এই বিপন্নতার মাঝে কিছু কথা

লেখক
চণ্ডীচরণ মুড়া, অধ্যাপক, মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজ

"পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে ।’
(‘সুচেতনা'–জীবনানন্দ দাশ)

সারা বিশ্ব আজ যে অণুজীবৎটিকে কেন্দ্র করে তোলপাড়, যার দানবীয় ঔদ্ধত্যে কুঁকড়ে আছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ । এই মানবজাতির ঔদ্ধত্যও সর্ব্বোচ্চসীমা লঙ্ঘন করেছে বৈকি! প্রকৃতির উপর উত্তরোত্তর অনাচার, অরণ্যনিধন থেকে আরম্ভ করে প্রাণিকুল হত্যা–কিছুই যে বাদ পড়ে নি । এমতাবস্থায় প্রকৃতি ও প্রকৃতির জীবকুলই যখন চরম সংকটময় পরিস্থিতির শিকার, তখন মানুষ নিশ্চিন্তে থাকবে কোন্ শর্তে!!! জীববৈচিত্র্য নষ্টপ্রায়, শৃঙ্খলা ভেঙেচুরে একেবারে খানখান । অসীম ধৈর্যের পর সেকারণেই বোধ হয় প্রকৃতিও রুদ্র রোষে রুষ্ট, আর সেইজন্যই বুঝি ভিন্ন সুরে গান ধরা । হ্যাঁ, এটাই স্বাভাবিক, এতে অবাক হওয়ার কিচ্ছু নেই । আমরা প্রতিনিয়ত যেভাবে তাকে শোষণ করে চলেছি কিংবা বলা যায় নিংড়ে নিচ্ছি, তাতে প্রকৃতিরই বা কী দোষ বলুন! ওই যে কিশোর কবি মৃত্যুযন্ত্রণাকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন বলেই কম্বুকণ্ঠে ঘোষণা করে গেছেন ''এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি'', অস্থির সময়ের ক্ষীণায়ু কবি তা দেখে যেতে পারেন নি ঠিকই; কিন্তু তাঁর উত্তর-প্রজন্ম আমরা কী করলাম এতোদিনে!!! আরও আরও বেশি করে বাসের অযোগ্য করে তুলছি যেন পৃথিবীটাকে । তাই এবার প্রতিশোধ নেবার পালা, 'প্রকৃতির প্রতিশোধ' ।

নিউটনের তৃতীয় সূত্রে তো বলায় আছে, "For every action there is an equal and opposite reaction" অর্থাৎ "প্রত্যেকটি ক্রিয়ার একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে" । ওই যে আমরা যাকে ভাইরাস বলছি, আসল কথাটা যদিও 'বাইরাস', শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার যেটাকে চিহ্নিত করেছেন 'নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম' (negative microvitum) বা ঋণাত্মক অণুজীবৎ নামে । মাইক্রোবাইটাম (microvitum), বহুবচনে মাইক্রোবাইটা (microvita) মূলত তিনধরনের হয়ে থাকে, যথা–ধনাত্মক (positive), নিরপেক্ষ (neutral)ও ঋণাত্মক (negative) । মানবদেহে ক্ষতিকারক অণুজীবৎটি হলো ঋণাত্মক তথা নেগেটিভ । এই অণুজীবৎগুলো আবার কারগতভাবে যেমন স্থূল হয়ে থাকে তেমনি সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতরও হয় । ফলে সবসময় যে মাইক্রোসকোপ তথা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়বে এমনটাও ভাবা সঙ্গত নয় কিন্তু । যেগুলো আণুবীক্ষণিক নয় বা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে সেগুলো আরও বিভীষণ । তার কারণ সেগুলোর ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় করা একেবারেই দুরূহ ।

