কেন্দ্রের কর্ষক স্বার্থবিরোধী কৃষি আইনের প্রতিবাদ

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূত

সংসদে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্র পুঁজিপতিদের স্বার্থে কর্ষক (কৃষক) বিরোধী কৃষিবিল পাশ করিয়ে আইনে পরিণত করেছে৷ তার প্রতিবাদে সারা দেশ আন্দোলনে উত্তাল৷ হরিয়ানা, পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের চাষীরা দিল্লি অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ ৮ই ডিসেম্বর কেন্দ্রের কৃষি আইনের প্রতিবাদে ভারত বন্‌ধ পালিত হ’ল

কিন্তু মোদি সরকার কর্ষকদের দাবী মানতে নারাজ৷ মোদিজী বলেই চলেছেন, তাঁরা চাষীদের শৃঙ্খলমুক্তির জন্যেই এই আইন পাশ  করিয়েছে৷ কী আছে এই আইনে? এই আইনের একটি দিক হ’ল---অত্যাবশ্যক পণ্য আইন সংশোধন৷

এই আইনে চাল, ডাল,গম, ভোজ্যতেল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুতের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনে কিছু বিধি নিষেধ জারী করতে পারে৷ কিন্তু এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার থাকবে না৷ অথচ, এটা বুঝতে কষ্ট হয় না এই সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুত করার অনুমতি পেলে পুঁজিপতিরা এই সমস্ত দ্রব্য ইচ্ছেমত মজুত করে বাজারে কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করবে৷ ফলে অবধারিতভাবে এগুলির দাম বাড়তে থাকবে৷ জনসাধারণের দুুর্দশা বাড়বে, আর পুঁজিপতিরা দুহাত ভরে মুনাফা লুটবে৷

এই আইনের আর একটি অংশে আছে, কৃষিপণ্যের ব্যবসায়ী রফতানীকারী ও খাদ্য-প্রক্রিয়াকরণ সংস্থাগুলি চুক্তির ভিত্তিতে চাষীদের দ্বারা চাষ করিয়ে নিয়ে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে ফসল কিনে নিতে পারবে৷ কৃষিপণ্যের বাজার কমিটির নিয়ন্ত্রণে থাকা মণ্ডিতে চাষীদের উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি করবার কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না৷

দেশের গরীব চাষীদের দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদের আগে টাকা দিয়ে চুক্তি করে তাদের পছন্দমত ফসল চাষ করাবে৷ পুঁজিপতিরা মুনাফার দিকে লক্ষ্য রেখে যে ফসল ফলালে তাদের বেশি  মুনাফা হবে সেই ফসলই ফলাবে৷ জনসাধারণের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে তারা ফসল ফলাবে না৷ প্রয়োজনে অধিক মুনাফার লোভে স্থানীয় জনসাধারণের প্রয়োজন উপেক্ষা করে বিদেশে রফতানীর জন্যে প্রয়োজনীয় ফসল ফলাবে৷  এর ফলে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে৷

চাষীরা পুঁজিপতিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তাদের টাকার কাছে আত্মবিক্রয় করতে বাধ্য হবে৷ ব্রিটিশ আমলে  সাহেবরা এইভাবে এ দেশের চাষীদের সঙ্গে নীলচাষের চুক্তি করিয়ে চাষীদের ওপর কীভাবে শোষণ চালাতো দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণে ভয়ঙ্কর চিত্র লিপিবদ্ধ আছে৷ সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে৷ কেবল পরিবর্তন হ’ল বিদেশী সাহেবদের জায়গা দখল করবে দেশী পুঁজিপতিরা৷

আইনের তৃতীয় অংশে কর্সকদের সুরক্ষা ও ফসলের মূল্য সুনিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে৷ বলাবাহুল্য, স্বাধীনতার পর থেকে  সরকার এমনি কতই না প্রতিশ্রুতির অমৃতবাণী শুনিয়েছে৷ কিন্তু চাষীদের দুঃখ হয়নি৷

তথ্য বলছে, বর্তমানে দেশবাসীর অন্নদাতা এই চাষীরা ১২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে ১জন করে’ আত্মহত্যা করছে ঋণের দায়ে৷ এই ট্র্যাডিসন সমানে চলছে৷ দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ কৃষিজীবী৷ তাদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই৷ অথচ তাদের টুপি পরিয়ে তাদের নানান্‌ মিথ্যা প্রতিশ্রুতি  দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা ক্ষমতার আসনে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন৷ গরীব চাষীদের প্রতি অবহেলা বঞ্চনা ও শোষণ সমানে চলেছে৷

এইভাবে মুনাফাখোর মধ্যসত্ত্বভোগী, ব্যবসায়ী, পুঁজিপতিদের হাতে চাষীদের ভাগ্যকে সঁপে দিয়ে কোনোকালে কোনোভাবে কৃষি বা কর্ষকদের উন্নতি করা যাবে না৷

প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা কৃষি কর্ষক তথা সমগ্র জনসাধারণের অর্থনৈতিক শোষণমুক্তির নবদিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন৷ এ পথ  অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের পথ৷ অর্থনৈতিক ক্ষমতাকে মুষ্টিমেয় ব্যবসায়ী বা পুঁজিপতিদের হাতে কেন্দ্রীভূত হতে না দিয়ে জনসাধারণের মধ্যে বন্টিত করতে হবে৷ যেমন,চাষীদের দুঃখ দুর্দশার প্রথম কথা হল চাষীরা তাদের ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না৷ ফসল উৎপাদন করতে তাদের যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে কম দামেই তাদের ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে৷ ফলে তাদের গরীবী যাচ্ছে না৷

তাই প্রাউট দর্শনে বলা হচ্ছে, ‘‘কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে৷’’ যেভাবে শিল্পদ্রব্যের মূল্য নির্ধারিত হয় সেভাবে কৃষিদ্রব্যেরও মূল্য নির্ধারিত হবে, কিন্তু তা হয় না৷ প্রাউটে বলা হয়েছে, ‘‘কৃষিপণ্যের দাম স্থিরীকৃত হবে যুক্তিসঙ্গতভাবে ও নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ভিত্তিতে শ্রমের মজুরী, কাঁচামালের খরচ, পরিবহন ও ষ্টেরেজের খরচ, ক্ষয়ক্ষতি depreciation), প্রতিপূরক sinking) ও অন্যান্য৷ এর অতিরিক্ত এই দামের মধ্যে উৎপাদন ব্যয়ের শতকরা ১৫ শতাংশ মুনাফা হিসেবে ধরতে হবে৷’’

দ্বিতীয় কথা, কৃষি নির্ভর করে উপযুক্ত জলসেচের ওপর৷ তাই সারা বছর কৃষিজমিতে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে৷ না, স্যালোর সাহায্যে মাটির নীচের জল কৃষির প্রয়োজনে যথেচ্ছভাবে তুলে নিলে অদূর ভবিষ্যতে পানীয় জলের ভয়ানক সংকট দেখা দেবে৷ বর্ষার জলকে আধুনিক সেচব্যবস্থার সাহায্যে ধরে রেখে সারা বৎসর  চাষের  জন্যে সরবরাহ করতে হবে৷ পুঁজিপতিদের স্বার্থে এক এক করে মেগাসিটি, রাস্তাঘাটের অত্যুন্নতি প্রভৃতি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, অথচ দেশের ৬৫ শতাংশ চাষীদের জন্যে সেচের ব্যবস্থা উন্নতি করা হচ্ছে না৷ এই হচ্ছে পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য৷

কৃষি ও কর্ষকদের উন্নতি করতে গেলে তথা গ্রামপ্রধান ভারতবর্ষে গ্রামোন্নয়ণ করতে গেলে ধাপে ধাপে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিব্যবস্থা পরিচালনার ব্যবস্থা করতেই হবে৷ অথচ কোনো সরকার সেদিকটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন না৷ সমবায় ছাড়া কৃসি ও কর্ষকদের উন্নতির অন্য কোনো স্থায়ী রাস্তা নেই৷ কেবল উৎপাদনই নয়, কৃষিজ দ্রব্যের বিক্রয়ের জন্যেও ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর না করে উপভোক্তা,সমবায়ের ওপরেই নির্ভর করতে  হবে৷ কৃষিতে উৎপাদিত ফসল উৎপাদক সমবায় থেকে উপভোক্তা সমবায়ের মাধ্যমে যাতে উপভোক্তাদের কাছে পৌঁছে তারই ব্যবস্থা করতে হবে৷ বলা বাহুল্য, কৃষি, শিল্পে ও বাণিজ্য-যতদূর সম্ভব সমবায়ের মাধ্যমেই পরিচালনা করতে হবে৷ জনসাধারণের শোষণমুক্তির জন্যে এটা অত্যাবশ্যক৷

 

