বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রকে প্রহসনে পরিণত করে চলেছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু আছে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হ’ল এখানে গত ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে কয়েক টুকরো করে ভাগ করে পাকিস্তান ও হিন্দুস্থান তৈরী করা হ’ল৷ দেশের আপামর জনগণ এ ব্যাপারে কিছুই জানতো না৷ এর ফলে মুসলমান সম্প্রদায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে লক্ষ লক্ষ অসহায় হিন্দু নরনারী, শিশুদের নিজ নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করে এক ভয়ঙ্কর উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করে ও হিন্দুস্তানে অর্থাৎ ভারতে বিতাড়িত করে ভারত যুক্তরাষ্ট্র এক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করে অদ্যাবধি তার খেসারত ভারত দিয়ে চলেছে৷ ভারতের পুর্ব-পশ্চিমে দুটি ডানা আজ বিচ্ছিন্ন৷ আজও ভারতকে সেই ডানাহীন অসহায় পক্ষীর ন্যায় নানা ধরণের সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে৷

বে-আইনী অনুপ্রবেশ, চোরাচালান, আর সীমান্তে বিশেষ করে পশ্চিম দিকে পাকিস্তানের হিংসাশ্রয়ী জঙ্গী হামলায় ভারত ক্ষত-বিক্ষত হয়েই চলেছে সেই দেশ ভাগের পর থেকে অদ্যাবধি৷ তাছাড়া পাকিস্তান পর পর কয়েকবার ভারত আক্রমণ করে ও ভারতের অভ্যন্তরে একনাগাড়ে জঙ্গী হামলা ঘটিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতিতে ব্যাহত করেই চলেছে৷ এরই মধ্য দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কখনও কংগ্রেস দল, কখনও জনতা, ভারতীয় জনতা দল এককভাবে আবার অন্য দলগুলির সহায়তা নিয়ে মিলিজুলি সরকার সরকার করে দলীয় শাসন কায়েম করে চলেছে৷ বর্তমান কেন্দ্রে বিজেপির ১৭তম লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নয়া সরকার গড়েছে৷ তবে যত দিন যাচ্ছে এদেশের গণতন্ত্রটা এক নক্কারজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে চলেছে৷ যা জনগণের কোনও সেবাই দিতে পারছে না৷ দলতন্ত্রের করুণ দুরবস্থা দেখে জনগণ দিশেহারা৷ রাজনীতিতে ধীরে ধীরে দুর্বৃত্তায়নের প্রাবল্য বৃদ্ধি পেয়েছে৷ গণতন্ত্র তখনই সার্থক হতে পারে যেখানে বিরোধী পক্ষ শক্তিশালী হয়৷ তাহলে একক সংখ্যাগারিষ্ঠ দল স্বৈরাচারী হতে পারে না৷ এই বিরাট বহুভাষাভাষী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধীদের কোনও ঐক্য ও সংহতি প্রায় নেই৷ তাই একদলীয় রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী মানসিকতার আগ্রাসী নীতিতে দেশ আক্রান্ত হচ্ছে৷ তাতে কোটি কোটি মানুষ শোষিত হচ্ছে আর সামনে আসীন কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদলগুলো৷ তাদের মত করে শাসন চালিয়ে গণতন্ত্রকে দলীয় শাসনের হাতিয়ার করে ছেড়েছে৷ এরা সংবিধানকে বারবার সংশোধন করে চলেছে৷ তাই গণতন্ত্র আর বিরাট দেশে জনগণকে সেবা দানে ব্যর্থ৷ দলবাজিটাই প্রাধান্য পেয়ে চলেছে৷ দেশে বর্তমান বেকারীর হার ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ৷ কেন্দ্রে নোতুন সরকার হয়েছে৷ কেন্দ্রে লোকসভার ৫৪২টি আসন দু’মাস ধরে সাত দফা চালিয়ে প্রচণ্ড গরমে সারা ভারতে এক রাজসূয় যজ্ঞ হ’ল৷ এতে গরীব দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হ’ল৷ নির্বাচন হ’ল বিরাট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে গড়ে ভোট পড়ল মাত্র ষাট শতাংশ৷ কাগজে-কলমে ৭২ বছরের গণতন্ত্র ভারতের৷ নাগরিকগণ এখনও উপলব্ধি করতে পারল না গণতন্ত্রে নাগরিকদের ভোটদানটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ৷ লজ্জার কথা আধা সামরিক বাহিনী দিয়ে নির্বাচন হল৷ স্বাধীন দেশে ভোটকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ আহত হ’ল ও প্রাণ হারাল৷ কত মায়ের কোল যে খালি হ’ল তা বলার নয়! এই মারাত্মক ঘটনা যারা ঘটালো তারা নিছক গদীর স্বার্থে ঘটিয়েছে৷ এটা কিন্তু নেতা-নেত্রীরা স্বীকার করেন না৷ অনেক ক্ষেত্রে প্রদত্ত ভোট দানের চেয়ে বিজয়ী প্রার্থীরা গণনায় হাজার হাজার ভোট বেশী পেয়ে জিতেছেন৷ এটা কেমন করে হয়? তা হলে এত অর্থ ব্যয় করে নির্বাচন করার অর্থটা কী?

