গো-বলয়ে অশনি সংকেত-তাই কি  বাঙলার দিকে এত নজর!

লেখক
মনোজ দেব

 খাস তালুক গো-বলয়ের  উপর এবার দিল্লির  শাসকদল ভরসা  রাখতে পারছে না৷ উত্তরপ্রদেশে  যোগী ক্ষমতায়  আসার পর  থেকে যতগুলি  উপনির্বাচন হয়েছে সবগুলিতে  বিজেপি হেরেছে৷ তারপর এই নির্বাচনে অখিলেস-মায়াবতীর  জোট উত্তরপ্রদেশে শাসক  দলের মাথা ব্যাথা বহুগুন বাড়িয়ে  দিয়েছে৷ সম্প্রতি বিধানসভা  নির্বাচনে গো-বলয়ের  তিনটি রাজ্য বিজেপির  হাত ছাড়া হয়েছে৷  সেখানে কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় ফিরেছে৷

এই অবস্থায় নিজেদের খাসতালুক গো-বলয়ের উপর আর আস্থা রাখতে  পারছে না বিজেপি৷ গো-বলয়ে এবার পঞ্চাশটিরও বেশী আসন  বিজেপির  কমে যেতে পারে৷ বিহারে কংগ্রেস আর জেডির জোটও বিজেপির  কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে৷ সেখানেও গতবারের  সাফল্য ধরে রাখা  সম্ভব হবে না৷  উত্তর পূর্বাঞ্চলের  দুটি রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় এলেও  সেখানে  আসন সংখ্যা  খুবই  সীমিত৷ তাই  বিজেপির  এবার শেণ্য দৃষ্টি  পশ্চিম বাংলার দিকে৷

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মমতা ব্যানার্জী রাজ্যটাকে  এগিয়ে  নিয়ে  যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও  পাড়ায়  পাড়ায় কিছু নব্য তৃণমূলীদের  আচরণ ও হতাশ  সিপিএমের  নেতা-কর্মীদের দিল্লীর  শাসক দলের  দিকে ঝোঁক, বিজেপিকে  পশ্চিমবঙ্গে পা রাখার  জমি করে দিয়েছে৷ তার উপর  সিপিএম নেতাদের ‘নিজের  নাক কেটে  পরের যাত্রা ভঙ্গ’ করার একটা প্রবনতা রয়েছে৷ তারা মুখে যতই সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিরুদ্ধে লম্বা  চওড়া কথা বলুক তাদের  কাছে ১লা নম্বর শত্রু মমতা ব্যানার্জী৷ ৩৪ বছরের রাজ্য পাট ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ওই একটি  মেয়ে৷  তাই  ওই মেয়েকে  জব্দ করতে যে কোন ধরনের  শক্তির সঙ্গে  হাত মেলাতে  সিপিএম  পিছপা হবে না৷ তাই বিজেপির  সঙ্গে একটা গোপন রফার  সম্ভাবনা  থাকছেই৷ কংগ্রেসের  পশ্চিমবঙ্গ  রাজ্য কমিটি ও কিছুটা  সিপিএমের  পথের পথিক৷ যদিও   সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের প্রধান শত্রু বিজেপি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতা তাদের  প্রধান শত্রু৷ এর অন্যতম কারণ  কংগ্রেসের অনেক নেতারই তাঁর প্রতি একটা ব্যষ্টিগত আক্রোশ রয়েছে৷ তাছাড়া স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ভেঙে এরাজ্যের বেশ কয়েকজন নেতা পৃথক দল তৈরী করলেও  কোন সাফল্য পায়নি, সেখানে মমতা ব্যানার্জী কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে  এসে নিজে যেমন অ-ভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে, তেমনি  কংগ্রেসকেও  এ রাজ্যে চারনম্বর স্থানে ঠেলে দিয়েছে৷ রাজ্য কংগ্রেসে অনেক ভাঙা-গড়া হলেও  এরকম নাস্তা-নাবুদ কংগ্রেস কে আগে হতে হয়নি৷ তাই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের  প্রধান শত্রু মমতা ব্যানার্জী৷ তাই  প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ও দীর্ঘদিনের  কংগ্রেস নেতা  প্রণববাবুুর পুত্র জঙ্গীপুরের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে আর.এস.এসের প্রচারের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না৷

তাই পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির নানা ফাঁক-ফোকর দিয়ে বিজেপি  এখানে মাথা গলিয়েছে  গো-বলয়ের ক্ষতির  কিছুটা পুরনের  আশায়৷ সাফল্য কতটা আসে, কি না আসে---সেটা  ২৩শে মে জানা যাবে৷ তবে  দিল্লীর শাসন ক্ষমতা  ফিরে পেতে এবার বিজেপির বিশেষ নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে৷ যেন-তেন প্রকারে কিছু আসন তাকে পেতেই হবে৷ তাই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস যত বড় শত্রুই হোক  এরাজ্যে  শত্রুর  শত্রুর সঙ্গে গোপন রফায় যেতে পিছপা নয় মমতা বিরোধী সব পক্ষই৷ নীতিহীন রাজনীতিতে সবই সম্ভব৷