গণতন্ত্রে যাতে মানুষের অবস্থা ফেরে সেদিকে রাজনৈতিক দলগুলির লক্ষ্য রাখাটা পবিত্র কর্ত্তব্য

লেখক
প্রভাত খাঁ

 ভারত নাকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ তাহলে দীর্ঘ ৭১ বছর পর পাঁচটি রাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রায় নয় লক্ষ বোটার নোটায় বোট দিয়েছেন কি কারণে ? এর কারণটা যে কতো বড়ো এটা রাজনৈতিক দলগুলির কাছে অশনি সংকেত৷ সেটা কি সরকারগুলি ভেবে দেখেছেন?

এছাড়া গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বোটার নানা কারণে বোট দেন না তাহলে সাধারণ নির্বাচনে প্রকৃত জনমত যাচাই কি সত্যসত্যই হয়? একটা অপ্রিয় সত্য কথা বলতেই হয় তা হলো প্রফেশনাল রাজনৈতিক দলগুলি যেভাবে বোটে জনসমর্থন পেতে লড়াই করেন সেটা কিন্তু মোটেই শান্তিপূর্ণ হয় বলে মনে হয় না৷ অদ্যাবধি এমন একটি নির্বাচন আমরা দেখলুম না যেখানে দলগুলো মারামারি ঝগড়া করেনি৷ প্রতিটি নির্বাচনেই কিছুনা কিছু প্রাণহানি ঘটছে! রাজনৈতিক দলের নেতা ও নেত্রীরা সরাসরি হয়তো হাতাহাতি, লাঠালাঠি বোমাবাজি করেন না কিন্তু ক্যাডারদের অনিয়ন্ত্রিত উৎসাহ এইসব অগণতান্ত্রিক কাজ করে বসে৷ নেতারা কিন্তু নিজেদের ক্যাডারদের দুষ্কর্মকে চাপা দিতে যে সব ভাষা প্রয়োগ করে তাতেই বোঝা যায় তারাই এই খারাপ কাজে উৎসাহ দিয়েছে৷আর যাদের হাতে শাসনভার থাকে তারা পুলিশ প্রশাসন ও ক্যাডারদের দ্বারা অন্যায় কাজগুলিতে মদত দেন৷ নির্বাচনে কারচুপিটাতো একটা জলভাত৷ তবে মিক্সড এলাকায় এই সব অগণতান্ত্রিক কাজগুলো বেশী হয় না৷ আর বুথ জ্যাম করে রক্তচক্ষু অন্য লোকের বোট দান করাটা বর্তমানে একটা রাজনৈতিক কৃতিত্বের মধ্যেই পড়েছে৷ তবে নাগরিকদের যে আরো সচেতন হতে হবে৷ যাতে তারা বোট দিতে পারেন তার ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের করা প্রয়োজন৷

নাগরিকের প্রতিটি বোটের মূল্য আছে৷ বোট পড়ে গেছে শুণে কোন বোটার যেন দুঃখিত মনে ফিরে না যান৷ তিনি বোট অবশ্যই দিতে পারেন , এর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন৷ তাই বোটারদের আরো সচেতন হতে হবে৷ বোটারদের আঙ্গুলে ‘ইন্ডেলেবেল ইঙ্কি’ দেওয়া হয় যদি সেই দাগ না থাকে তাহলে তিনি অবশ্যই বোট দিতে পারেন৷

এমনও দেখা গেছে যে বুথে কোন ৯০০০ টি বোটার আছেন৷ সেখানে ১০০০ বোট পড়েছে সেটা কেমন করে হয়? এগুলি রিপোর্ট জমা দেবার সময় প্রিসাইডিং অফিসারদের ভাবতে হবে৷ প্রয়োজনে বোট নেবার পদ্ধতিতে আরো বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷

সাধারণ নির্বাচনে একজন প্রার্থী থাকতে পারেন না, কিন্তু দেখা যায় গ্রাম পঞ্চায়েতে এমন কাণ্ড ঘটে যা কল্পনাতীত৷ কোথাও কোথাও দু’একটা ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু হাজার হাজার বুথে এটা হয় কি করে?

সেটা হচ্ছে এদেশে ! তাই নির্বাচন কে আরো সরল ও বিজ্ঞান সম্মত হতে হবে৷ অভিজ্ঞতায় দেখা যায় নির্বাচন কখনো যে দল সরকারে আছে তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়াটা কাম্য নয়৷ কারচুপি এখানেই বেশী যে হয় তা অস্বীকার করার নয়৷ নির্বাচনে খরচের বহর কমাতে হবে৷ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে দলগুলো যে নির্বাচনে লড়াই করে সেটা বন্ধ করা উচিত৷ রেডিও, টিভিতে প্রত্যেক প্রার্থীরা সময় করে বক্তব্য রাখার সুযোগ যাতে পায় তার ব্যবস্থা থাকবে৷ বিশেষ কোনস্থানে প্রার্থীরা সময় করে বক্তব্য রাখবেন৷ এই পর্যন্ত তাছাড়া তারা লিফ্লেটের মাধ্যমে দলের উদ্দেশ্য জানাতে পারেন৷ নির্বাচনে টাকার খেলা অবশ্যই বন্দ হওয়া দরকার৷ এতে দুর্নীতি প্রশ্রয় পায়৷ জনমানসে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়৷

