চীন নেপালের ভারত দখলের কারণ,  সমস্যা ও সমাধান

লেখক
রঞ্জিত বিশ্বাস

একদিকে মহামারি করোনা সারা পৃথিবীর মানুষের জীবন দখল করে সর্বনাশ করে চলেছে আর এই  পরিস্থিতিতেই অন্যদিকে  চীন  ও নেপাল ভারত দখলে করে নিচ্ছে৷ সম্প্রতি প্রাপ্ত  খবর অনুযায়ী, চীন  ভারতের অরুণাচল প্রদেশ লাদাখ সীমান্তে ঢুকে পড়েছে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল তাদের মানচিত্র  সংশোধন করে ভারতের তিনটি জায়গা দখল করে নিয়েছে! আরো ভয়ঙ্কর খবর, চীন নাকি এখন পর্যন্ত ভারতের  ভূখণ্ডের  এক বিশাল এলাকায় ঢুকে পড়েছে সেই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার  ও ভারতীয় প্রধান মিডিয়াগুলো এখনও চুপ! আর ওই দিকে নেপাল  সীমান্ত গোর্র্খ সেনা বিনা প্ররোচনায় একজন ভারতীয়কে গুলি করে হত্যা করেছে ও কয়েকজন ভারতীয়দের আটক করে রেখেছে! আর রেখেছে!

আর এক ধাপ এগিয়ে গত ১৩ই জুন নেপালের হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের নিম্নকক্ষে পাস হয়েছে নয়া মানচিত্র সংশোধনী বিল৷ তাতে ভারতের তিন এলাকা-লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখকে নেপালের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে৷ উল্লেখ্য, কালাপানি-সহ ওই তিনটি এলাকার ওপর দিয়ে উত্তরাখণ্ড থেকে মানস সরোবর পর্যন্ত একটি  রাস্তা তৈরি করছে ভারত৷ তাতেই বাধ সেধেছে নেপাল৷ তাদের  দাবি, কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পুয়াধুরা নেপালের এলাকা৷ এনিয়ে দেশের নোতুন মানচিত্রও তৈরি করে ফেলে নেপাল! এই প্রবন্ধ!

এই প্রবন্ধটি লেখা পর্যন্ত এই হল চীন ও নেপালের  বর্তমান গতিবিধি৷ যে গতিবিধি শক্ত হাতে দমন করতে ভারত সরকার এখন কোন কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷ কিন্তু কেন? এই প্রশ্ণ প্রতিটি ভারতবাসীর৷ দেশবাসীর এটাও প্রশ্ণ---যখন করোনা আক্রান্তে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে, যখন পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক  মহামারির স্বীকার হয়ে প্রতি মুহূর্তে মারা যাচ্ছে এবং চীন-নেপাল ভারতের ভূখণ্ড দখল করছে ও ভারতীয়দের হত্যা করছে সেই কঠিন পরিস্থিতিতেই মোদী সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে বিজেপি দলকে পুনরায় সরকারের ক্ষমতায় বসাতে ভার্চুয়াল রেলী নিয়ে চরম ব্যস্ত! কিন্তু কেন? এই করেই কি দেশ ও দেশবাসীকে বিজেপি সরকার বাঁচাতে চাইছে?

সেই অনেক প্রশ্ণ৷ এখন এখানে মূল বিষয় হচ্ছে, হিন্দি-চীনী ভাই ভাই , হিন্দি-নেপালি ভাই ভাই! ---এই ভাইচারা করে যে সমস্যা দীর্ঘ বছর ধরে ভারতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরী হয়ে আসছে তা কেন হচ্ছে  ও তার সমাধান কোথায়? বিশেষ  করে বর্তমানে আবারও কেন পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে? প্রথমত, বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যখন কোনো রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ সামাজিক-অর্থনৈতিক অব্যবস্থা ও সরকারি ব্যর্থতা চলতে থাকে তখন দেশবাসীর চিন্তাধারা সেই দিক থেকে ঘুরিয়ে দিতে সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ  পরিস্থিতি তৈরী করে৷ দ্বিতীয়ত, ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রাক্তন বা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার কেউই চীন ও নেপালের পূর্ণ সমর্থক ও সহযোগী ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া৷ বরং দেখা যাচ্ছে উল্টো তাদের বিভিন্ন দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত বা কার্যকলাপে দলীয় বা সরকারিভাবে সমর্থন করা হয়েছে ও হচ্ছে৷ অথবা শিথিল মনোভাব দেখানো হয়েছে ও হচ্ছে৷ দৃষ্টান্তস্বরূপ, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে Welcome China Go back India---শ্লোগান তুলে যারা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরী করেছিল তথা ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস বয়কট করেছিল ও ভারতের রাষ্ট্রীয় পতাকা যারা পুড়িয়ে দিয়েছিল তাদের এই দেশবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে আজও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ পাশাপাশি, ভারতের নাগরিকত্ত্ব নেওয়া নেপালি গোর্র্খরা বার বার ভারতের পশ্চিমবঙ্গকে টুকরো যে ষড়যন্ত্র বা কার্যকলাপ করে যাচ্ছে  সেগুলোকে কড়াভাবে দমন না করা ও ভারত-নেপাল সীমান্ত আজও সিল না করার ফলে তথা নেপাল সীমান্ত উন্মুক্ত থাকার ফলে বর্তমানে নেপাল জবরদখল করতে এহেন সাহস পাচ্ছে৷