আশ্চর্য ব্যাপার নির্বাচনের ফলাফল---বিরোধী শূন্য, এটার অর্থ কী? নাগরিকগণ গোপন ভাবে ভোট দান করবেন৷ সেখানে ছাপ্পা ভোট হয় কি করে? ভোট গণনায় হিসাবের গরলিমলা কেন হয়? নির্বাচনে দেশের প্রাতস্মরণীয় ব্যষ্টির মূর্ত্তি ভাঙ্গা কেন হ’ল৷ এর সদুত্তর কে দেবে? যাঁরা নির্বাচেন অংশ নিয়েছে তাদেরই অন্ধ সমর্থকগণ যে একাজ করেছে সেটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই৷ এদেশের এই ধরণের গণতন্ত্রের কুৎসিত চেহারা আজ ৭২ বছর পরেও দেশবাসীকে দেখতে হচ্ছে৷ এর দায় কাদের ওপর বর্তাবে? এর উত্তর কে দেবে?

নির্বাচনে এত প্রচার কীসের? কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে মাঠ ভর্তি করে নেতা বা নেত্রীরা কোন্ উদ্দেশ্যে সমাবেশ করেন? নির্বাচনের সময়ই দীর্ঘ সময় ধরে সরকারের দপ্তরে কোন কাজই হয় না৷ এতে দেশের কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হয় ও জনগণ নানাভাবে দুর্ভোগ ভোগ করে থাকেন৷ এ কেমন গণতন্ত্র৷ ভারতের পক্ষে এসব অশোভন৷ বক্তাদের বক্তব্য শালিনতাকে লজ্জা দেয়৷ এ কেমন বক্তব্য? গরীব দেশ ভারত নোতুন সরকারে নানা ধরণের মন্ত্রী হয়েছেন প্রায় ৫৮ জন৷ এত মন্ত্রীর কি কোনও প্রয়োজন আছে? সরকার চালাতেই তো জনগণের দেওয়া কর বাবদ সংগৃহীত অর্থ ব্যয় হয়ে যায়৷ তাহলে দেশের উন্নতিটা হবে কি করে? তাই দলগুলিকে ভাবতে হবে এই দেশে কীভাবে গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করা যায়৷ আর বিরোধী দলগুলিকে অবশ্যই সংযত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রের স্বার্থে কাজ  করে যেতে হবে৷

দলতন্ত্রের এই নোঙরা খেলা আর জনগণের করের টাকায় নিজেদের ঠাট-বাট করাটা কতদিন চলবে? জনগণ যখন একদিন একজোট হয়ে এ অন্যায়ের কৈফিয়ত চাইবে সেদিন দলতন্ত্রের নেতা-নেত্রীরা তাদের সামনে দাঁড়াতে পারবেন তো?