মামার বাড়ির ময়না

লেখক
চিরস্মিতা ভৌমিক

আমার মামার বাড়িতে একটা ময়না পাখি এনেছিল, তখন আমার বয়স পাঁচ বছর৷ যখন আমার সাগরদাদা পাখিটাকে বাড়িতে আনে তখন ময়না পাখিটা খুব ছোট ছিল৷ সে কিছু বলত না চুপ করে থাকত৷ দাদাভাই পাখিটার নাম দিল মিঠু৷ একমাস পরে আমার দাদাকে সাগর বলে আর আমাকে সোনাই বলে ডাকল৷ কয়েক মাস পরে যখন আমি মামার বাড়িতে যাই তখন মিঠুকে বারান্দায় একটা খাঁচায় দেখতে পাই৷ দেখা মাত্রই বলে উঠল, মনাগো দেখ সোনাই এসেছে৷ আমার দিদুকে মিঠু মনা বলে ডাকত৷ মিঠু লঙ্কা দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করত৷ কিন্তু যেদিন রাগ করত সেদিন দিদুকে জোর করে তাকে ভাত বা কলা খাইয়ে দিতে হত কিন্তু ভুজিয়া পেলে সব রাগ গলে যেত৷ ভুজিয়া মিঠুর সব থেকে প্রিয় ছিল৷ তবু একদিন খাঁচার দরজা খোলা পেয়ে মিঠু ফুরুৎ করে উড়ে যায়৷ অনেক দিন পরে দাদাভাই যখন বারান্দায় বসে কাঁদতে কাঁদতে বলছিল, মিঠু তুই কোথায় চলে গেলি? তখন নারকেল গাছ থেকে উত্তর দিল, এইতো সাগর আমি এখানে৷ তারপর পুনরায় তাকে খাঁচায় পুরে দাদাভাই বলল, তুই কেন চলে গিয়েছিলি? মিঠু বলল, কেন তোমরা আমাকে খাঁচায় বন্ধ করে রাখ? দাদাভাই বলল, ঠিক আছে এখন থেকে তোর খাঁচার দরজা খোলাই থাকবে৷ সন্ধ্যা হলে দাদাভাইকে বলত, সাগর পড়তে বস৷ আর আমাদের বলত, সোনাই দুষ্টুমি বন্ধ কর৷ কোনদিন আমি তোমাদের ফেলে কোথাও যাবনা৷ সন্ধ্যার আগে মিঠু বারান্দার খাঁচাটাতেই থাকত, সন্ধ্যা হলে দাদাভাই ঘরে নিয়ে আসত৷ বারান্দায় দুটো চেয়ার ছিল৷ আমি ও আমার দাদাভাই সন্ধ্যার আগে যখন বারান্দায় বসতাম তখন মিঠু আমাদের হরে কৃষ্ণ, ফুলে ফুলে, আমরা সবাই রাজা নানান গান শোনাত৷ আমি প্রায় সময়ই মামারবাড়ি যাই৷ বারান্দায় দুটি চেয়ার ঠিক সে জায়গায়ই আছে৷ খাঁচাটাও আছে কিন্তু মিঠু আর নেই৷ খাঁচাটা ফাঁকা পড়ে আছে৷

কারণ মিঠু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে৷ এখন আর কেউ বলে না, সোনাই দুষ্টুমি বন্ধ কর আর সন্ধ্যার আগে কেউ গানও শোনায় না৷ বলেছিলি তো আমাদের ছেড়ে কোথাও যাবি না৷ এখন কেন তুই আমাদের ফেলে চলে গেলি? আমি জানি তুই আমাদের মধ্যেই বেঁচে আছিস৷