পিঠাপরব

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বাঙলার ঘরে ঘরে পৌষ সংক্রান্তিতে পৌষালীপার্বণ বা পিঠা-পরব অনুষ্ঠিত হয়৷ পিঠা যে বাঙালীর কত প্রাচীন ও প্রিয় খাদ্য তা আর বলে বোঝাবার প্রয়োজন হয় না৷

ঐ দিন শুধু পিঠা তৈরী আর খাওয়াটাই সব নয়৷ কিছু রীতি-নীতিও আছে৷ গ্রাম বাঙলার ঘরে ঘরে নতুন ধান ওঠার সঙ্গে উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়৷ বাঙালীর কাছে ধান লক্ষ্মী৷ তাই ধান গোলায় ওঠা মানে লক্ষ্মীর আগমন৷ তাঁকে পুজো করতে হবে, বেঁধে রাখতে হবে৷ ঘরের মেয়েরা খড় দিয়ে গোলা বাঁধে৷ আর পুরুষরা ছড়া কাটে---

‘‘আওনি, বাওনি, চাওনি৷

তিন দিন পিঠা খাওনি৷৷

অর্থাৎ লক্ষ্মীর আবির্ভাব (আওনি),   লক্ষ্মীর বন্ধন (বাওনি)   লক্ষ্মীর ঘরে চিরস্থায়ী অবস্থান হোক---এই প্রার্থনা (চাহনি -চাওনি)৷ এই দিন মেয়েরা ঘরে উঠোনে বারান্দায় আল্পনা এঁকে গোবরের নাড়ু আর চালের গুঁড়ো পুজো করে৷ সারা রাত জেগে থেকে সেসব পাহারা দেয়৷ একে বলে ‘পৌষ আগলানো’৷ মেয়েরা দুপুরবেলা কুনকেতে ধান ও ধানের ছড়া ভরে পূজো করে৷ ধান্য-লক্ষ্মীর বন্দনা গায়৷

পৌষ সংক্রান্তির পিঠা-পরবের আসল মজা পিঠা খাওয়া৷ নারকেলের পুর দেওয়া পুলি পিঠা৷ এই সময় আজকাল বাজারে পিঠা তৈরীর মাটির ছাঁচ কিনতে পাওয়া যায়৷ এই ছাঁচে তৈরী হয় আশকে পিঠা বা আশুধান্যের পিঠা৷ পূর্ববঙ্গের লোকেরা বলে চিতই পিঠা৷ ভিজানো চাল মিহি করে বেটে,জলে ঘন করে গুলে, একটু নুন মিশিয়ে এই পিঠা তৈরি হয়৷ খেতে হয় ঘন দুধ, ক্ষীর নারকেল কোরা বা গুড় দিয়ে৷ ঘন খেজুরের রসে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে এই পিঠে খেতে আরো মজা৷

তবে পিঠা খাওয়ার আগে দেবতাকে নিবেদন করতে হয়৷ এটা স্মৃতির বিধান৷

হরেকরকম পিঠের খবর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার  রচিত ‘হট্টমালার দেশে৷’