আমরা কেবল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথা পরিদৃশ্যমান সবকিছুর অস্তিত্ব এযাবৎ স্বীকার করে এসেছি বটে, কিন্তু যা প্রত্যক্ষ নয় তার সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই বলতে পারি না । অথচ এই অর্ধবৃত্তাকার ঘূর্ণিপথে জড়-পরিভূর মধ্যে এমন অনেক সত্তার অস্তিত্ব রয়েছে যা জড়ের থেকেও সূক্ষ্মতর । কিন্তু আমরা জানি গিরগিটির দৌড় সেই বাদাড় পর্যন্ত । অর্থাৎ  গতানুগতিক ধারণা থেকে সেগুলোকেও আমরা  ইলেকট্রন, প্রোটন কিংবা নিউট্রন বলেই ধরে নিচ্ছি । কিন্তু তা নয়, সেগুলো আরও সূক্ষ্মতর ।

এ তো গেল ভৌতিক স্তরের কথা । একইভাবে মানসস্তরেও সেইরকম সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কিছু সত্তা বিরাজমান । যেগুলো চিত্তাণু (ectoplasm) বা চিত্তকোষ (endoplasm)-এর চেয়েও সূক্ষ্ম । সেগুলোকেই শ্রী সরকার নাম দিয়েছেন microvitum বা অণুজীবৎ । এই মাইক্রোবাইটাম একটা বিরাট তত্ত্ব । তাই গবেষণার অবকাশও সুদূরবিস্তৃত । আর সেই গবেষণালব্ধ ফল বিজ্ঞানে অকল্পনীয় সম্ভাবনার দিক খুলে দেবে । ফলে এইসব সংকট তথা মহামারিকে অনায়াসে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে । Microvita-র সেই অপরিসীম ক্ষমতা আছে । এইজন্যই বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধন একান্ত প্রয়োজন । এটা হলে 'বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ', পরীক্ষার খাতায় এই রচনা ছাত্র-ছাত্রা(সচেতন প্রয়োগ)-দের আর লিখতে হবে না । তখন কেবলই 'বিজ্ঞান আশীর্বাদ' শিরোনামটুকুই যথার্থ ।

সেই মাইক্রোবাইটাম সম্পর্কে এক সরষে কণাও বলে ওঠা এই পরিসরে সম্ভব নয় হয়তো । কেবল শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হওয়া ব্যতীত এই রচনায় বেশি কিছু বলবার উপায় নেই । এই মাইক্রোবাইটামের ক্ষেত্র সুবিস্তীর্ণ, এমনকি এক জ্যোতিষ্ক থেকে অন্য জ্যোতিষ্কে অনায়াসে বিচরণ করতে পারে সে । অর্থাৎ তাদের অবাধ যাতায়াত সর্বদা সর্বত্র যে চলছে, এটা ভুললে চলবে না । আবার এই অণুজীবৎগুলো বিভিন্ন তন্মাত্র (inferences)-কে অবলম্বন করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তেও সক্ষম । এই তন্মাত্রগুলো হলো শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ । তারমধ্যে স্পর্শ তন্মাত্রে বর্তমান অণুজীবৎটি (COVID-19) দ্রুত ছড়াতে সক্ষম একদেহ থেকে অন্যদেহে । সেকারণেই isolation বা quarantine-এর বিধান দেওয়া হচ্ছে । এই ঋণাত্মক অণুজীবৎকে ধ্বংস কিংবা নিঃশেষ করতে সক্ষম একমাত্র তার বিপরীত অণুজীবৎ অর্থাৎ ধনাত্মক তথা পজিটিভ মাইক্রোবাইটা (positive micro-vita) । এই ধনাত্মক অণুজীবৎটিই কিন্তু ডাক্তারি পরিভাষায় immunity power হিসেবে পরিচিত, লঘু অর্থে । তবে ধনাত্মক অণুজীবতের ব্যাপ্তি আরও সুবিশাল । এই immunity power তথা positive microvita পরিবেশে এবং মানবদেহে যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করা অসম্ভব নয় । এর সুবৃদ্ধি মানবদেহে কোনও বাইরাসের উৎপাত মেনে নেবে না, তা সুনিশ্চিত করে বলা যায় । কেবল বাইরাস নয়, কোনও অসুখই কাছ ঘেঁষতে দেবে না এই ধনাত্মক অণুজীবৎ ।