যতোদিন যাচ্ছে দল বাজিটাই গণতন্ত্রে প্রশ্রয় পাচ্ছে৷ দলত্যাগ প্রথাটাকে নিয়ন্ত্রণ করাটা বাঞ্ছনীয়৷এতে সুবিধা ভোগীরা প্রশ্রয় পায় তাতে দুর্নীতিটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়৷

স্মরণে রাখা দরকার যে গণতন্ত্র কখনো বিরোধী শূন্য হতে পারে না, তাতে স্বৈরাচারিতার প্রবণতা বাড়ে৷ আমরা লক্ষ্য করেছি ইন্দিরা কংগ্রেসের আমলে এই প্রবণতা খুবই দৃঢ় ছিল যা দেশের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক৷ দেখা যায় শাসক দলের যে ভাবটা আমরা প্রশাসনে দেখি সেটা গণতন্ত্রে কাম্য নয়৷ বিরোধী দলই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবে গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য৷ তবে বিরোধীদেরও মনে রাখতে হবে কল্যাণমূলক কাজে শাসকদলকে সমর্থন করা অত্যন্ত বেদনার কথা ভারতে গণতন্ত্র মাত্র ৭১ বছরে ৯৯ বার সংবিধান সংশোধিত হয়েছে৷ যখনই কোন শাসক দল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে পারেনি সংবিধানের আইন মোতায়েক তখনই সংবিধান সংশোধিত হয়েছে৷তাদের এই কার্যকলাপ সমর্থনযোগ্য নয়৷

 ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধী লোকসভাকে না জানিয়ে ক্যাবিনেটের কয়েকজনের মত নিয়ে রাতারাতি দেশে জরুরী অবস্থা জারি করেন রাষ্ট্রপতি ফকিরুদ্দিনের স্বাক্ষর গ্রহণ করে৷ যাতে রাষ্ট্রপতি নাকি স্বাক্ষর দিতে চাননি৷ এই জরুরী অবস্থায় দেশের বহু নিরীহ মানুষ দীর্ঘ প্রায় দু’বছর কারাগারে বন্দী থাকেন৷ এটা কেমন গণতন্ত্র? গোয়েন্দা রিপোর্টে নাকি জানতে পারেন সাধারণ নির্বাচনে তাঁর জয় সুনিশ্চিত তাই নির্বাচন ডাকেন৷ তাতে তিনি পরাজিত হন৷ এই জরুরীকালীন অবস্থায় কাশ্মীরের সেখ আবদুল্লা টিপ্পনী কেটে নাকি বলেছিলেন যে ‘এটা রোগ সারানোর তীক্ত ওষুধ৷’’

মনে রাখা দরকার, জনগণ বোট দিয়ে দেশ শাসনের অধিকার দান করেন নেতা ও নেত্রীদের৷ তাঁরা দেশকে সেবা দেবেন, সুশাসন করবেন৷ তাই বলে শাসনে গিয়ে আইন পরিবর্তন করে স্বৈরাচারিতা করে যাবেন তা তো নয়৷ একথাটা শাসকদের স্মরণে রাখা দরকার৷

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে এদেশের বুকে পরবর্ত্তীকালে শাসনে এসেছে তারা সুষ্টুভাবে দেশ সেবা তো করতেই পারছে না তার পরিবর্তে ১৩০ কোটি মানুষের জীবনকে রক্তশূন্য করে ছাড়ছেন নিছক দলীয় স্বার্থে ধনীদের পুষ্টি সাধনে৷ এটা গণতন্ত্রে অবশ্যই না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়৷ অনেক আশা করেছিল মানুষ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার জনগণকে সেবা দেবে৷ তা এই বিজেপি সরকারের শাসনে তো হল না৷নোট বাতিল হলো , জি.এস.টি, এন.আর.সি, রান্নার গ্যাস এর মূল্য বৃদ্ধি , দারুণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি , চরম বেকার সমস্যা, ব্যাঙ্কগুলিতে সুদের হার হ্রাস, আধারকার্ডের নানা সমস্যা, আরো অনেক ব্যাপারে হতভাগ্য জনগণ হয়রান হয়েছেন ও হচ্ছেন৷ এটা কাম্য নয় গণতন্ত্রে৷ তাই মহান ভারতের বুকে প্রকৃত গণতন্ত্র মানুষের দেশ সেবায় ব্রতী হোক এটাই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার গুলির কাছে দাবী৷ স্বৈরাচারী মানসিকতার রক্তচক্ষু হত দরিদ্র নাগরিকগণ শাসকদের কাছ থেকে কামনা করে না৷ সুষ্টু নির্বাচন হোক, দেশের সৎনীতিবাদী দেশ সেবকগণ সুযোগ পান দেশ সেবার এটা সকলের কামনা৷ভয়ংকর দলতন্ত্রে আজ জনগণের নাভিশ্বাস উঠছে৷ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর কাছ থেকে বিশেষ করে শাসকদলের আরো সংযম সাধারণ মানুষ এটাই তো আশা করে৷

পরিশেষে একটি কথা সব দলের স্মরণে রাখা দরকার, যে গণতন্ত্রে নির্বাচন যেন সুষ্টু হয় আর সকল বোটার যেন বোট দিতে পারেন৷ তাতে মানুষের নির্বাচনের প্রতি আস্থাও ফিরবে ও মানুষ বুঝতে পারবে এটা তাঁদের সরকার৷ রাজনীতি থেকে নোংরামীটা যেন দলগুলি বন্ধ করে৷