ভাদ্রমাসে ভাদু উৎসব

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

ভাদু উৎসবের উদ্ভব বিষয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে৷  বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়ার কিয়দংশে, মেদিনীপুর ও পুরুলিয়ার হুড়া-কাশীপুর অঞ্চলে সারা ভাদ্রমাস জুড়ে ভাদু পূজা অনুষ্ঠিত হয়৷ ভাদু বাংলার লৌকিক পূজা বা ব্রতানুষ্ঠান৷

ভাদু উৎসবের মূলে একটি ঐতিহাসিক সত্য নিহিত আছে৷ মানভূম জেলার পঞ্চকোটের রাজধানী কাশীপুর৷ পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংহ৷ রাজার এক অপূর্ব সুন্দরী কন্যা জন্মাগ্রহণ করে ভাদ্রমাসে৷ তাই  তার নামকরণ হয়েছিল ভদ্রেশ্বরী৷ এই ভদ্রেশ্বরী শৈশব থেকে বাউরী প্রভৃতি দরিদ্র শ্রেণীর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল৷ তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘবের চেষ্টা করতো৷ কিন্তু অনূঢ়া অবস্থাতেই ভাদ্রমাসে তার মৃত্যু হয়৷ প্রাণাধিক প্রিয় কন্যার মৃত্যুতে রাজা নীলমণি সিংহ প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পান৷ কন্যার স্মৃতিকে চির জাগ্রত রাখার জন্য রাজা সমগ্র রাজ্যে উৎসবের আয়োজন করতে নির্দেশ দিলেন৷ শুধু রাজাজ্ঞা পালনের জন্যই নয় মমতাময়ী দেবীতুল্যা রাজকুমারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা বশতই রাজ্যের আপামর জনসাধারণ ভদ্রেশ্বরীর পূজা শুরু করে৷ এই ভদ্রেশ্বরীই পরবর্তীকালে ভাদুতে রূপান্তরিত হন৷ এই ভাদু উৎসব ক্রমশঃ পঞ্চকোট থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মেদিনীপুর ও পুরুলিয়াতে৷

ভাদ্রমাসের প্রথম দিন ঐ ভাদুর মূর্ত্তি তৈরী করে গানের  মাধ্যমে আবাহন হয়৷ আর বিসর্জন হয় ভাদ্র সংক্রান্তিতে৷

বাংলার লৌকিক পূজা-পার্বণ তথা উৎসবাদিতে ধর্মচর্চার তাগিদ যত না আছে তার চেয়ে ঢের বেশি আছে ঐহিক সুখের আকাঙ্খা, জীবন-যন্ত্রণা উপশমের প্রার্থনা আর  প্রাত্যহিক বাধা-বিঘ্নের হাত থেকে পরিত্রাণের আকুতি৷ যার ফলে এইসব অনুষ্ঠানে যেসব গান-গাওয়া হয় তাতে বারে বারেই প্রকট হয়ে উঠেছে মোটা দাগের বাস্তব বোধ৷ উৎসবের গানগুলি শুনলে এ কথার সত্যতা সহজেই বোধগম্য হয়৷  দেবীর মাহাত্ম্য বর্ণিত না হয়ে এই সব গানে জীবন-যন্ত্রণা,সামাজিক ভাবনা, প্রাত্যহিক জীবন যাত্রার সমস্যাসমূহ অতিমাত্রায় ধবনিত হয়েছে৷

একটি নমুনা--- কি কি গয়না লিবি ভাদু

আমি পায়ে লোবো পায়ের তোড়া বল না আমারে

সাজাবো বাহারে!

আমি সবুজ পেড়ো শাড়ি লেবো

সাজাবো বাহারে৷

নাকে লেবো নথের টানা

সাজাবো বাহারে৷