ডি.এ নিয়ে হইচই! সাধারণ মানুষের কথা ভাববে কে?

লেখক
প্রভাত খাঁ

আর্থিক উন্নয়ন, বেকার সমস্যা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ---এসব ঠান্ডা ঘরে পড়ে৷ ডি.এ নিয়ে হইচই হচ্ছে সরকারী কর্মচারীদের জন্য৷ আলোচনা করা যাক ব্যাপারটা কতদূর গড়াচ্ছে৷ প্রায় তিন বছর হলো গত ২৭.১১.২০১৫ সালে রাজ্য বেতন কমিশন বসান রাজ্য সরকার৷ কমিশন কোন সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন নি৷ কমিশনের আগামী ২৬/১১/২০১৮তে রায় দেওয়ার কথা কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো সরকার ১৮ শতাংশ ডি.এ ঘোষণা করলেন ১৯শে জুন ২০১৮তে ৷ আর এটা নাকি দেওয়া হবে রাজ্য সরকারী ও আধা সরকারী কর্মীদের আগামী ২০১৯ সালের ১লা জানুযায়ী থেকে৷ জানুয়ারী মাস আসতে তো বেশ কিছুমাস বাকি? কিন্তু কিছুদিন আগে রাজ্যসরকার ঘোষণা করেন, আগামী দুর্গাপূজার সময় কিছু ডিএ দেওয়া হবে বলে৷  এতে করে রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা কি হতাশ হয়ে পড়লো না? যত দূর জানা যায় তা হ’ল ডি.এ ১০০ শতাংশ হলে সরকার বেতন কমিশন বসান৷ তাহলে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রের হয়ে যে ডি-এ দেওয়ার কথা সেটা অন্যান্য অনেক রাজ্য দিলেও পশ্চিমবঙ্গ নানা কারণে দিতে সবম নয়৷ শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারের ষষ্ঠ বেতন কমিশনের রিপোর্টও তো সাত বাঁও জলে পড়ে গেল৷

কিন্তু প্রশ্ণটা অন্যক্ষেত্রে৷ তা হলো কেন্দ্রীয় সরকার বছরে ডি.এ অন্তত দুবার করে বাড়ায়৷ তাই এরাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের ডিএ-র ফারাক হয় অনেক৷ দেশে ১২৫ কোটির ওপর জনসংখ্যা আর পশ্চিমবাংলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটির মতো৷ হিসাব মতে বলতেই হয় যে সারা ভারতে অন্ততঃ ২৫ কোটি লোককে (নর-নারীকে) কিছু না কিছু অবশ্যই রোজগার করতেই হয়৷ তার মধ্যে কিছু পেনশন হোলডার ও কিছু আধা রোজগারীরাও আছেন৷ আর পশ্চিমবঙ্গে সাড়ে ৯ কোটি মধ্যে অন্ততঃ ২ কোটি নরনারীকে রোজগার করতেই হবে৷ বাস্তবে কি দু’কোটি লোকের কর্মসংস্থান আছে? তার ওপর কেন্দ্রীয় সরকারী, রাজ্য সরকারী কর্মচারী ও আধা সরকারী কর্মচারী কত জন আছেন? বাকি যাঁরা বেসরকারী ক্ষেত্রে কাজ করেন ও একেবারে কায়িক শ্রম দান করে রোজগার করেন তাঁদের কথা কে ভাবছে? আমরা কিন্তু প্রায় প্রতিদিন টিভিতে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যে কর্মসংস্থানের খবর পাই সেগুলি যে কতটা সত্য সে বিষয়ে সন্দেহও জাগে৷ তাদের যে কী করুণ অবস্থা সে কথা কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ভাবতে হবে না? সরকারী কর্মচারীরা ডি.এ পান ও বাকিরা যারা বেসরকারী কর্মচারী তাঁদের বর্তমানে কী দারুন অবস্থা সে কথা কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাবার সুযোগ পান? অত্যন্ত লজ্জার কথা এই দারুণ আর্থিক সংকটে এমপি-এমএলএ-দের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সাম্মানিক বেতন বেশ ভালোভাবে বাড়িয়ে দিয়েছেন যাঁরা অন্যান্য অনেক আর্থিক সুবিধাও ভোগ করে থাকেন৷ ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রথম শ্রেণীর রাজকর্মচারী ও রাষ্ট্র প্রধানদের তো সাম্মানিক মাসিক বেতন তিন সাড়ে তিন লাখের মত৷ এর পেছনে কি যুক্তি আছে? যে দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২০ টাকাও রোজগার করতে সবম নন! ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন অর্দ্ধভূক্ত থাকেন! যে পরিমাণ ক্যালোরী বেঁচে থাকার জন্য দরকার দেশের সিংহভাগ মানুষ তা পান না৷ একথা সরকারের তো অজানা নয়৷ রেশনিং ব্যবস্থাটাই তো দারুণভাবে ভেঙ্গে পড়েছে ! মাথা পিছু আধ কেজি চাল আর সাড়ে সাতশ অপরিচ্ছন্ন গমে সপ্তাহ চলে? আগের মতো ন্যায্য মূল্যে সকলকে খাবারযোগ্য খাদ্যের যোগান দেওয়াটা কি কর্ত্তব্য নয়? ২ টাকা কেজি চাল ! এটা কি জনসাধারণের প্রতি এক ধরণের পরিহাস নয়? আবার রেশনে ১৩ টা কেজি চাল আর ৯ টাকা কেজি গম এটাই বা কি ধরণের ব্যবস্থা! জীবন দায়ী ওষুধের দাম যে হারে বেড়েছে তা কহতব্য নয়৷