সময়োচিত কিছু কথা

বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় আজ থেকে বহু বছর (১৮৬৫সালে)আগেই বর্ণপরিচয়, ২য়খণ্ড বইতে প্রথম পাঠের প্রথমেই কুবাক্য (কুকথা) প্রসঙ্গে লিখেছেন--- ‘‘কখনও কাহাকেও কুবাক্য কহিও না৷ কুবাক্য কহা বড় দোষ৷ যে কুবাক্য কহে কেহ তাহাকে দেখিতে পারে না৷ কুবাক্যই কুকথা৷ বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বর্ণপরিচয় পড়েননি এমন বাঙালী হয়তো হাতে গোনা পাওয়া যাবে৷ তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ছোটোদের মধ্যে নীতি শিক্ষা দেবার জন্যই এই ধরনের বাক্যগুলি বর্ণপরিচয়ে লিখে গেছেন৷ অনেকে এই শিক্ষাকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছেন, আবার কেউ কেউ কেবল পড়ার জন্যই শুধু পড়ে গেছে৷ জীবনে এই শিক্ষাকে গ্রহণ করার প্রয়োজন বোধ করে নি৷ বাঙলায় রাজনীতির দেউলিয়াপনা গভীরভাবে প্রকট হচ্ছে৷ নেতা-নেত্রীদের কুকথা বলার প্রবণতা ইদানীং খুব বেড়ে গেছে৷ আগে যে কেউ বলেননি এমন নয়, কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই কুকথায় একজন অপরজনকে টেক্কা দিচ্ছে৷ প্রকাশ্যে সভায় বা ক্যামেরার সামনে যেভাবে বিভিন্ন নেতা কুকথা বলছেন তা শুনে তাদের শিক্ষা দীক্ষা, রুচিবোধ সম্বন্ধে মানুষের মনে প্রশ্ণ জাগছে৷ কুকথার ফুলঝুরি ছুটিয়ে মানুষের হৃদয়ে এরা আদৌ জায়গা করে নিতে পারেন কিনা জানা যায় না, তবে নেতাজীর মত আদর্শ নেতাদের কথায়, আচরণে ও কাজে মানুষ এতটাই উদ্বুদ্ধ হয় যে তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সর্বস্ব ত্যাগ করতেও পিছপা হন না৷ দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অনুযায়ী পাঁচ বছর অন্তরই বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ এই নির্বাচনগুলিতে পেশীশক্তি ও অর্থ শক্তির ব্যবহারের পাশাপাশি কুকথার ব্যবহারও ভীষণভাবে বেড়ে গেছে৷ নির্বাচনে পেশীশক্তিকে (গুণ্ডাদের) উদ্বুদ্ধ করার জন্যই নেতারা হয়তো এধরণের কথাবার্র্ত বলতে পছন্দ করেন! পুরুষদের  পাশাপাশি এখন মহিলারাও পিছিয়ে নেই৷ নেতারা এমন ধরনের কুকথা বলছেন যা বাংলার সংসৃকতি বিরোধী৷ জানা নেই এধরনের রাজনীতি কবে বন্‌ধ হবে! নীতি নিয়ে লড়াই হোক৷ মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্ত হয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে পারবে সেই দিশা দেখাক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ৷ তার জন্য নিশ্চয়ই কুকথা বলার দরকার হবে না! ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান বা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ব্যাপারে কারও কোনও পরিকল্পনা নেই৷ উল্টে কুকথা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার করে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করছে৷ বাংলা ও বাঙালীর জ্বলন্ত সমস্যাগুলো এড়িয়ে গিয়ে ক্ষমতায় আসার  জন্য বা টিকে থাকার জন্য এসব চলছে৷ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে এমন কোনও সদর্থক আলোচনা শোনা যাচ্ছে না৷ বর্তমান নেতৃবৃন্দকে এসব বলে বিশেষ লাভ কিছু হবে বলে মনে হয় না৷ এরা স্বভাব পাল্টাবে না৷ বিদ্যাসাগরের পাঠ  হয় এরা পড়েনি, নতুবা ভুলে গেছে৷ বাঙলার মানুষের উচিত যারা কুকথা বলে বাজার গরম করতে চাইবে তাদেরকে বা সেই দলকে নির্বাচনে ভালোভাবে শিক্ষা দিয়ে দেওয়া৷ যাতে ভবিষ্যতে বাঙলার রাজনীতিতে কেউ আর কুকথা বলার সাহস না দেখায়৷

 

অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের দাবীতে ঐক্যবদ্ধ গণ আন্দোলন চাই

Prabhat Da

ভারতবর্ষের মাটিতে পশ্চিমী বণিকগণ ব্যবসা বাণিজ্য করতে আসেন সেই প্রাচীনকালে মুঘল আমলে৷ তারা এদেশে এসে বুঝে ছিল৷ যে এদেশের মুসলমান শাসকগণ যতটা না দক্ষ শাসক তার চেয়ে বেশী ব্যষ্টিগত ভোগ বিলাসে মত্ত ছিলেন আর রাজকর্মচারীরা ছিলেন শাসকদের স্তাবক৷ তাঁদের হাত করতে পারলে শাসকগণকে পরোক্ষভাবে হাত করা যায়৷ তাই পশ্চিমী বণিকগণ বিশেষ করে ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানী খুবই ধূর্ত্তের সঙ্গে এদেশে ব্যবসা বাণিজ্য চালিয়ে যায় ও রাজশক্তি কব্জা করার কূটচালে নেমে পড়ে ধীরে ধীরে৷ তাই রাজপরিবারের যাঁরা প্রভাবশালী কর্মচারী তাঁদের হাত করে রাজশক্তি অধিকার করতে কাজে নেমে পড়ে৷ তাই দেখা গেল ইংরেজ বণিকগণ ফরাসী বণিকদের চেয়ে অধিকতর ছলচাতুরীতে এগিয়ে যায় রাজশক্তি কব্জা করতে৷ সেটা প্রধানতঃ ফলপ্রসূ হয় এই অখণ্ড বাংলাদেশে৷ মীরজাফর এর মতো বিশ্বাসঘাতক সিপাহীসলারকে রবাট ক্লাইভের মতো কোম্পানীর কর্মচারীগণ সিংহাসনের লোভ দেখিয়ে ১৭৫৭ সালে জুন মাসে পলাশীর  আম্রকুঞ্জেও যুদ্ধের প্রহসন করে অতি তরুন বয়সের নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ্‌কে পরাজিত করে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরকে সিংহাসনে বসিয়ে ইংরেজ কোম্পানি নিজেদের ব্যবসাবানিজ্য নিজেদের মতো করে চালাতে থাকে৷ রবার্ট ক্লাইভ্‌ হয়ে যায়                                         ‘‘লর্ডক্লাইভ! বণিকদের মানদণ্ড দেখা দিল

                                    পোহালে শর্বরী রাজদণ্ডরূপে৷’’ ---রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷

