পাকিস্থান, ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে উন্নয়নের পথে চলার মানসিকতাকে অগ্রাধিকার দিক

লেখক
প্রভাত খাঁ  

পাকিস্তান এমন একটি ভূখণ্ড যার তিনদিকই পাহাড় ও ভূমিবেষ্টিত  কিন্তু ভারত বিশাল দেশ তার পশ্চিমদিকে বিরাট অংশ ও পূর্বদিকের তিনভাগে প্রায় দুভাগ সমুদ্রবেষ্টিত তাই ভারতকে স্থলপথ ও জলপথে আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষায় বেশি সচেতন হতে হয়৷ গত ২০১১ তে প্রতিবেশী রাষ্ট্র-এর মদতপুষ্ট লস্কর তৈবার জঙ্গীরা  মুম্বাই আক্রমণ করে জলপথে৷ তার ভয়ঙ্কর পরিণতি শুধু ভারত নয় সারা পৃথিবী দেখেছে আর একটা অপ্রিয় সত্য কথা হল যে পাকিস্তানের জন্মই হয়েছে ভারত বিদ্বেষকে হাতিয়ার কবে৷ তাই সাম্প্রদায়িকেতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগাটাই হল সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক গোষ্ঠীর একটা কূটচাল  যার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানকে সামনে রেখে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চালিয়ে যাওয়া যার মাধ্যমে অস্ত্র ব্যবসাকে বাঁচিয়ে রাখা ও ভারতকে অস্থির করে রাখা যাতে ভারত আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে নির্ভরশীল হয়ে উঠতে না পারে৷ তাইতো দেখা যায় মুসলমান অধ্যুষিত কশ্মীরে পাকিস্তান সৈন্য বাহিনী মদতপুষ্ট জঙ্গীদল গুলিকে ইন্ধন দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে  একনাগাড়ে দীর্ঘ ৭১ বছর ধরেই স্থলপথ আর জলপথে জঙ্গী অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ভারতে  আর্থিক ও সামাজিক ক্ষতিই করে চলেছে৷ এই যে স্ট্র্যাটেজি এর অন্যতম কারণ হল সরাসরি ভারতের  সঙ্গে যুদ্ধে নামাটা  তার পক্ষে সম্ভব নয় কারণ ভারত বিরাট দেশ ও লোকবলও প্রচুর৷ এছাড়া ভারতে বসবাসকারী মুসলিমদের সংখ্যা পাকিস্তানের চেয়ে বেশী তাদের মধ্যে কিন্তু পাকিস্তান নানাভাবে প্ররোচনা দিয়ে বেশ কিছু উগ্রপন্থী পাকিস্তানীর সংখ্যা বাড়িয়েছে৷ তারা ঐসব জঙ্গীদের মদত দিয়ে ভারতের ক্ষতি সাধন করছে৷

পাকিস্তান টাকা ,অস্ত্র, ধবংসাত্মক বিস্ফোরক চোরা পথে ভারতে প্রবেশ করিয়ে সীমান্তে এক নাগাড়ে ক্ষতি করে চলেছে৷ বর্তমানে ভারতের মধ্যে অবস্থিত কশ্মীর অংশটার অনেকেই জঙ্গীদের মদত দিচ্ছে বলেই ভারতের বুকে ভারতের জওয়ান ও নিরপেক্ষ কশ্মীরী ভাই-বোন-জঙ্গী সংঘর্ষে মারা যাচ্ছেন৷

