ভারতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি দলীয় স্বার্থে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে যায়

লেখক
 প্রবীর সরকার

 বর্তমানে ভারতের বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রবেশ কিছুটা উভয় সংকটে পড়েছে৷  দীর্ঘ ৭১ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেল রাজনৈতিক দলগুলির যখন যারা শাসনে আসে তখনই তারা ছলবল আর কৌশলকে কাজে লাগিয়ে আর বিধানসভায় ও লোকসভায় নিজেদে র সংখ্যা গরিষ্ঠতার প্রেক্ষিতে এমন বিল পাশ করিয়ে নেবার ব্যবস্থা করে যেটা গণতন্ত্রের মর্যাদা হানি হয়ে ওঠে৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এইসব কারণে প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী জওহরলালের আমলে রাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন রাষ্ট্রপতি পদে না থাকার সিদ্ধান্ত নেন৷ জওহরলাল সেটি উপলব্ধি করেছিলেন৷ কিন্তু প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দেশে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারির করার ব্যাপারে মহামান্য লোকসভাকে অন্ধকারে রেখেই রাষ্ট্রপতি ফকিরউদ্দিনকে চাপ দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নেন যেটা তিনি মানতে পারেন নি৷ এই কারণে তিনি মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেন৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী লোকসভাকে না জানিয়ে বড় নোট বাতিলের ঘোষণা করেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্বাক্ষর নিয়ে৷ এব্যাপারে কোনো আলোচনা হয়নি ৷ শ্রী মুখোপাধ্যায় তবে মন্তব্য করে এই নোট বাতিলে দেশের মঙ্গল হবে৷ এটা তার মতামত ছিল৷ বাস্তবে দেখা গেল আর্থিক উন্নতিতো দূরের কথা দেশ স্থায়ীভাবে এমন এক আর্থিক সমস্যায় পড়লো তাতে ধনীদের কালো টাকা সাদা হলো, আর গরিব জনগণের আর্থিক শোষণ , লাঞ্ছনা ও অত্যাচারের শেষ নেই৷ কতোলোক অকালে মারা গেল৷ দেশের এমন আর্থিক ক্ষতি হলো যার দরুণ আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার চরম অবমূল্যায়ন ঘটায় দেশের কোটি কোটিং হতভাগ্য জনগণ পেট্রোপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হওয়াতে সবদিক থেকে মার খাচ্ছেন৷ কয়েকটি ব্যাঙ্ক উঠে যাওয়ার দশায়৷ হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা ফাঁকি দিয়ে অনেক ধনী দেশান্তরিত হয়েছেন যেমন --- বিজয় মালিয়া৷ এই নিয়ে দারুণ জল ঘোলা হচ্ছে৷ তিনি ২০১৬ সালে দেশান্তরিত হয়েছেন আর বড়ো নোট বাতিল হলো ২০১৬ সালের শেষের দিকে৷ ব্যাঙ্কে সুদের হার দাঁড়াল তলানীতে৷ এটা গরিব মারা কল হলো৷ সবটাই গরিবের পকেট কেটে আর্থিক ক্ষতি না সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করা৷ এটাই কী সরকারের দেশসেবা? গরিবের রক্ত মোক্ষণ করে ধনীর তোষণ? যেসব নোতুন নোট বেরিয়েছে সেগুলি দেখলে মনে হয় সেগুলি আকারে ও রঙে আগের কাগজের নোটের চেয়ে নিকৃষ্ট মানের! এরা যেটায় হাত দিয়েছে সেটাতেই মার খেয়েছে৷ জনগণ বড়ো বিরক্ত এদের শাসনে ! এরাতো সংবিধানের আদর্শ ও লক্ষ্যকে সংখ্যাধিক্যের জোরে অগ্রাহ্য করেই চলেছে৷ তবে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের মর্য্যাদা রক্ষার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে৷

অভিজ্ঞতায় দেখা গেল রাজনৈতিক দল যে গুলি শাসনে আসে তারা দলীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করতে সংবিধান সংশোধন করে অনেক ক্ষতিই করেছে! সংশোধনগুলি যতোটা না দেশের স্বার্থে হয়েছে তার চেয়ে বেশী হয়েছে দলীয় শাসকদের শাসন চালাতে সুবিধালাভে৷ ফলে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে৷

