বিদ্বংসী রাজনীতি

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

এখন বাঙলা তোলপাড় বিধবংসী আম্ফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়াকে কেন্দ্র করে৷ ক্ষমতাসীন দলের একাংশের  পাশাপাশি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি চিৎকার জুড়েছে..দুর্নীতি ও স্বজন পোষণ হয়েছে বলে, কিছু কিছু প্রকাশ্যেও এসেছে  সংবাদ মাধ্যম-এর দৌলতে৷ বিরোধীদের দাবী-যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যেন সরকারী সাহায্য কুড়ি হাজার টাকা করে  পায়৷ বিরোধীদের এ দাবীর প্রতি যে কোনো শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সহমত পোষণ করবেন৷ এ নিয়ে কোনো বিতর্কই থাকতে পারে না৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও এব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন৷

কিন্তু ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি বা স্বজনপোষণের ঘটনা কী বাঙলাতে এই প্রথম ঘটল? বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সদস্যদের প্রতি ত্রাণ বন্টন এ বৈষম্যের অভিযোগ এর আগেও বাঙলায় উঠেছে বারবার৷ ৷ চল্লিশ বছরের বেশি সময় বঙ্গ রাজনীতির যেটুকু খবর রেখেছি তাতে এই স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির ঘটনায় বিস্মিত বা বিচলিত হয়নি৷ শুধু ত্রাণ কেন দীর্ঘ ত্রিশ চল্লিশ বছর যাবৎ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি দেখতে দেখতে ওসব গা সওয়া হয়ে গেছে৷ মাঝে মাঝে  মনে হয় ভোট সর্বস্ব রাজনীতিতে বোধহয় এসবই করতে হয়, না হলে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না৷ এখন সমস্যাটা হচ্ছে অন্য জায়গায়৷

আশির দশকে ও তারপরে সংবাদ পত্র ছাড়া অন্য কোনো গণমাধ্যম এর তেমন কোনো প্রভাব ছিল না৷ ফলে যেটুকু খবর জানতে পারা যেত তাও ঘটনার ২৪ঘন্টা পরে খবরের কাগজ পড়ে৷ আবার অনেক জায়গায় বিশেষ বিশেষ সংবাদ পত্রকে ঢুকতেও দেওয়া হত না৷ এই ছিল একসময়ের অবস্থা৷ আর এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা৷ কোথাও কিছু একটা ঘটলেই পাঁচ মিনিটের  মধ্যে  এখন ঘরে ঘরে খবর পৌঁছে যায় বৈদ্যুতিন সংবাদ চ্যানেলের মাধ্যমে৷ তাছাড়া খবর তৈরী করার জন্য  ও রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন ভাবে সক্রিয় থাকে৷ এখন সমাজ মাধ্যম-এ অনেকরকম ভাবে মিথ্যা কে সত্য বলে প্রচার চালিয়ে একটা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে চলেছে বলেও শোনা যায়৷

ভাববেন না, এসব বলে আমি বর্তমানের কোনো স্বজনপোষণ বা দুর্নীতি কে সমর্থন করে তার স্বপক্ষে কথা বলতে চাইছি৷ আমার বক্তব্য অন্য৷ ভারত স্বাধীন হয়েছে আজ থেকে ৭৩ বছর আগে৷ ঝড় বা বন্যা এগুলো প্রাকৃতিক দুর্র্যেগ৷ এগুলোর ব্যাপারে কারোরই কোনো হাত নেই৷ এধরনের বিপর্যয় ঘটলে দলমত নির্বিশেষে সকলকেই ত্রাণ দিতে হবে৷ ভেঙে যাওয়া ঘর বাড়ি ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব ও সরকারকেই নিতে হবে ও তা দ্রুততার  সঙ্গেই করতে হবে৷

ইন্দিরা আবাস যোজনা বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা , বাংলা আবাস যোজনা ইত্যাদি গালভরা নাম দীর্ঘ দিন ধরেই শুনছি,কত শত বাড়ি তৈরী হচ্ছে তার ফিরিস্তিও সংবাদপত্র মারফৎ পাচ্ছি৷ ভাবতাম মাটির বাড়ি বোধহয় একটা আধটা কোথাও কোথাও দেখতে পাব! কিন্তু সাম্প্রতিক ঝড়ের বিভিন্ন এলাকার বাসস্থানগুলোর যে হাল দেখলাম তাতে করে মনে হলো ঐসব আবাস যোজনায় কাদের বাড়ি হচ্ছে, আর কোথায় বা হচ্ছে? বন্যাপ্রবণ ও ঝঞ্ঝা কবলিত বিশেষ এলাকাগুলিতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যদি পাকা বাড়ি তৈরী করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলত তাহলে ঐ সব এলাকায় হয়তো কাঁচা বাড়ি এতদিনে খুঁজে পাওয়া যেত না৷  আর বছর বছর পলিথিনের জন্য মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে হোতো না৷ কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! কে শোনে কার কথা?

এ এক অদ্ভূত  রাজনীতি! মানুষের দুঃখ কষ্ট কে সম্বল করে ত্রাণের নামে রাজনীতি করবো, কিন্তু মানুষকে পরিত্রাণ দেবো না৷ মানুষকে মানুষ হিসাবে নয়, কেবলমাত্র ভোটার হিসাবে দেখবো, তাই তো এত সমস্যা৷ চল্লিশ বছর ধরে একই জিনিস দেখে চলেছি৷ সবাইকে বলব এবার একটু ভাবুন৷ আন্তরিকভাবেই চিন্তা ভাবনা করুন৷ এমন ব্যবস্থাটাই কী চলতে থাকবে, নাকি মানুষের নূ্যনতম চাহিদা অন্ন,বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার দাবীতে আমরা এবার সরব হব?