বাঙলাদেশে আনন্দমার্গের ধর্মমহাসম্মেলন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

Bangladesh DMS-2019দিনাজপুর, (বাঙলাদেশ) ঃ গত ১৯, ২০, ২১শে এপ্রিল, ২০১৯ বাঙর্লদেশের দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত মুকুন্দপুরে সি.ভি.এ ট্রেনিং সেণ্টারে আনন্দমার্গের ধর্মমহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হ’ল৷ এটি হ’ল বাঙলাদেশের বার্ষিক ধর্ম মহাসম্মেলন৷ এই ধর্মমহাসম্মেলনে বাঙলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ও পার্শ্ববর্তী পশ্চিমবাঙলা থেকেও আনন্দমার্গীরা অংুশগ্রহণ করেন৷ প্রায় দুই হাজার ভক্তের সমাবেশ হয়েছিল এই ধর্মমহাসম্মেলনে৷ আনন্দমার্গী নন এমন  অনেক সাধারণ মানুষও এই ধর্মমহাসম্মেলনে আধ্যাত্মিক আলোচনা শুনতে ও প্রভাতসঙ্গীত অবলম্বনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ তিনদিন ব্যাপী এই ধর্মমহাসম্মেলনে প্রতিদিনই কীর্ত্তন আধ্যাত্মিক প্রবচন, আলোচনা সভা, যোগ সাধনা, আসন, তাণ্ডব ও কৌশিকী নৃত্য শিক্ষাদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি নানান কর্মসূচী ছিল৷ ধর্মমহাসম্মেলনে মার্গগুরু প্রতিনিধি হিসাবে আধ্যাত্মিক প্রবচন দেন আচার্য ধ্যানেশানন্দ অবধূত৷ মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর বিভিন্ন প্রবচনের মাধ্যমে ও তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্যদের ব্যষ্টিগতভাবে আধ্যাত্মিক জগতের বহু মূল্যবান উপদেশ দিয়েছেন৷ সেইসব মহা মূল্যবান মণিরত্ন থেকে বেশ কিছু মণিরত্ন তিনি ভক্তদের উপহার দিয়েছেন৷ তিনি তাঁর প্রবচনে বলেন একমাত্র আনন্দমার্গই প্রকৃত ধর্মের প্রচার করছে৷ অন্যান্যরা রিলিজিয়নের প্রচার করে৷

প্রকৃত ধর্ম ও রিজিয়ন এক নয়৷ রিলিজিয়ন অনেক৷ বিভিন্ন রিলিজিয়নের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ভাবনা রয়েছে, নানান সংকীর্ণতা, অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার রয়েছে৷ কিন্তু আনন্দমার্গ প্রচার করে সমস্ত মানুষের এক ধর্ম তা হ’ল মানব ধর্ম৷ অন্যান্য রিলিজিয়ন মানুষ জাতিকে ছিন্ন বিছিন্ন করে রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে কিন্তু আনন্দমার্গ বলে, মানব সমাজ এক ও অভিন্ন৷ এক পরমপুরুষ সবার আরাধ্য৷

তিনি বলেন পরমপুরুষকে পেতে হলে অন্তরে তাঁর জন্যে আকুতি বাড়াতে হবে৷  শ্রদ্ধাভক্তির জাগরণ ঘটাতে হবে৷ যখন মনে ভক্তি জাগবে, তখন দেখবে চারিদিকে শুধু এক সত্তা৷ বন্যার সময় যেমন মানুষ দেখে চারিদিকে শুধু জল আর জল তেমনি মনে প্রকৃত ভক্তি জাগলে সে দেখবে চারিদিকে শুধু এক সত্তা কোনও ভেদবিভেদ নেই৷

ধ্যানেশানন্দজী বলেন---কোনও মানুষকে ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে রাখবে না যাকে লোকে খারাপ মানুষ বলছে, তারও মধ্যে দেখবে কিছু গুণ আছে, সেই ভাল গুণের প্রশংসা করলে সেও ভাল হয়ে যাবে৷ মার্গগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি এটাই বলতেন, তিনি আশীর্বাদ দেওয়ার সময় বলতেন---‘সর্বে ভদ্রানি পশ্যন্তু’৷ সবাই সব জিনিসের ভাল দিকটা দেখুক৷ তিনি বলতেন, আধ্যাত্মিকতার শক্ত ভিত্তির ওপর না দাঁড়াতে পারলে তুমি দৃঢ়ভাবে নৈতিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে আধ্যাত্মিক উন্নতিও করতে পারবে না, সমাজের যথার্থ কল্যাণ করতে পারবে না৷ আর যে ধর্মকে রক্ষা করে ধর্ম তাকে রক্ষা করে৷ ধ্যানেশানন্দজী আরও বলেন---গুরুর প্রতি ঐকান্তিক ভক্তি ছাড়া আধ্যাত্মিক পথে অগ্রসর হতে পারবে না৷ একমাত্র গুরু-কৃপাই আধ্যাত্মিক সাধককে তার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে৷ আচার্য ধ্যানেশানন্দজীর দুইবেলা আধ্যাত্মিক প্রবচন ছাড়াও প্রত্যহ বৈকালে ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত বিশেষ ধর্মীয় আলোচনা সভার ব্যবস্থা করা হয়৷ আনন্দমার্গের অনেক প্রবীণ অবধূত ও অবধূতিকা ছাড়াও বহু বিশিষ্ট জন এই ধর্মীয় আলোচনা সভায় আনন্দমার্গের বিভিন্ন দিকের ওপর বক্তব্য রাখেন৷ এই তিন দিন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন আচার্য চিতিবোধানন্দ অবধূত, আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত, আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ করুণা আচার্যা, শ্রী মনোরঞ্জন শিকদার, শ্রী জীবনধন বর্মণ, শ্রী প্রবীর কুমার সরকার, শ্রী রমনীকান্ত রায়, শ্রী ঋষিকেশ সরকার প্রমুখ৷

এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য বাবু মনোরঞ্জন শীল সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারী পদাধিকারী৷ তাঁরা আনন্দমার্গের উদার ও অসাম্প্রদায়িক ধর্মীয় আদর্শের ও আনন্দমার্গের শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণমূলক বহুমুখী কর্মসূচীর ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ তাঁরা প্রয়োজনে আনন্দমার্গের এই সেবামূলক কর্মযজ্ঞে যথাসম্ভব সাহায্য করারও প্রতিশ্রুতি দেন৷