যতদিন যাচ্ছে এদেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মান তলানিতে নেমেছে৷ গণতন্ত্রে দেখা যাচ্ছে শাসক দলের আচার আচরণ, কথাবার্র্ত্ত কি কেন্দ্রে ও কি রাজ্যে যেন স্বৈরচারী শাসকদের মতো৷ এরা সবাই শাসক হিসাবে তারা যে কাজ করে চলেছে গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট দেখিয়ে সেটাতো সংবিধান বিরোধী৷ লোকসভার অধিবেশনে খোদ মন্ত্রীদের দর্শন পাওয়া যায় না৷ প্রশ্ণ-উত্তরের সময় স্বয়ং স্পীকার খুবই অসুবিধায় পড়েন৷ তাছাড়া এমপিরা অনেকে হাজির থাকেন না৷ তাছাড়া প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্রমোদী বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত থাকেন৷ অধিকাংশ দিন হইচইয়ে মূলতঃ বিরোধীদের জন্যে সভার কাজ মূলতুবী হয়ে যায়৷ কিন্তু এইকাজে গরীব দেশের কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে৷ এমপিও এম.এল.এ-দের মাসিক সাম্মানিক ভাতা বছর বছর বাড়ছে ৷ যার দরুণ দেশের জনহিতকর কাজগুলি ব্যাহত হচ্ছে৷

এই করুণ ছবিটা প্রায় প্রতিটি রাজ্যেও দেখা যাচ্ছে৷ ফলে এখানে গণতন্ত্রটাই পড়ে পড়ে মার খাচ্ছে! মোদ্দা কথা জনগণের তিলমাত্র কল্যাণ হচ্ছে না৷ জনগণের ন্যূনতম পাঁচটি প্রয়োজনপূর্ত্তির গ্যারাণ্টি দেওয়ার ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেই কি কেন্দ্র ও কি রাজ্য সরকারের৷ এই পাঁচটি ন্যূনতম চাহিদা হ’ল অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান৷ শিক্ষা নিয়ে দলবাজি করায় শিক্ষা রাজনীতি ফাঁদে আটকে পড়েছে৷ প্রকৃত দেশে সুশিক্ষিত হচ্ছে না৷ শিক্ষাবিদদের  হাতে নেই৷ তাছাড়া  রাজতন্ত্রের মতো দলীয় ব্যষ্টিদের প্রতিবছর নানা সম্মানে ভূষিত করা হয় এ ব্যাপারে স্বচ্ছ কোন নীতি নেই৷ এটা গণতন্ত্রে একধরনের দলীয় তোষণ ছাড়া কিছুই নয়৷ অনেক ব্যষ্টি নানা কারণে সরকারী খেতাব ফিরিয়ে দেন যেটা সরকারের পক্ষে মোটেই গর্বের নয়৷

মোদ্দা কথা নির্র্বচিত প্রতিনিধিগণ আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের সার্বিক কল্যাণে সকলকে সেবা দেবেন৷ এটাই শাসকের দায় দায়িত্ব৷ শাসনে যারা যাবেন তারা অবশ্যই দলের ঊর্ধে উঠে সকলকে সেবা দেবেন ৷ সেখানে নোংরা দলতন্ত্রের দলবাজিটা তো সম্পূর্ণ সংবিধান সংশোধন তো কয়েকজন হয়ে গেল৷ যে শাসনে আসে সেই সংবিধানে ছুরির আঘাত করে মহান সংবিধানকে রক্তাক্ত করে ছাড়ছে৷ তাই আর নয়৷ শাসকদের সংযত হওয়াটা জরুরী৷

মোদ্দা কথা, এদেশ মহান ৷ এখানে মানবতার মর্র্য্যদা সবার উপরে৷ আর্থিক সামাজিকরণের দিকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নজর দিক৷ তবে প্রতিটি নাগরিককে সমানভাবে দেখা আবশ্যিক ৷ সেখানে কোন ভেদাভেদ কাম্য নয়৷ কোন ব্যষ্টি ধর্মমতের নামে বিশেষ সুবিধা পেতে পারে না বা ধর্মমতের কারণে কারোর ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত নয়৷ পার্টির স্বার্থের ওপর দেশের স্বার্থ দেখতে হবে৷