বেকার সমস্যা সমাধানে ব্লক ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা  ও সমবায়ের বাস্তবায়নই একমাত্র পথ

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারত যুক্তরাষ্ট্র এক বিশাল দেশ৷ এর প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২১টির অধিক পঞ্চায়েত আছে৷ আর প্রায় ১১ লাখ ৬৫ হাজার ২১০টিরও অধিক গ্রাম আছে৷ সেই অনুপাতে বিভিন্ন স্থানের ভৌগোলিক পরিবেশ এক নয়, মরুভূমি, পার্বত্য এলাকা, অসমানতা, সমতলভূমি, বনাঞ্চল, উর্বর, অনুর্বর ভূমি আছে৷ বিভিন্ন এলাকার নানা প্রাকৃতিক কারণে নানা ধরণের বনজ, কৃষিজ, খনিজ সম্পদ আছে৷ নানা ভাষাভাষীর ভাইবোনেরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে কালাতিপাত করেন৷ প্রতিটি পঞ্চায়েত ও গ্রামকে আর্থিক দিক থেকে স্বয়ংভর করে’ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই কংগ্রেসী আমলে ব্লক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়৷ আঞ্চলিক ভিত্তিতে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত পরিকল্পনাকে যদি জোর দেওয়া হয় তাহলে মনে হয় অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রিকরণে ভারত যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীতে সত্যই এক আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হবে৷

আমাদের সবই আছে কিন্তু সমাজ উন্নয়নে যা যা করণীয় তা যদি সত্যই ব্লক পঞ্চায়েত ও গ্রাম স্তরে করা যেত তাহলে বর্তমানে যে করুণ ছবি আমরা দেখি তা দেখতে হ’ত না৷ সারা ভারতে আর্থিক তথা সামাজিক উন্নয়ন দীর্ঘ ৭২ বছরে অবশ্যই হ’ত৷ চাকরীর লক্ষ্যে গ্রাম, পঞ্চায়েত ছেড়ে ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের মানুষদের ভাগান্বেষণে বেরোতে হ’ত না৷

যা নিয়ে আলোচনার শুরু সেটারই আলোচনায় কিছুটা চিন্তা করা যায় যাতে হতভাগ্য গরীব দেশবাসীরা আর্থিক অবসাদ থেকে মুক্ত হতে পারে৷  পঞ্চায়েত কেন্দ্রিক গ্রামগুলিকে যদি আর্থিক দিক থেকে কিছুটা স্বয়ংভর করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে গ্রামবাসীর অধিকাংশ কর্মক্ষম যুবক-যুবতী বেকার হয়ে থাকবেন না৷ কৃষিভিত্তিক ভারতকে যত দূর সম্ভব কৃষির উন্নয়নে বিজ্ঞানসম্মতভাবে চাষাবাদকে আধুনিকীকরণ করে তুলতে হবে৷ সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ যাতেকরে হয় সেদিকে নজর দিতে হবে৷ কৃষিজমি খণ্ডীকরণ বন্ধ করতে হবে৷ আলপথে চাষের জমি অনেক নষ্ট হয়৷ কৃষিজাত দ্রব্যকে শিল্পে রূপান্তরিত করে তাকে নানা ধরণের ভোগ্যপণ্যে পরিণত করে তাকে ক্রেতার হাতে তুলে দিতে হবে৷ উৎপাদন ও বণ্টনে ব্যষ্টি মালিকানার পরিবর্তে সমবায় প্রথাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, কারণ গণতন্ত্রে সামাজিকীকরণই হ’ল বেকার সমস্যা সমাধানের গুরুত্বপূর্ণ দিক৷ প্রকৃত গণতন্ত্র সার্থক হয় সামাজিকীকরণের মধ্যে দিয়ে৷ এতে সব ব্যাপারে দায়বদ্ধতা থাকে সমাজের জনগণের ত্যাগ, সেবা, ন্যায়পরায়নতার ওপর৷ ছোট ছোট সমবায় উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে গড়ে উঠবে স্থানীয় ব্যষ্টিদের নিয়ে৷ তারা সেখানে শিল্পগুলিকে নিজেদের বলে মনে করবে৷ সমবায়ে কেউ কারোর অধীন নয়৷ শ্রমিক ও সমবায়েরমালিক৷ আন্তরিকতা,উদারতা যেখানে কর্মদ্যোগকে সার্থক করে তুলবে৷ প্রতিটি কর্মক্ষম ব্যষ্টি উপার্জনে সক্ষম হবে ও তারা আর্থিক দিক থেকে স্বচ্ছল হবেন৷ আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে হবে৷ কেউ কারোর প্রভু নয়, দায়বদ্ধতা সকলকে সচেতন করে তুলবে৷ দেশ সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে অবশ্যই উন্নত হবে৷

