নারী অবমাননার প্রতীক---তিনতালাক ভারতের শীর্ষ আদালতে নিষিদ্ধ

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ভারতের শীর্ষ আদালতের রায়ে ভারতীয় মুসলীম সমাজে প্রচলিত ‘তিন তালাক’ প্রথা (তালাক-এ-বিদ্দত) অবৈধ ঘোষিত হ’ল৷ এখন থেকে এর কোনো আইনগত  বা সাংবিধানিক বৈধতা রইল না৷

এতদিন একজন মুসলীম স্বামী তাঁর  বৈধ স্ত্রীর উদ্দেশ্যে  এক নি:শ্বাসে যে কোনো কারণে তিনবার ‘তালাক’ বললেই সেই মূহূর্ত্ত থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যেত৷ স্ত্রী যতই নির্র্দেষ হোক না কেন, স্বামী নেশার বশে বা ক্রোধের বশে তিনবার তালাক বললেই সমস্ত সম্পর্ক শেষ৷ মুসলমান সমাজের এই প্রথার বিরুদ্ধে মুসলমান নারীদের চাপা বিক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরেই পুঞ্জীভূত হচ্ছিল৷ কিন্তু কিছুই করার ছিল না৷ এই ‘তিন তালাকে’র শিকার ৫ জন মহিলা---উত্তরাখন্ডের সায়রাবানো, পশ্চিমবঙ্গের  ইশরাত  জাহান, উত্তর প্রদেশের গুলশন পরভিন ও আতিয়া সাবরি আর রাজস্থানের আফরিয়া রহমান ‘তিনতালাক’ প্রথার  বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন৷

সুপ্রিমকোর্টের  প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এই মামলার বিচার করেন৷

গত ২২ শে আগষ্ট এই মামলার রায় বের হয়৷ এই রায়ে  পাঁচ বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশের বিচারে এই ‘তিনতালাক’ প্রথা অবৈধ ও অসাংবিধানিকরূপে ঘোষিত হয়৷ বলা হয়েছে, এই প্রথা ভারতীয় সংবিধানের সমানাধিকারের চূড়ান্ত পরিপন্থী৷

সুপ্রিমকোর্টের এই ঐতিহাসিক মামলার বিচারপতিরা ছিলেন ১) প্রধান বিচারপতি জে.এস.খেহর ২) বিচারপতি এস.আব্দুল নাজির, ৩) বিচারপতি কুরিয়েন জোসেফ, ৪) বিচারপতি রোহিন্তন কলি নরিম্যান ও ৫) বিচারপতি ইউ হউ ললিত৷

এঁদের মধ্যে প্রথম ২ জন বিচারপতি অর্র্থৎ প্রধান বিচারপতি জে.এস.খেহর ও বিচারপতি এস.আব্দুল নাজির সরাসরি তিন তালাক প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করেন নি৷

কিন্তু অপর তিন বিচারপতি সুস্পষ্ট ভাষায় এই তিন তালাক প্রথাকে অবৈধ ও সাংবিধান বিরোধী হিসেবে রায় দিয়েছেন৷ তাঁরা এও বলেছেন এই তিন তালাক প্রথা কোরান বিরোধী, আর তাই শরিয়ৎ বিরোধী৷

শেষ পর্যন্ত বিচারপতিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বিচারকে মান্যতা দিয়ে শীর্ষ আদালত এই তিন তালাক প্রথাকে খারিজ করে দিল৷ বলা হ’ল, আগামী ৬ মাস তিনবার তালাক বললেই  বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ বলে গণ্য হবে না৷ সুপ্রিম কোর্ট এও বলেছে, ৬ মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হবে৷  আর যদি সরকার এর মধ্যে আইন প্রণয়ণ নাও করেন, তাহলেও তিন তালাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে৷  সুপ্রিম কোর্টের এই রায় সমগ্র মুসলীম সমাজের নারীদের কাছে,তৎসহ সমস্ত নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এ জয় এক গুরুত্বপূর্ণ জয় সূচক পদক্ষেপ৷

বলাবাহুল্য, ভারতের কিছু গোঁড়া মুসলীম এই রায়কে মেনে নিতে পারেন নি৷ কিন্তু লক্ষণীয়, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আলজেরিয়া,মিশর, ইরাক, মরক্কো, সংযুক্ত আমিরশাহী প্রভৃতি ২২ টি ইসলামি রাষ্ট্রে তিন তালাক প্রথাকে ইতোপূর্বেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে৷