প্রাউট দর্শন ও বিশ্ব সমাচার দর্পণ সম্বন্ধে কিছু আলোচনা

লেখক
প্রভাত খাঁ

সকলেরই জানা দর্পণ-এর অর্থ হলো আয়না যাতে আমাদের ছবি পরিস্ফূট হয় অর্র্থৎ আমাদের আকৃতি দেখতে পাই ঠিক তেমনই মহান্ দার্শনিক শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর ৩৬০০ দৃষ্টিভঙ্গী বিশ্ব সমস্যা সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন তা যে আয়নায় প্রতিফলিত হচ্ছে তাকেই বলা হচ্ছে আনন্দমার্গ দর্শন তার আলোচনার পূর্বে কিছু বিষয় উপস্থাপন করা দরকার সেটির জন্য কিছু আলোচনা করা যেতে পারে ভারতের রামায়ণ মহাভারতের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্বন্ধে ভারতবর্ষ এমন এক উপমহাদেশ যেখানে প্রাচীন ভারতবর্ষের মহান ব্যষ্টিগণ যেমন বাল্মীকি ও বেদব্যাস জনগণের শিক্ষার জন্য দুটি মহাকাব্য রচনা করেন এই দুই মহাকাব্য আজও ভারতবাসীর কাছে মহামূল্যবান কাব্যগ্রন্থ কাব্য বলা হয় সেই পুস্তককে যে পুস্তক--- সুললতিং বাক্যং কাব্যং ইত্যাহু আর মহাকাব্য হল হলো যে কাব্য জীবনযাত্রার পাথেয় হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই এই দুটি হলো মহাপবিত্র মহাকাব্য গ্রন্থ হিসেবে আজ স্বীকৃত ভারতে মহাকবি বাল্মীকির মানস পুত্র ও কন্যা হলেন শ্রীরাম ও মহীয়সী সীতা আজও এই দুইটি চরিত্র অতি পূজনীয় রামায়ণ ধর্মগ্রন্থ হিসাবে খ্যাত কথিত আছে মহাকবি বাল্মিকি শ্রী রামায়ণ রচনা করেন রামচন্দ্রের জন্মাবার বহুবছর পূর্বে  শ্রীরামচন্দ্র ছিলেন মরুচন্দ্রিমা অর্থাৎ আদর্শবান নরশ্রেষ্ঠ রাজা আর শ্রীময়ী সীতা ছিলেন দেবী স্বরূপা রাণী শ্রী রামচন্দ্র ছিলেন ঈশ্বরের অবতার স্বরূপ ও লক্ষ্মী স্বরূপিনী ছিলেন সীতা দেবী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ভাষায় বলা যায়, কবি তব মনোভূমি শ্রীরামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো কারণ শ্রীরাম মহাকবির মানসপুত্র ভারতবাসী সেই মহাকবির সৃষ্ট মহাপবিত্র শ্রীরাম ও সীতাকে সেই ঈশ্বরের অবতাররূপে পূজা করেন ও ভক্তি করেন শান্তি প্রতিষ্ঠায় শ্রীরামচন্দ্রের জীবন সংগ্রাম ও সীতাদেবীর আত্মত্যাগ এক মহান দৃষ্টান্ত

ঠিক তেমনই বেদব্যাসের রচিত মহাকাব্য মহাভারত ও এক অমূল্য সম্পদ এতেও রয়েছে বহু শিক্ষনীয় বিষয় যা ভারতবাসীর কাছে শিক্ষনীয় ও অনুসরণীয় শ্রীকৃষ্ণ হলেন এই মহাকাব্যের নিয়ন্ত্রক ও পঞ্চপাণ্ডব ও কৌরবগণ হলেন এই মহাকাব্যের চরিত্র পাপ ও পূণ্যের সংগ্রাম যেখানে সেখানে জাত-পাত সংকীর্ণতার কোন স্থান নেই মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য যতোধর্ম স্তুতো জয় এই শিক্ষাই ভারত দান করে

ঠিক তেমনই বর্তমান আধুনিক যুগে মহান দার্শনিক ও মহান ধর্মগুরু শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার ওরফে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী সারা পৃথিবীর  মানবসমাজকে নব্যমানবতাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমগ্র পৃথিবীর সৃষ্টি সেই জীবজন্তু পশুপক্ষী গাছপালাকে নিয়ে কিভাবে সকল সমস্যাকে সমাধান করে এক উন্নত মানব সমাজ গড়ে তোলা যায় তাঁরই পথ নির্দেশনা দিয়েছেন তার বাস্তবায়নেরও পথ দেখিয়েছেন আজকের ক্ষয়িষ্ণু জগতে সেগুলির ব্যাপক প্রচার ও বাস্তবায়নের গুরুত্ব জরুরী তাই তার প্রচার দরকার যে যে দিকগুলির তিনি আলোচনা করেছেন তার সম্বন্ধে ব্যাপক প্রচার দরকার

