দেশপ্রেমিকদের প্রতি (অংশবিশেষ)

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

রাজনীতি আমার ব্যবসাও নয়, পেশাও নয়৷ আমি ইতিহাসের এক সাধারণ ছাত্র মাত্র৷ ভারতবর্ষে যে ভয়াবহ চিত্র আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে মুখ ফুটে তা’ প্রকাশ করা আমার কর্তব্য মনে করছি, তাতে ভবিষ্যতের ঐতিহাসিকরা আমাকে দোষ না দেন৷ যাঁরা দেশনেতা এ ব্যাপারে তাঁদের দায়িত্ব সর্বাধিক৷ তাঁরা দেশকে ডোবাতেও পারেন, বাঁচাতেও পারেন৷ মুখে যাই বলা হোক না কেন, আসলে সরকারী বা বেসরকারী, রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সকল সংস্থারই নীতি নির্ধারণ করে থাকেন মুষ্টিমেয় দু’চারজন৷ তাঁরাই সেই সংস্থার নেতা৷

বর্তমানে যাঁরা নেতা তাঁদের তাই ভারতবর্ষকে বাঁচাবার জন্যে, ভারতবর্ষকে একটি মজবুত নেশন বা নেশন-গোষ্ঠীতে পরিণত করবার জন্যে অবিলম্বে একটা বলিষ্ঠ নীতি প্রণয়ন করতে হবে৷ এব্যাপারে কোন টালবাহানা বা কোন কথার মারপ্যাঁচের ফল দেশের স্বার্থের পক্ষে অত্যন্ত মারাত্মক হবে৷

নেতারা হয়তো ভাবতে পারেন যে তাঁদের পার্টিগুলোতে  (পার্টিগুলির ভেতরকার খবর আমার জানা নেই, তবে সম্ভবতঃ সব পার্টিরই একই অবস্থা) এত বেশী পাপীর ভীড় জমেছে যে তাঁদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে গেলে পার্টিরই অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে৷ পার্টির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয় হোক৷ পার্টির স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থ অনেক বড়৷ তা ছাড়া যেসব নেতার সত্যিকার জনপ্রিয়তা আছে তাঁরা নিজেদের জনপ্রিয়তার জোরে সৎব্যষ্টিদের নিয়ে নূতন পার্টি গড়ে তুলবেন৷

জননেতারা যদি তা না করেন তবে আমার ভয় হয়, হয়তো বা তাহলে যে কোন সময়ে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা দারুণ ভাবে বিপর্যস্ত হবে৷ বিশেষ করে যখন ভারতবর্ষের অভ্যন্তরেই দেশ বিভাজনের প্রবণতা অত্যন্ত সক্রিয়৷ ভুললে চলবে না অতীতে ঐক্যের অভাবই বারবার ভারতবর্ষকে পরাধীনতার নাগপাশে বেঁধেছিল৷ বর্তমানেও যদি ঐক্য বজায় না থাকে তাহলে বুঝতে হবে বৌদ্ধিক ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ দেউলিয়া হয়ে গেছে৷

আমি আশাবাদী দেশনেতারা ভারতের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের গহ্বরে ঠেলে দেবেন---এই ধরণের কথা ভাবতেও আমার ভালো লাগছে না৷ আমি আশা করি, নেতারা নিজেদের ভুলত্রুটি বুঝবেন ও সাহসের সঙ্গে বাস্তবের সম্মুখীন হবেন৷ বর্তমান নেতারা যদি তা না করেন ভবিষ্যতের ভারতবর্ষ নতুন করে তার নেতা তৈরী করে নেবে ও ভবিষ্যতে সেই নেতারা ভারতবর্ষকে ধবংসের হাত থেকে রক্ষা করবেন৷

আজ ভারতের জনসাধারণের প্রধান কর্তব্য হচ্ছে নেতাদের ভুলগুলি শুধরে নেওয়া ও শোষণ-বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে একতাবদ্ধ করা৷ ভারতকে বাঁচাতেই হবে৷ এই শোষণ-বিরোধী আন্দোলন শুধুমাত্র ভারতবর্ষের নয়, ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিটি অনগ্রসর দরিদ্র দেশকে ঐক্যবদ্ধ করবে৷ সবাইকে নিয়ে একটি মজবুত নেশন বা নেশন গোষ্ঠী গড়ে তুলবে৷ সে নেশনকে বা নেশনগোষ্ঠীকে যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, তাতে কিছু আসে যায় না৷