দরদী

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

কি ব্যাপার, আপনি আবার ডাক্তারি শুরু করলেন যে? গিরিশবাবুকে জিজ্ঞেস করলেন গিরিশবাবুর এক বন্ধু৷

আর বল কেন ভাই, বললেন গিরিশবাবু,চোখের সামনে এক ফোঁটা ওষুধের অভাবে মারা গেল আমার পরামাণিক৷ আমার বাড়ির পাশেই থাকত৷ একদিন রাতে শুণলাম তার কলেরা হয়েছে৷ গেলাম ছুটে৷ গিয়ে দেখি প্রায় শেষ অবস্থা৷ এক ফোঁটা ওষুধ পায়নি বেচারী৷ আমাকে দেখেই বাবু ওষুধ খাব, ওষুধ বলে চেঁচিয়ে উঠলো৷ বাড়িতে আমার ওষুধ ছিল না৷ দোকান থেকে আনতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে৷ অবশেষে একজন ডাক্তার ডেকে পাঠালাম৷ কিন্তু ডাক্তার আসা পর্যন্ত রোগী আর প্রাণ ধরে রাখতে পারল না৷ মনটা বড় খারাপ হয়ে গেলো৷ চোখের সামনে একটা জলজ্যান্ত মানুষ কিনা বিনা চিকিৎসায় মারা গেল৷ সামনে থেকেও কিছু করতে পারলাম না৷ সেই থেকে আবার হোমিওপ্যাথিটা শিখতে শুরু করেছি৷ অন্তত চোখের সামনে কাউকে চিকিৎসার অভাবে মরতে দেবো না৷

বাঃ বাঃ ভগবান তোমার মঙ্গল করুন৷ বন্ধু আশীর্বাদ করলেন গিরিশবাবুকে৷

জানো, এই গিরিশবাবুই হলেন বাঙলার অদ্বিতীয় নট এবং নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষ৷ সাধারণ মানুষের প্রতি এমনই ছিল তাঁর দরদ৷ তাই তো তিনি ‘‘ভ্রান্তি’’ নাট্যে বলতে পেরেছিলেন---‘‘মরবার সময় পর্যন্ত যদি হাত উঠে, একটা পরের কাজ করে যাব, আমি পরের জন্য বেঁচে আছি৷’’