সেই বিষয়ে বিশ্ব সমাচার দর্পনে উল্লেখ থাকবে ও তার বাস্তবায়ন কেমনভাবে হবে তারও ইঙ্গিত থাকবে মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে সমগ্র মানবসমাজকে এক ও অবিভাজ্য রূপেই দেখেছেন আপেক্ষিক জগতে কিন্তু বৈচিত্র্যের মধ্যে রহে গেছে সেই মহান ঐক্য, কিন্তু  সব মানুষের বাঁচার প্রয়োজন ও আয়োজন ভৌগোলিক পরিবেশের পার্থক্য হিসাবে সামাজিক আচার-আচরণ, কৃষ্টি সংস্কৃতির প্রকাশের পার্থক্য থাকবে কিন্তু সবাই সামাজিক প্রাণী সভ্যতার বিকাশ আগে পরে হয়েছে পোষাক পরিচ্ছদ, গায়ের রং আলাদা হবে তাতে কিন্তু তেমন কিছু আসে যায় না বর্তমান যুগে সারা পৃথিবীটাই যেন এক ছাতার নীচে এসে গেছে আজকের পৃথিবীটা যেন একটি বিরাট দেশ শ্রী সরকার মানব ইতিহাসে সদাশিবকে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনিই মানব সমাজে যে আইন শৃঙ্খলা, নাচ, গান, ওষুধপত্র রোগে ও আধ্যাত্মিক জগৎ এর আধ্যাত্মিক সাধন পদ্ধতির উদভাবন করেন তাই শিবকেই আদি পিতা বলা হয় তিনি তন্ত্রসাধনায় মানব সমাজকে জাগ্রত করে গেছেন

শ্রী সরকার সবার চোখের আড়ালে থেকেই নীরবে তাঁর কাজ করে গেছেন একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের জ্যেষ্টপুত্র হয় তিনি বলেন আমি রহস্যময় হয়েছিলাম, আমি রহস্যময় হয়ে আছি ও রহস্যময় হয়ে থাকবো তিনি নিজেকে লোকচক্ষের আড়ালে রেখেই জগৎ কল্যাণে অসাধ্য সাধন করে গেছেন

তিনি উপলদ্ধি করেন যেটি, তা হলো এই কলিযুগে বেশী দরকার সংঘ শক্তি তাই তিনি সংঘটন তৈরী করেন গত ১৯৫৫ সালের ৯ই জানুয়ারী বিহারের জামালপুরে  রামপুর -কলোনীতে আনন্দমার্গের প্রথম ধর্মমহাচক্র হয় তাঁরই নেতৃত্বে আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ, রেজিষ্ট্রার্ড হয় পশ্চিবঙ্গ সোসাইটি এ্যাক্টে ১৯৬১, নং এস৬০৬৮ অফ ১৯৬৩-৬৪তে প্রধান কার্যালয় পুরুলিয়া, আনন্দনগর,পোবাগলতা পশ্চিমবঙ্গ, পিনকোড্- ৭২৩৩২১৫ তিনি এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা

বিশ্বের সকল মানব সমাজ ও সকল জীবজন্তু গাছপালা নিয়েই তাঁর সারাজীবন ধরে মহান কর্ম ও সেবার সাধনা ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ১৮ঘন্টা কাটাতেন সেই সব সৃষ্ট জীবজন্তু গাছপালা পশু পক্ষীদের কল্যানের চিন্তায় আর তাঁর সংঘটনের সেবকদের কর্মে রত রাখতেন তাই তাঁর ক্ষুদ্রজীবনের পরিসরে সারা পৃথিবীতে এক বিরাট বিশ্ব সংঘটন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের বিকাশ ঘটান প্রাউট prout) অর্থাৎ প্রোগ্রেসিভ ইউটিলাইজেশন থিওরি শব্দ তিনটি সংক্ষিপ্ত একটি শব্দ এটা কোন ইংরাজি শব্দ নয় আজ পৃথিবীতে প্রাউট বা প্রাউত অতি প্রচলিত একটি বিরাট অর্থবোধক শব্দে ব্যবহৃত হচ্ছে এটি একটি সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন বা তত্ত্ব হিসাবে পরিচিত এই শব্দটির বাংলা অর্থ হলো প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব জগৎ গতিশীল গম্+ ক্বিপ প্রত্যয় করলে জগৎ শব্দ হয় যেটি চলেই চলেছে, যা থেমে নেই

পৃথিবীর যা কিছু সম্পদ আছে সবই চলে চলেছে তাদের উপযোগিতাও নিতে হবে সেই গতিশীলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে তাছাড়া সকল সৃষ্ট বস্তুকেও চলতে হবেসেই গতিশীলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে

তা না হলে সেটি ধবংস হবে তাই এই প্রাউট তত্ত্ব হলো গতিশীল প্রগতিশীল দেশ কাল পাত্রের সাথে সাথে এই তত্ত্ব খাপ খাইয়ে চলবে তাই পুরাতনের মরাকান্নায় যে বসে থাকবে না, পরিবর্ত্তনের দোলায় দুলতে দুলতে সেও কালের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলবে

গো-যান দিয়ে শুরু---আজ মানুষ মহাকাশ যানে চড়ছে এক সময় মানুষ খড়ম পরতো আজ আর পরে না এই গতিশীল জগতের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে পরিবর্তনকে উদার দৃষ্টিতে গ্রহণ করতে হবে, কালের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে নইলে কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকতে হবে

আজ মানুষ কালস্রোতে ঘুরতে ঘুরতে এক বৃহৎ পরিবারে এসে পৌঁচেছে তাই মানুষ এক বৃহৎ সমাজে-সদস্য প্রাউটের চিন্তায় কোন ভেদ নেই বরং শুধু মানুষ নয়, মানুষ পশু-পাখী তরুলতা সবাইকে নিয়ে প্রাউটের নব্যমানবতাবাদী চিন্তাধারাই নোতুন সমাজ গড়ে তুলবে যেখানে সমস্ত সম্পদের যুক্তিসম্মত বন্টনের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষই জীবন ধারণের  নূ্যনতম প্রয়োজন হাতে পাবে