পা ধুয়ে দেওয়া নাটক

লেখক
সুকুমার সরকার

পা ধুয়ে দেওয়া আর পা মাড়িয়ে যাওয়া দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না যদি মনুষ্যত্বের মর্য্যাদায় না থাকে৷ সম্প্রতি ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্ত্তৃক অর্ধকুম্ভস্নানের পর পাঁচ দলিত সাফাই কর্মীর পা ধুইয়ে দেওয়ার পর যে বিতর্ক উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিবন্ধের অবতারণা৷

দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাজ দলিত ও সাফাই কর্মীদের পা ধুইয়ে দেওয়া নয়৷ তাঁর কাজ দেশের প্রতিটি মানুষের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক বিকাশ সুনিশ্চিত করা ও মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সমাজ রাষ্ট্রে যেখানে যেটুকু গলদ আছে আইনেরে দ্বারা তা দুর করা৷

ব্যষ্টিগতভাবে তিনি কোনো ব্যষ্টি-মানুষের পা ধুইয়ে দিয়ে নিজের ব্যষ্টিগত কোনো অপরাধ-ােধ থেকে মুক্তি পেতে পারেন, কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনগণ কিন্তু এটাকে খুব একটা ভাল চোখে দেখবে না৷ দেখছেন যে না, তা সম্প্রতি দিল্লিতে জড়ো হওয়া সাফাই কর্মীদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হয়েছে৷ তাঁদের বক্তব্য, দুই পাঁচজন সাফাই কর্মীর পা ধুয়ে কী হবে? তার চেয়ে সাফাই কর্মীদের সামাজিক মর্যাদা ও পেশাগত মর্যাদার দিকটাকে ভাল করে দেখা হোক৷ প্রয়োজনে আইন করে পেশাগত অসঙ্গতি দূর করা হোক জন্মগত ভাবে সাফাই কর্মীরা সাফাই কর্মী হবে এমন কেন? কিন্তু এখনো পর্যন্ত সমাজরাষ্ট্রে এই অবস্থার অবসান হয়নি৷ সাফাই কর্মীদের সন্তান-সন্ততি চাইলে লেখা পড়া করে পেশা বদলাতে পারে৷ কিন্তু সাফাই কর্মীদের লেখা পড়ার সুযোগ কতটুকু? প্রথমত, সমাজের অন্য বৃত্তির মানুষেরা এখনো সাফাই কর্মীদের ভাল চোখে দেখে না৷ সুকল কলেজে নিজেদের সন্তান-সন্ততিদের সাফাই কর্মীদের সন্তান-সন্ততির থেকে দুরে থাকার পরামর্শ দেন৷ দ্বিতীয়ত, সাফাইকর্মীদের জন্য আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই৷ তৃতীয়ত, সাফাইকর্মীদের আর্থিক অস্বচ্ছলতা৷ এই অভাবগুলি দুর করতে পারলে তাদের পা ধুইয়ে দেওয়ার দরকার পড়বে না৷

সমাজে রাষ্ট্রে এখনো কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত জীবিকার বিধি রয়ে গেছে৷ আর এই বিধির কারণেই তাদের শিক্ষার ব্যপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে  দেখা হয় না৷

বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি আজ যে ভাবে এগিয়েছে,তাতে প্রায় সব কাজই যন্ত্রের সাহায্যে হচ্ছে৷ সেখানে জন্মগত পেশাদারিত্ব টিকিয়ে রেখে সমাজকে রাষ্ট্রকে কী বার্র্ত দেওয়া হচ্ছে? অবিলম্বে এইসব বন্ধ হওয়া উচিত৷ আর দলিত বা সাফাই কর্মীদের পা ধোওয়ার নাটক, কিংবা দলিত বাড়িতে পাত পাড়ার নাটক বন্ধ হোক৷ যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে, তবে তাদের আর্থ-সামাজিক সংস্কৃতির বিকাশ ও মনুষ্যত্বের মর্র্যদা প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ করা উচিত৷ মনে রাখতে হবে, সব কিছুর ঊর্দ্ধে মানুষের আসল পরিচয় সে মানুষ৷