বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্ণকে বাস্তবায়িত করতে গেলে প্রতি ম্যাচেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে হয়

সংবাদদাতা
ক্রীড়া প্রতিনিধি
সময়

বার্মিংহ্যামে বাঙলাদেশকে  হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল ইণ্ডিয়া৷ ইংল্যাণ্ড ও বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে বুমরা ছাড়া কেউই বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠতে পারেননি৷ যদিও রোহিত-কোহলি-পাণ্ডিয়ারা ভাল খেলেছেন---কিন্তু বিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার যে কিলার-ইন্সটিংট তা দেখা যায়নি কোহলি ব্রিগেডের মধ্যে৷ তবে একথা ঠিক যে বিপক্ষের কয়েকজন খেলোয়াড় ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন৷

কোন সন্দেহ নেই ওপেনিং জুটি নিয়ে নিশ্চিন্ত নয় এই দল৷ বাঙলাদেশ ম্যাচে অবশ্য রাহুল ভাল খেলেছেন৷ কিন্তু সেট হয়ে যাওয়ার পর তিনি আউট হলেন৷ ফলে ভারতের রান সাড়ে তিনশোয় পৌঁছল না৷ তবে প্রশংসা করতে হবে রোহিতকে৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলছেন তিনি৷ প্রশ্ণ এখানেই---রোহিত কোনদিন ব্যর্থ হতেই পারেন৷ তখন অন্য ওপেনারকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে৷ ফাইনালে যাওয়ার জন্য ভারতকে ইংল্যণ্ডের মুখোমুখি হতে হলে ব্রিটিশদের ওপেনিং জুটিকে ধাতস্থ হতে দিলেই বিপদ৷ বড় রান গড়ার ভিত গড়ে ফেললে ভারতের ব্যাটসম্যানদের ওপরে চাপ পড়ে যাবে৷ তাই আগামী প্রতিটি ম্যাচই ‘ডু আর ডাই’-এর ম্যাচ৷ চাপের মুখে ঠাণ্ডা মাথায় বিপক্ষকে বেকায়দায় না ফেলতে পারলে সফলতা আসবে না৷ নক-আউট পর্যায়ে হয়তো ভারতেরহয়ে বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে যাঁরা নেমেছিলেন তাঁরা সবাই প্রথম এগারোয় থাকবেন না৷ কারণ পাঁচ বোলার নিয়ে ভারত শক্তিশালী বিপক্ষের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে না৷ ছয়জন স্পেশালিষ্ট বোলার অথবা পাঁচ বোলার ও দুই জন অল রাউণ্ডার দলে থাকবেন৷

বাঙলাদেশের নয় নম্বর ব্যাটসম্যান ভাল রান করে গেছে৷ এটা কখনোই ভারতীয় দলের কাছে কাম্য নয়৷ পাঁচ বা ছ’টি উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বিপক্ষকে কিছুতেই ধাতস্থ হতে দেওয়া ঠিক নয়৷ ক্রিকেটে বিপক্ষকে সবসময় অল-আউট করার মানসিকতা নিয়ে বোলিং ও ফিল্ডিং করা দরকার৷

বাঙলার প্রখ্যাত খেলোয়াড় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন ভারতীয় দলে এ মুহূর্তে কার্ত্তিকের বদলে জাদেজাকে রাখা উচিত ছিল৷ কারণ ফিল্ডিং-এ অন্ততঃ পক্ষে ২০ রান বাঁচিয়ে দিতে পারে, ব্যাটিং এ দ্রুত রানও করতে পারে ও ওয়ান-ডে ম্যাচে বোলিং এ তাঁর ওপর ভরসা করা যেতে পারে৷ তাই তিনি জাদেজাকে কার্ত্তিকের থেকে বেশি উপযুক্ত হিসাবে মনে করছেন৷

এরপর মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটিং নিয়েও বহু প্রশ্ণ উঠছে৷ ২০১১ সালের ধোনি ও ২০১৯ সালের ধোনির মধ্যে অনেক পার্থক্য৷  আসলে মাহিকে আর একটু ওপরের দিকে ব্যাট করতে পাঠালে ভাল হ’ত৷ কেননা সতীর্থকে সঠিক সহযোগিতা করার কৌশল ওঁর মধ্যে রয়েছে৷ পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ভারতীয় দলে এ মুহূর্তে ধোনীকেই করতে হচ্ছে৷ 

যাইহোক রাউণ্ড রবিন লীগের ম্যাচ ও সেমিফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচ এক নয়৷ এইসব ম্যাচে একটি ভুল মানে সব শেষ৷ নিজেদের দক্ষতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে না নিয়ে যেতে পারলে কখনোই সেমিফাইনাল বা ফাইনাল ম্যাচ জেতা যায় না৷ সুযোগ আসলে তাকে কাজে লাগাতে না পারলে বিশ্বজয়ী হওয়ার স্বপ্ণটা বাস্তবায়িত হয় না৷ মনে রাখতে হবে বিপক্ষ দল সহজে হার মানবে না৷ বর্তমানে ইংল্যাণ্ড বা অষ্ট্রেলিয়ার প্রতিটি খেলোয়াড় যথেষ্ট দক্ষ৷ যে কেউ একক দক্ষতায় ছিনিয়ে নিতে পারে সম্ভাব্য জয়কে---ভারতকে এ ব্যাপারটা মাথায় রেখে এগোতে হবে৷ বিশ্বজয়ী হবার দোড়গোড়ায় এসে খালি হাতে ফিরতে চাইবে না কোনও দলই৷ তাই বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই বিপক্ষকে টেক্কা দিয়ে ছিনিয়ে নিতে হবে মহারণের জয়ের পতাকা৷

আবেগ যা-ই বলুক না কেন, আফগানিস্তান, ইংল্যাণ্ড ও বাঙলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের ব্যাটিং, বোলিং ও মানসিকতা কখনোই বিশ্বজয়ী হয়ে ওঠার উদাহরণ হিসেবে প্রকাশ পায়নি৷ তবে সময়মত জ্বলে ওঠার ক্ষমতা ভারতীয় ক্রিকেটারদের যে মজ্জাগত তার প্রমাণ ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাস---২০১৯ বিশ্বকাপ ইতিহাসের ইতিহাস