দুর্নীতিগড়

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

দেশের বড় বড় অপরাধ, বড় বড় দুর্নীতি-যা অত্যন্ত জটিল ও বিভিন্ন রাজ্যপুলিশ যার সুরাহা করতে অপারগ--- এমন সব অপরাধ ও দুর্নীতির তদন্ত করার জন্যে রয়েছে আমাদের দেশের সিবিআই৷ বর্তমানে সেই সিবিআই-এর শীর্ষ আধিকারিকরা একে অপরকে দুষছেন দুর্নীতিপরায়ণ ---ঘুষখোর বলে৷ সিবিআই-এর স্পেশাল ডাইরেক্টর রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে মোটা অংকের ঘুষ খাওয়ার অভিযোগে এফআইআরও করেছেন সিবি আই-এর ডাইরেক্টর আলোক ভার্মা৷ ‘রাকেশ আস্থানাও উল্টে অনুরূপ অভিযোগ এনেছেন আলোক ভার্মার বিরুদ্ধে৷

ডাইরেক্টর আলোক ভার্মা স্পেশাল ডাইরেক্টর আস্থানার হাত থেকে তাঁকে দেওয়া যাবতীয় মামলার তদন্তভার কেড়ে নেন৷ তাঁকে সাময়িকভাবে সাসপেণ্ড করেন৷ ঘটনা ঘটে ২৩শে অক্টোবর৷ ওইদিনই রাতে প্রধানমন্ত্রী মোদিজী সিবিআই বনাম সিবিআই-এর এই নাটকে বিচলিত হয়ে তিনি সাত তাড়াতাড়ি এই সংস্থার শৃঙ্খলা নিয়ামক সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিটির বৈঠক ডেকে রাতেই আলোক বার্র্ম ও রাকেশ আস্থানাকে তাদের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাঁদের ছুটিতে পাঠিয়ে দেন৷

খবর পাওয়া যাচ্ছে, রাকেশ আস্থানা মোদিজীর অতি ঘনিষ্ঠ৷ তিনি নাকি প্রাক্তন আর এস এস -এর কর্মী ৷ এও অভিযোগ এই রাকেশ আস্থানা যখন সুরাটের পুলিশ কমিশনার ছিলেন, তখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি, সে সময় তিনি পুলিশের তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকা বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচার তহবিলে দিয়েছিলেন৷ সে টাকা এখনও ফেরৎ আসেনি ৷

সম্প্রতি রাফাল কাণ্ডের ওপর তদন্তের উদ্যোগ নিচ্ছিলেন সিবিআইয়ের ডাইরেক্টর আলোক ভার্মা৷ রাকেশ আস্থানা এ ব্যাপারে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ এইটাই নাকি দ্বন্দ্বের মূল কারণ৷

যাইহোক , উভয়পক্ষই উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে এখন দুর্নীতির অভিযোগে আনছেন৷ ঘরোয়া দ্বন্দ্বে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে, সিবিআই-এর ভেতরের নোংরা চেহারাটা৷

তাই দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করাটাই যে সিবিআই-এর উদ্দেশ্য এমনটা ভাবার কোনো সঙ্গত কারণ নেই৷ সবসময়ই কেন্দ্রের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ যে আসলে বিরোধীদের শায়েস্তা করতেই এই সিবিআইকে হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করা হয়৷ বর্তমানে বিজেপিও ঠিক তাই করছে৷

এরাজ্যে গত কয়েক বছর দেখা যাচ্ছে যখন তখন সারদা, নারদার নামে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তলব করা, নানাভাবে হয়রানি করা, গ্রেফতার করা---এসমস্ত করা হয় ঠিক নির্বাচনের আগে৷ যদি সত্য নির্র্ধরণটাই লক্ষ্য হত তাহলে ঠিক নির্বাচনের আগে তদন্তে তৎপরতা দেখানো, আবার নির্বাচন হয়ে গেলে চুপচাপ---এধরণের কেন? এসব থেকে কেন্দ্রের মনোভাবটা পরিষ্কার হয়৷ অতীতেও দেখা গেছে প্রাউট-প্রবক্তাকে পুঁজিবাদী বিরোধী প্রাউট-দর্শন দেওয়ার জন্যে ও প্রাউটিষ্ট অর্গানাইজেশন দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্যে মিথ্যা অজুহাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল৷ এমনকি জেলের ভেতরে অসুস্থ অবস্থায় ওষুধের নামে তাঁর ওপর জেলের ডাক্তারকে দিয়ে বিষ প্রয়োগও করা হয়েছিল৷ এর বিচার-বিভাগীয় তদন্তের জন্যে প্রাউট-প্রবক্তা জেলের ভেতরেই ৫ বছর ৪ বছর ২দিন অনশন করেছিলেন৷ কিন্তু সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করে সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করেনি৷ প্রাউট-প্রবক্তাকে যে অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল--- তা আদালতের মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে বেকসুর মুক্তি দিয়েছিলেন৷ এইভাবে সিবিআই-এর ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছিল৷

বর্তমান পুঁজিবাদী নিয়ন্ত্রিত সরকার আদৌ দুর্নীতি মুক্ত সমাজ চায় না---তারা সিবিআই সহ তাদের প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর জুলুমবাজী করে’ পুঁজিপতিকুলকে রক্ষা করার জন্যে৷ কারণ প্রধানতঃ তাদের দেওয়া কোটি কোটি টাকাই বর্তমানে নির্র্বচনে জিতে ক্ষমতায় আসার প্রধান হাতিয়ার বা উপায়৷ তাই দুর্নীতি দমনের উদ্দেশ্যে তৈরী সিবিআই এখন নিজেই দুর্নীতির গড়ে পরিণত হয়েছে৷