ধীরে ধীরে এই বণিকরাই সারা ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তার করে তারপর সারা পৃথিবীতে এই ভারতবর্ষের লোকবল ও সম্পদের সাহায্যে সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্য এমনভাবে বাড়ায় যার দরুণ বলা হতো  পৃথিবীতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যতে সূর্য্য অস্ত যায় না৷ প্রায় একশ বছর  পরে ১৮৫৭ সালে মহারাণী ভিক্টোরিয়া কোম্পানীর হাত থেকে ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী হিসাবে ভারতবর্ষের শাসনভার হাতে নেন৷ কিন্তু  পরবর্তীকালে পৃথিবীতে বিজ্ঞানের উন্নতি হওয়াতে ও সারা পৃথিবীতে শিক্ষাবিস্তারের ফলে ও সারা পৃথিবী যেন একটি বৃহৎ মানব সমাজরূপে সচেতন হওয়াতে রাষ্ট্রগুলির ঔপনিবেশিক আক্রমণে পর পর দুটি বিশ্বযুদ্ধে একদিকে যেমন সারা পৃথিবীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঠিক তেমনই ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির চরমভাবে শক্তি ও সাম্রাজ্যের ক্ষতি হওয়াতে সারা বিশ্বে স্বাধীনতার জন্য এক জাগরণ ঘটে৷  রাষ্ট্রশক্তি শাসকদের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়৷ তাতে ধীরে ধীরে  পরাধীন দেশগুলি স্বাধীন হতে থাকে৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয় শোষক ইংরেজ সরকারকে বিতাড়ণের জন্য এই অখণ্ড বাংলা থেকেই যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা ভারতবর্ষে৷ সেই আন্দোলন শুধু হয় সহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে৷ পরে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস দল পত্তন হয় ব্যারিষ্টার উমেশচন্দ্র (ব্যানার্জী সভাপতিত্বে)৷ পরে গান্ধীজী নেতৃত্ব দেন এই দলের৷ তিনি অহিংস পথে আন্দোলনের ডাক দেন৷ অসহযোগ আন্দোলন সারা ভারতে একটা বিশেষ রূপ নেয়৷ এই বাঙলায় স্যার সুরেন্দ্রনাথ  বন্দ্যোপাধ্যায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস পরে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস যোগদান করেন, বালগঙ্গাধর তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল আরো  অনেকে আসেন, ঋষি অরবিন্দ, সূর্য সেন, বাঘা যতিন, ক্ষুদিরাম, বিনয়, বাদল, দীনেশ, মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসু এঁরা সহিংস পথে  বিদেশী শোষকদের বিতাড়নের আন্দোলন করেন৷ মোদ্দাকথা আন্দোলন হয় সহিংস ও অহিংস পথে৷ কংগ্রেস দল এতে নরমপন্থী মিলিতভাবেই ছিলেন৷ ইংরেজ সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিতে হাতিয়ার হিসাবে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহকে সামনে এনে ৭০ হাজার পাউন্ড দিয়ে একটা দল তৈরী করে যার নাম মুসলীম লীগ৷ এদিকে হিন্দুদের ও একটি দল হয় হিন্দু মহাসভা, ডাঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঘটন করেন মুসলীম লীগকে পাল্লা দিতে ও ইংরেজের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দিতে৷ ধুরন্দর রাজনীতিজ্ঞ হিসাবে তিনি এটা বুঝেছিলেন৷ অখণ্ড ভারতবর্ষের  স্বার্থে এটি ঘটন করেন৷ এটি কিন্তু  রাজনৈতিক দল ছিল না৷ এটি অরাজনৈতিক  দল হিসাবে  স্বীকৃত ছিল৷  অনেকে  এ ব্যাপারে  পরবর্তীকালে নানাভাবে  হিন্দু মহাসভাকে কালিমালিপ্ত করে থাকে৷ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ ভারতবর্ষের  একজন স্মরণীয় দেশনেতা যাঁকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেই অভিশপ্ত কশ্মীরে আত্মবলিদান দিতে হয়৷ যাঁর এযাবৎ কোন তদন্ত হয়নি! ঠিক নেতাজী সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটনের গণ্ডাখানেক তদন্ত কমিশন হয়, তা সত্ত্বেও অদ্যাবধি সত্য উদঘাটন হয়৷ সরকারের কারচুপীতেই৷ মাননীয় ব্যরিষ্টার জয়দীপ মুখপাধ্যায় সুপ্রীমকোর্টের আইনজ্ঞদের সম্পাদক সম্প্রতি দাবী জানিয়েছেন নেতাজীর অন্তর্ধান রহস্যের উদঘাটনের বর্ত্তমান শাসকদের বিশ্বাসঘাতকতাই দায়ী৷ তাঁরা অনেককিছু ঢাকতেই এটা করছেন না৷ মহান দেশ নেতা-নেতাজী কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট হয়ে বুঝেছিলেন একটা কথা তা হলো এদেশের রাজনৈতিক নেতারা অখণ্ড ভারতবর্ষের পূর্ণস্বাধীনতা লাভ হোক নরমপন্থী দল কোনদিন চাননি৷ তাই তিনি (সুভাষচন্দ্র) কংগ্রেস ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দেন৷ মহান বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর আই.এন.এ বাহিনীর সর্বাধিনায়করূপে নেতাজীকে বরণ করেন৷ নেতাজী দিল্লি চলো ডাক দেন৷ ভারতের মাটিতে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন৷ মহান যোদ্ধা সর্বত্যাগী সুভাষচন্দ্র ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দের  মানসপুত্র৷ দেশের মুক্তি তাঁর স্বপ্ণ ছিল৷  তাঁর এই মহান কাজে  সারা দেশ উদ্বুদ্ধ হয়৷ এমনকি সুভাষ চন্দ্রের  প্রেরণাতেই নৌবিদ্রোহ ঘটে৷ বিচলিত হয়ে পড়ে সারা ভারতবর্ষের জনগণের স্বাধীনতা স্পৃহা দেখে৷ তাই তাড়াতাড়ি সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে খণ্ডিত করে নরমপন্থী কংগ্রেস নেতা জহরলাল নেহেরু ও মুসলীম লীগের মিঃ জিন্নার সঙ্গে  আলাপ করে ১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকতা হিংস্র দাঙ্গার সৃষ্টি করে লক্ষ লক্ষ অমুসলমান উদ্বাস্তু তৈরী করে ইংরেজ সরকার একরাঙ্গামূলো স্বরূপ নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা দেয়৷ সেটাতে আহ্লাদে আটখানা হয়ে কংগ্রেস ও মুসলীম লীগ দেশের শাসনভার  গ্রহণ করে৷ তারা নিজেদের মতো করেই দেশের শাসনভার গ্রহণ করে৷ সুভাষচন্দ্র বার বার দেশের নেতাদের বাহির হতে বেতারে  অনুরোধ  করে দেশ ভাগ করে  স্বাধীনতা গ্রহণ না করতে৷ এঁরা তাঁর অনুরোধ শোনেন নি৷ বরং জহরলাল হুমকী দেন এই বলে সুভাষ এদেশে এলে তাঁকে তিনি তরবারির দ্বারাই আহ্বান করবেন৷ দেশীয় সরকার যুদ্ধ অপরাধী হিসাবেই তাঁকে গ্রহণ করেন৷ তিনি অখণ্ড ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবী করতেন৷ শোনাযায় গান্ধীজী দেশ ভাগ চাননি৷ এ সম্বন্ধে  নানা মত আছে৷

তবে দীর্ঘ ৭৩ বছর বিভিন্ন দল দলাদলি করে যেভাবে দেশ শাসন করে চলেছে তাতে কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনে কোন উন্নতিই হয়নি৷ দলগুলো শাসনে থেকে নিজেদের আখের গুছুচ্ছে৷ আর ধনীরা ধনবান হয়ে চলেছে৷ দেশের ৭০ শতাংশ সম্পদ ১ শতাংশ ধনীদের কুক্ষীগত, আর ৯৯ শতাংশ নাগরিকদের হাতে মাত্র ৩০ শতাংশ সম্পদ৷ বর্তমান দেশের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থা শোচনীয়৷ চরম বেকার সমস্যায় দেশ ক্ষতবিক্ষত, নিরাপত্তাহীনতায় দেশে আতঙ্কগ্রস্ত৷ দুর্নীতিতে দেশ শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে৷

নেতাজী বলেন--- ভারতকে যদি প্রকৃতই স্বাধীন হইতে হয় তবে আমাদের শুধু রাজনৈতিক গণতন্ত্র পাইলেই চলিবে না, সামাজিক গণতন্ত্র চাই, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রও চাই৷ এদেশের কংগ্রেস ও মুসলীমলীগ নিছক গদী স্বার্থেই ইংরেজের দেওয়া রাজনৈতিক  স্বাধীনতা লাভ করেও  কমনওয়েলথের সদস্য হয়ে এদেশের দেশীয় ও বিদেশীর ধনীদের অনুগত হয়ে সেবাদাসে পরিণত হয়েই বসেছে৷ আর জনগণকে পিষে মারছে৷ তাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের জন্য লড়াই  এর জন্য দেশকে শোষণমুক্তির আন্দোলন করতেই হবে৷ মেকী গণতন্ত্রের শোষণমুক্তি নির্ভর করে ঐক্যবদ্ধ দলহীন গণতন্ত্রের তীব্র আন্দোলন৷ যা গড়ে উঠবে, জাতপাতহীন সমাজের  ঐক্যবদ্ধ মানুষের নিরলস সার্বিক শোষণমুক্তির বিক্ষোভেরই মাধ্যমে৷ নেতাজী এটাই  দাবী করেন আজও৷

 

ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙবে

গোবিন্দ মজুমদার

সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের ‘‘আনন্দমঠ’’ উপন্যাসের মুখবন্ধে বঙ্গজননীর রূপ বর্ণনা করে লিখিয়াছিলেন ‘‘মা যেমনটা ছিলেন, ঐশ্বর্যশালীনী, যেমন হয়েছেন রিক্ত নিঃস্ব আর যেমন হবেন৷’’ আর  এই উক্তিটির রেশ ধরে আমার প্রশ্ণ ‘‘আমরা বাঙালীরা কি ছিলাম, কি হয়েছি, আর কি হব? আর এই প্রশ্ণের উত্তর খুঁজে পাব প্রত্যেক বাঙালীর আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে৷ বর্তমান অবস্থার এই গতানুগতিক ধারা অব্যাহত থাকলে একদিন হয়তো আমরা যাবো কালের অতল তলে৷ ঔদাশীন্যতাই হোক, জাতীয় চেতনার অভাবেই হোক আজ বাঙালী জাতির জীবনে নেমে এসেছে এক অন্ধকারময় পরিস্থিতি৷ বাঙালী জাতির একতা হারিয়ে ক্রমশই যেন ভুলে যাচ্ছে তার ঐতিহ্যবাহী জাতিসত্তা কে৷ স্বার্থান্বেষী শক্তির আবির্ভাব, হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, কুটীল রাজনীতির আবর্তে পড়ে বাঙালী আজ সাঁড়াশী আক্রমণের সম্মুখীন৷ এযেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সপ্তরথীর চক্রবূহের মধ্যে অভিমুন্যের অবস্থা৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে ‘আমরা বাঙালী’দের ঐক্যবদ্ধভাবে৷ চাই পুনর্জাগরনের জন্য সংঘটিত প্রস্তুতি৷ স্বাধীনতার ৭৩ বছরের পরেও কেন বাঙালীকে বারবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, তাও আবার বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহীদের কাছে? বিশ্ব কবির ভাষায় ‘‘বাঙালী অদৃষ্ট কর্তৃক অপমানিত হয়ে মরবে না, সাংঘাতিক  মার খেয়েও বাঙালী মারের উপর মাথা তুলে দাঁড়াবে’’৷ সেই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের সম্মুখীন আমরা বাঙালীরা৷ আসুন শপথ গ্রহণ করি, মাষ্টার দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের,ক্ষুদিরামের, বিনয় বাদল দীনেশের, নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের বংশধরেরা আর কত আবেদন নিবেদন করবে৷  আর কত পড়ে পড়ে মার খাবে বহিরাগত সংখ্যালঘু জনজাতীদের হাতে৷ ত্রিপুরার ভূমিপুত্র সংখ্যা গরিষ্ট বাঙালী কে মার খেতে হবে আমাদেরই বোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষপাতিত্ব দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে৷ এই সরকার বোটের আগে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাজ্যবাসীর কাছে তার একটিও দাবি এই সরকার পূরণ করেননি৷ উপরন্তু ১০৩৪৩ জন শিক্ষকদের চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷ শূন্যপদ খালি অথচ নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত নেই৷ রাজ্যে শিল্প সংস্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই৷ আইনের কোনো শাসন নেই৷ করোনার অজুহাতে সুকলগুলো বন্ধ৷ অথচ হাট, বাজার যান চলাচল, অফিস আদালত সর্র্বেপরি মদের দোকান ও মাছ মাংসের বাজারে ভীড় সবই ঠিক ঠাক চলছে৷ শুধু ছাত্র-ছাত্রাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ কাঞ্চনপুরের বহিরাগত সন্ত্রাসী মিজোরামের রিয়াংদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা রাজ্যবাসীর বিরুদ্ধে একটা গভীর ষড়যন্ত্র৷ আজও অপহৃত লিটন দেবনাথকে উদ্ধারের জন্য কোনো কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি রাজ্য প্রশাসন৷ এককথায় এই সরকার সর্বোতো ভাবে ব্যর্থ৷ কথায় বলে ‘ভাত কাপড়ের নাম নাই কিল মারার গোঁসাই৷’’ সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে৷ সময়ের মধ্যে যদি সমস্যাগুলির আশু সমাধান করা না হয়, তা হলে রাজ্যের পরিস্থিতি অগ্ণিগর্ভ হয়ে উঠবে৷ বাঙালীর উদারতা কে অন্যান্যরা দুর্বলতা ভাবছে৷ এই অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না৷ অধিকার ভিক্ষা লব্ধ বস্তু নয়৷ সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার ও প্রাপ্য কেড়ে নিতে হয়৷ দয়া করে রাজ্যের মানুষের ধৈর্য্যের পরীক্ষা আর নেবেন না৷

 

বাঙালী সাবধান

সাধন পুরকায়স্থ

 বিজেপির নেতা বিজয়বর্গীয় মহাশয় গতকাল বারাসাতে বলেছেন আগামী পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে আমরা সরকার গড়লেই সকল মতুয়াসহ অন্যান্যদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেবেন৷ আশ্চর্যের বিষয় যাদের ভোটের বিনিময়ে বঙ্গের মসনদে আসীন হবেন তাদেরকে কিভাবে নাগরিকত্ব দেবেন৷ ভোটের আগে নাগরিক আর ভোটের পর তাঁরা বিদেশী! এটা কেমনতর কথা? তবুও মনে করলাম খুব ভালো কথা৷ গতবার অসমের বিধানসভার নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীসহ সকল নেতারা বলেছিলো অসমে আমরা সরকারে এলে সকল বাঙালীকেই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে৷ ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিও ভেঙে দেওয়া হবে৷ সরকার গড়ার বিনিময়ে অসমে  কয়েক লাখ বাঙালীর নাগরিকত্ব হরণ করা হয়েছে৷ ডিটেনশন ক্যাম্পে এখনো বাঙালী ভাই বোনেরা নরক যন্ত্রণা ভোগসহ মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার তাদের খতিয়ানে বলেছে সারা ভারতে নাগরিক আইনের আওতায় ভারতে কয়েক কোটি বাঙালী বিদেশী আছে৷ তাদেরকে চুনচুন করে খুজে বের করবে ও ভারতের ভূমি থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করবে৷ যে বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীন ভারতীয় বলছি অথচ দেখুন ভারতের স্বাধীনতায় যাদের (গুজরাট) কোন রক্তের অবদান নেই তারাই বলছে বাঙালী বিদেশী বহিরাগত ঘুচপটিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি৷ সাবধান৷ বাঙালী সাবধান৷ আজ যে সকল বাঙালীরা দেশভাগের বলি হয়ে জাতীয় নেতাদের প্রতিশ্রুতিতে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল সেই বাঙালীদের নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোন স্পষ্ট বক্তব্য নেই বিজেপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছে৷ তারা সকলেই নির্বাচনী ইসু বানিয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে ব্যস্ত৷ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের দালাল কিছু বাঙালী মীরজাফররা বাঙলার জাতিসত্তাকে বিক্রি করতে সেই বেইমানদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে ও বাঙালী বিদ্বেষী বিজেপি নেতাদের পাপচক্রের হাত শক্ত করছে৷ তাদের থেকে বার বার সাবধান থাকুন৷ নচেৎ অসম, মেঘালয় সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালীদের মত আপনাদেরকেও ডিটেনশন ক্যাম্পে নরকের যন্ত্রণা ভোগ ও মৃত্যুবরণ করার সময় এসেছে৷ আবার বলছি সাবধান৷ বাঙালী সাবধান৷ এখন প্রয়োজন দল মত নির্বিশেষে বাঙালী জাতির  ভারত ভূমিতে চরম অবহেলা ও অপমানের চরম জবাব দেওয়ার৷ জাতিসত্তাকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন৷ বাঙালীর সময় এসেছে৷ আবার বলছি সাবধান৷ এখন প্রয়োজন দলমত নির্বিশেষে বাঙালী জাতির ভারত ভূমিতে চরম অবহেলা ও অপমানের চরম জবাব দেওয়ার৷ জাতিসত্তাকে বাঁচাতে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসুন৷ বাঙালীর জাতীয়তাবোধের সংগ্রামের চিরসাথী একমাত্র ‘আমরা বাঙালী’দলের হাত শক্ত করুন৷ ভারতে প্রায় ৫০-এর বেশি উর্দ্ধে লোকসভা ও রাজ্যসভায় জন্মসূত্রে বাঙালী নামধারী প্রতিনিধি থাকার পরেও বাঙালী নির্যাতনের কোনো আওয়াজ আমরা আইনসভাতে শুনতেই পাই না৷ না পাওয়া কারণ  তাঁরা হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের  প্রতিনিধি৷ আগামীতে বিধানসভায় ও লোকসভায় বাঙালী দরদী প্রতিনিধি পাঠান যারা বাঙালীর নিজেদের জাতিসত্তাকে রক্ষা করতে আওয়াজ তুলবে ও বাঙালীকে রক্ষা করবে৷ আসুন তাদের জন্য সংগ্রামী শপথ নেই৷ একসঙ্গে বলুন ‘লড়ে নেবো বাঙলা মায়ের মান৷’ ফিরিয়ে দেবো বাঙলা মায়ের সম্মান৷ আমরাই গড়বো শোষণমুক্ত বাঙালীস্তান৷

লেখক--- ‘আমরা বাঙালী’ অসম রাজ্য সচিব৷

 

কর্ষক আন্দোলনের সমর্থনে বাঙালী কর্ষক সমাজ

 

নিজস্ব সংবাদদাতা, আগরতলা ঃ বাঙালী কর্ষক সমাজের ত্রিপুরা রাজ্যসচিব শ্রী বিমল দাস ৭ই ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, জনস্বার্থ বিরোধী কৃষি আইন বাতিলের দাবীতে বাঙালী কর্ষক সমাজ আন্দোলন করে চলেছে৷ আমরা ৮ই ডিসেম্বরের ভারত বন্‌ধকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি৷ তিনি বলেন নূতন কৃষি আইনের মাধ্যমে কর্ষকদের স্বাধীনতা হরণ করে পুঁজিপতি শোষণের পথ প্রশস্ত করবে৷ পুঁজিপতিরা নিজেদের পছন্দের শস্য উৎপাদনে কর্ষকদের বাধ্য করবে৷ কর্ষকদের ওপর নবরূপে নীলকর সাহেবের অত্যাচার শুরু হবে৷

