গাজনে মড়া খেলা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

 এককালে চৈত্রমাসের গাজন ছিল সারা বাংলার একটি জনপ্রিয় উৎসব৷ গাজনের নায়ক হচ্ছেন শিব৷ ভূত প্রেত নিয়ে শিব শ্মশানে থাকেন৷ তাই তাঁর উৎসবে একটু ভৌতিক ব্যাপার স্যাপার থাকবে এ আর আশ্চর্য কি৷

এখন গাজন উৎসব অনেক পরিচ্ছন্ন হয়েছে৷ সেকালের মত গাজনে মড়াখেলার অনুষ্ঠান আর হয় না৷

গাজনের সন্ন্যাসীরা আচার-আচরণের দিক দিয়ে নানা শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল৷ কেউ পিশাচের বেশে মৃত নরদেহ নিয়ে নৃত্য করত৷ এই অনুষ্ঠানটিকে বলা হত মড়া খেলা৷ কেউ বা আবার ডাকিনী সাজত৷ পরনে লাল কাপড় গলায় ফুলের মালা, গায়ে রুপোর গয়না, মাথায় লম্বা লম্বা চুল, মুখে আবিরের প্রলেপ আর হাতে বেত নিয়ে বিকট চিৎকার করে নেচে নেচে বেড়াত৷ অনেকে আবার আবিরের বদলে মুখোশ পরে নাচত৷

মড়াখেলা হত উৎসবের দিন শেষ রাতে৷ অবিরাম ঢাকের আওয়াজ, ধূপের ধোঁয়া আর ভক্তদের ভৌতিক গর্জনে গা ছমছমানি ভাব৷ হঠাৎ আস্ত মড়া কাঁধে নিয়ে ভক্তরা নাচতে শুরু  করত৷ অনেকে গলিত শব নিয়েও নাচত৷ যে যত বেশি পচাগলা শব সংগ্রহ করতে পারত  তার তত কৃতিত্ব৷ অন্যথায় মড়ার মাথা নিয়েই নাচ শুরু করত৷ বর্ধমানের কুড়মুনের গাজনেও সন্ন্যাসীরা নরমুণ্ডসহ নাচত৷ নাচ শেষ হলে ভক্তরা শবের গায়ে আবির মাখাত, শবকে আদর করত৷ তারপর ঢাক বেজে উঠলেই ভক্তরা শবের চারদিক ঘিরে নেচে নেচে মন্ত্র পড়ত আর গান করত---

শ্মশানে গিয়েছিলাম মশানে গিয়েছিলাম

সঙ্গে গিয়েছিল কে?

কার্তিক গণেশ দুই ভাই

সঙ্গে সেজেছে৷৷

১২৮৮ সনে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য সরকারী আদেশে শব আর নরমুণ্ড সহ নাচ বন্ধ হয়ে যায়৷ ইদানীং নরমুণ্ডের  বদলে নারকেল নিয়ে নাচ হতে দেখা যায়৷