বোটারগন সজাগ হোন দলীয় স্বার্থে পবিত্র নির্বাচনকে যেন আর কালিমালিপ্ত না করা হয়!

লেখক
প্রভাত খাঁ

গণতন্ত্রে সকলেরই মতামত দান করার অধিকার আছে এটাই আইনসিদ্ধ৷ বর্ত্তমানে এই কথাটাই প্রবাদবাক্যের মতো হয়ে গেছে৷ ভারতের গণতান্ত্রিক অধিকারটির জন্য শুধু বর্ত্তমানে ১৮ বছর বয়স হলেই বোট দানের অধিকার পাওয়া যায়৷ তবে প্রার্থী হতে হলে আরো কিছু বছর অপেক্ষা করতে হয়৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় দেশকে চিনতে জানতে ও জনসেবায় যুক্ত হতে হয় অর্থাৎ জনসংযোগ কিছুটা দরকার হয়৷ কারণ রাজনৈতিক নেতা আকাশ থেকে তো পড়ে না৷ তাই বাস্তবের মাটিতে যিনি নির্বাচনে দাঁড়াবেন তাঁকে কিছুটা জনগণের অভাব অভিযোগ জানতে হয় ও সেবার দ্বারা কিছু জনসেবা করে পরিচিত হতে হয়৷ অতীতের নেতাদের দেখা গেছে প্রচণ্ড জনসংযোগ ছিল নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে মানুষের সঙ্গে পরিচয় ছিল৷ তাই তাঁদের জন দরদী হিসাবে চিনতো ও শ্রদ্ধা করতো৷ তাই প্রথম দিকে অধিকাংশ ব্যষ্টি যাঁরা এই রাজনীতির পথে আসতেন তাঁরা দেশ সেবক হিসাবে পরিচিত হতেন৷

অত্যন্ত দুঃখের কথা তেমন দেশ সেবক আজ আর চোখে প্রায় দেখা যায় না৷ এর কারণ অনেক, সেগুলির ব্যাখ্যা এখানে দরকার নেই বলে মনে করি,সেটা সবাইয়ের কিছু না কিছু জানা৷

আজ যাঁরা দীর্ঘ ৭৪ বছর ধরে ভারত কে দেখছেন তাঁরা স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক হয়ে তাঁরা নির্বাচনে  বোট দিয়ে নির্বাচিত  করেন প্রার্থীদের৷ তাঁরাই দেশ শাসন করেন জনপ্রতিনিধি হিসাবে একটি সংবিধানের নির্দেশ মতাবেক৷

আর রাজনৈতিক একাধিক দলও স্বাধীন দেশের নাগরিকগণ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হয়ে সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ হিসাবে আলোচনার মাধ্যমে দেশ শাসন একটি বিশেষ সময়ের জন্য৷ আর পাঁচ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন হয়৷ যে রাজনৈতিক দলগুলি রেজিস্ট্রাড্‌ ও স্বীকৃত সেইগুলি প্রার্থী দেন নিজ নিজ দলের ও নির্দলরাও প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়তে পারেন নির্বাচন কমিশনের অধীনে৷

বর্তমানে দলগুলি যাঁদের দাঁড় করান, তাঁদের অনেককেই বোটারগণ চেনেন না, দল নানাভাবে তাঁদের পরিচিত করেছেন৷ তাঁদের প্রার্থী হিসাবে জনগণ যেমন যাঁকে  মনে করেন তাঁকে বোট দান করেন গোপন ব্যালটে৷ আজ এখানেই যত  প্রশ্ণ৷ তবে এই বোট নিয়ে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে যতোটা বেশী--- হইচই, হট্টোগোল হয় ভারতেরমনে হয় অন্যরাজ্যে ততটা হইচই হট্টোগোল চোখে পড়ে না৷ এখানে এমন কিছু ঘটে যাতে রাজ্যের জনগণ বিশেষ করে বয়স্ক শান্ত তাঁরা অত্যন্ত বিরক্ত বোধ করেন আতঙ্কগ্রস্ত হন,এমনকি রাজনৈতিক দলাদলি, দলভাঙ্গাভাঙী, ঠিক নির্বাচনে দু’একমাস আগে দল ত্যাগ করে অন্য দলে যাওয়া, দলছেড়ে যাওয়া, দলের বিরুদ্ধে কুৎসিত ভাষা প্রয়োগ ও হুমকী দেওয়া, তার প্রত্যুত্তরে দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে  অশোভন ভাষা প্রয়োগ ইত্যাদিতে  মুখিয়ে থাকা টিভি ও সংবাদপত্রগুলিতে নানা ধরণের সংবাদ প্রচার এমনকি দলে দলে রাস্তায় মারামারি ইত্যাদি সারা রাজ্যের মানুষ যেন ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকেন৷ তাই ঘটছে এই সময়৷ দলত্যাগের  হিড়িক পড়ে গেছে এ রাজ্যে বর্তমানে৷ তৃণমূল কংগ্রেস থেকে তো বিজেপিতে গত কয়েক মাস ধরে এম.এল.এ কর্মীরা চলেই যাচ্ছেন, আর বিজেপি যেন ফাঁদ পেতে আছে তাঁদের দলে নিতে মালা চন্দন হাতে নিয়ে৷ তবে তাদের দলের কিছু যে তৃণমূলে আসছে তা কিন্তু নয়! এই দল ত্যাগ করাটাতো আগে হতে পারতো, তা হয়নি৷ এখানেই জনগণের প্রশ্ণ৷ তাহলে ব্যাপারটা কী? অনেকে বলছেন কেন্দ্রের সরকার কেন্দ্র ও রাজ্যে ডবল ইঞ্জিন চালাতে নাকি বদ্ধপরিকর হয়েই বাজারে নেমেছে, বাংলা ও বাঙালী সমাজকে গ্রাস করতে৷ সেটা বোঝা যাবে নির্বাচনের পরই৷