 

তবে বাঙালী কর্ষক সমাজ শুধু আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে না৷ বাঙালী কর্ষক সমাজ সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ ঘটিয়ে কৃষি ব্যবস্থায় আমূল পরির্তন চায়৷ তার জন্য প্রয়োজন কেন্দ্রিত অর্থনীতি পরিবর্তে বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা৷ সর্বক্ষেত্রে কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে ব্লক-ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গড়ে তুলতে হবে৷ 

 

 

বন্ধে সমর্থন অসম ‘আমরা বাঙালী’র

 

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ৬ই ডিসেম্বর ‘আমরা বাঙালী’র অসম রাজ্য সচিব সাধনপুরকায়স্থ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান---ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার সংখ্যাতত্ত্বকে সামনে রেখে রাজশক্তিকে ব্যবহার করে একটার পর একটা জনবিরোধী আইন তৈরী করে ভারতের ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক ও সামাজিক, অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে ভূলুন্ঠিত করে চলেছে৷ তার মধ্যে অন্যতম কৃষিবিল ও অত্যাবশ্যকীয় বিল৷ এই বিলটি কৃষক ও সাধারণ নাগরিকদের পরিপন্থী৷ এই বিলের আইনে পরিণত হওয়ায় বাজারে সকল দ্রব্যে মূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে বাইরে চলে গেছে৷ সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে৷ এই বিলটি কৃষকদের হাতে কৃষি জমির অধিকার থাকলেও শশ্য ক্রয় বা বিক্রয়ের কোন নিয়ন্ত্রণ কৃষকদের হাতে থাকবে না৷ সেই অধিকারটি তুলে দেওয়া হয়েছে বহুজাতিক সংস্থার হতে৷ মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন প্রাউটে বলেছেন কৃষককে বাঁচাতে হলে কৃষি কেন্দ্র করে কৃষি সহায়ক শিল্প ও কৃষি ভিত্তিক শিল্পের মাধ্যমে কৃষকদের আর্থিক উন্নত করা সম্ভব৷ কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থে জনবিরোধী কৃষি আইন বাতিল করতে  গত ৮ই ডিসেম্বর সারা ভারতের কৃষকদের ডাকা ভারত বন্ধকে ‘আমরা বাঙালী’ পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে৷

 

 

পাঁশকুড়ায় নারী অভ্যুদয়ের সূচনা হল

 

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ৫ই ডিসেম্বর শনিবার পাঁশকুড়া পুরসভার অন্তর্গত ৩নং ওয়ার্ডে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে  আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের মহিলা বিভাগ (সুরানানকার ইয়ূনিট) দ্বারা পরিচালিত ‘নারী অভূ্যদয়ের শুভ সূচনা হল, এই প্রতিষ্ঠানে দুঃস্থ মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে টেলারিং প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন সংঘের নারী কল্যাণ বিভাগের কেন্দ্রীয় প্রধান অবধূতিকা আনন্দ বিশাখা আচার্যা, প্রধান অতিথির  আসন অলংকৃত করেন অবধূতিকা আনন্দ উৎপলা আচার্যা, বিশেষ অতিথিরূপে উপস্থিত ছিলেন শ্রী মানস কুমার দাস, শিক্ষারত্ন শিক্ষক --- ব্রাডলিবার্ট হাইসুকল, শ্রী মানস কালসার, ভূক্তিপ্রধান, পূর্বমেদিনীপুর ও শ্রীমতি শুভ্রা গড়াই শিক্ষিকা৷ ফিতা কেটে নারী অভ্যুদয় কক্ষের দ্বারোদঘাটন করেন প্রধান শুভানুধ্যায়ী শ্রীমত্যা বিমলা বেরা মহোদয়া, সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শ্রী অনন্ত কুমার গোস্বামী, অনুষ্ঠান শেষে সবাইকে মিষ্টিমুখ করানো হয়৷

 

 

মার্গীয় বিধিতে গৃহপ্রবেশ

 

নিজস্বসংবাদদাতা ঃ গত ৫ই ডিসেম্বর শনিবার বিশিষ্ট আনন্দমার্গী শ্রী মনোজ ঘোষের হোটেল এ্যাণ্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সল্টলেক সেক্টর ১-এ নূতন ভবনের গৃহপ্রবেশ মার্গীয় বিধিতে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রভাত সঙ্গীত কীর্ত্তন মিলিত সাধনার পর গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আচার্য সুভধ্যানানন্দ অবধূত, অনুষ্ঠান শেষে আনন্দমার্গ দর্শন ও সমাজ শাস্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরে মনোজ্ঞ বক্তব্য রাখেন আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত৷

এরপর শ্রী মনোজ ঘোষের ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রা, অভিভাবক, অবিভাবিকা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনায় ছিলেন শ্রী মনোজ ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি রত্না ঘোষ৷

 

 

মার্গীয় বিধিতে নামকরণ

 

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ গত ৬ই ডিসেম্বর, ঝাড়খণ্ডে পাথরগামা নিবাসী বিশিষ্ট আনন্দমার্গী শ্রী অনিল কুমার মাহাতর নবজাত শিশুর  নামকরণ অনুষ্ঠান মার্গীয় বিধিতে অনুষ্ঠিত হয়৷ এই উপলক্ষ্যে শ্রী অনিল মাহাতর গৃহে তিনঘন্টা ‘অখণ্ড ‘াা নাম কেবলম্‌’ কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ অনুষ্ঠানে স্থানীয় মার্গীভাই-বোন ও শ্রী অনিল মাহাতর আত্মীয়-পরিজন উপস্থিত ছিলেন৷ নবজাত শিশুর নাম রাখা হয় জিতেশ৷ সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আচার্য সুধাময়ানন্দ অবধূত৷

 

 

ময়ূরভঞ্জে আনন্দমার্গের সাংঘটনিক সভা

 

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ জেলায় আনন্দমার্গের  আদর্শ ও জীবন দর্শনকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে ব্যাপক প্রচার অভিযানের কর্মশুচী নিয়েছে ময়ূরভঞ্জ জেলার আনন্দমার্গের ইয়ূনিটগুলি৷ এই উপলক্ষ্যে জেলার প্রতিটি ইয়ূনিটে প্রস্তুতিসভা করছেন আচার্য সুদীপানন্দ অবধূত, আচার্য মহিদেবানন্দ অবধূত, জয়কৃষ্ণ হালদার মিন্টু সামন্ত প্রমুখ৷

গত ২৮ শে ডিসেম্বর সিনি ব্লকের কাঞ্চপুরে, গত ৩রা ডিসেম্বর করঞ্জিয়া, ৪ঠা ডিসেম্বর দিব্যানন্দ নগরে  ও জেলার বিভিন্ন ইয়ূনিটে কর্মী সভা করেন৷

 

 

মার্গীয় বিধিতে গৃহপ্রবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ টাটানগর ডায়োসিসের ময়ূরভঞ্জের বিশিষ্ট আনন্দমার্গী শ্রী বনমালী নায়কের নবনির্মিত বাসভবনে গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান ৩০শে নভেম্বর মার্গীয় বিধিতে সম্পন্ন হয়৷ এই উপলক্ষ্যে শ্রী নায়কের বাসভবনে ২৪ ঘন্টা ‘াা নাম কেবলম্‌’ মহানাম মন্ত্র কীর্ত্তন অনুষ্ঠিত হয়৷ কীর্ত্তনশেষে আনন্দমার্গ দর্শন ও সমাজ শাস্ত্র বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখেন আচার্য সুদীপানন্দ অবধূত, আচার্য মহীদেবানন্দ অবধূত প্রমুখ৷ অনুষ্ঠান শেষে দুঃস্থ গ্রামবাসীদের হাতে শীতবস্ত্র, কম্বল ইত্যাদি তুলে দেওয়া হয়৷

 

 

ত্রিপুরা রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয় চায় অর্থনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা

এইচ.এন. মাহাত

বিজেপি ত্রিপুরায় সরকারে আসার আগে একটি রাজনৈতিক স্লোগান মানুষের মুখে মুখে প্রচার শুরু করলেন ‘চলো পাল্টাই’৷ এখানে পালটাই শব্দের অর্থ হলো সিপিএমের ৩৪ বছরের অপশাসনের ফলে সাধারণ মানুষকে সিপিএম জমানার অপশাসন, শোষন ও বঞ্চনার হাত থেকে ত্রিপুরাবাসীকে মুক্ত করা৷ অনেকেই  এই পাল্টাইকে স্বাগত জানালো৷ সিপিএম সরকারের পতন হলো৷ খুশীতে ডগমগ ত্রিপুরাবাসী৷ ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে’৷  সাব্রুম থেকে চুড়াইবাড়ী সকলে মিলে বলতে শুরু করল ৩৪ বছরের যুগ শেষ হলো৷ গেরুয়া আবিরের আকাল পড়ে গেল৷ এতটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিলো৷

