এন, আর,সির নামে বাঙালীদের হেনস্তা করার একটি নজির

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

গত ২০১৭ সালের জুন মাসে যখন অসমরাজ্যে নাগরিক পঞ্জীর (এন.আর.সি) প্রথম খসড়া তালিকা বের করা হয়েছিল, তাতে অসমে মোট প্রায় ১ কোটি ৩৯ লাখ বাঙালীকে ‘ডি-বোটার’ (ডাউটফুল বোটার) করে রাখা হয়৷ উক্ত ‘ডি-বোটার থেকে তুলে নিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়৷ শুধু রাখা হয় বললেও ভুল বলা হবে, কেন না , এমনও জানা গেছে যে স্বামী এক ক্যাম্পে তো স্ত্রী অন্য আরেক ক্যাম্পে, কোথাও বা ছেলে-মেয়েরা এক ক্যাম্পে তো মা -বাবা অন্য কোথাও৷ এখানে ‘ডি-বোটার’ (‘‘রাষ্ট্রহীন নাগরিক’’ বলাই ভাল) বলে ঘোষিত এক মহিলার করুণ কাহিনী বর্ণনা করছি৷ মহিলার নাম শ্রীমতী কণিকা দত্ত (পরিবর্তিত)৷ কণিকার জন্মস্থান ভারতেরই অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা৷ ওর পিতা-মাতা বিগত তিন-চার জেনারেশন ধরে ত্রিপুরার স্থায়ী বাসিন্দা ও সেই সূত্রে তাঁরা ছিলেন নিঃসন্দেহে ভারতীয় নাগরিক৷ কণিকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সমাপ্ত হয় ত্রিপুরারই কোন এক জেলায়৷ ওর শিক্ষা সমাপনান্তে মা-বাবা মেয়েকে বিয়ে দেন অসম রাজ্যের তেজপুরে (অপার অসমের শোণিতপুর জেলায়)৷ বর্তমানে কণিকা ছেলে-মেয়ের জননী৷ ওর পতি হচ্ছেন ওখানকারই জনৈক ব্যবসায়ী৷ কিন্তু , অবাক হলেও অতি বাস্তব সত্যিটা হল এই যে, কণিকার স্বামী ভাসুর, বড়জা ও ভাসুরের সন্তান- সন্ততিরা সকলেই ভারতীয় নাগরিক, তবে কণিকার নাগরিকত্বর প্রমাণপত্র ত্রিপুরা থেকে প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও তার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, ওকে নাকি অসম-এর নাগরিকত্বের প্রমাণ দেখাতে হবে৷ নতুবা ওকে ডিটেনশন-ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে৷ গত কিছুদিন আগে থেকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কণিকা নিজে ও তার স্বামী এসে উল্লেখিত ঘটনাটি বিবৃত করেন৷ প্রতিবেদক জানতে চাইলে ওরা দু’জনেই বলে যে, ওঁর এলাকার ট্রাইব্যুনাল ম্যাজিষ্ট্রেট বলেছেন যে, ত্রিপুরার নাগরিকত্ব থাকলেও হবে না,ওঁকে নাকি অসমের নাগরিকত্ব দেখাতে হবে৷ পরবর্তীকালে ট্রাইব্যুনাল চাইল, ত্রিপুরা রাজধানী আগরতলার কোনও ম্যাজিষ্ট্রেটের এই মর্মে স্বাক্ষরিত প্রমাণপত্রও এনে দেখাতে হবে৷ ত্রিপুরা ও অসমের পৃথক নাগরিকত্ব হয় নাকি! সবাই তো ভারতীয় নাগরিক ! ইত্যাদি প্রকারের একের পর এক দাবী তুলে কণিকা দত্ত নামের ওই মহিলাকে ও একই সঙ্গে ওর পরিবারটিকে হেনস্তার চূড়ান্ত করা হচ্ছে! শুধু একা কণিকাই রাষ্ট্রীয় হেনস্তার শিকারে পরিণত হয়েছেন ও হচ্ছেন তা-ই নয়৷ এরূপ শত শত কণিকা রয়েছেন৷ এ ধরণের শত শত বা হাজার বললেও ভুল হবে না যে, অসমের কাছাড় বরাকভ্যালী এলাকাতে বাঙালীদের হয়রাণির ইয়ত্তা নেই৷ তবে এইটুকুই রক্ষা যে, কাছাড় বাঙালী প্রধান এলাকা হবার সুবাদেই ওখানকার বাসিন্দাদের ওপর রাষ্ট্রীয় যম-দেবতার খাঁড়াটা এখন পর্যন্ত ‘নামি নামি’ করলেও নেমে আসেনি বা নেমে আসাটাও সময়ের অপেক্ষা মাত্র৷ কিন্তু প্রশ্ণ হল, বাঙালীদের ওপরে এত খড়্গাঘাত কেন ? কেনই বা বাঙালীদের ওপর এত হেনস্তা? কেনই বা ভারতের সর্বত্র অনুপ্রবেশকারীর সমস্যা থাকলেও কেবল অসমে খড়্গাঘাত কেন? ত্রিপুরায় বা কেন? কেন শ্রীলঙ্কা থেকে আগত তামিলদের ওপরে নয় বা অন্যান্যদের ওপর নয়?