ভারতীয় উপমহাদেশে  ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অর্র্থৎ  বাঙালী ঐক্যশক্তিহীন একটা হীনবীর্য জাতি ৷ ফলে বাঙালীর  ওপর অত্যাচার, নির্র্যতন, বঞ্চনা, অবিচার হলে কোথাও একটু প্রতিবাদ-প্রতিরোধের লেশমাত্র নাই৷ কেবল ভয়! আশ্রয় হারাবার ভয়! নোতুন করে উদ্বাস্তু হওয়ার ভয়! বাঙালী অস্তিত্ব হীনতার আতঙ্কে ভুগছে৷ বাঙলাকে ভেঙে বাঙালী ঐক্যশক্তিকেই ধবংস করে দেওয়া হয়েছে৷ যাতে ঐক্যশক্তি গড়ে  উঠতে না পারে তার জন্য একদিকে বাঙালীকে গেলানো হয়েছে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের আফিং৷ বোধটা এমনই যে তারা তো বাঙালী নয়, তারা ভারতীয় ৷ অন্যদিকে বাঙলার সামরিক গোষ্ঠীগুলিকে (ক্ষত্রিয়দের) তালিকাভুক্ত জাতি , উপজাতি, আদিবাসী তকমা দিয়ে হীনবল করা হয়েছে৷ ভারতীয় সেনা বাহিনীতে ১৭টি রেজিমেন্ট থাকলেও বাঙালী রেজিমেন্ট নেই৷ বাঙলার ক্ষাত্রশক্তিকে ধবংস করতে ব্রিটিশ বাঙালী রেজিমেন্ট ভেঙে দিয়েছিল, তারই যোগ্য উত্তরসূরী হিন্দী সাম্রাজ্যবাদীরা ব্রিটিশের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে৷  বলবানের শক্তি--- ক্ষাত্রশক্তি, ঐক্য শক্তি৷ দুর্বল তখনই দুর্বল, যখন সে ঐক্যশক্তিহীন, ক্ষাত্রতেজহীন৷ বঙ্গ বিভাগই বাঙালীকে হীনবল করেছে৷

আর একটি কথা : বাঙলা ভাগের জন্যই বাঙালী আজ ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী৷ ভারতবর্ষে যে বাঙলার স্থান ছিল সবার ওপরে,স্বাধীনতার ৭০ বছরে তার স্থান আজ সবার নীচে৷ তাই আজ আর অন্য কিছু ভাববার অবকাশ নেই৷ ভারতীয় সংবিধান মোতাবেক যেকোন মূল্যে বাঙালীদের বাসস্থান-বাঙালীস্তান ( সাবেক বাঙলা/পঞ্চগৌড়-গৌড়বঙ্গ/ অখন্ড বাঙলা/সোনার বাংলা) গঠনই বাঙলা-বাঙালীর রক্ষাকবজ,  অস্তিত্বের নিশ্চয় নিরাপত্তা, উদ্বর্তনা-বিকাশের ক্ষেত্রপট৷