‘‘বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহারো’’

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

যোগ আজ সারা পৃথিবীতে বহু আলোচিত ও অনুশীলিত৷ কিন্তু যোগের তাৎপর্য, যোগ অভ্যাসের প্রভাব ও যোগের আসল লক্ষ্য এক কথায় যোগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা খুব কম মানুষেরই আছে৷ আর মানুষের অজ্ঞতার সুযোগে কিছু  স্বার্থপর মানুষ যোগের অপব্যবহার করছে ও যোগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের পথ করে নিচ্ছে৷ অনেকে আবার যোগ বলতে শুধু আসন প্রাণায়ামকেই বোঝে৷ তাই যোগাসন কথাটাই বহুল প্রচলিত৷

প্রকৃতপক্ষে যোগ হল---যোগসাধনা মানুষের অস্তিত্ব ত্রিস্তরীয়, শারীরিক, মানসিক  ও আধ্যাত্মিক৷ তাই শারীরিক সক্ষমতা, মানসিক বিকাশ  ও আধ্যাত্মিক প্রগতির জন্যে মানুষের যোগ সাধনাই একমাত্র অবলম্বন৷ তাই  যোগসাধনা হ’ল--- মানস-শারীরিক, মানসিক, মানসাধ্যাত্মিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন৷ এখন যোগ সম্পর্কে নানা ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে মহান দার্শনিক পতঞ্জলির মতে যোগ হ’ল---‘‘যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধ,’’ যোগের অপর ব্যাখ্যা হল--- ‘‘সর্ব চিন্তা পরিত্যাগ ঃ নিশ্চিন্তে যোগ উচ্যতে৷ এখন সংস্কৃত যুঞ্জ ধাতুর উত্তর ঘঞ প্রত্যয় যোগ করা যেমন ২ +২ =৪, আবার যু+ঘঞ করে যোগ এর অর্থ হ Unificaltion অর্থাৎ একের সঙ্গে এক মিলেমিশে এক হয়ে যাওয়া৷ যোগের প্রকৃত অর্থের সঙ্গে যোগের আলোচ্য সংজ্ঞা দুটির কোন সম্পর্ক নেই৷ যোগের প্রকৃত সংজ্ঞা হলো--- ‘‘সংযোগো যোগ ইত্যুক্ত, জীবাত্মা-পরমাত্মান,৷ ‘‘অর্থাৎ জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যোগ৷ এটাই মানব জীবনের পরম লক্ষ্য৷ এই যোগ সাাধনার মাধ্যমেই মানুষ পার্থিব জগতের কর্তব্য করতে করতে পরম লক্ষ্যের পানে এগিয়ে চলবে৷ এই যোগ শুধুমাত্র অনুশীলন করলেই হয় না, তাই যোগ হচ্ছে সাধনা--- যোগসাধনা৷ আর এই যোগসাধনাই  মানব ধর্ম৷ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন--- ‘‘পশু বলছে সহজ ধর্মের পথে ভোগ করো, মানুষ বলছে--- মানব ধর্মের সাধনা  করো৷’’ এই মানব ধর্মের সাধনাই যোগসাধনা যা মানুষকে গড়ে তোলে৷ সেই মানুষ,যে মানুষ মহাবিশ্বের জড়-চেতন সমস্ত কিছুর মধ্যেই পরমাত্মাকে দেখাবে আবার পরমাত্মার মধ্যেই সবকিছুকে দেখবে৷ তাই যোগ  সাধকের কাছে মানুষের সঙ্গে মানুষের কোন ছোট বড় উঁচু-নিচু ভেদ-বিভেদ থাকবে না৷ এই বিশ্বের সবকিছুর সঙ্গে যখন পরমাত্মার যোগ আর যোগ সাধকের ধ্যেয় যখন পরমাত্মা তখন এই মহাবিশ্বের সবাই তার আপন, কবির কথায় বলি--- ‘‘বিশ্বসাথে  যোগে যেথায় বিহারো, সেই খানে যোগ তোমার সাথে আমারও৷’’ তাই এই পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীন অপ্রাণীত সত্তার প্রতিই মানুষের কর্তব্য আছে৷ প্রভাত সঙ্গীতের ভাষায় শেষ করি ---

    ‘‘মানুষ যেন মানুষের তরে সবকিছু করে যায়,

একথাও যেন মনে রাখে

                                              --- পশুপাখি তার পর নয়,

তরুও বাঁচিতে চায়৷