প্রতিটি কাঁচামালের চরমতম উপযোগ নিতে হবে৷ নোতুন নোতুন ভোগ্যপণ্যে দেশ সমৃদ্ধ হবে৷ সেগুলো বাইরের দেশে রপ্তানি করে দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে৷

বর্তমানে ভারতের রাজ্যগুলি আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে এগোতে পারছে না, তার মূল কারণ হ’ল---ব্যষ্টিকেন্দ্রিক ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় লাভের মাত্রা অত্যধিক হওয়াতে, সেই উৎপাদিত সামগ্রী সরাসরি প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে কিন্তু সমবায় পদ্ধতিতে উৎপাদিত সামগ্রী সমাজ সেবায় উৎসর্গীকৃত হওয়াতে লাভও নয়, আর লোকসানও নয় এই মানবিক নীতির ওপর নির্ভরশীল হবে৷ অন্য প্রধান কারণ হ’ল গণতন্ত্রকে শোষণমুক্ত সমাজ ঘটনের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকারকে জনগণের সরকার হতে হবে৷ কিন্তু এই গণতন্ত্রে ভোট জনগণ হয়তো দেয়কিন্তু সরকার চলে ধনিক শ্রেণীর নির্দেশে৷

অর্থনীতি ব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে৷ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে বিকেন্দ্রীক করে সামাজিকীকরণকে সার্থক করে গড়ে তুলতে হলে সমবায়কে সর্বক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ এতে নাগরিকদেরও নৈতিক দায়বদ্ধতা থাকবে৷ এটাকে তাই ব্যষ্টিই গড়ে তোলে সমাজ, যেখানে সমষ্টি স্বীকৃতি পায়৷ সমষ্টির কল্যাণে সংঘবদ্ধ ভাবে আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে একসঙ্গে অংশ নিতে হবে সকলকে৷ সেখানে শোষণ থাকবে না, থাকবে শুধু সকলকে নিয়ে বাঁচার তাগিদ৷ আর সবাইকে বাঁচতে সুযোগ দেওয়া৷ এটাই  হ‘ল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের পথ৷ সমস্যা সংকূল মানব সমাজের এগিয়ে চলার দিশা৷

শোষণমুক্ত সমাজ না হলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? আমাদের স্মরণে রাখতে হবে ত্রিভূজাকৃতি ভারতবর্ষ হ’ল পৃথিবীর কেন্দ্রের নাভিবিন্দু৷ এখানে মুনী-ঋষিগণ আধ্যাত্মিক তন্ত্রসাধনার মন্ত্র দিয়ে সেই পরম সত্যকে উপলব্ধি করেছেন৷ তাই৷, ভারতবর্ষই হ’ল মানব মুক্তির পথের দিশারী৷ বিচ্ছিন্নতা, সাম্প্রদায়িকতার স্থান এখানে নেই৷ এটি স্থূল ভৌ ভূমিক্ষেত্র নয়৷ এটা মহান কর্মভূমি৷ তাই ভারতবর্ষের মানুষই বিশ্বকে মুক্তি ও প্রেমের বাণী শুনিয়েছেন৷ বর্তমানে সেই মহান ব্যষ্টিদের বংশধর হয়ে বিশ্বকে সেই মহান পথের সন্ধান দিতে হলে আজ ভারতকে আধ্যাত্মিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই মানবতাবাদের কথা শোনাতে হবে৷ সেই পথ হ’ল ‘প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের পথ৷ নব্যমানবতাবাদ হবে যার ভিত্তি৷