বিজেপি সরকার এক বছর না ঘুরতেই আবার শুরু হল পালটাই নয় উলটাই৷ ত্রিপুরার মানুষ ডাঙ্গায় বাঘ দেখিয়া জলেতে ঝাঁপ দিয়া কুমিরের মুখে  পড়ার অবস্থা৷ এ আবার কেমনতর  কথা? এর পিছনে রহস্যটা কী? বিজেপি সরকার আসার আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্যের ও বর্হিরাজ্যের ছোটে বড় সকল নেতারাই বলেছিলো আমরা এলে ত্রিপুরাকে সোনায় মুড়ে দেবো, ঘরে ঘরে চাকুরী বা কর্মসংস্থান পাবে, পাহাড় সমতলে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, ব্যবসা বানিজ্যে লক্ষ্মীদেবী অবস্থান করবে, নারী নির্যাতন, অকারণে রাজনৈতিক হত্যা বন্ধ হবে, কাঞ্চনপুরে প্রবেশ করলে বলা হয়েছে ব্রু রিয়াং শরনার্থীদের মিজোরামে পাঠানো হবে, সব  যুবক ও শিক্ষিত ছাত্ররা কম্পিউটার পাবে আরো কতকিছুর প্রতিশ্রুতি এখানে লিখে শেষ করা যাবে না৷

ত্রিপুরার মানুষ মনোমুগ্দ হয়ে আকাশে চাঁদ ধরতে চেয়ে ছিলো৷ ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার  গদি দখল নেওয়ার পর রাজ্যের জন্য পরিকল্পনা মাফিক কোন মাষ্টার  প্ল্যান না করে কেন্দ্রীয় খয়রাতির  ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লো৷ বিগত দিনের সরকারগুলো যেভাবে সরকার চালাতে অভ্যস্ত সেই ফাঁদে এঁরাও পা দিয়ে বসলো৷ আসলে ত্রিপুরা কেন ভারতের রাজ্য সরকারের কাছে  স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক , অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক  সমাধান করার মত কোনো পরিকল্পনা নেই৷ বর্তমান অর্থনীতি পুঁজিবাদী মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনা কয়েকটি পুঁজিবাদ সর্বস্ব ব্যষ্টি বা সংস্থাকে সামনে রেখে দেশীয় আর্থিক মানদণ্ড ওঠানামা করে৷

এর ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও হাভাতে গরীব মানুষেরা ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ ভারতের বর্তমান সরকার   এর জলজন্তু উদাহরণ৷

 

ত্রিপুরার সরকারও রাজ্যবাসীকে কোনো আশার আলো দেখাতে না পেরে বাঁকা পথে মন জয়ে মেতেছে৷ বিগত কংগ্রেস সিপিএম সরকারের মত বিজেপি নাগরিকদের ভোট সর্বস্ব করতে গিয়ে রাজ্যের সংখ্যা গুরু বাঙালীকে বার বার বঞ্চিত করে যাচ্ছে৷ তার ফলে বাঙালীরা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ও আর্থিকভাবে মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়ছে৷ জনজাতিদেরকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে বিজেপি সরকারের নতুন স্লোগান বাঙালী মানেই বাংলাদেশী বলে জনজাতিদের খেপিয়ে তুলছে৷

অন্যদিকে জনজাতিদের মধ্যে একটি অংশ যারা বাঙালীদের সঙ্গে  বসবাস করে বাঙালীদের সংমিশ্রণে প্রাচীন ধ্যান-ধারণা পালটে সরকারী সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নিজেদের ভদ্র মানসিকতা তৈরী করে সমাজের উচ্চ আসনে বসে আছে৷ অপরদিকে প্রত্যন্ত পাহাড়ে  এ.ডি.সির কালো আইনের দোহাই দিয়ে কোটি কোটি টাকা জনজাতির নেতারা লুটপাট করে খাচ্ছে আর সাধারণ জনজাতিদের  সকল রকমের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছে৷

নেতাদের এই ধরণের অপকর্ম ঢাকতে বাঙালী ও জনজাতির ভাতৃত্বকে নষ্ট করে লড়াই বাধিয়ে ত্রিপুরাকে বারবার রক্তাক্ত করছে৷ বর্তমান কাঞ্চনপুর অঞ্চলে মিজোরাম থেকে আগত শরনার্থীরা জনজাতি নেতাদের পাল্লায় পড়ে বারবার ত্রিপুরার মাটিকে বাঙালীর  রক্তে রক্তাক্ত করছে, কয়েক পুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করছে, অগ্ণি সংযোগ, লুটপাট ও নানারকমের সন্ত্রাসী হামলার দ্বারা৷ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে৷

শেষ পর্যন্ত ঝোলা থেকে বেরোল সিপিএমের তৈরী করা বাঙালী অপহরণের অস্ত্র৷ যার দ্বারা সিপিএম কোটি কোটি টাকা পার্টি ফাণ্ড তৈরী করেছে ও উগ্রপন্থীদের দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বাঙালীদের তাড়িয়ে দিয়েছে৷ হিন্দি সাম্রাজ্যবাদীদের একটাই মূলমন্ত্র ত্রিপুরা তথা ভারতভূমি কে বাঙালী মুক্ত করা৷ ত্রিপুরার মূল সমস্যা হল আর্থিক সমস্যা৷ ত্রিপুরার প্রকৃতির কোলে নানা রকমের আর্থিক সমস্যার সমাধানের পথ খোলা আছে৷

এর জন্য মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন ‘‘প্রাউট’’ (প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব) দর্শনে তিনি বলছেন ‘‘ত্রিপুরার মানুষ গরীব হতে পারে ত্রিপুরার মাটি গরীব নয়৷ ‘‘ত্রিপুরা বনজঙ্গলকে বাঁচিয়ে বনসম্পদকে নানাভাবে ব্যবহার করলে স্থানীয় মানুষদের আর্থিক মেরুদণ্ড সোজা হবে ও পার্টির দলদাস হতে হবে না৷ এখানে প্রচুর নালা বা লুঙ্গায় বাঁধ দিয়ে জলাশয় তৈরী করে মৎস্য, হাঁসের চাষ, জলাশয়কে ব্যবহার করে খাল নির্মাণের দ্বারা জলসেচন করা হলে বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারে৷ ওই খাল দিয়ে স্বল্প খরচে মাল পরিবহন করা৷ এখানকার বাঁশ বেতের ও নানাধরণের গাছের দ্বারা কুটির শিল্প তৈরী করে গ্রামীণ অর্থনৈতিক মান উন্নত করা যেতে পারে৷

ত্রিপুরায় ঔষধের গাছ গাছড়ার উর্বরভূমি, এর দ্বারা ছোট বড় ঔষধির শিল্প হতে পারে৷ এখানে ছাগল গোরু, ভেড়া, পালনের বিস্তৃত জায়গা  রয়েছে৷ এখানে প্রচুর পরিমানে বনভূমি আছে৷ ভেড়ার লোমের সূতো দিয়ে নানারকমের গরম কাপড় তৈরী করা সম্ভব৷ রাবার প্রচুর পরিমাণে তৈরী হয়৷ এখানে  সেই রাবার কাজে লাগালে সেই কারখানায়  প্রচুর  পরিমাণে লোক নিয়োগ করা যাবে৷ ইত্যাদি ইত্যাদি নানা রকমের পরিকল্পনা দিয়ে গেছেন৷ ত্রিপুরা মিশ্র চাষের উপযুক্ত ভূমি৷ কাঁঠাল আনারসের রস ও ফাইবার থেকে কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরী হবে৷ তিনি আরও বলেছেন রাজনৈতিক গণতন্ত্র নয়, অর্থনৈতিক গণতন্ত্রই মানুষের সকল সমস্যার সমাধান৷

 

 

প্রসঙ্গ ঃ মেদিনীপুর

 

মেদিনীপুরের যেটা কথ্য বাংলা সেটা কিন্তু  ৰাংলা ভাষার বেশ একটা পুরোনো রূপ৷ ৰাংলার সাংস্কৃতিক জীবনেও মেদিনীপুরের স্থান খুবই উচ্চে৷ শত লাঞ্ছনার ভেতর দিয়ে দিন কাটালেও মেদিনীপুরের মানুষের প্রাণের স্পন্দন কখনও থেমে যায়নি৷ প্রাক্–পাঠান যুগে তো বটেই, পাঠান যুগে ও মোগল যুগেও এমন কি ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকেও সেখানে দেখেছি চুয়াড়–বিদ্রোহ–স্বাধীনতার প্রচণ্ড আন্দোলন, তারপর ’৪২ সালের প্রাণ–কাঁপানো নাড়া–দেওয়া আন্দোলন৷ এই মেদিনীপুরের পশ্চিম দিকটা, মানে ঝাড়গ্রাম মহকুমার কথ্য ভাষা মধ্য রাঢ়ীয় উপভাষা৷ ওরই লাগোয়া ময়ূরভঞ্জ ও সিংভূমেও ওই একই উপভাষার প্রচলন রয়েছে৷ এই মেদিনীপুরেরই দক্ষিণাংশে রসুলপুর নদীর মোহনা থেকে সুবর্ণরেখা নদীর মোহনা পর্যন্ত যে তীরভূমি তার কথ্য ভাষার আমি নাম দিয়েছি কাঁথি বাংলা৷ এই উপভাষায় ব্যঞ্জনের পূর্ণ উচ্চারণ খুব বেশী মাত্রায় রয়েছে৷ তথ্য প্রমাণে এই ধরণের সিদ্ধান্তে পৌঁছানো খুবই স্বাভাবিক যে কবি কালিদাস এই অঞ্চলেরই মানুষ ছিলেন৷