মোদ্দাকথা হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যাপক উৎপাদন যেমন জরুরী তার বন্টনও করতে হবে ন্যায়সঙ্গত ভাবে৷

সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি ভাবুন৷ দীর্ঘ ৭০ বছর পার হয়ে গেছে গণতন্ত্রের বয়স৷ চীন আমাদের পর স্বাধীন হয়েছে৷ তারা অনেক ব্যাপারে আমাদের টেক্কা দিচ্ছে কিন্তু আমরা পিছু হঠছি! কেন এমনটা হচ্ছে? রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবুন অবশ্যই৷

গণতান্ত্রিক সরকার কে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেক হবে সকলের জন্য৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে জনগণের ওপর নির্মমভাবে ভোগ্য পণ্যে ট্যাক্স বসিয়ে, আয়করের সীমা কমিয়ে, ব্যাঙ্কে সুদ কমিয়ে গণতন্ত্রের নামে এই যে আর্থিক শোষণ এতে মানুষ রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে---বিশেষ করে নিম্ন মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়৷ এই সব সমস্যার সমাধানের দিকে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নজর দিন৷ শুধু কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে বাজারগরম করলে চলবে না৷ দেশের সিংহভাগ মানুষ অত্যন্ত দুরবস্থায় যে পড়ছে সে কথা কি জনপ্রতিনিধিরা টের পাচ্ছেন না? সমস্যার আন্তরিক সমাধানে সচেষ্ট হোন৷ শুধু বত্তৃণতায় কাজ হবে না৷

যাই হোক না কেন দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখা যায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির এযাবৎ যে সব কাজ তাতে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থটাই প্রধান৷ তবে বেতন কমিশনের রিপোর্ট তো প্রকাশ করতে হবে! আর হাইকোর্টকে দেখাতে হবে সরকার বসে নেই৷ তাই এই ঘোষণা হাইকোর্টের রায়ের পূর্বে৷

তবে বিরোধীদের মন্তব্যকে ফেলে দেওয়া যায় না অন্ততঃ গণতন্ত্রে৷ তাঁদের মতে বেতন কমিশনকে ঠান্ডা ঘরে পাঠানো হলো৷ আর দীর্ঘ ৭ মাস পরে রাজ্য সরকারের কাছে যারা কর্মচারী সেই কর্মচারীরা সরকারের আর্থিক অনুকম্পা পাবেন আগামী জানুয়ারী মাসের সময় থেকে৷ মনে হয় এটা হাতে পাবেন ২০১৯ এর ফ্রেব্রুয়ারীতে৷ সেই প্রচলিত উক্তি ভিক্ষের চাল কাঁড়া না আঁকড়া! তবে সাধারণের যন্ত্রণার শেষ নেই! হায় রে গণতন্ত্র !