ভারতের অন্যরাজ্যে বোট হচ্ছে একদিনে৷ এখানে বোট হচ্ছে করোনার মধ্যে ৮ দিনে৷ এটা অনেকেরই প্রশ্ণ কেন? নির্বাচন কমিশন এ ব্যবস্থা কেন করেছেন? তার কিন্তু জবাব নেই৷ জনগণকে একমাসের অধিক সময় ভয়ঙ্কর অশান্তি ভোগ করতে হবে৷ এদিকে যে দলগুলি বর্তমানে সারা ভারতে শাসন করছে সেগুলি  অধিকাংশই দলছুট পার্টি৷ গণতন্ত্রে বলা হয় সরকার জনগণের, জনগণের জন্য ও জনগণের দ্বারা৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলগুলিতে যিনি সর্বময়কর্র্ত্ত তিনি সুপ্রিম কর্তৃত্বের অধিকারী কিন্তু সব রাজনৈতিক দল তা নয়৷ সেখানেই দেখা যাচ্ছে এই ভাঙন৷ যাঁরা টিকিট পাননি তাঁরা লাইন দিয়ে অন্যদলে ঢুকছেন৷ এটাতে জনদণ যেন তীব্র বিরক্তি বোধ করছেন এই ধরণের কাণ্ড দেখে৷ মনে হচ্ছে এঁদের দলের প্রতি কোন নিষ্ঠা ও ভক্তির বালাই ছিল না, তাঁরা দলে ছিল নিছক ক্ষুদ্র স্বার্থসিদ্ধিতে৷ তাতে দলত্যাগ করায় দলের কিছুটা ক্ষতি হবে কিন্তু দল শোষণমুক্ত হলো আর দল বাজি সম্বন্ধে জনগণও সচেতন হয়ে গেল৷ দলত্যাগীদের জনগণ চিনতে পারলেন৷ আর যাঁরা দলত্যাগীদের আশ্রয়দাতা তারাও যাতে উপযুক্ত জবাব পায় বাংলার সচেতন নাগরিকদের সচেতনতার দ্বারা সেটাই বোঝাতে হবে৷ অন্যদিকে দলীয় নেতাদেরও বুঝতে হবে যাদের নিয়ে দল ঘটন করা হয় তারাই বা কেমন ধরণের দলের বিশ্বস্তকর্মী! তাই দলও সচেতন ও কঠোর হোক৷ গণতন্ত্রে নোংরা দলবাজির কিন্তু স্থান নেই, এটা শাসক দলগুলি যেন স্মরণে রাখে৷ দেশ তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর ধান্দাবাজি করে দলভাঙিয়ে দেশ শাসন চলে না৷ জনসেবক হতে হয় শাসক দলের ও বিরোধী দলগুলোর নেতা ও কর্মীদের৷ প্রার্থী নির্বাচনে দেখতে হবে কারা সেবা ব্রতী ও দেশপ্রেমিক৷ আজ যাঁদের টাকা আছে ধনীব্যষ্টি তারা নাম যশের কাঙাল তারাই তো রাজনীতি এসে সারা দেশটাকে গণতন্ত্রের নামে হতদরিদ্র জনগণকে পথের ভিখারী করার কারখানা বিশেষ৷

তাই রাজ্যবাসী সচেতন হোন ও গুরুত্বপূর্ণ বোটটি যেন অনেকভেবে চিন্তে সমগ্র বাংলা ও বাঙালীকে রক্ষায়  যেন কাজে লাগানো হয়৷

স্মরণে থাকা খুবই দরকার সেটা হলো সবাই রাজনীতিতে এসে রাজনৈতিক নেতা হতে পারে না তার মধ্যে সেবা, ত্যাগ নিষ্ঠা ও সততার সবের্বাপরি নব্যমানবতার পবিত্রতম বাস্তবধর্মী আবেগ থাকাটা সর্বাগ্রে জরুরী৷

দেখা গেল দীর্ঘবছর ধরে যাঁরা দেশ শাসনে এসেছেন তাঁরা প্রায় সকলেই ব্যর্থ হয়েছেন মানবিকমূল্যবোধের দারুণ অভাবের জন্য৷ অনেককেই সেবার নামে দেশের হতদরিদ্রদের দারুণভাবেই শোষন করে চলেছেন৷ যিনি বা যাঁরা কিছু করতে চাইছেন বা করছেন তাঁদের  নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে আজ লিপ্ত হয়েছে ধান্দাবাজরা রাজনীতির নামাবলি গাঁয়ে চাপিয়ে৷ পশ্চিম বাঙলার জনগণ যেন ধান্দাবাজদের জালে আটকে না যান৷