লক্ষ্যহীন, অর্থহীন আয়-ব্যয় মাত্রিকা

লেখক
প্রভাত খাঁ

কেন্দ্রীয় সরকারের এবারে আয়-ব্যয় মাত্রিকায় এমন কোন পথ নির্দেশনা নেই যাতে বর্তমান চরম আর্থিক দুরাবস্থার সুরাহা হতে পারে৷

উল্লেখ্য এই বিজেপি সরকার যে জি.এস.টি নামক এক কর কাঠামো ১৩০ কোটি জনগণের ঘাড়ে চাপিয়েছে সেটাই অদ্যাবধি সাধারণ মানুষ-এর বোধগম্য হয়নি৷ বরং তার কারণে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ তার সদুত্তর জনগণ পাচ্ছেন না বিক্রেতাদের কাছ থেকে৷ ‘‘একটাই উত্তর দাম বাড়ছে’’৷

এবারের বাজেটে যে যে জিনিসের দাম বাড়বে বলে উল্লেখ আছে তা হলো---মাখন, ঘি, তেল, সবরকমের ভোজ্য তেল, চিনে বাদামের মাখন, চিউইংগাম, সোয়া ফাইবার, সোয়া প্রোটিন,স্টেশনারিপণ্য,সেলুলার মোবাইল ফোন ইত্যাদি৷ এইসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আগেই বেড়ে আছে, তার ওপর পুনরায় বাড়ারই ইঙ্গিত৷ এরফলে  মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ব্যষ্টিদের ও দারিদ্র্য সীমার নীচে যাঁরা আছেন তাঁদের কি অবস্থা হবে সেটা কি কেন্দ্রীয় সরকার ভেবেছেন? এতো জনগণের পেটে  লাথি মারার  বাজেট৷

দাম যেগুলি কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে তা হলো---নিউজপ্রিন্ট, খেলনার সরঞ্জাম, মাইক্রোফোন, বিদ্যুৎচালিত গাড়ি, পিউরি ফায়েড অ্যাসিড  ইত্যাদি৷ এতে মানুষের নিত্য নৈমিত্তিক জীবন যাপনটাই তো অচল হয়ে পড়বে৷

চরম মন্দায় রোজগারের অধিকাংশ পথই বন্ধ কারণ--- বেসরকারী ছোট ছোট ব্যবসা মার খাচ্ছে৷ রোজগারের যে পথ সেটা হলো কলকারখানায় কাজ,সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে চরম বেকার সমস্যায় দেশ রক্তশূন্য হয়ে পড়েছে৷ এদিকে সরকারী ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির বিভিন্ন কার্য্যালয় লক্ষ লক্ষ পদ খালি আছে, কাজ চালাতে  অবসরপ্রাপ্তদের অবসরের ব্যবস্থা না করে  তাদের চাকুরীতে অস্থায়ীভাবে বহাল রাখা হচ্ছে৷ তাতে নোতুন পদে লোক নেওয়া হচ্ছে না৷  বর্তমানে শিক্ষাক্ষেত্রে, ব্যাঙ্ক, রেল, ডাক বিভাগে এমনকি  সামরিক  বিভাগে  বহুপদ খালি আছে, সেখানে যৎসামান্য কর্মচারী নিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে৷  অত্যন্ত লজ্জার  কথা তা হলো  রাজ্য সরকারগুলিও অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার জন্য বিশেষ করে কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য ঠিক মতো না পাওয়ার দরুণ আর্থিকটানে পড়ছে৷ তাই রাজ্য সরকারী কাজে  লোক নিয়োগটা সম্ভব হচ্ছে না৷ ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থাটাই চৌপাট হয়ে পড়েছে৷

মাননীয় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশের  সময় সুদীর্ঘ সময় বক্তব্যই রেখে গেলেন, কিন্তু এমন কোন পথ দেখাতে পারলেন না যা নাকি  দেশের চরম বেকার সমস্যা দুর হবে ও দ্রব্য মূল্য হ্রাস পাবে৷ কিভাবে হতভাগ্য  নাগরিকদের  পকেট কাটা যায় তার জন্য একটা ব্যষ্টিগত আয় করের নতুন স্ল্যাব খাড়া করেছেন অর্থমন্ত্রক৷ অত্যন্ত লজ্জার কথা যেখানে একটা তেলে ভাজা যা দশ পয়সায় পাওয়া যেত তার দাম হয়েছে ৩-৪ টাকা৷ সেখানে  সেই মান্ধাতার আমলে বাৎসরিক আয় করমুক্ত রাখা হয়েছে আড়াই লাখ টাকাই৷ সেটা টাকার  মান কমায় বাড়ানোই হলো না৷ তার উপরই আয়কর বাড়াবার ফিকির হচ্ছে৷

তাই সেই আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকার বার্ষিক আয়কর হবে ৫ শতাংশ কিন্তু সেই ডি.এ নিয়েই আয়কর  ধরা হচ্ছে, এমন কি মেডিকেল সাহায্য নিয়েই আয় ধরাটা কি যুক্তি যুক্ত?