এর জন্য লক্ষ্য রাখতে হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির উপর, যেমন–খাদ্যাভ্যাস, যোগ, ধ্যান, মুদ্রা, প্রাণায়াম, উপবাস, কীর্ত্তন অর্থাৎ এককথায় আধ্যাত্মিকচর্চায় । কী, চমকে গেলেন তো? কীর্ত্তন সবচেয়ে বেশি পজিটিভ ভাইব্রেশন (positive vibration)তৈরি করে থাকে বলেই পজিটিভ মাইক্রোবাইটাও অধিকমাত্রায় জন্ম দিতে সক্ষম । এই 'কীর্ত্তন' শব্দটা শুনেও আপনারা নাক সিঁটকালেন তো! কিন্তু তাতে কী! তাতে তো আর কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাবে না! আমরা বাংলার ইতিহাস হাতড়ালেই খুব সহজেই যাঁর নাম খুঁজে পাবো তিনি হলেন নদের নিমাই । তাঁর কীর্ত্তন মহিমা আমাদের অজানা নয় । কীর্ত্তনের মধ্যে দিয়েই তিনি এক ধনাত্মক অনুকম্পাময় পরিবেশ গড়ে তুলতেন । অথচ তাঁর পাণ্ডিত্য সর্বজন বিদিত ।

আসা যাক যোগ, ধ্যান, মুদ্রা, প্রাণায়ামের কথায় । এসকল নিঃসন্দেহে আমাদের প্রাণবায়ুর নিয়ন্তা । যে প্রাণবায়ু না থাকলে আমাদের অস্তিত্বও নিশ্চিহ্ন । তাই এগুলো নিত্য-নিয়মিত অভ্যাস জীবনচর্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তো বটেই । তবে এগুলো অভ্যাসে একটি অনিবার্য শর্ত হলো সাত্ত্বিক আহার তথা নিরামিষ আহারে অভ্যস্ত হওয়া, অন্যথা এসবের ক্রিয়াশীলতা খুবই গৌণ বা বলা চলে নগণ্য । এখানেও আপনারা একটু আশ্চর্য হবেন বৈকি! বলবেন, সাত্ত্বিক আহার আবার কী একটা খাবার নাকি মশাই! কিন্তু এটা জানা খুবই জরুরি যে, সাত্ত্বিক আহার মানসাধ্যাত্মিক স্তরেও উন্নতি সাধন করে থাকে–যা আমাদের অজানা নয় । মানুষ হিসেবে যার চর্চা অত্যন্ত জরুরি তা হলো সাধনা তথা ধ্যান । সাধনা বিনে জীবন বৃথা । শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথার মধ্যে একটা হলো, "মানুষের জীবন সাধনার জন্য, পশুর জীবন ভোগের জন্য" । আর এই সাধনার জন্য গুরুর প্রয়োজন । সদগুরু । সদবিপ্র ।

এপ্রসঙ্গে লালন সাঁই-এর গানের দুটো কথা বড্ড মনে পড়ছে এখানে, "গুরু যার কাণ্ডারি হয় রে/অঠাঁই এ ঠাঁই দিতে পারে/ লালন বলে সাধন জোরে শমন এড়ায় ।" অথবা সেই গানের লাইনগুলোর কথা মনে পড়ে, "গুরু বিনা অজানা কিছুই জানা যাবে না" কিংবা অন্য একটি বিখ্যাত বাউল গানে বলা হচ্ছে, "মানুষ হইয়া জনম লভিলাম, মানুষের করিলাম কী?/ কী ভুল করিলাম, গুরু না ভজিলাম, ভস্মে ঢালিলাম ঘি ।"

