নৈতিকতা

লেখক
দাদাঠাকুর

ছোট্ট ভাইবোনেরা, তোমরা জেনেছ যে মানব জীবনের লক্ষ্য হ’ল ঈশ্বরকে উপলব্ধির দ্বারা আনন্দ লাভ করা৷ কিন্তু আমাদের মনের কামনা–বাসনা, লোভ–লালসা আমাদের ঈশ্বরের দিকে না নিয়ে গিয়ে আপাত সুখের জন্যে জড় ভোগের দিকে নিয়ে যায়৷ মনের এই কামনা বাসনাকে বাধা দিয়ে ভোগমুখী মনকে ঈশ্বরমুখী করা দরকার৷ তার জন্যে চাই কিছু বিধি–নিষেধ৷ যেমন, একটা চারা গাছকে গোরু–ছাগল থেকে রক্ষা করে বড় করে তুলতে গেলে তার চারপাশে বেড়া দেবার প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনি সাধকের সাধনার পথে এগিয়ে চলার জন্যে যে প্রাথমিক বেড়া বা অনুশাসনের প্রয়োজন তার নাম নীতিবাদ বা নৈতিকতা৷

যম–নিয়ম হ’ল এই নীতিবাদ৷ যম মানে অপরের সঙ্গে সংযত ব্যবহার৷ আর নিয়ম হ’ল আত্মশুদ্ধির জন্যে যে আচার–আচরণ৷ যমের পাঁচটি অঙ্গ রয়েছে৷ যেমন–অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ, আবার নিয়মেরও পাঁচটি অঙ্গ রয়েছে৷ যথা–শৌচ, সন্তোষ, তপঃ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর প্রণিধান৷

অহিংসা ঃ মন, বাক্য ও শরীরের দ্বারা কারো ওপর পীড়ন না করার নামই অহিংসা৷ আর যখন কোন চিন্তা, কথা বা কাজ অন্য কাউকে বিনা কারণে দুঃখ বা কষ্ট দেবার জন্যে বলা বা করা হয় তা অবশ্যই হিংসা৷

সত্য ঃ অপরের হিতের জন্যে বাক্য ও মনের যে যথার্থ ভাব তারই নাম সত্য৷ মানুষ বিচারশীল জীব৷ কিসে অপরের ভাল হবে তা বোঝার ক্ষমতা সব মানুষেরই কম বা বেশী রয়েছে৷ সেই ক্ষমতা অনুযায়ী কিছু মনে ভাবা, বলা বা করাকে সত্য বলে৷

অস্তেয় ঃ অন্যের দ্রব্য অপহরণ না করার নামই অস্তেয়৷ অস্তেয় মানে চুরি না করা৷

ব্রহ্মচর্য ঃ মনকে সব সময় ব্রহ্ম ভাবনায় রত রেখে কাজ করে যাওয়াকেই ব্রহ্মচর্য বলে৷

অপরিগ্রহ ঃ দেহরক্ষার জন্যে যা প্রয়োজন তার অতিরিক্ত সবকিছু ত্যাগ করার নাম অপরিগ্রহ৷ তাই শরীর ঠিক রাখার জন্যে যতটা ভোগ্যবস্তুর দরকার ততটাই গ্রহণ করতে হবে তার বেশী নয়৷

শৌচ ঃ শৌচ মানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা৷ শৌচ দুই প্রকার৷ যথা,–

ক) বাহ্যিক শৌচ ৷ যেমন, শরীর, জামা–কাপড়, ঘর ইত্যাদি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা৷

খ) মানসিক শৌচ–সব সময় অপরের ভাল চিন্তা করা, মনে মনে কারও ক্ষতির চিন্তা না করা৷

সন্তোষ ঃ অযাচিত ভাবে যা পাওয়া যায় তাতেই সন্তুষ্ট থাকার নাম সন্তোষ৷ স্বাভাবিক পরিশ্রমে অর্থাৎ শরীর ও মনের ওপর তার সামর্থ্যের বেশী চাপ না দিয়ে যে অর্থ বা সম্পদ উপার্জন করা যায় তাতে তৃপ্ত থাকার নামই সন্তোষ সাধনা৷

তপঃ ঃ তপঃ শব্দের অর্থ হচ্ছে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে কৃচ্ছ্রসাধন করা৷ তাই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে শারীরিক–মানসিক কষ্ট স্বীকারের নাম তপঃ৷

স্বাধ্যায় ঃ অর্থ বুঝে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করাকে স্বাধ্যায় বলে৷ তাই স্বাধ্যায়ে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে বা শুনে তার অন্তর্নিহিত অর্থ ভালভাবে বুঝে নিতে হবে৷ শুধু বুঝলেই হবে না, সেইমত জীবনকে পরিচালিতও করতে হবে৷

ঈশ্বর প্রণিধান ঃ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার জন্যে আন্তরিক ভাবে মানসিক প্রয়াস করাকে ঈশ্বর প্রণিধান বলে৷ সুখে দুঃখে সব সময় ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে তাঁর ভাবনা নিয়ে কাজ করাও ঈশ্বর প্রণিধানের অঙ্গ৷