নির্বাচনে দলগুলো নিজেদের লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা বলুক, ব্যষ্টিকেন্দ্রিক নোঙরা খেউড় বন্ধ করুক

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সতেরতম লোকসভা নির্বাচন চলেছে৷ কোন কোন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও এই সঙ্গে হয়ে যাবে৷ এবারে নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ দেখা যাক কী হয়! এ.ড়িআর. (এ্যাশোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফরমস্) এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশের চলতি লোকসভার ৫২১ জন সাংসদের মধ্যে ৪৩০ জন হলেন কোটিপতি৷ অর্থাৎ  প্রায় ৮৩শতাংশ জনপ্রতিনিধি কোটিপতি৷ কিন্তু এদেশের কোটি কোটি নাগরিক আজও দারিদ্র্য সীমারেখোর নীচে বাস করেন৷ এমনও বহু হতভাগ্য আছেন যাদের প্রতিদিন ২০ টাকাও উপার্জন হয় না৷ দেশের জনপ্রতিনিধিদের  বেশিরভাগের সম্পদের পরিমাণ কোটি টাকারও ওপর৷ সমীক্ষার রিপোর্ট দলগতভাবে বিজেপিতে ৮৫ শতাংশ (২২৭), কংগ্রেসে ৮২ শতাংশ (৩৭), আর তৃণমূল কংগ্রেসের ৬৫ শতাংশ (২২) জন কোটিপতি৷

এদের মধ্যে ৪৫ জন সাংসদের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার বেশী৷ এদের মধ্যে আবার ১৪ জনের আয় ১০ কোটি টাকার বেশী৷

অত্যন্ত বেদনা ও দুঃখের কথা, দলগুলো বেছে বেছে সেই সব প্রার্থীকেই মনোনয়ন দিচ্ছে যাঁরা টাকার কুমীর৷ তা না হলে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে রাজনৈতিক দলগুলি রাজসূয় যজ্ঞের মত প্রচার চালাতে পারে৷

তবে ভারতের জনগণ সব বোঝেন ও সব দেখেন৷ টাকা দিয়ে হয়তো কিছুটা উদ্দেশ্য সফল হয় কিন্তু একটা সময় আসে যখন টাকায় ও মিথ্যা প্রচারে উদ্দেশ্য সিদ্ধি হয় না৷ নাগরিকরা যদি সজাগ ও সচেতন থাকেন ও সকলে নির্ভয়ে সৎ-নীতিবাদী প্রার্থীকে সমর্থন করেন তাহলে কিছুটা অসাধ্য সাধন হয়৷

সৎ নীতিবাদী আদর্শবান দেশ সেবক যাঁরা তাঁরাই সার্বিক শোষণহীন সমাজ গড়ার কাজে ব্রতী হবেন৷ সাবধানতার  সঙ্গে খুঁজে খঁুজে কেবলমাত্র তাঁদেরই সমর্থন করা উচিত৷ তাঁরাই দেশের উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থায় সমবায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে’ গড়ে তুলতে পারেন৷ এই কাজটি ধীরে ধীরে করতে পারলে দেশে বিভিন্ন স্বয়ং সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে৷ মানুষ আর্থিক, সামাজিক, সাংসৃকতিক তথা আধ্যাত্মিক দিক থেকে উন্নত হবে৷ এই আত্মনির্ভরশীল মানুষ একদিন নিয়ে আসবে সার্থক গণতন্ত্র৷ চাই গণ অর্থনীতি৷ এই গণ অর্থনীতির প্রতিষ্ঠার জন্যে দরকার সমাজের বুকে নির্ভিক নীতিবাদীদের সার্বিক শোষণমুক্তির জন্যে তীব্র সমাজ-আন্দোলন৷

আর্থিক ঘুঘুর বাসা ভাঙ্গার সংকল্প নিতে হবে৷ তাই এগিয়ে আসতে হবে তরুণ তরুণীদের৷ কালক্ষেপ না করে কাজে নামতে হবে৷ সময় নষ্ট করলে চলবে না৷

পরিশেষে বলি প্রাউট দর্শনই সেই পথের সন্ধান দিচ্ছে৷ ভারত তথা পৃথিবীর শোষিত জনগণের শোষণ-মুক্তি এই পথেই আসবে৷

বর্তমানে ভারতের বুকে চলছে গণতন্ত্রের নামে বুজরুকী৷ অধিকাংশ দলই ব্যষ্টিকেন্দ্রিক পরিবারকেন্দ্রিক৷ তারা ধনীর সেবক৷ একথা যেদিন দেশের মানুষ বুঝবে, অসহায় মানুষের চোখ খুলে যাবে৷ আজকের নির্বাচনে নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে শুধু ব্যষ্টিগত আক্রমণ ও জনগণকে ভাঁওতা দেওয়া৷ এই নির্বাচনকে বলা যায় দলের স্বার্থে ও ব্যষ্টি স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলির লড়াই৷