কশ্মীরের অনেক নেতা ও নেত্রীর আচরণ কথাবার্র্ত ধ্যান ধারনা মোটেই সুস্থ ভারতীয়  নাগরিকদের মতো নয়৷ এছাড়া কশ্মীরের যে এক তৃতীয়াংশ জোর করে পাকিস্তান আজাদ কশ্মীর নামে বেআইনীভাবে আটকে রেখেছে তারই অধিকাংশ তরুণ জঙ্গী সংস্থাগুলোতে  শিক্ষনপ্রাপ্ত হয়ে আত্মঘাতী কাজ করে চলেছে৷ এই জঙ্গী হামলা এটা হলো চোরা পথে ভারতে  ক্ষতি সাধনের একটা পথ৷ স্মরণে থাকে যে  পশ্চিম পাকিস্তানে লোকসংখ্যার চেয়ে পূর্বপাকিস্তানে (বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশের) লোকসংখ্যা বেশী ছিল৷ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাধিক্য হওয়া সত্ত্বেও ঢাকাকে রাজধানী করা হয়নি৷  মিঃ জিন্না এটা চাননি, তাছাড়া উর্দুভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করায় পূর্ব বাংলা অসন্তুষ্ট হয়৷ পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ববাংলাকে  উপনিবেশ বানিয়ে অর্থনৈতিক শোষন করার ধান্দায় ছিল৷ তাই পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় সেই ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল থেকে বাংলাভাষাকে  রাষ্ট্রভাষা করার দাবীর মধ্য দিয়ে৷ পৃথিবীর বুকে ভাষা আন্দোলন করে পূর্বপাকিস্তান হয়ে গেল স্বাধীন বাংলাদেশ৷ একনাগাড়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছে৷ শেষে ১৯৭১সালের শেষেব দিকে  তারা দেশকে স্বাধীন করে৷ ভারতবর্ষকে তিনখণ্ড করে  ভারতের দুটো ডানা কেটে পাকিস্তান হয়৷ এটা একটা গভীর চক্রান্ত৷ পাকিস্তানের  জন্মের আগে থেকেই হিন্দু বিতাড়ন শুরু করে  পাকিস্তান পন্থীরা কারণ মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে৷  এই যে চক্রান্ত এটাই হলো সাম্প্রদায়িক হামলা৷ লক্ষ লক্ষ হিন্দু ও অমুসলমানদের তারা পূর্ববাংলা  ও পঞ্জাব থেকে উদ্বাস্তু করে দেশছাড়া করে যার রেশ এখনও চলছে৷ ভারত এই উদ্বাস্তু সমস্যায় একদিকে যেমন আর্থিক সংকটে ও লোকসংখ্যা বৃদ্ধি  চাপ ভোগ করে তার ওপর সীমান্তে অবৈধ জঙ্গী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে৷ তাই দুটো ডানার একটাকে কিছুটা শান্ত করতে  বাংলাদেশের স্বাধীনতায় ভারত সরকার  ইন্দিরার আমলে বাঙালী আন্দোলনকে নানাভাবে সাহায্য করেন তা না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়াটা বেশ কিছুটা কঠিন হত৷ শেখ মুজীবরকে  ও তার পরিবারকে  ভারত সরকার সাহায্য করেন৷  কিন্তু পাকিস্তান চোরা গুপ্ত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা চালিয়ে যাচ্ছে৷ সীমান্তে জঙ্গী অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে ও জলপথে ভারতের জঙ্গী আক্রমণে এমনকি ভারতের লোকসভা  আক্রমন করে৷ আর সারা ভারতের রাজ্যগুলি তে পাকিস্তানী জঙ্গী নানা ধবংসাত্মক কাজ করার ফন্দি ফিকির করছে , শুধু তাই নয় ক্ষতি সাধনও করে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে ভারতকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে পাকিস্তানী জঙ্গী হামলার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সীমান্তে ও দেশের অভ্যন্তরে৷ এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তেও জাগ্রত প্রহরীর মত নজর রাখতে হবে৷  কারণ যাতে বাংলাদেশে যারা প্রোপাকিস্তানী আছে  সেই জঙ্গীদল হামলার ছক শুধু করছে না সীমান্তে জেলাগুলিতে আস্তানা গেড়ে এদেশের সর্বনাশ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে৷

মোদ্দাকথা দেশভাগটাই হলো অভিশাপ, যে অভিশাপের কুকর্মটা  করে গেছে কংগ্রেসী নেতা ও কম্যুনিষ্টরা  নিছক গদীর লোভে তাই আজ আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে কি করে আমাদের জন্মভূমিকে শাপ মুক্ত করতে পারি৷ বর্তমানে  দেশের নোংরা দলবাজিতে দেশ ধবংসের দিকেই  এগোচ্ছে , মোদ্দাকথা সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি থেকে প্রতিটি ভারতবাসীকে  মুক্ত হতে হবে৷প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে দেশের সার্বিক কল্যাণে সেকল নাগরিককে একই নিয়ম পালন করতে হবে  ও এই সুযোগ ভোগের অধিকার থাকবে৷ কেউই কোন অধিক সুযোগ পেতে পারে না, কারণ সকলেরই একটা পরিচয় ভারতবাসী যারা ভারতীয় সংবিধানের অধীনে থাকবে৷ তবে প্রতিটি রাজ্যের ভৌগোলিক পরিবেশ হেতু অবশ্যই পার্থক্য কিছুটা থাকবে অন্যান্য ব্যাপারে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য মনে রাখতে হবে৷ দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের শান্তি প্রিয়রা চায় না এই ধরনের হিংসাত্মক বিরোধ৷ এতে অত্যন্ত ক্ষতিই হচ্ছে, দুই দেশের ৷ তাই পাকিস্তান ও ভারতের শাসকগণ মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার দিয়ে এমন এক বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে তুলুক যাতে দুই দেশের মানুষ শান্তিতে বাঁচতে পারে৷ কাজী নজরুলের কথায় বলি---

‘‘হিন্দু না ওরা মুসলিম,

ওই জিজ্ঞাসে কোন জন

কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ

সন্তান মোর মার’’৷