দুরাচারী শাসকের হাত থেকে মুক্তির পথ প্রাউট

লেখক
এইচ.এন. মাহাত

সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পশ্চিম বাঙলার বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন একবার বিজেপি সরকার এলে সোনার বাঙলা তৈরী করবেন৷ আবার অপর দিকে বাঙালী মানেই বিদেশী বাংলাদেশী, বহিরাগত৷ তাদেরকে দেশ থেকে তাড়াতে হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের এই দ্বিচারিতা ও বাঙলার প্রতি বিমাতৃসুলভ মানসিকতার জন্য বিভিন্ন ভাবে বাঙলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করার চক্রান্ত  করে চলেছে৷ তাছাড়াও বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি ভারতের মধ্যে প্রাচীন হওয়ার পরেও তাকে স্বীকৃতি  দেয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী গুজরাটী হওয়ায় যে গুজরাটের ভাষা ভারতের মুষ্টিমেয় কয়েক হাজার মানুষ জানে সেই ভাষাকে উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরীর ক্ষেত্রে স্বীকার করেছে অথচ বাংলাকে  এখনো মান্যতা দেওয়া হয় নি৷ এই হচ্ছে সোনার বাঙলা গড়ার নমুনা!

বাঙালীর স্বাধীন চেতনাকে সকল অবাঙালী রাজনৈতিক নেতারা  ঘৃণার চোখে দেখে৷ তাই আজো নেতাজী থেকে শুরু করে সকল পরিবর্তনশীল বাঙালী ও বিপ্লবীদের মহান আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি না দিয়ে ব্রিটিশদের মত সন্ত্রাসবাদী ও রাষ্ট্রদ্রোহী বলে মাঝে মধ্যে প্রচারে এনে তাদেরকে হেও প্রতিপন্ন করে৷ এরা এবার বাঙালীকে  ধবংস করতে বাঙলাকে কয়েক হাজারো কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে চাইছে৷ সাবধান! বাঙালী সাবধান!

ভারতীয় নাগরিকগণ গত সাত বছরের কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারের হিসাবের পর্যালোচনা করলে দেখতে পারবেন কোটি কোটি  টাকার বিনিময় রাজ্য জয় হয়েছে, কিন্তু কোন রাজ্যই অর্থনৈতিকভাবে শান্তিতে নেই৷ পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্য৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার, নাগালের  বাইরে৷

বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে ধর্মীয় মতবাদের, জাত পাতের নামে হিংসা বিদ্বেষ, নিম্নবর্গের জনজাতির ওপর নানাভাবে নির্যাতন, অত্যাচার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে৷ অন্যদিকে বিহারের নির্বাচনী প্রচারে রাম মন্দিরের প্রস্তুতি, তিন তালাক,কশ্মীরের এক আইন,চীন বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ নীতি ইত্যাদি ইত্যাদি প্রচার করছে বাহাদুর সরকার৷ এটা ভোটারদের মন জয়ের কৌশল ভণ্ড দেশপ্রেমের গুজব ছড়িয়ে৷ কিন্তু বলুনতো এতে কী ভারতীয়রা আর্থিকভাবে সচ্ছলতা পাচ্ছে! বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্ব সাত বছর আগে ভোট  প্রচারের শুরু থেকে বলে এসেছে দুই কোটি বেকারদের চাকুরী দেবে, এখন বলছেন চাকুরী কী হাতের মোয়া! সুইস ব্যাঙ্কের কালো টাকা আনবে, এখন তারা মৌন৷ আর ভারতীয়  পূঁজিবাদীদের বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব করে বিদেশে পালিয়ে  যেতে সাহায্য করেছে৷ বিজেপির  কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলেছিলো ভারতে একটি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবে৷ না খানুঙ্গা না খানে  দুঙ্গা, আচ্ছে দিন লাউঙ্গা৷

আজ অর্থমন্ত্রী বলেছেন ঘরে টাকা নেই তাই উন্নয়ন নেই৷ অথচ  রাজ্য জয়ের নেশায় কোটি কোটি  টাকা খরচ করে সেই টাকা আসে কোথা থেকে? তার জবাব নেই৷ নতুন নতুন আইনের ফাঁকে  ভারতের স্বনির্ভর শিল্পগুলো বিক্রি করছে, কৃষিক্ষেত্রে কর্ষকদের আত্মনির্ভরশীলতা না তৈরী করে পুঁজিপতি  বেনিয়া বহুজাতিক  প্রতিষ্ঠানের হাতে কৃষিক্ষেত্রকে তুলে দিয়ে কর্ষকদের নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছে৷ চক্রান্ত করে কৃষি ও  কর্ষকদের দারিদ্র্যতার পথে ঠেলে দিয়ে আরো বেশি করে আত্মহত্যার দরজা খুলে দিয়েছে৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের একটাই মূলমন্ত্র শিক্ষা, চিকিৎসা, শিল্প, বানিজ্য,কৃষিসহ সকল লাভজনক প্রতিষ্ঠান গুলোকে দেশী ও বিদেশী পুজিবাদী বেনিয়াদের কাছে বিক্রি করা৷ কোন সরকার যদি নৈবেদ্যের কলার মত ঠুটোঁ জগন্নাথ হয়ে বসে থাকে তবে এই সরকারের প্রয়োজনটা কী? ব্রিটিশ আমলে আমরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পরাধীনতার শৃঙ্খল পরে ছিলাম৷ আজকের বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষের জন্য শুধু মাত্র ভোটাধিকারের ব্যবস্থা, আর সবকিছুই বেনিয়া বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করছে৷ আর সাধারণ নাগরিককে আগামীতে আর একটি অর্থনৈতিক পরাধীনতার শৃঙ্খল পরিয়ে  দেবার ব্যবস্থা করছে৷ অন্যদিকে ভারতের সংবিধানকে তোয়াক্কা না করে ধর্মীয় মতবাদের নামে মজহবকে সামনে এনে জাতিতে বা ধর্মীয়  মতবাদের নামে মানুষে মানুষে দাঙ্গা লাগিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণকে সুকৌশলে প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে৷

আজকের আইন মানেই সরকার বিরোধী বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতা! বর্তমান বিজেপি সরকার পুঁজিবাদী ও বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রয় হওয়ার ফলে ওই সংস্থাগুলির ইচ্ছেতে সরকার তাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসনকে কুক্ষিগত করে দেশকে রসাতলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ ভারতের শিল্প ও কৃষির মধ্যে যে সমন্বয় বেঁচে ছিল আজ তাহা বহুজাতিক  সংস্থার কাছে বিক্রয় করতে আইনের তকমা দিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হলো৷ ভারতকে এই ধরনের কপোট দুরাচারী শোষকদের থেকে মুক্ত করতে হলে চাই একটি নোতুন দিশার মানব কল্যাণের ওপর নির্ভরশীল আদর্শ৷ যাহার ভিত্তিভূমি মহান শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের প্রগতিশীল উপযোগী তত্ত্ব (প্রাউট)৷ মনুষ্যত্বের বিকাশ ও জড় চেতন সমস্ত প্রকার সম্পদের সঠিক মূল্যায়ন করতে হলে চাই প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামো যাহা সংশ্লেষণের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে৷ আসুন আমরা আমাদের মানুষের সমাজকে রক্ষা করতে ও নব প্রজন্মকে সঠিক পথের দিশা দেখাতে  প্রাউট কে অবলম্বন করি৷ কারণ প্রাউটই একমাত্র সর্বপ্রকার শোষণ, বঞ্চনা ও অত্যাচার থেকে মুক্তির পথ৷