পাঁচ লাখ থেকে সাড়ে সাত লাখ এর আয়কর ১০ শতাংশ ব্যষ্টিগত বার্ষিক আয়ের উপর সাড়ে সাত লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার  উপর আয়কর ১৫ শতাংশ  দিতে হবে৷ ১০ লাখ থেকে সাড়ে ১২ লাখ  আয়কর ২০ শতাংশ দিতে হবে৷

সাড়ে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ পর্যন্ত আয়ে আয়কর  দিতে হবে ২৫ শতাংশ ১৫ লাখ টাকার উপর আয়কর দিতে হবে ৩০ শতাংশ৷

সেই একই নির্দেশ আড়াই লাখ পর্যন্ত  আয়ে আয়কর নেই৷ নোতুন হারে এই আয়কর দেওয়ার সুবিধা নিতে গেলে করছাড়ার  সুবিধা পাওয়া যাবে না৷ এ কেমন উক্তি৷ করের বোঝায় নাগরিকগণ অস্থি চর্মসার হয়ে পড়বে  না কী?

 বর্তমান বাজেটের অর্থ বোঝা গেল না অর্থমন্ত্রীর  দীর্ঘ বচনে৷ আড়াই লাখ বার্ষিক আয় দেশের ক’জনের?  পাঁচজনের সংসারে বছরে বেঁচে থাকতে যে কত টাকা লাগে তার হিসাবটা কী সরকার কষে দেখেছেন?

ভারতের মতো দেশে দৈনিক মাথাপিছু আয় অধিকাংশ ব্যষ্টির ২০০ টাকা আছে কিনা সন্দেহ! জনগণের ঘাড়ে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কর চাপিয়ে ব্যয় বহুল সরকারী প্রশাসন যারা চালায় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে সেই প্রতিনিধিদের চিন্তাধারার পরিবর্তন প্রয়োজন৷ দেশ তো শাসিত হয় মূলতঃ আমলাদের দ্বারা৷ কিন্তু ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত শাসন ব্যবস্থা নিয়ে ভারতে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো,  তার  খরচ পরিচালনা করতে অর্দ্ধভুক্ত গরিব জনগণ যাঁরা অধিকাংশ দারিদ্র্যসীমার নীচে তাঁদের পক্ষ্যে কি সম্ভব?

সরকারকে  তো নিজস্ব আয়ের উৎস সন্ধান করতে হবে৷  কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে  এ ব্যাপারে  উৎসাহ  দেখাতে হবে৷ প্রত্যেক কর্মক্ষণ ব্যষ্টিদের তো কর্ম সংস্থানের  ব্যবস্থা সরকার কে করতে হবে৷ প্রশাসনিক  ব্যয় সংকোচ টা তো জরুরী৷ রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি এটা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ আবশ্যিক৷ উপর তলার কর ফাঁকি  টা-কী বন্ধ হয়েছে? অবৈধভাবে অর্থ রোজগারের পথ কি নিয়ন্ত্রিত করা গেছে? প্রথম থেকে  আজ পর্যন্ত দেশের শাসন ব্যবস্থাটাই  প্রশ্ণাতীত নয়৷ বেতন কাঠামোর পরিবর্তন জরুরী৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম  অবশ্যই সরকারের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার৷ পূর্ণ রেশনিং ব্যবস্থা চালু  হওয়া জরুরী৷ ধণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র যে বাঁচে না, সেটা কি দেশের সংসদীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন এর কর্ণধারগণ  অদ্যাবধি বোঝেন নি, না বুঝতে  চান না?

সেই পুরাতন পদ্ধতিতে পুঁজিবাদের স্বার্থনির্ভর বাৎসরিক একটা বাজেট পেশ করে, সেটাকে পাশ করিয়ে  দেশ শাসন করা যায়, কিন্তু তাতে অর্থনীতির হাল ফেরে না, দেশ ধবংসের দিকেই যায়, শাসকগণ যতই উন্নতি বলে চিৎকার করুক না কেন৷

তাই এই ধরনের  বাজেট (ব্যয়মাত্রিকা) হলো জনগণকে  শোষণ করার ফিকির  মাত্র যেখানে জনগণ অসহায়, নীরব দর্শক মাত্র৷ এর আশু পরিবর্তন জরুরী৷