গণতন্ত্রের করুণ দশাটা জনগণ যতো তাড়াতাড়ি উপলদ্ধি করবেন ততই মঙ্গল

লেখক
মুশাফির

গণতন্ত্রে নাগরিকগণ যাতে শান্তিতে নির্বাচনকালে নিজনিজ মতামত দান করতে পারেন সেদিকে কেন্দ্র ও রাজ্য শাসকগুলির যেমন দেখা দরকার৷ আর নির্বাচন কমিশনকে  অবশ্যই  দেখতে হবে যাতে নির্বাচন শান্তিতে ও সুষ্টুভাবেই হয়৷ কিন্তু ভারতের মতো দেশে সেই প্রথম থেকেই দেখা যায় নির্বাচনটা যেন এক রাজনৈতিক দলের কে জিতবে তারই এক কদর্য লড়াই৷ এতে আবার বিশেষ বিশেষ রাজ্যে রক্তারক্তি প্রাণহাণীও ঘটে৷

গণতন্ত্রে প্রত্যেক বোটার যাতে বোট দান করতে পারেন সেদিকে শাসকগণকে অবশ্যই নজর দেওয়া দরকার৷ তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো  যাঁরা বিজয়ী হন তাঁরা বোটারদের ধন্যবাদ দেন ও বিপুল বোটে তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন সেটা ঘোষণা করেন আর যাঁরা হেরে যান তাঁরা বোটে কারচুপী  হয়েছে এই ক্ষোভ ব্যক্ত করেন৷

এখানে বোট যাই হোক অর্থাৎ  নির্বাচন হলে প্রার্থীরা প্রাপ্ত বোটে যিনি বেশী বোট পাবেন তিনিই বিজয়ী বলেই ঘোষিত হবেন৷  কিন্তু জনগণের রায়কে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কথা স্মরণ যদি করা হয় তাহলে বিজয়ী প্রার্থীকে প্রদত্ত ৫১ শতাংশ বোট পেতে হয়৷ এদেশে সেটার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়না৷ বোট দানটাও হতে হয় মোট বোটের অন্ততঃ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ৷ কিন্তু যতো দিন যাচ্ছে বোটারগণ এমনই আশাহত হচ্ছেন যার দরুণ অনেকক্ষেত্রে ৫০ শতাংশও বোট পড়ে না৷ এদিকে রাজনৈতিক দলের ও নির্বাচন কমিশনের কোন ভ্রূক্ষেপই নেই!

যেন তেন প্রকারেণ একটা নির্বাচন করে গদী সামলানোটাই হলো বিজয়ী  দলের নেতাদের মূল লক্ষ্য৷ জনগণের রায়কে ভারতে দেখা যাচ্ছে বিশেষ মূল্য দেওয়া হয়না৷ অনেক দল বোটের  দিনে বিরোধী মনোভাবাপণ্য বোটারদের ভয় দেখায় যাতে বোট দিতে না যান৷ এটাই অধিকাংশ দলেরই লক্ষ্য, কারচুপী করা শাসকদলের প্রবণতাটা বেশী৷

গত ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্য্যন্ত  দেখা গেছে নির্বাচনে  এক মারাত্মক ডামাডোল৷ তবে পরবর্ত্তীকালে  জাতীয় দলগুলো শক্তি হারিয়ে  আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে নানা কৌশলে শাসন ক্ষমতা দখল করে চলেছে৷ যেটাতে গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে চলেছে৷ জনগণের মতামত এর কোন মূল্যই নেই গণতন্ত্রে! দল ত্যাগ করে এম.এল.এ ও এম.পি বেচাকেনাটা বেড়ে যায়৷ গণতন্ত্রে টাকার খেলা প্রবল হয়৷ রাজনীতিতে নৈতিকমান একেবারে তলানীতে নেমে এসেছে৷

মোদ্দাকথা ভারতে গণতন্ত্রের প্রতি মনে হয় কোন দলের শ্রদ্ধা নেই৷ জনগণকে অদ্যাবধি সরকারগুলো রাজনৈতিক সচেতন করে তুলতে ও সার্থক নাগরিক করে তোলার  জন্য যেগুলি আবশ্যক সেগুলি  থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে৷ তা না হলে আজও ছবি-প্রতীকে বোট পড়ে! প্রার্থীর নাম থেকে নানা  সেন্টিমেন্টাল প্রতীকগুলিকে বেশী মূল্য ও গুরুত্ব দেয়৷ ফলে প্রার্থীর গুণাগুণটা একেবারেই অস্বীকৃত হয়৷ ফলে লোকসভা বিধান সভায় বোট দানের জন্য ভীড় হয়৷ বাকি সময় দু’একজন নেতা নেত্রী বক্তব্য রাখেন বাকিরা আলোচনায়  উপস্থিত হওয়ার জন্য আগ্রহ দেখায় না৷ পবিত্র আইন সভাগুলিতে যেভাবে পচাডিম, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো ছোঁড়া হয় আর টেবিল চেয়ার ভাঙ্গা হয় তাতেই শিক্ষিত ব্যষ্টিরা আতঙ্কগ্রস্ত  হয়ে রাজনীতিতে নাক গলান না৷ তাই রাজনীতিতে আজ আর সচেতন শিক্ষিত ব্যষ্টিদের  দেখা যায় না৷ লজ্জার কথা বিরোধী শূন্য আইনসভায় বিল পাশ হয় আভ্যন্তরীণ দুর্দিনে দেশে বোট নিয়ে দলগুলো মাতামাতি করে গদী সামলায়৷

এই হলো দেশের হতাশার চিত্র! তাই ভবিষ্যতে কোথায় যাবে দেশ সেটাই চিন্তার৷ রাজনীতিটাই নোংরামীতে দূষিত হয়ে পড়েছে৷ বর্তমানে নির্বাচনটাই যেন প্রহসন!