কারণ চীন-নেপাল ভালো করেই তাদের সমর্থক ও সহযোগী ভারতের ভিতরেই নাগরিক হিসেবে সক্রিয়ভাবে গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে আছে৷ সুতরাং, চীন-নেপালের জবরদস্তিমূলক ভুখণ্ড দখল দারিত্ব থেকে যদি বর্তমান সরকার গদী রাজনীতি ভুলে ভারতের ভুখণ্ড ও ভারতবাসীদের বাঁচাতে চায় তাহলে অবিলম্বে নেপাল সীমান্ত সিল করতে হবে এবং ভারতের ভিতরে চীন-নেপালের সহযোগী ও  দেশবিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে৷  এবার প্রয়োজনের স্বার্থেই কয়েক বছর আগেই ঘটনা ও ঐতিহাসিক কিছু  তথ্য সহ সমস্যা ও সমাধান তুলে ধরতেই হয়৷ ‘We want Gorkhaland. Gorkhaland is our birthright. We want separate state.’’ গত ২০১৭ সালের ঠিক এই জুন-জুলাই মাসেই এমন অনেক অদ্ভূত দাবি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে  এক অগ্ণিগর্ভ পরিস্থিতি হয়েছিল৷ যেন ইতিহাসের সেই বঙ্গভঙ্গের  বর্তমান রূপ নিয়ে ‘গোর্খাল্যাণ্ড’ শব্দটি আত্মপ্রকাশ করছিল! যেমনটা, আলাদা ‘তিপ্রালাণ্ড’ ঘটনের দাবীতে ত্রিপুরার মতো এক  ক্ষুদ্র রাজ্যেও এক ক্ষুদ্র অংশের মানুষ বার বার হিংস্র হয়ে উঠতে  চায়৷ কিন্তু তারা এমনটা কেন চাইছে? এসবের মূলে তাদের যৌক্তিকতাই  বা কী?

---এমন বহু প্রশ্ণ বার বার গজিয়ে ওঠে৷ আমাদের সবার জেনে রাখা ভালো যে , একটা সুস্থ অঞ্চল ঘটনের ক্ষেত্রে তার মধ্যে ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক  যৌক্তিকতা থাকতেই হবে৷ এই বিচারেও যদি দেখা যায় তাহলে আজকের ‘গোর্র্খল্যাণ্ড’ দাবীর মধ্যে এসবের  এক আনাও যৌক্তিকতা নেই৷ আর বহিরাগত গোর্র্খদের দাবী তা কি আসলেই সাম্প্রতিক কালে দাবী? না, এই দাবী আসলে আজকের নয় আর এই দাবী প্রকৃত পক্ষে গোর্র্খদেরও ছিল না৷ এর আসল জন্মদাতা হলেন অবিভক্ত কমিউনিষ্ট পার্টি৷ এটা তার এজেন্টদের দ্বারা প্রাথমিকভাবে সৃষ্ট একটা কৃত্রিম ব্যাপার ছিল৷ শুধুমাত্র  পশ্চিমবঙ্গের  রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে মাকর্সবাদীরা বহিরাগত গোর্খাদের মধ্যে একটা আবেগ তৈরি করে এবং গোর্খালি ভাষাকে সরকারি স্বীকৃতির টোপ দিয়ে দাবি করেছিল--- সিকিম, নেপালের অংশ বিশেষ আর উত্তরবঙ্গের  দার্জিলিং সহ কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘গোর্র্খল্যাণ্ড’ গঠিত হোকস অর্থাৎ পশ্চিম বাঙলার  জঙ্গল সাফ করে  এই বামফ্রন্ট সরকারই প্রথম বহিরাগত গোর্র্খদের এখানে বসিয়েছিল৷ আর ‘গোর্র্খল্যাণ্ড’ তাদের নিজস্ব বাসভূমির নাম করে উস্কানি দিয়েছিল৷ এটাই হলো ‘গোর্র্খল্যাণ্ড’ দাবীর গোঁড়ার ইতিহাস৷

বাঙলার বুকে বিষ বৃক্ষ রোপন করেছে এই বামফ্রন্ট সরকারই৷ যার বিষম ফল বাঙালীরা নিজেদের রাজ্যেই  ভিটেমাটি হারা হয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ আর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারও জিটিএ বিল (যে বিলকে কেন্দ্র করেই ‘গোর্র্খল্যাণ্ড’-এর দাবী উঠছে) বাতিল নিয়ে কিছুই বলতে নারাজ৷ মানে এই তৃণমূল সরকারও এই গোর্র্খল্যাণ্ড-এর সমার্থক ৷ বিশেষভাবে বাঙলাকে  আবার পুরোপুরিভাবে ভাগ করতে ও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে  বিজেপি দল প্রকাশ্যে এই ‘গোর্র্খল্যাণ্ড-এর সমর্থন করছে  গোর্র্খদের উস্কে দিয়ে বাঙলাকে আবারও ভাগ করতে চাইছে৷ অর্থাৎ, রাজ্য থেকে কেন্দ্র এখনে পর্যন্ত  যতগুলো দল ক্ষমতাসীন ছিল ও আছে  এরা সবাই বাঙলা ভাগে মত্ত৷ (ক্রমশঃ)