এই চাপ সৃষ্টির মধ্যেই রয়ে গেছে পুঁজিবাদী শোষণের কৌশল

লেখক
শ্রী শঙ্কর দাশ

পুঁজিবাদী কৌশল বোঝা খুবই কঠিন৷ অর্থের ব্যাপারে বৈশ্য বুদ্ধির কাছে বিপ্রের তীক্ষ্ন বুদ্ধিও নস্যি মাত্র৷ আমি বরাবরই বলে থাকি, যুদ্ধ আর কিছুই নয়, পুঁজিপতিদের শোষণ করার এক সূক্ষ্ম ও শৌখিন কৌশল মাত্র৷ ভারত বর্ডারে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, সৈনিকরূপে মাত্র সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা, দেশে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়া, এরই সুযোগে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেওয়া, মুনাফার  নামে পুজিবাদী লুটতরাজ শুরু করা--এসবই পুঁুজিবাদী কৌশলমাত্র৷ ভারত-চীন যুদ্ধ যুদ্ধ আবহাওয়ার মধ্যে আমাদের দেশের শ্লোগান ওঠেছে, ‘‘বয়কট চায়না’’

যদিও ভারতের প্রধান সেবক তথা প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন ভারত সরকার ‘‘বয়কট’ চায় না৷ কিন্তু চীনকে অন্য কৌশলে ঘায়েল করতে হবে৷ শেষে আবিষ্কার হলো সেই কৌশলটি৷ কী সেই কৌশল ? ভারত সরকার চীনের পণ্য বয়কট করার পরিবর্ত্তে চীন সরকারকে  বেকায়দায় ফেলতে চীনা পণ্যে চড়া শুল্ক চাপালো৷ এই চড়া শুল্কের  চাপে  পড়ে চীনা  সরকার এমনি  এমনিই তাদের পণ্য ভারত থেকে তুলে নেবে৷ এই যুক্তিকে যদি  ‘‘সাপ মারা লাঠিও না ভাঙ্গার ’’ চিকন কৌশল মনে করে  মোদিজীর প্রশংসায় আপনি পঞ্চমুখ, ষষ্ঠমুখ কিংবা দশানন হয়ে বসে থাকেন, তবে আমার বলতে আপত্তি নেই আপনি  পুঁজিবাদীদের অর্থ কামাইয়ের বৈশ্য বুদ্ধি কাছে এখনও সদ্যভূমিষ্ট শিশু মাত্র৷ কেনো এমন বললাম? কারণ, এখনও  পর্যন্ত পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে, সরকার কোন পণ্যের ট্যাক্স তথা শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে আর সেই বাড়তি শুল্কের টাকাটা কোম্পানীগুলো তথা পুঁজিপতিরা ওই পণ্যটির দাম না বাড়িয়েই তাদের গাঁটের থেকে দিয়ে দিয়েছে৷ এমনটা  কোনোদিনই  হয়নি, আর হবেও না৷ যখন যখনই বাজেটে বা অন্য সময় সরকার কোনো পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে, তখন তখনই সেই পণ্যটির মূল্যও কোম্পানী তথা পুঁজিপতিরা বাড়িয়ে দিয়েছে৷ তাহলে কোপটা পড়লো কার উপর? সাধারণ ভোক্তা তথা জনগণের উপর, আর এতে করে আগে যে পণ্যে ব্যবসায়ীরা  লাভ হতো , ধরুন, ২০ টাকা, এখন মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে সেই একই পণ্যে ব্যবসায়ীর লাভ হচ্ছে নূন্যতম ২৫ টাকা৷ কোপটা কিন্তু পড়ল সাধারণ জনগণের ঘাড়েই৷ খবরে  প্রকাশ, ভারত সরকার কর্তৃক ৩০০ টির  মতো চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক চাপানো হবে৷ কিন্তু সবচেয়ে চিন্তার বিষয়টি হলো, ভারতে একচেটিয়াভাবে সোলার উপকরণের সরবরাহকারী দেশ হলো চীন৷ তাহলে কী দাঁড়ালো? দাঁড়ালো এই, 

(১) সোলার প্যানেল উৎপাদনকারী ভারতীয় কোম্পানীগুলো চীন ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক দেওয়া সোলার উপকরণগুলো ক্রয় করে সোলার প্যানেল বানাবে ও ভারতের জনগণের কাছে বিক্রি করবে৷ (২) চীন যখন ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক ভারত সরকারকে দিয়েই ভারতের কাছে বিক্রি করবে, তখন চীনও সোলার উপরকরণগুলোর দাম বাড়িয়ে দেবে৷ (৩) এটা সহজ হিসেব, তখন এই সোলার প্যানেলের দাম বহুগুণ বেড়ে যাবে৷ এই দামী সোলার প্যানেলগুলো কিনবে কে? না,ভারতের জনগণ ও অবশ্যই ভারতের জনগণকে অধিক দাম দিয়েই সোলার প্যানেল কিনতে হবে৷ তাহলে লাভটা হলো কার? ভারতীয় কোম্পানীগুলোর আর চীনের কোম্পানীগুলোর৷ এতে চীনের ক্ষতি হলো কোন দিক দিয়ে? এতে চীন চাপে পড়লো কোনদিক দিয়ে? এখানে তো ভারতের জনগণই বরং শাঁখের করাতে পড়লো৷ খবরে আরও জানা গেল, ভারতীয় ঔষধের  জন্যে চীনের রপ্তানি করা ৭০ শতাংশ কাঁচামালের দাম চীন অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়ে দিয়েছে৷ তাহলে ভারতের এখন ঔষধের মূল্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে অনুমান করতে পারছেন? ঔষধের মূল্য এখনকার মানুষের ভাবনা ছাড়িয়ে যাবে, এ কথা এখনই নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়৷ কিন্তু ওই দিকে রাজায় রাজায় দোস্তী তো ঠিকই থাকলো৷ দ্রব্যমূল্যের কোপে পড়ে ভারতের জনগণই বরং মরবে৷ সেই জন্যেই তো প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, চীনা এ্যাপকে বয়কট করার কোনো সিদ্ধান্ত ভারত সরকারের নেই৷ এই হলো বেনিয়া বুদ্ধি৷ এই হলো বৈশ্য বুদ্ধি সুতরাং ‘‘চীনা পণ্যে চড়া  শুল্ক, বানিজ্য যুদ্ধে চাপ বাড়াল ভারত’’এই শিরোনামাঙ্কিত খবর ভারতবাসীর জন্যে সুখের নয়, বরং দুঃখের৷