যাইহোক যেকথাটা বলছিলাম আর কি, খাদ্যাখাদ্যের প্রতি নিয়ন্ত্রণ মানসাধ্যাত্মিক স্তরে উন্নতি সাধন করবে নিশ্চয়ই । আমিষভোজীদের এই খাদ্যের নিদান হাসির উদ্রেক করবে নিঃসন্দেহে । কিংবা রে রে করে তেড়ে আসতেও পারেন । তা তেড়ে আসলেই বা কী করি বলুন তো! অবশ্য তাঁদের মনে হতেই পারে ঘাসফুস আবার একটা খাবার হলো নাকি! এই কথাগুলো মনে হওয়ার কারণটা আমাদের অজানা নয়, আমিষভোজীদের ধারণায় নেই যে নিরামিষ খাবার খেয়ে মানুষ সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে পারে । আসলে  আমরা যে আজন্ম সেভাবেই অভ্যস্থ । অনেকেই যদিও আমিষভোজন করেন রসনায় তৃপ্ত হয়েই একপ্রকার । একটা কথা মনে রাখতে হবে যে নিরামিষ খাদ্য সহজপাচ্য, অথচ আমিষ খাদ্য বহুগুণে জটিল । জটিল খাদ্য হজম করাও তাই কঠিন । কঠিন বলেই আমাদের অর্গানগুলোর উপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে, ফলত কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে । অনেকক্ষেত্রে খাদ্যের অতিরিক্ত স্নেহপদার্থ শরীরের আনাচেকানাচে জমে গিয়ে রক্তপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে । যার ফলে হার্ট ঠিক মতো পাম্প করতেও পারে না, তখনই উচ্চরক্তচাপের জন্ম দেয় । উত্তরোত্তর এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসের ফলে তা স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয় । খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ আনলে ও নিয়ম মেনে মধ্যে মধ্যে উপবাস করলে এসব সমস্যা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যায় । উপবাসে আমাদের অর্গানগুলো বিশ্রাম পাই বলেই কর্মক্ষমতাও ফিরে পাই ।

মানুষ এই পরিবর্তন সুনিশ্চিত করবেই একদিন, সেদিন আর খুব বেশি দূরে নেই । এটা তো সত্যি কথা যে আমরা মৃত্যুকে বড্ড ভয় পাই । সেইজন্যই তো পৃথিবীর তাবড় তাবড় বুদ্ধিমানেরা সুড়সুড় করে আজ ঘরে ঢুকে পড়েছেন । ওই যে কবিগুরু বলেছেন, "মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে" । আর বাঁচবার অদম্য তাগিদ থেকেই মানুষ আজ শৃঙ্খলাবদ্ধ ।

Lockdown-কে স্বেচ্ছায় বরণ করে গৃহবন্দী হয়েছে । আমি ভীষণ আশাবাদী যে মানুষ বাঁচবার জন্যই একদিন জীবনচর্যা পরিবর্তন করবে, নিরামিষভোজী হিসেবে দীক্ষিত হবে । কারণ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম 'করোনা' মানুষকে অনেক কিছুই করো-না বলে চলেছে । এখান থেকে আজ যদি শিক্ষা না নি আমরা, তবে আগামীদিন আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে । আরও নূতন নূতন বাইরাস তথা ঋণাত্মক অণুজীবতের প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না এক্ষুণি । প্রকৃতি এটা কেবল একটা সচেতনতার পাঠ দিয়ে চলেছে । আর হ্যাঁ, রাজসিক ও তামসিক আহার এইকারণেই বাদ দেওয়া প্রয়োজন যে তাতে মনকে negative vibration থেকে কখনওই মুক্ত করতে পারে না ।

