এভাবে বন্ধ ডেকে কার ভালো করতে চায় নেতারা

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

৪৮ ঘণ্টার ভারত বন্ধ ডেকেছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের লেজুর শ্রমিক সংঘটনগুলি৷ কিন্তু এই বন্ধ কার স্বার্থে? জনগণের কী লাভ এই বন্ধে? যাদের বিরুদ্ধে ডাকা এই বন্ধ, তাদেরই বা কী ক্ষতি? এদেশের মানুষের ৯০ শতাংশের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক চেতনা নেই বললেই চলে৷ থাকলে বন্ধের নামে রাজনীতি ব্যবসা অনেক দিন আগেই লাটে উঠত৷

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই শোষকরা তাদের শোষণের ধারা পাল্টেছে৷ কিন্তু রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংঘটনগুলি আন্দোলনের ধাঁচ পাল্টায় নি৷ তারা এখনও সাবেক পন্থা আঁকড়ে ধরে আছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শোষক যেমন তার চরিত্র পাল্টে শোষণের রূপ বদলেছে, তেমনি নেতারাও স্বভাব পাল্টে শ্রমিক দরদী মুখোশের আড়ালে শোষকের বন্ধু হয়ে গেছে৷ তাই শ্রমিক সংঘটনগুলি আজ শোষকের শোষণের বড় হাতিয়ার৷ মজার ব্যাপার হ’ল সাধারণ শ্রমিকরা এ ব্যাপারে একেবারে অচেতন৷ যে নেতাদের তারা বন্ধু ভাবে, শ্রমিক দরদী ভাবে তারাই শোষণের বড় মাধ্যম৷ নেতারা গাছেরও খায়, তলারও কুড়োয়৷ মালিকেরও খায়, শ্রমিকেরও লোটে৷ এইভাবে নেতা-মালিক-পুঁজিপতিদের এক অশুভ আঁতাত অর্থনীতি, রাজনীতি, শিল্পনীতি, সাহিত্য,

সংস্কৃতি সমাজের সর্বস্তরে শোষণের জাল বিস্তার করেছে৷

এরাই চতুর চালে নানা অসংস্কৃতির স্রোতে ভাসিয়ে মানুষকে অচেতন করে রেখেছে৷ ধর্ম, রাজনীতিকে হাতিয়ার করে মানুষের মধ্যে ভেদ-বিদ্বেষের বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে যা মানুষকে অজ্ঞতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে রাখে৷ বন্ধের পরিণতি কী? কারো লাভ কারো ক্ষতি৷ কিছু না বুঝেই নেতার পেছন পেছন ছোটে৷ স্বাধীনতার সত্তর বছরে একটাও দৃষ্টান্ত নেই যে বন্ধ ডেকে একটা সমস্যার সমাধান হয়েছে৷ তবু নেতারা বন্ধ ডাকে৷ আসলে শোষকশ্রেণী এই বন্ধ ডাকতে বাধ্য করে নেতাদের৷ আসলে এই বন্ধের সঙ্গে তাদের অনেক রকম লাভের সম্পর্ক রয়েছে৷ সাধারণ মানুষের কোনও লাভ নেই৷ বরঞ্চ তাদের অনেক রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ তবু অজ্ঞ অচেতন মানুষ নেতাদের পাশে থেকে বন্ধ-এ সামিল হন৷ নিজের অজান্তেই শোষণের হাতিয়ার বনে যায়৷ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এই শোষণকে বলেছেন---‘‘মানুস অর্থনৈতিক শোষণ৷’ তিনি তাঁর অর্থনৈতিক তত্ত্ব ‘প্রাউট’ গ্রন্থে এই শোষণ বন্ধ করতে, মানুষের চেতনা জাগ্রত করতে, অর্থনীতির একটি নোতুন শাখা দিয়েছেন---‘মানস অর্থনীতি৷’ যা অর্থনীতির এক নব-দিগন্ত৷ মানুষকে সব রকম শোষণ থেকে মুক্ত করে বলিষ্ঠ সমাজ গঠনের সুনির্দিষ্ট পথ-নির্দেশনা দিয়েছেন৷