যাই হোক আমাদের অতি পরিচিত রাঢ় ভূমির উত্তরাংশ যাকে সাধারণতঃ উত্তর রাঢ় বলি তা প্রাচীনকালে বর্দ্ধমানভুক্তি নামে পরিচিত ছিল৷ বর্ত্তমান বীরভূম, দুমকা, ধানবাদ, পশ্চিম মূর্শিদাবাদ, বর্দ্ধমান ও হুগলী নিয়ে মোটামুটি বিচারে ছিল উত্তর রাঢ় আর হুগলীর অংশবিশেষ, বর্ধমানের অংশবিশেষ, হাওড়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, সিংভূম, বালেশ্বর ও ময়ূরভঞ্জ জেলার অংশবিশেষ নিয়ে ছিল দক্ষিণ রাঢ় বা দণ্ডভূক্তি৷ এই দণ্ডভুক্তি ওড়িষ্যার ‘কেশরী’ রাজবংশের সময় (অনন্তকেশরী, যযাতি কেশরী) কয়েকবারই আক্রান্ত হয়েছিল৷ মারাঠা আক্রমণের সময় যখন ওড়িষ্যার চৌথ মারাঠাদের দিয়ে দেওয়া হয় তখন নবাব আলিবর্দ্দী খাঁ বর্ধমান, ২৪ পরগণা, চট্টগ্রামসহ মেদিনীপুরের অধিকাংশই অংশতঃ ইংরেজদের হাতে দিয়ে দেন৷ দণ্ডভুক্তি পাঠান ও মোগল যুগের গোড়ার দিকে ‘হিজলী’ নামে পরিচিত ছিল৷ আজ আমরা যাকে কাজুবাদাম বলি পর্তুগীজরা সেই বাদাম যখন এদেশে আনেন, তখন তার প্রথম চাষ এই হিজলীতেই হয়েছিল৷ তাই কাজু বাদামের আসল বাংলা নাম হিজলী বাদাম৷ এই বাদামের চাষ কেরলেও ব্যাপকভাবে হয়েছিল৷ আর সেখানকার কর্ষকেরা বাদামের বিনিময়ে যখন মূল্য চাইতেন তাঁরা ক্যাশ (নগদ পয়সা) ক্যাশ্যু’ রূপে উচ্চারণ করতেন৷ তার থেকে হিজলী বাদামের পরবর্তী নাম হয়ে দাঁড়ায় ‘ক্যাশুনাট্’৷ তুরস্কে সোহ্রাবর্দ্দ্ নামে  একটি এলাকা থেকে জনৈক গাজী (বাঁচলে গাজী, মরলে শহীদ– অর্থাৎ কিনা ইসলাম ধর্মের জন্যে উৎসর্গিত–প্রাণ যে মানুষ ধর্মের প্রতিষ্ঠা করেও বেঁচে থাকেন তাঁকে বলা হয় ‘গাজী’ আর যিনি ধর্মের প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করেন তাঁকে ৰলে ‘শহীদ’৷) এই হিজলী পরগণায় এসেছিলেন ধর্মদেশনার উদ্দেশ্যে৷  তিনি এই হিজলীকে একটি আদর্শ ধর্মপীঠে পরিণত করতে চেয়েছিলেন৷ তাই তার নাম রেখেছিলেন মদিনাপুর৷ নবাব আলিবর্দ্দী  খাঁ এই হিজলী যখন ইংরেজদের হাতে দিলেন, তখন সেই মদিনাপুরের ইংরেজী নামকরণ হয়েছিল ত্তন্স্তুুত্রহ্মপ্সব্জ৷ স্থানীয় মানুষেরা মদিনাপুর বা ত্তন্স্তুুত্রহ্মপ্সব্জ নাম ব্যবহার না করে তাকে বলে থাকেন মেদিনীপুর৷ ইংরেজ আমলের শেষের দিকে তৎকালীন বাঙলার প্রধানমন্ত্রী (তখন মুখ্যমন্ত্রী বলা হত না) মিঃ এইচ্ এস্ সোহ্রাবর্দ্দী ছিলেন সোহ্ রাবর্দ্দ থেকে আগত এই গাজী পরিবারের সন্তান৷ এই মেদিনীপুর নানা কারণেই একটি আদর্শ জেলা৷

 

 

মরছে  মানুষ

বিভাংশু মাইতি

 

মরছে মানুষ পোকার মত

মানবতা জ্বলছে চিতায়

কলঙ্কী চাঁদ ধূম্রাকাশে

লাজ ঢাকতে মুখ লুকায়

           

            চিত্ত চিতায় কঁকিয়ে কাঁদে

            নীরবে বিনা প্রতিবাদে

            বিবেক বুদ্ধি অবরূদ্ধ

            ভোগবাদের মরণ ফাঁদে৷

 

নৃত্যরত নিলাজ নেতা

স্বরূপ ভুলে ব্যাভিচারী

সমাজ-দেহ কোমায় শুয়ে

বীভৎস আজ অত্যাচারী৷

           

            ব্যর্থ প্রেমে গায়ে আগুন

            পড়ার চাপে গলায় ফাঁস

            ধর্ষকরা এক নিমেষে

            ধর্ষিতার ফেলছে লাশ৷

        

এর পরেও জীবন আছে৷

আছে ‘ভালো’র অমোঘ টান

অন্ধকারের বক্ষ চিরে

প্রভাত রবির আলোক স্নান৷

 

 

মানুষ

তৃপ্তি মণ্ডল

 

হে মানুষ তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জীব

এই পৃথিবীর কত দায়িত্ব তোমার কাঁধে,

এ ধরাকে রক্ষা কর তুমি৷

রক্ষা কর সবুজ বন আর যত পশুপাখি৷

বিষিয়োনা বায়ু, দূষণ করোনা জল,

 

হে মানুষ তোমার শুভ ভাবনায়

মিলিয়ে যাক ধবংসের ইঙ্গিত

রক্ষা হোক ধরা,

বাঁচুক পৃথিবীর যত প্রাণী৷

আর তোমার মান আর হুঁশ

দুইয়ের বিমিশ্রণে হয়ে ওঠ প্রকৃত মানুষ৷

 

 

 

‘‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’’

পথিক বর

 

রাজনীতি সেদিন আজকের মত স্বার্থের তরী বেয়ে রাজক্ষমতা ভোগের পেছনে ছুটতো না৷ সেদিনের রাজনীতি ছিল দেশের জন্যে, দশের কল্যাণের জন্যে জীবনাদর্শে উজ্জীবিত, উৎসর্গীকৃত৷ পরাধীন ভারতবর্ষে বাঙলার রাজনীতি তাই ছিল৷ বাঙলার কথাই বললাম কারণ স্বাধীনতার জন্যে স্বর্গীয় হাসি মুুখে নিয়ে ফাঁসীর মঞ্চে নির্ভয়ে এগিয়ে দাঁড়াবার হিম্মত অবশিষ্ট ভারতে ক’জনেরই বা ছিল?

