গোর্খাল্যাণ্ডের মত বিচ্ছিন্নতাবাদী হঠকারী আন্দোলন চিরকালের মত বন্ধ হোক

লেখক
প্রভাত খাঁ

সবার ওপরে পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন৷ তার জন্যে চাই শান্তি  শৃঙ্খলা ও আইনের শাসন৷ অতীতের কথা বলে সময় নষ্ট করাটা ভালো নয়৷  বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে তো একধাপ এগিয়ে দার্জিলিংয়ে জিটিএ করেছিলেন প্রায় পাঁচ বছর আগে৷ পাঁচ বছরে দার্জিলিংয়ের উন্নতিকল্পে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা দিয়েছেন জিটিএ-কে৷ একমাস পরে পাঁচ বছর পূর্ণ হবে৷ বিমল গুরুংয়ের নতুন দল জনমুক্তি মোর্চা কোথায় কত টাকা খরচ করেছেন, তার হিসেব আজ পর্যন্ত দেননি৷ মুখ্যমন্ত্রী দার্জিলিংয়ে গেছেন মন্ত্রী পরিষদের সভা করতে৷ রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের পর্যালোচনা করতে৷ এটাকে গ্রীষ্মকাল অধিবেশন বলা যায়৷ আগে সেই অধিবেশন হয়েছিল সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের আমলে৷ অত্যন্ত লজ্জার ও পরিতাপের কথা---সেটা হ’ল পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থী বিপ্লবী সরকারের আমলে জ্যোতি বসু একজন অবসরপ্রাপ্ত গোর্খা সৈনিক সুবাস ঘিসিংকে এনে তোয়াজ করে তাকে জিএনএলএফ-এর সুপ্রিমো করেন৷ দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ গড়ে দিয়ে পাহাড় উন্নয়নের জন্যে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা দেন৷ সেই সময় আজকের বিমল গুরুং তার সাকরেদ ছিলেন৷ ঘিসিং তিলমাত্র উন্নয়ন করেননি দার্জিলিংয়ে৷ সব অর্থ অর্থাৎ সরকারী অনুদান জলে যায়৷ পানীয় জলটুকুও দেওয়া হয়নি দার্জিলিংয়ের অধিবাসীদের৷ বিমল গুরুংরাই তার বিরোধিতা করে নতুন দল গড়েন৷ সুবাস ঘিসিং দার্জিলিং থেকে প্রায় বিতাড়িতই হন৷ গোর্খা আন্দোলনের এটাই পরিণতি! এই গোর্খারা বিশেষ কারণে নিজেদের নেপালী না বলে সবাই গোর্খা বলে পরিচয় দিচ্ছে৷ এর একটাই কারণ তা হ’ল নেপাল বলে ভারতের পাশেই একটি রাষ্ট্র আছে, তাই এখানে নেপালীরা ওই গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন করতে মনস্থ করে৷ কমিউনিষ্টরা নিজেদের পায়ের মাটি শক্ত করতেই এই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করতে নির্লজ্জভাবেই মদত দেয় সুবাসকে সামনে রেখে৷

ইতিহাস কথা বলে৷ জনতা দল ভেঙ্গে যে বিজেপি দল সেই জনতা দলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই জ্যোতি বসুর শাসন কালে দার্জিলিংয়ে গিয়ে ঘোষণা করেছিলেন এই বলে যে গোর্খারা নিজেদের দেশ নেপালে গিয়ে আন্দোলন করুক৷ তাদের আন্দোলন করার স্থান ভারত নয়৷ কিন্তু আজ বিজেপি কেন্দ্রীয় শাসনে এসেছে৷ সেই বিজেপি সাম্প্রদায়িকতা ও বিদেশী নেপালীদের নিয়ে দার্জিলিংয়ে নোঙরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির তাস খেলছে বিমল গুরুংদের নিয়ে৷ তারা এই এলাকা থেকে আলুওয়ালিয়াকে এম পি দাঁড় করিয়ে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হয়ে উমেদারী করে চলেছে৷ শুধু তাই নয়, এই পশ্চিমবাঙলায় সবকটি রাজনৈতিক দল জনসমর্থন হারিয়ে নিজেদের পায়ের তলার মাটি ঠিক করতে পারেনি৷ তাই বিমল গুরুং যে নাকি নিজেকে দার্জিলিংয়ের মুখ্যমন্ত্রী বলছে আর এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে পাহাড়ে হিংসার আগুন জ্বালিয়ে হুমকী দিচ্ছে তাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন জানাচ্ছে৷

