পিতৃ–আজ্ঞা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

বাপ–বেটাকে নিয়ে সংসার৷ বাপ হাটে গেছে৷ বেটা বাপের জন্যে ভাত–ডাল–তরকারী রেঁধে রেখেছে৷ বাবা খেতে বসে বলছে–রামচন্দ্র, রামচন্দ্র, ওরে রাউজা, দাইলনিতে কয় গণ্ডা মরিস্ দিস?

বেটা বললে–সয় গণ্ডা৷

বাপ–দিবারে কইসিলাম কয় গণ্ডা?

বেটা–আজ্ঞা, আষ্ট গণ্ডা৷

বাপ–দিস কত?

বেটা–আইজ্ঞা সয় গণ্ডা৷

বাপ–এ অন্ন কাউম্ না, এ অন্ন কাউম্ না৷

বেটা–এ্যাবার এ্যাডা ক্ষমা করেন, মাপ করেন৷ এক্কেরে কতা দিত্যাসি, এ্যামনডা আর অইবো না৷

বাপ–ত্র্যাতাযুগে যে রামচন্দ্র আসিল হ্যা পিতৃসত্য পালনের লাইগ্গা ১৪ বৎসর বনবাস গ্যাসিল৷ তুমি কলিযুগের রামচন্দ্র পিতৃ–আজ্ঞা লঙঘন করস্৷ দিবারে কইসিলাম কয় গণ্ডা মরিস?

বেটা–আইজ্ঞা, আষ্ট গণ্ডা৷

বাপ–দিস কত?

বেটা–সয় গণ্ডা৷

বাপ–তুমি পিতৃ–আজ্ঞা লঙঘন কর্স৷ এ অন্ন কাউম না, লাতি মাইর্যা তালা বাইঙ্গা ফ্যালাই দিমু৷

*  *  *

কথা বেচে

প্রকাণ্ড বড় মিউজিয়াম (প্রত্নশালা)৷ কিউরেটর (তত্ত্বাবধায়ক) নিযুক্ত হয়েছেন একজন অতিজল্পক মানুষ৷ বিতর্কেই তিনি বেঁচে আছেন.......বিতর্কেই তিনি চাকরি বজায় রেখেছেন......... বিতর্কেই তিনি পদোন্নতির আশা পোষণ করেন৷ দর্শনার্থীদের সম্বোধন করে তিনি একটি ছোট্ট করোটি (মাথার খুলি) দেখিয়ে বললেন–আপনারা জেনে হয়তো অবাক হবেন.........সত্যিই তো, অবাক হবারই কথা.........এই করোটিটি হচ্ছে ইতিহাসধন্য পুরুষ রাণা প্রতাপের৷ উপস্থিত দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিলেন একজন ইতিহাসের অধ্যাপক৷ তিনি বললেন, কিন্তু স্যর, রাণা প্রতাপ তো ছিলেন তাগড়া আকারের দশাসই চেহারার মানুষ৷ তাঁর করোটি এত ছোট হবে কেন?

কিউরেটর বললেন–আপনি ভারী সুন্দর কথা বলেছেন......এই তো ইতিহাসের অধ্যাপকের মতই কথা৷ তাহলে শুনুন–এই করোটিটি রাণা প্রতাপের অল্প বয়সের৷ তখন তিনি ছোট ছিলেন, তাই তাঁর করোটিও ছোট ছিল৷ তিনি যখন বড় হয়েছিলেন, তাঁর করোটিও  বড় হয়েছিল, আপনি যেমন বলছেন স্যর.......কিন্তু সেই বড় করোটিটি আমাদের মিউজিয়ামে নেই ৷ কিন্তু স্যর,আমরাও হাত গুটিয়ে বসে নেই৷ সেটি জোগাড় করার জন্যে আমরা উদয়াস্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আসছে বার যখন আপনার পদার্পণ হবে, তখন আপনাকে  সেটা দেখাতে পারব৷

*  *  *

আগ কঁহা লগী

গদ্গদ  বচ + ঘঞ = গদ্গদবাচ৷ তোমরা অনেক নেতার জ্বালাময়ী বক্তৃতা প্রাক্–স্বাধীনতাকালে হয়তো শুণেছ৷ তাঁরা ভাষণে আগুন ছুটিয়ে দিতেন, যদিও বক্তব্যে বড় একটা কিছু থাকত না৷ শ্রোতার তলিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না৷ এই ধরণের অভ্যন্তরীণ মূল্যহীন যে ভাষণ তা’ ‘গদ্গদবাচ’৷

একবার বিহারে কোন এক জনসভায় জনৈক নেতা এলেন নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্ঢা পরে৷ শ্রোতারা অধীর আগ্রহে কখনো রোদে মুখ পুড়িয়ে, কখনো বা জলে জামা ভিজিয়ে অপেক্ষা করে আছে৷ নেতার আসতে দেরী হ’ল কারণ তিনি একটি দূরবর্ত্তী স্থানের সুলভ শৌচালয়ের ফিতে কাটতে গেছলেন৷

তিনি এসে কিন্তু লজ্জিত হলেন না....তাঁর মুখে কিন্তু কিন্তু ভাবও ছিল না৷ তিনি শ্রোতাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন–‘‘মালা লেনে কা টাইম নহী হ্যায়, ম্যায় বহুৎ ব্যস্ত হুঁ’’৷ সবাই ভাবল–নেতা তো, কতই ব্যস্ত তাই মালা নিতে চাইছেন না৷ তাঁর জনৈক টাউট শ্রোতাদের এ্যাড্রেস করে বিহারের স্থানীয় ভাষায় বললেন–এঁর সময়ের অত্যন্ত অভাব৷ আর কাজও প্রচুর৷ নাওয়া–খাওয়া–শোয়া তো প্রায় উঠেই গেছে৷ দীর্ঘশঙ্কায় (মলত্যাগ) না গেলে নয়, তাই যান৷ আর ত্যাগ ত্যাগের কথা আর বলবেন না৷ আগে দিনে দশ প্যাকেট সিগারেট খেতেন৷ আজকাল কেবল দীর্ঘশঙ্কার সময় এক প্যাকেট সঙ্গে নিয়ে যান, নইলে পেট পরিষ্কার হয় না৷ ভেবে দেখুন তো কী দারুণ ত্যাগ আসছে ইলেকশানের সময় এঁর কথা আপনারা যেন কিছুতেই ভুলবেন না৷ আমি আবার আপনাদের জোড়া পায়ে সালাম দিতে আসব৷

তারপর নেতা শুরু করলেন তাঁর ভাষণ–বন্ধুয়োঁ, আজ ইস সুবসর পর আগ লগ গয়ী৷ ক্যা হুয়ী? আগ লগ গয়ী৷ আগ কহাঁ লগী? আগ লগ গয়ী আপকে দিল মে, মেরে দিল মে, দুঃখিয়া মানবতা কে দিলমে৷ আগ জ্বল রহী হ্যায়...আগ জ্বল রহী হ্যায়....জ্বলতী রহেগী৷

তবু শ্রোতারা মুগ্ধ....অভিভূত

(শব্দ চয়নিকা, ১৮/২০)