দেশের নাগরিকগণই দেখছেন যে ভয়ংকর করোনার মধ্যেই বিহারে বোট হলো! এই অস্বাভাবিক অবস্থাটা বোটের পক্ষে  মোটেই  অনুকুল নয়৷ সংবাদে প্রকাশ যে বিহারে ২৪৩ জন বিধায়কের এর মধ্যে ১৯৪ জনই কোটি পতি৷ এর মধ্যে বেশী কোটিপতি আছেন বিজেপি দলের৷ বিজেপির ৬৫ জন, আর জেডি ৬৪ জন, নীতিশ এর দলের ৩৮ জন, কংগ্রেসের ১৪ জন  বিধায়ক কোটিপতি৷ আর ৮২ জন বিধায়কের শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশশ্রেণীর মধ্যে৷ সংবাদে জানা যায় ১৬৩ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা আছে৷

এই হলো এদেশের জনপ্রতিনিধিদের অবস্থা৷ আর এনডিএ ও মহাজোটের বোটের ফারাক ১২ হাজারের মতো৷ তবে আশার কথা আর জেডির তরুণ নেতা বয়স মাত্র ৩১ বছর তেজস্বী যাদব দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন৷ তাঁর দল ৭৫টি আসন পেয়েছে৷ বিজেপির  আসন ৭৪ টি৷ শ্রী তেজস্বীর দল ২৩.১ শতাংশ বোট পেয়েছে৷ বিজেপি পেয়েছে ১৯.৫ শতাংশ৷ তাই গণতান্ত্রিক শাসনে কোটি কোটি হত দরিদ্র নাগরিকদের প্রতিনিধি কোথায়? নেতারা কাদের স্বার্থরক্ষা করে চলেন এটাই বড়ো প্রশ্ণ৷ দলগুলিই বা কাদের স্বার্থে এতো চিৎকার লড়ালড়ি করে?

তাই জনগণকে তো দেশ ও দশের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে৷ রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের মিথ্যাচারিতায় ভুলে থাকলে তাঁদের ভবিষ্যতও অন্ধকার৷ লুটে পুটে  ধনীরাই ভ্যাম্পারের মতো খাবে! নেতারা ও ধনীরা ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে কোটি কোটি মানুষকে মিথ্যা স্তোকবাক্য জালে! তাই সার্বিক শোষণমুক্তির  আন্দোলন করাটা কি শোষিতদের নৈতিক  কর্ত্তব্য নয়?

ভারতের মহান গণতন্ত্র বলেন নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সংস্থা যে সংস্থা  জনমত গ্রহণ করবেন এক সুষ্টু পরিবেশে যেখানে অধিকাংশ নাগরিক তাঁদের মতামত দান করবেন৷ করোনায় আক্রান্ত দেশে নাগরিকগণ কি সঠিক মতামত দানের সুযোগ পেয়েছেন! যেখানে তাঁরা প্রাণ ভয়ে ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত! বিহারে প্রায় সাত কোটির মতো বোটার মনে হয়৷ সেখানে দেখা যাচ্ছে৷ ৩কোটি ১৩ লক্ষ ৯০ হাজারের মতো বোট পড়েছে৷ নির্বাচনে অন্ততঃ ৫১শতাংশ মোট বোটারের বোট পড়া কি দরকার নয়? জনমত যাচাই তবে তো হয়৷ এদিকে নির্বাচন কমিশনের নজর থাকাটা মনে হয় গণতন্ত্রের কল্যাণেরই গুরুত্বপূর্ণ৷ তাছাড়া জমমনে ও প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা সামান্য হেরেছেন ও দেরীতে ফলঘোষিত হয়েছে তাঁরা দারুণভাবেই আশাহত হয়েছেন৷

পাটিগুলি নিজেরা জোট গড়েছেন, কিন্তু বিভিন্ন দলের প্রতীকে বোটে লড়াই করেছেন৷ তাই মনে হয় যে দল বেশী বোট পেয়ে এগিয়ে তাঁকে সরকার গড়ারর জন্য  আহ্বান দেওয়াটা ন্যায়সঙ্গত বলে মনে হয়৷ সেই দল অক্ষম হলে পরে যে দল বেশী বোট পেয়েছে তাকে ডাকাটা মনে হয় সঙ্গত৷ মনে পড়ে অতীতের নির্বাচন কনিশনের কথা যেমন মাননীয় সত্যেন সেন, মিঃ সেন বর্মা, মি শেসন এর সময়ে নির্বাচন যে অবস্থায় হতো যাতে দিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনটাই যেন পদ্ধতিগত দিক থেকে ফারাক হওয়াতে মানুষের মনে নানা প্রশ্ণ কি জাগতে পারে না সচেতন নাগরিকদের মনে৷ নির্বাচনে সাধারণ জনপ্রতিনিধি আমার পথ ও তো প্রায় সংকোচিত আর্থিক কারণে তাই নির্বাচনে সাধারণ জন প্রতিনিধি  প্রায় সংকোচিত আর্থিক কারণে৷ তাই নির্বাচনটাতে দাপাদাপিটা বেশী হচ্ছে ধনীদের দ্বারাই৷ তাই গণতন্ত্রটাই প্রশ্ণাতীত বলে কি মনে হয়?