মনে পড়ে

লেখক
মন্ত্র আনন্দ

আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, ৭ই জুলাই, ১৯৩১

বউদি,

এইমাত্র তোমার চিঠিখানা পাইলাম৷ আমার জীবন কাহিনী জানাইবার সুযোগ হইল না৷ কী-ই বা জানাই বলোতো? আমার সকল কথাই তো তোমাদের বুকে চিরকাল আঁকা থাকিবে৷ তুচ্ছ কালির আঁচড় কি তাহাকে আরও উজ্জ্বল করিয়া তুলিতে পারিবে? আমার যত অপরাধ ক্ষমা করিবে৷ এ জন্মের মত বিদায়৷    তোমার ঠাকুরপো

‘প্লিজ চিঠিটা তুমি অফিসে জমা দিয়ে দিও’৷ সামনে দাঁড়ানো সার্জেণ্টের হাতে চিঠিটা তুলে দিয়ে বললেন---‘চলো আমি প্রস্তুত’৷ অবাক সার্জেণ্ট তাকিয়ে আছে তরুণের মুখের দিকে৷ এমন সুন্দর হাসি-খুশী মুখ! প্রভাত রবির উজ্জ্বলতাকেও ম্লান করে দেয়৷ এমনটাও হতে পারে! সকাল বেলায় স্নান সেরে নতুন পোশাকে তৈরী হয়ে বউদিকে লেখা শেষ চিঠি সার্জেণ্টের হাতে তুলে দিয়ে নির্মল হাসিমাখা মুখে বললেন---‘চলো আমি প্রস্তুত!’ না, বর সেজে বিয়ের আসরে নয়, ফাঁসীর মঞ্চে জীবনের জয়গান গাইতে গাইতে হাসতে হাসতে এগিয়ে চললেন অগ্ণিযুগের বীর বিপ্লবী অলিন্দ যুদ্ধের মহানায়ক দীনেশ গুপ্ত৷

বিনয়-বাদল-দীনেশ! বাংলা মায়ের তিন দামাল ছেলে সূর্য অস্ত না যাওয়া ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে আঘাত হানে একেবারে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে৷ নিহত কারা বিভাগের ইনস্পেক্টর জেনারেল কর্নেল সিম্পসন৷ আর একজন অফিসার মিঃ নেলসন গুলিতে আহত৷ ব্রিটিশের হাতে ধরা পড়ার আগেই বিনয়-বাদল ইহলোক ছেড়ে চলে যান৷ ধরা পড়েন দীনেশ গুপ্ত৷ এমন দুরন্ত দামাল ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার সাহস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ছিল না৷ তাই বিচারের প্রহসনে ফাঁসীর আদেশ৷

‘বাসাংসি, জির্ণানি যথা বিহায়.....’ গীতার বাণী পাঠ করে ফাঁসীর মঞ্চে উঠে দাঁড়ালেন দীনেশ গুপ্ত৷  দিনটা ছিল ৭ই জুলাই, ১৯৩১৷

‘‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও গো এবার

     যাবার আগে’,---

আপন রাগে,

      গোপন রাগে,

তরুণ হাসির অরুণ রাগে

       অশ্রু জলের করুণ রাগে৷

যাবার আগে যাও গো আমায়

        জাগিয়ে দিয়ে,

রক্তে তোমার চরণ দোলা---

        লাগিয়ে দিয়ে৷’’