খাস তালুক গো-বলয়ের উপর এবার দিল্লির শাসকদল ভরসা রাখতে পারছে না৷ উত্তরপ্রদেশে যোগী ক্ষমতায় আসার পর থেকে যতগুলি উপনির্বাচন হয়েছে সবগুলিতে বিজেপি হেরেছে৷ তারপর এই নির্বাচনে অখিলেস-মায়াবতীর জোট উত্তরপ্রদেশে শাসক দলের মাথা ব্যাথা বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে৷ সম্প্রতি বিধানসভা নির্বাচনে গো-বলয়ের তিনটি রাজ্য বিজেপির হাত ছাড়া হয়েছে৷ সেখানে কংগ্রেস আবার ক্ষমতায় ফিরেছে৷
এই অবস্থায় নিজেদের খাসতালুক গো-বলয়ের উপর আর আস্থা রাখতে পারছে না বিজেপি৷ গো-বলয়ে এবার পঞ্চাশটিরও বেশী আসন বিজেপির কমে যেতে পারে৷ বিহারে কংগ্রেস আর জেডির জোটও বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে৷ সেখানেও গতবারের সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হবে না৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের দুটি রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় এলেও সেখানে আসন সংখ্যা খুবই সীমিত৷ তাই বিজেপির এবার শেণ্য দৃষ্টি পশ্চিম বাংলার দিকে৷
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর মমতা ব্যানার্জী রাজ্যটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও পাড়ায় পাড়ায় কিছু নব্য তৃণমূলীদের আচরণ ও হতাশ সিপিএমের নেতা-কর্মীদের দিল্লীর শাসক দলের দিকে ঝোঁক, বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে পা রাখার জমি করে দিয়েছে৷ তার উপর সিপিএম নেতাদের ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ’ করার একটা প্রবনতা রয়েছে৷ তারা মুখে যতই সাম্প্রদায়িক বিজেপির বিরুদ্ধে লম্বা চওড়া কথা বলুক তাদের কাছে ১লা নম্বর শত্রু মমতা ব্যানার্জী৷ ৩৪ বছরের রাজ্য পাট ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ওই একটি মেয়ে৷ তাই ওই মেয়েকে জব্দ করতে যে কোন ধরনের শক্তির সঙ্গে হাত মেলাতে সিপিএম পিছপা হবে না৷ তাই বিজেপির সঙ্গে একটা গোপন রফার সম্ভাবনা থাকছেই৷ কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি ও কিছুটা সিপিএমের পথের পথিক৷ যদিও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেসের প্রধান শত্রু বিজেপি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতা তাদের প্রধান শত্রু৷ এর অন্যতম কারণ কংগ্রেসের অনেক নেতারই তাঁর প্রতি একটা ব্যষ্টিগত আক্রোশ রয়েছে৷ তাছাড়া স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ভেঙে এরাজ্যের বেশ কয়েকজন নেতা পৃথক দল তৈরী করলেও কোন সাফল্য পায়নি, সেখানে মমতা ব্যানার্জী কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজে যেমন অ-ভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে, তেমনি কংগ্রেসকেও এ রাজ্যে চারনম্বর স্থানে ঠেলে দিয়েছে৷ রাজ্য কংগ্রেসে অনেক ভাঙা-গড়া হলেও এরকম নাস্তা-নাবুদ কংগ্রেস কে আগে হতে হয়নি৷ তাই পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রধান শত্রু মমতা ব্যানার্জী৷ তাই প্রাক্তণ রাষ্ট্রপতি ও দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা প্রণববাবুুর পুত্র জঙ্গীপুরের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে আর.এস.এসের প্রচারের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায়না৷
তাই পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির নানা ফাঁক-ফোকর দিয়ে বিজেপি এখানে মাথা গলিয়েছে গো-বলয়ের ক্ষতির কিছুটা পুরনের আশায়৷ সাফল্য কতটা আসে, কি না আসে---সেটা ২৩শে মে জানা যাবে৷ তবে দিল্লীর শাসন ক্ষমতা ফিরে পেতে এবার বিজেপির বিশেষ নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে৷ যেন-তেন প্রকারে কিছু আসন তাকে পেতেই হবে৷ তাই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস যত বড় শত্রুই হোক এরাজ্যে শত্রুর শত্রুর সঙ্গে গোপন রফায় যেতে পিছপা নয় মমতা বিরোধী সব পক্ষই৷ নীতিহীন রাজনীতিতে সবই সম্ভব৷
- Log in to post comments