বাঙলার ইতিহাসে রাখী-বন্ধন  উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য

লেখক
মোহন সরকার

ধর্মীয় উৎসব ছাড়াও বাঙলার ইতিহাসে  রাখী-বন্ধন উৎসব এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করে  ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ সালে  যখন বাঙ্লার গভর্ণর  জেনার্যাল  বাঙ্লাকে দুভাগে বিভক্ত  করার কথা ঘোষণা করেছিলেন, তখন  তার বিরুদ্ধে বাঙ্লায় বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালী ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্যে সংক্লল্প গ্রহণের মাধ্যমে হিসেবে রাখীবন্ধন উৎসবের সূচনা করেছিলেন তখন হিন্দু-মুসলমান  নির্বিশেষে  সবাই পরস্পর  রাখী পরিয়ে বাঙালী ঐক্যের শপথ নিয়েছিলেন।

১৯০৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ  শাসকগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গভর্ণর জেনার্যাল লর্ড কার্জন তাদের চিরাচরিত  ডিভাইড্ এ্যাণ্ড রুল পলিশির  মাধ্যমে  বাঙ্লাকে  দুভাগে বিভক্ত করে দিয়েছিলেন অবিভক্ত বাঙ্লাকে সরাসরি দুইভাগে বিভক্ত করে এর পূর্ব ও উত্তরাংশ নিয়ে  ইষ্টার্ন বেঙ্গল এ্যাণ্ড অসম প্রদেশ তৈরী করা হল এর মধ্যে  নেওয়া হল--- ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর,  বাকেরগঞ্জ, টিপেরা, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল, রাজসাহী, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, রঙপুর,  বগুড়া, এগুলি ইষ্টার্ন বেঙ্গল এ্যাণ্ড অসম প্রদেশের  লেকটানেন্ট---গভর্ণর-এর শাসনের অধীনে  রাখার  সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হল আর  বাঙলার  বাকিটাকে  রাখা  হল  ফোর্ট উইলিয়ম প্রেসিডেন্সিস্থিত  মূল বেঙ্গল ডিভিসনের  অধীনে এইভাবে  বাঙলাকে সরাসরি  দুই  ভাগে  বিভাজিত করার সিদ্ধান্ত  ঘোষণা  করা হয়েছিল।

এর প্রতিবাদেই  বঙ্গভঙ্গ রদ  আন্দোলনের মধ্য দিয়ে  বাঙলায় অগ্ণিযুগের  সূত্রপাত  হয়েছিল  বর্তমানে  টেনে  আমরা বলতে চাই,  অসমে বর্তমানে  নূতন নাগরিকপঞ্জী করে প্রায়  ৪০ লক্ষ  বাঙালীর নাগরিকত্ব কেড়ে  নিয়ে  নিয়ে তাদের অসম থেকে তাড়াবার  চক্রান্ত  করছে এখানে স্মরণ করা যেতে পরে, ব্রিটিশ সরকার অসম প্রদেশের আর্থিক দুরবস্থা ঘোচানোর  জন্যে বাঙ্লার একটা বড় অংশকে  অসমের  সঙ্গে যুক্ত করে দিয়েছিল তাই  বর্তমান অসমের  গোয়ালপাড়া, কোকরাপাড়া, লামডিং, হোজাই, কাছাড় প্রভৃতি এলাকা বাঙ্লারই এলাকা অসমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাছাড়া,  দেশ বিভাগের  বলি হয়ে  যারা পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে এসেছে, তারাও এখানকার বৈধ নাগরিক তাই  কোনোযুক্তিতেই অসমের  বাঙালীদের  বৈধ নাগরিকত্ব অস্বীকার করা  যায় না  তা সত্ত্বেও অসমে  বর্তমানে প্রায় ৪ লক্ষ বাঙালী নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার  চেষ্টা  চরম অন্যায় এর প্রতিবাদে সমস্ত বাঙালীদের ঐক্যবদ্ধ  হতে হবে।

১৯০৫ সালে  ঋষি কবি  রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুরের নেতৃত্বে বাঙালীরা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলের হাতে  ঐক্যের  প্রতীক রাখী পরিয়ে  দিয়েছিলেন, আজও সেই রাখীবন্ধনকে স্মরণ  করে সমস্ত  বাঙালীদের  বিরুদ্ধে সমস্ত অন্যায়ের  প্রতিবাদ করার আহ্বান জানাই স্মরণ করি  কবি রবীন্দ্রনাথের  সেই বাঙালী-ঐক্যের  গান ---

বাংলার মাটি, বাংলার জল

বাংলার বায়ু, বাংলার ফল

পুণ্য হউক , পুণ্য হউক

পুণ্য হউক , হে ভগবান

বাংলার ঘর,  বাংলার হাট

বাংলার বন, বাংলার মাঠ,

পুণ্য হউক , পুণ্য হউক

পুণ্য হউক , হে ভগবান

বাঙালীর পণ, বাঙালীর আশা

বাঙালীর কাজ , বাঙালীর ভাষা

সত্য হউক , সত্য হউক

সত্য হউক , হে ভগবান

বাঙালীর প্রাণ, বাঙালীর মন

বাঙালীর ঘরে যত ভাইবোন

এক হউক , এক হউক

এক হউক , হে ভগবান