আশা করি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নেতারা দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুং ও সুবাস ঘিসিংয়ের গোর্খাল্যাণ্ড দাবী নিয়ে বেশী মাথা ঘামাবেন না৷ নিরীহ পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী সেনার শরণাপন্ন হয়েছেন৷ কেন হঠাৎ অনির্দিষ্ট কাল বন্ধ্ দার্জিলিংয়ে? ভুঁইফোড় নেতা বিমল গুরুং বন্ধ্ ডাকল যখন খোদ মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সেই ব্যাপারে তো কোন নেতা একটাও কথা বললেন না৷ পুলিশ ফাঁড়ি গুঁড়িয়ে দিল৷ দশ/বারোটা পুলিশের গাড়ীতে আগুন ধরাল৷ নিরাপত্তার কাজে রত পুলিশদের আহত করল৷ কবি ভানুভক্তের স্মৃতি সৌধকে কলঙ্কিত করল৷ বে-আইনী অস্ত্রশস্ত্র লঠিসোটা নিয়ে লোকের জমায়েত  করল৷ কই দীর্ঘ ৩৪ বছর শাসনে তো বাম দল দার্জিলিংয়ে আইন-শঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করেনি! শুধু তাদের উস্কানি দিয়েই গেছে৷ আর মুখে শ্লোগান তুলেছে ‘রক্ত দিয়ে অশান্তির নিয়ন্ত্রণ করব৷ অরাজকতাকে রুখব৷’ গুরুংয়ের ঔদ্ধত্বকে বিরোধী দলগুলো প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীকে বাহবা দিতেই হয়, তিনি দার্জিলিং বুকে বাঙলার ঐক্য সংহতি রক্ষায় নিজে অবস্থান করে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন৷ তিনি দমনপীড়ন করতে যাননি সেখানে৷ বাঙলার বুকে বসে অন্ন ধবংস করে বাঙলাকে রক্ত চক্ষু দেখিয়ে যাবে সেটা আর চলবে না৷ তাই বাইরের ষড়যন্ত্রকারীরা আর রাজনৈতিক স্বার্থান্বেষীরা যেন ভুলে না যায় যে বাঙালী আর ছেড়ে কথা বলবে না৷ এ রাজ্যে থাকতে হলে এই রাজ্যের অখণ্ডতাকে মান্যতা দিতে হবে, আর মাতৃভাষা বাংলাকেও মর্যাদা দিতেই হবে৷ আর যদি কেউ সেই বাংলা ভাষার মর্যাদাকে অমান্য করে তাহলে তাদের বরদাস্ত করা হবে না৷ বিমল গুরুংয়ের যেন স্মরণে থাকে  যে, আইনের ঊধের্ব কেউ নয়৷ তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনকে মান্যতা দিয়ে সংযত হয়ে এ পশ্চিমবাঙলার মাটিতে প্রকৃত নিষ্ঠাবান মানব দরদী হয়ে সকলকে নিয়ে বাস করতে হবে৷ বেশী বাড়াবাড়ির স্থান এখানে নেই৷

এদেশে গোর্খাদের তোল্লা দিয়েছেন দলীয় স্বার্থে কমিউনিষ্টরা৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে৷ পরে তাদের তোল্লা দেওয়া হয় জিটিএ উপঢৌকন দিয়ে৷ যেটা অসাংবিধানিক৷ সেই বাড়াবাড়ি করার দরুণ আজ হতভাগ্য পশ্চিমবঙ্গকে ভুগতে হচ্ছে৷ মহামান্য আদালতে এই সব ব্যাপারে মামলাও রুজু আছে৷ বিমল গুরুং ও স্বার্থন্বেষী রাজনৈতিক দলগুলো সংযোগ হোক নিছক দলবাজী থেকে, ভারত তথা পশ্চিমবাঙলার ঐক্য সংহতি রক্ষায় সর্বভারতীয় ও আঞ্চলিক দলগুলি একসঙ্গে কাজ করুক৷ কোন অবস্থায় পশ্চিমবাঙলাকে ভাগ করা যাবে না৷

বাঙলার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দার্জিলিংয়ে গোর্খাল্যাণ্ডের মত মীরজাফরী আন্দোলন চিরকালের মত বন্ধ হোক৷ রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রের হঠকারী আন্দোলনের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিক৷ এটা শুধু বাঙলার স্বার্থেই নয় ভারতের প্রতিরক্ষার স্বার্থে অবশ্যই করণীয়৷