কৃষি জমির খাজনা মুকুব

লেখক
সুশীল দেব

খড়্গপুরের এক প্রশাসনিক জনসভায় ৩রা এপ্রিল ২০১৭ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন এগ্রিকালচার ল্যাণ্ডে এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোনও খাজনা নেবেন না৷ এটা শুধু মেদিনীপুরে নয়, পশ্চিমবঙ্গের সব জেলার জন্যেই হ’ল৷ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন পদক্ষেপকে সাধুবাদ না জানিয়ে পারা যায় না৷
আমাদের পাঁচটি বেসিক নীডের মধ্যে প্রথমটি হ’ল অন্ন৷ এরপর বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা৷ আমরা জানি অধিকাংশ কর্ষকভাইকেই কৃষিঋণ নিয়ে চাষবাস করতে হয়৷ অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাদের চাষের ফসল তুলতে হয়৷ মরসুমের বৃষ্টির অভাবে আবার অনেক বছর ফলন কম হয়৷ কর্ষক ভাইদের তখন কষ্টের সীমা থাকে না৷ সমস্যা শুধু তাদের নয় আমাদের সকলের৷ এই সমস্ত সমস্যা দূর করতে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন৷ সরকার থেকে অনেক জেলায় পাম্পের সাহায্যে মাটির নীচের জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ ফলে সমস্যার আপাত কিছু সুরাহা হচ্ছে বটে, কিন্তু আর এক গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা হ’ল মাটির নীচের জল এভাবে চাষের জন্য তুলে নেওয়ায় জলের স্তর নেমে যাচ্ছে৷ এই ভাবে জলের স্তর নেমে যেতে থাকলে কিছুদিন পরে পানীয় জলের ভীষণ সংকট দেখা দেবে৷ পানীয় জলের নলকূপ থেকে জল মিলবে না৷ গাছপালাও শুকিয়ে মরবে৷ পানীয় জলের অভাবেই তখন মানুষকে মরতে হবে৷ তাই বিশেষজ্ঞ ও বৈজ্ঞানিকেরা বলছেন চাষের জন্য মাটির নীচের জল তোলা বন্ধ করা উচিত৷ মাটির ওপরের জলকে অর্থাৎ বৃষ্টির জল যে নদী নালা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে মিশছে, এই বৃষ্টির জলকে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে জলাধার  তৈরী করে ব্যাপকভাবে সেচের খালের মাধ্যমে সারা বছর চাষের জলের যোগান দিতে হবে৷ এছাড়া কোনও উপায় নেই৷ 
সমবায় সমিতি অথবা ব্যাঙ্ক থেকে কৃষিঋণ নিয়ে সময়মত পরিশোধ করতে না পারায় অনেক কর্ষক ভাইকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়৷ সরকার তাদের কোষাগারের অর্থ থেকে যদি এই ঋণ বিশেষ করে অতি দরিদ্র কর্ষকদের সম্পূর্ণভাবে প্রদানের ব্যবস্থা করে তবে কর্ষকভাইদের একটা বিরাট সমস্যার গণ্ডী থেকে পার করে আনা যাবে বলে মনে হয়৷ যদি তা না সম্ভব হয় তবে ঋণ বাবদ পরিশোধযোগ্য সুদ অনুরূপভাবে মুকুব হলে কর্ষক ভাইয়েরা কিছুটা উপকৃত হতে পারে৷ 
উত্তরপ্রদেশ সরকার এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মুকুব করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বহু কর্ষকভাই উপকৃত হবেন৷ কর্ষকভাইরা পরিশ্রম করে যে ফসল ফলায় তা ব্যবহার করে কেবল মানুষ কেন গবাদী পশু সহ অন্যান্য প্রাণীরাও বেঁচে থাকে, কিন্তু দুঃখের বিষয় উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে তারা ন্যায্য মূল্য পান না৷ যার ফলে তাদের ঋণও করতে হয়৷ ঋণ মেটানোর জন্যে কম মূল্যে ফড়ে ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করতে হয়৷ আজকাল কৃষি সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে সরকার ফসল কেনার ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করেছেন কিন্তু কার্যতঃ সময়মত আলু চাষী বা ধান চাষীদের কাছে সমবায় সমিতিগুলো তাদের ফসল ক্রয় করছে না৷ কেবল নীতি ঘোষণা করে দিলেই চলবে না, সেই নীতিকে তৎপরতার সঙেগ কার্যকর করতে হবে৷ 
কর্ষক ভাইয়েরা আমাদের অন্যতম সমাজবন্ধু৷ কর্ষকদের কল্যাণের কথা এখন সবাই ভাবছে৷ তাছাড়া কৃষি গবেষক বন্ধুরা গবেষণা করে চাষাবাদের নানা দিকের উন্নতির কথা বলছেন৷ সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরও এ ব্যাপারে আরও বেশী সজাগ ও তৎপর হলে ভাল হয়৷ 
এক প্রশাসক বৈঠকে একজন প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন যে ভূমি দপ্তরে খাজনার কোনও রেকর্ড থাকে না৷ রসিদ হারিয়ে গেলে আবার পুরো খাজনা দিতে হয়৷ (আ.বা ৪ঠা এপ্রিল ২০১৭)৷ মুখ্যমন্ত্রী শুণে ক্ষুব্ধ হন৷ তিনি জেলাশাসক ও ভূমি সংস্কারের আধিকারিকদের কাছ থেকে কৈফিয়ত চান৷ ভূমি দপ্তরের এ হেন কার্যকলাপ খুবই দুঃখ জনক৷ পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার জেলা শাসকগণকে এ ব্যাপারে অনেক বেশী সতর্ক হতে হবে৷ সরকারের ভারপ্রাপ্ত  আধিকারিক ও কর্মীরা যদি ঠিকঠাক ভাবে তাদের নিজ নিজ দায়িত্বগুলো পালন করেন তাহলে কর্ষককুলের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হবে বলে মনে হয়৷ এ ব্যাপারে ওপর থেকে কঠোর তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন আছে৷