আজ তো রাজনীতি মানে স্বার্থের সংঘাত, লোভ লালসা চরিতার্থ করার সংগ্রাম৷ ধর্মের মুখোশ ধারণ করে দেশপ্রেমের নামে দেশকে লুটে নেওয়াই আজকের রাজনীতি৷ আর সেদিন বাঙলার রাজনীতি বুঝতে সুভাষচন্দ্রের একটি আবেদনই যথেষ্ট---‘‘ভুলো না যে, দাসত্বের চাইতে বড় অভিশাপ আর নেই৷ ভুলো না যে, অন্যায় ও দুর্নীতির চাইতে আপোষ করার চাইতে বড় অপরাধ আর নেই৷ জীবনকে পরিপূর্ণভাবে পেতে হলে জীবনের বিনিময়ে তা পেতে হবে৷ আরও মনে রেখো সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷’’

অগ্ণিযুগের বাঙলা৷ মানিকতলা বোমার মামলায় অনেকেই তখন কারাগারে বন্দী৷ অরবিন্দ ঘোষ সহ অনেকেই সেই কারাগারে আবদ্ধ৷ নরেণ গোঁসাই, সত্যেন বসু, কানাইলাল দত্ত সহ আরও অনেকেই জেলখানা আলো করে হৈ-হুল্লোরে মেতে থাকে৷ হঠাৎই ছন্দপতন৷ নরেণ গোঁসাই বিপ্লবীদের অনেক গোপন কথা পুলিশের কাছে ফাঁস করে দিয়েছে৷ সে রাজসাক্ষী হতে চেয়েছে৷ খবর পেয়ে চমকে ওঠে কারাবন্দী বিপ্লবীরা৷ দেশ ও জাতির সঙ্গে নরেণের এই বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নেওয়া যায় না৷ বিশ্বাসঘাতকের ক্ষমা নেই৷

বিশ্বাসঘাতকতার জবাব দিতে তৈরী হ’ল দুই বন্দী তরুণ৷ সব পরিকল্পনা তৈরী, অসম্ভবকে সম্ভব করে হাতে আগ্ণেয়াস্ত্র এসে গেছে, এখন শুধু সুযোগ ও সময়ের অপেক্ষা৷ এমন সময় বেঁকে বসল আর এক তরুণ৷ পুলিশের কাছে খবর গেল সেও রাজসাক্ষী হবে৷ তবে তার আগে নরেণের সঙ্গে একটু পরামর্শ করে নেবে৷ ফাঁদে পা দিল শক্তির দম্ভে অন্ধ ব্রিটিশ পুলিশ৷

১লা সেপ্ঢেম্বর ১৯০৮৷ আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের দোতলায় একটি ওয়ার্ডে অপেক্ষা করছে সত্যেন৷ একটু পরেই প্রহরী বেষ্টিত হয়ে প্রবেশ করল নরেণ৷ কিন্তু কীসের পরামর্শ দেশদ্রোহীর সঙ্গে! মুখ নয় কথা বলল সত্যেনের পকেট থেকে বেরিয়ে আসা হাতের রিভলবার৷ কিন্তু গুলি ঠিক জায়গায় লাগেনি৷ উরুতে আঘাত নিয়ে ছুটে বেরিয়ে যায় নরেণ৷ বাইরে তখন অপেক্ষা করছিলেন কানাইলাল দত্ত৷ বিশ্বাসঘাতকের ক্ষমা নেই৷ গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল নরেণের দেহ৷

সাম্রাজ্যবাদী শাসকের বিচারের প্রহসন৷ সাজা যথারীতি  মৃত্যুদণ্ড৷ ১০ই নভেম্বর ১৯০৮৷ বিষণ্ণ্ সকালে আলিপুর জেলগেটের বাইরে হাজার হাজার মানুষ৷ একটু আগেই স্বর্গীয় হাসিমুখে ফাঁসীর মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে চলে গেলেন কানাইলাল দত্ত৷

তার ঠিক দশ দিন পরেই ২১শে নভেম্বর,আর এক বিষণ্ণ্ সকালে সেই আলিপুর জেলগেটের বাইরে একই দৃশ্য৷ এবার বিদায় নিলেন সত্যেন বসু৷ এইভাবেই শত সহস্র বাঙালীর জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা৷ আর আজ সেই বাঙালীর শিরে এন.আর.সি-র খড়্গ, বিদেশীর তক্‌মা৷ আর একবার কি ফিরে আসবে না সেই অগ্ণিযুগ? আর এক বার কি জেগে উঠবে না সেই সব তরুণ দামাল ছেলে---চিত্ত যাদের ভয়শূন্য, উচ্চ যাদের শির!

 

 

আসন্ন টেস্টে অস্ট্রেলিয় -গ্রিনকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলবে  ভারতীয় বোলাররা

 

ক্রীড়াপ্রতিনিধি  ঃ আসন্ন টেস্ট সিরিজে ভারতীয় পেসারদের  হাত থেকে  বেরনো ‘মিসাইল’ সামলাতে তাকে আনা হচ্ছে  আরও কঠিন পরীক্ষা নিতে হবে তাকে৷ তা টেষ্টের সিরিজ শুরু হবার আগেই জানালেন দিলেন গ্রিন৷

প্রস্তুতি ম্যাচেই উমেশ তাঁর দক্ষতা দেখিয়েছিলেন৷ একা উমেশে রক্ষে নেই৷ পরে প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর বিরুদ্ধে খেলবেন বুমরা , শামি৷ কিন্তু উমেশই কেন পরীক্ষা নেবে৷ কারণ প্রস্তুতি ম্যাচে উমেশ ৪ উইকেট নিয়েছিলেন৷ তাঁর উচ্ছ্বসিত  প্রশংসা করে গ্রিন বলেছেন--- ‘‘উমেশ যাদবের বিশ্বমানের দক্ষতার কথা বলতেই হয় আলাদা করে৷ কারণ যে উইকেটে  বল করছিল, সেখানে বোলারদের সাহায্য পাওয়া কঠিনই ছিল৷ বাতাসের  গতির বিরুদ্ধে বল করছিল উমেশ৷ কিন্তু ওকে সামলানো বেশ কঠিন৷  পরের প্রস্তুতি ম্যাচে গোলাপি বলে আমি বুমরা ও শামিকে খেলবো৷ ওটা আমার কাছে অন্যমানের চ্যালেঞ্জ৷ আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে খেলব৷ তবে বুমরাও বিশ্বমানের বোলার কিন্তু উমেশের কাছেও রক্ষা পাওয়ার আশা কম৷ বুমরার বোলিং অ্যাকশনও অন্য ধরণের ৷ ওর অ্যাকশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতেও কিছুটা সময় লাগবে, বুমরাকে সামলাতে হলে  নিজের খেলাকেও অন্য একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে৷ ওকে বেশি খেললে অবশ্য পরের বারে অনেক সুবিধাই পাবো বলে মনে হয়৷ তাই যতটা সম্ভব অনুশীলন করার প্রয়োজন করতেই চাই৷

 

 

হারের কথা ভুলে জয়ের রথে পা দেবার প্রস্তুতিতে মোহনবাগান

ক্রীড়াপ্রতিনিধি  ঃ গত ম্যাচ গুলিতে মোহনবাগান দলের যে পরিস্থিতি তাতে খুবই নিরাশ ফুটবলপ্রেমীরা কিন্তু এমনভাবে বসে থাকলে চলবে৷ খেলায় হার জিত তো থাকবেই তবে হেরে গিয়ে বসে থাকার দল মোহনবাগন নয়, তাই হারের কথা ভুলে জয়ের রথে পা দেবার প্রস্তুতিতে মগ্ণ মোহনবাগান৷ আজকের ম্যাচে আজ অর্র্থৎ শুক্রবারের ম্যাচে মোহনবাগানের  ম্যাচ আছে সেই ম্যাচের আগের দলের ফুটবলার  তিনি  বলছেন, ‘‘এ বার সমানে হায়দরাবাদ৷ এই দলটাও সেট পিসে যথেষ্ট দক্ষ৷ ভালই গোল পাচ্ছে৷ আমাদের রক্ষণের  লক্ষ্য থাকবে সেট পিস কিক-এর বল এলে যেন আর ব্যর্থ না হই৷ সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে৷ কোন ম্যাজিকে এটা আটকানো সম্ভব নয়৷ আরও বেশি অনুশীলনের প্রয়োজন আছে৷ অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেদের সব ভুল ত্রুটিগুলিকে শুধরে নিতে হবে৷ সেই চেষ্টাই চালানো হচ্ছে৷

শুক্রবারের ম্যাচে আগের ম্যাচগুলিতে যে ভুলগুলি হয়েছিল সেগুলি যেন না হয় তার জন্য বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে আর এই কাজ সুনিপুণভাবে করছেন এডু গার্সিয়ারা৷ আসন্ন ম্যাচ প্রসঙ্গে  গার্সিয়া বলছেন, ‘‘ম্যাচে আমাদের ভুল ত্রুটি শুধরে নিতে হবে৷ হায়দ্রাবাদে বেশ কিছু ভাল ফুটবলার রয়েছে৷ কিন্তু আমাদের  কাছে ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের জয়ের রাস্তায় ফেরাটাই প্রতিজ্ঞা৷ যেভাবেই হোক তিন পয়েন্ট পেতেই হবে৷ সেই আত্মবিশ্বাসের ওপর ভর করে আমরা আমাদের অনুশীলন চালাচ্ছি৷ অজান্তেই প্রতিটি টিমেরই ভুল হয়, খেলার সময় না জেনেই অনেক সময় অনেক ভুলের সম্মুখীন হতে হয় সেই দিনটাকে টিমের খারাপ দিন হিসেবে ধরা হয়৷ কিন্তু  খারাপ দিন এসেছে বলে পরের দিনটাও খারাপ হবে এটা ভাবা বোকামী, পরের দিনটা হল সেই ভুল গুলো শুধরে নেওয়ার দিন৷ আর মোহনবাগানও তাই করতে চায়৷