বিজেপির শেষের সেদিন আসছে

লেখক
এইচ.এন. মাহাত

 ‘‘একের স্পর্ধারে কভু নাহি দেয় স্থান দীর্ঘকাল নিখিলের বিরাট বিধান৷’’

প্রাকৃতিক নিয়মে অহংকারী দল বা নেতৃত্বের পতন খুব তাড়াতাড়ি হওয়াই উচিৎ৷ একটি প্রবাদে শুনতাম ‘‘অহংকার পতনের কারণ৷’’ এতে নাকি জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়৷ বঙ্গদেশে সিপিএমের আমলে বঙ্গেশ্বর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মহাশয় ক্ষমতার গর্বে মদমত্ত হয়ে বলে ছিলেন--- রাজ্যটা আমরা চালাই, সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে আমরা যা বলবো তাই হবে৷ উনি বলেছিলেন ওঁরা ৩৪ আমরা ২৩৪ আমাদের   কথাই শেষ কথা৷ আর এক বঙ্গেশ্বর মিষ্টার ‘বসু’ বলেছিলেন জনগণতো ভেড়ার পাল, আমরা যেভাবে চালাবো জনগণ সেইভাবে চলবে৷

ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত বাঙালী জাতির শত্রু জড়বাদী হিংস্র পশুদের বাঙলার জনগণই রাজনৈতিকভাবে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে ছিলেন৷

কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী/স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে চুনোপুঁটি নেতৃত্বের একই শব্দ৷ দেশটা বিক্রি হোলো বা জনগণের ক্রয়ক্ষমতা আছে কী নেই তাদের বেঁচে থাকবার,অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুনিশ্চিত আছে কি না তা দেখার কী?

গদিটা যে কোনো বিনিময়ে রক্ষা করা দরকার৷ বিজেপি সরকার জনগণের যে রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিকভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজন আছে সেটা মনে করলো না৷

ভারতের অর্থনৈতিক ঐতিহ্য কৃষিক্ষেত্র যা আমাদের দেশের গর্ব, তারওপর এবার সরকারের কালো হাতের ছায়া পড়েছে৷ বিজেপি দল বা সরকারের একটাই এজেন্ডা লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রি করে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকারকে বিলুপ্ত করে পরাধীনতার পরিবেশ তৈরী করা৷ এবার তাদের কুনজর পড়লো কৃষিক্ষেত্রে৷ কেন্দ্রীয়  বিজেপি সরকার কৃষি ও কর্ষক বিরোধী তিনটি আইন তৈরী করে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে শোষণের পথে ঠেলে দিয়ে বহুজাতিক সংস্থার কাছে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করেছে৷

কর্ষকরা ওই তিনটি কৃষি আইন বাতিল করাল দাবী নিয়ে দিল্লীর চারিদিকে বেষ্টনী করে তিন মাস ধরে শান্তভাবে রাজনৈতিক আন্দোলন করে চলেছে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়ে বলে চলেছেন আমরা রাজ্যসভায় লোকসভায় সংখ্যা গরিষ্ঠ৷ আইন পরিষদ, প্রশাসন সব কিছু আমরা তৈরী করি, তাই আমরা যে আইন তৈরী করবো জনগণ সেই আইন মেনে চলতে বাধ্য হবে৷ এটা শুনে মনে হচ্ছে সিপি এমের বঙ্গেশ্বরের প্রতিধবনি হয়ে চলেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠস্বরেও৷ একই দাম্ভিক অহংকারের প্রতিধবনি সমগ্র ভারতের নাগরিকদের চিন্তার কারণ৷ আগামীতে কি প্রাকৃতিক নিয়মেই বিজেপি সরকারের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে! পঞ্জাব পুরসভা নির্বাচন ও দিল্লীর পুরসভার উপনির্বাচন থেকে কী পতনের সূত্রপাত হয়ে গেল বিজেপির!

এবার আসা যাক পশ্চিম বাঙলার ভোট৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকার  তাদের পূর্ণ শক্তি প্রদর্শনে কোন প্রকারের ক্ষামতি রাখছে না৷ সেটা অর্থ হোক বা লোক বল হোক৷ নির্বাচন নির্ঘন্টে কেন্দ্রের দাদাগিরিতে নির্বাচন কমিশন যেমন হাতের পুতুল হয়ে নাচছে তেমনি সেইভাবে সুর ধরেছে৷ বিজেপি বঙ্গ দখলের রাজনীতিতে দেখালো রাজ্যকে দখল করতে আট দফায় ভোটপর্ব৷ যার জন্য প্রধানমন্ত্রী (২০ বার আসবেন) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (৩০/৪০ বার আসবেন) সহ সারা ভারতের সকল নেতাদের  বঙ্গবাসীকে পরিচয় করিয়ে দিতে৷ সমগ্র ভূভারতে  কেউ এমনটি শুনেছে কী? বঙ্গ জয়ের জন্য নির্বাচনী অর্থ বরাদ্দে বিজেপি সরকার যে টাকা খরচ করবে তার হিসাবে কে দেখবে এটা একটা বৃহৎ প্রশ্ণ? বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার বঙ্গ জয়ের নামে যাই করুক না কেন বঙ্গবাসীর মন জয় করা সম্ভব হবে কী? কিছু মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতককে কোটি টাকার বিনিময়ে কেনা যেতে পারে, বঙ্গ দখলের জন্য জনগণের  সহানুভূতি তাদের কাছে আছে কী ? এত খরচের বহর নিস্ফল হবে না তো৷ সফল হলেও বাঙালীর দুর্র্ভেগ বাড়বে বৈ কমবে না৷ কারণ এই নির্বাচনে বিজেপি যে হাজার হাজার কোটি খরচ করবে সেটা সুযোগ পেলে বাঙালীর পকেট থেকেই আদায় করবে৷ অতএব বঙ্গবাসী মুষ্টিমেয় কয়েকজন মীরজাফরের পেছনে ছুটে বাঙলার সর্বনাশ করবার আগে দশবার ভেবে দেখবেন৷