এখন এই negative vibration-টা কী সেটা বুঝতে হবে । আমি কেবল একটা ছোট্ট দৃষ্টান্ত দেবো, কথায় বলে, 'সমঝদারো কে লিয়ে ঈশারাহি কাফি হে', তো আসা যাক সেই উদাহরণে, যেমন ধরুন–মাংস ভক্ষণের উদ্দেশে একটা প্রাণিকে যখন হত্যা করা হচ্ছে তখন সেই প্রাণির মৃত্যু যন্ত্রণার ভাবটুকু মাংসের মধ্যে সঞ্চারিত হয় এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে খাদ্য গ্রহণকারীর শরীরে তা সঞ্চারিত হয়ে মনকে প্রভাবিত করে । ওই সঞ্চারিত ভাবটাই  negative vibration তৈরি করতে সাহায্য করে–যা negative microvita-র জন্ম দেয় । আবার ধরুন বর্ষার মরশুমে ডিমপাড়তে ইলিশ নোনা থেকে মিষ্টি জলে আসলে খাদ্যপ্রিয় মানুষ ডিমসহ তাদের তুলে খেয়ে নিচ্ছে । সেক্ষেত্রেও মনে নেগেটিভ মাইক্রোবাইটার জন্ম দেবে ।

অবশ্য অনেকেই একটা কথাকে ধ্রুবসত্য বলে ধরে নিয়েছেন, 'যদি মরি তবে খেয়েই মরবো' তাদের জন্য নিশ্চয়ই এই কথাগুলো নয় । খাবার নিশ্চয়ই খেতে হবে, কিন্তু বাঁচবার উপযোগী করে উপযুক্ত খাবার খেতে হবে । যা তা খাবো, আবার কাঁড়ি কাঁড়ি ওষুধও গিলবো এবং ঠেলতে ঠেলতে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে চলবো–এর চাইতে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বাঁচা উচিত নয় কী! আপনাদের মনে হতেই পারে যে এ আবার কোন্ মাতব্বর রে বাবা, এতোসব আজেবাজে জ্ঞান দিয়ে চলেছে; জীবনটা যখন আমার, তখন আমাকেই ভাবতে দিন না মশাই । ভাবুন না, অসুবিধা কোথায় ।

কিন্তু কষ্ট হচ্ছে এই ভেবে যে খুদে একটা বাইরাসের ভয়ে যবুথবু হয়ে ঘরের কোণে নিজেকে বন্দী করে রেখেছেন । এতো বিদ্যা-বুদ্ধি-পাণ্ডিত্যের অহংকার আজ কোথায় যেন ফিকে হয়ে গেছে! অহংকার বা দেমাক নিয়ে হবেটাই বা কী বলুন! জীবনের নিশ্চয়তাই যেখানে নেই । যাইহোক 'গরীবের কথা বাসি হলে কাজে দেবে' হয়তো । একদিন এই পথেই ঘটবে পরিক্রমা নিশ্চিত, বা 'ক্রমমুক্তি' । কারণ পরবর্তী প্রজন্মের কথা মনে রেখে, নিজের কথা মনে রেখে পৃথিবীতে নয় কেবল, পুরো ব্রহ্মাণ্ডে একটা তরঙ্গই প্রতিধ্বনিত হবে, সাত্ত্বিক মানসাধ্যাত্মিকতার ভাবতরঙ্গ । আর আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করছি চারিদিকে সুনির্মল বাতাস ফুরফুর বেগে বয়ছে । এক আনন্দঘন জীবনের স্বাদ সকল মানুষ চোখ বন্ধ করে গ্রহণ করছে । সে কী অনাবিল আনন্দ-ধারা । আর আমি গাইছি সেই প্রিয় গানটি–
তোমার নামের তরী বেয়ে
সাগর হব পার,
সাগর হব পার আজিকে
সাগর হব পার ।
কুজ্ঝটিকা-ঝোড়ো হাওয়া
মানি না ভাঁটা-জোয়ার । ।
পিছে থেকে যেই বা ডাকুক
নিরুৎসাহ যেই বা করুক ।
ভয়ের কথা যত যে বলুক
কথা শুণব না তার । ।
তুফানী ওই ঢেউয়ের ‘পরে
নিস্তরঙ্গ দ্যুতি ঝরে ।
আসা-যাওয়ার পরপারে
ডাকে শান্তি অপার । । (প্রভাতসঙ্গীত ৪৩৭০)