প্রধানমন্ত্রীর দাবী নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে

লেখক
পথিক বর

গোটা বিশ্ব যখন জেনে গেছে চীনাগ্রাসনে ভারতের ২০জন সেনা শহীদ হয়েছে৷ লাদাখ সীমান্তে ভারত ভূখণ্ডে চীনের জোরপূর্বক প্রবেশের কারণেই এই সংঘর্ষ বাধে---এমনটাই দেশবাসী জেনেছে ৷ সেই সময় সর্বদলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এক বেসামাল কথা বলে বসেন ৷ তিনি বলেন--- ‘‘ওখানে (লাদাখ) আমাদের সীমান্ত পেরিয়ে কেউ ঢুকে আসেনি ৷ ওখানে আমাদের এলাকায় কেউ ঢুকেও বসে নেই ৷’’ প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় শুধু দেশের বিরোধী দল নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে বাধ্য ৷

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী লাদাখ সীমান্তের ঘটনায় বিচলিত হয়ে পড়েছেন ৷ হওয়টাই স্বাভাবিক ৷ কিন্তু একজন দেশ প্রধানের বিচলিত হলেও মুখে বেসামাল কথা শোভা পায় না ৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি এমনটা বলেই ফেলেন ৷ এর আগে ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে দল পরাজিত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন দেশে কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প নেই ৷ কিন্তু অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পের অস্তিত্বের কথা অসম বিধানসভা ও লোকসভায় অনেকবারই উঠেছে ৷ তবে সেটা ছিল নিতান্তই দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার ৷ কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক সীমানায় বিদেশি সেনার হামলায় যেখানে বিশজন সেনা শহীদ হয়ে গেল ও বহু সৈন্য আহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর মুখে এই কথা শুণে বিরোধী তো বটেই প্রাক্তন সেনা কর্তারাও প্রশ্ন তুলছেন--- চীনের সেনা ভারতীয় এলাকায় প্রবেশ না করলে কিভাবে এত সেনা হতাহত হলেন ৷ দশজন সেনা চীনের কাছে আটকই বা থাকে কেন?

মোদির কথার সঙ্গে তাঁরই মন্ত্রিসভার  বিদেশমন্ত্রকের  বিবৃতির বিস্তর ফারাক ৷ গত ১৫ই জুন রাতের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে সংঘর্ষের ঘটনা ভারতের দিকেই ঘটেছে, যার অর্থ চীনা সৈন্য ভারতীয় সীমান্তে প্রবেশ করেছিল ৷ বিদেশমন্ত্রক আরও জানায় চীন নিয়ন্ত্রণরেখায়  ভারতের দিকে কাঠামো তৈরীর চেষ্টা করায় ভারতীয় সেনা বাধা দিয়েছিল৷

প্রধানমন্ত্রীর কথায় নতুন করে প্রশ্ন উঠছে চীন যদি ভারতীয় সীমানায় না ঢোকে তাহলে চীন লাদাখ সীমান্তে ভারতের যে অংশ দখল করে বসে আছে সেটা কি চীনের অংশ বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন ৷ বিরোধীদের অভিযোগ লাদাখ সীমান্তে চীনের অবস্থান নিয়ে মোদি সরকার দেশকে অন্ধকারে রেখেছে ৷

আভ্যন্তরীণ অনেক বিষয়েই মোদি গণতন্ত্রের ধার ধারেন না ৷  বিরোধীদের মান্যতা দিতেও চাননা ৷ কিন্তু  আভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও  আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিতর্ক এক নয় ৷ তাছাড়া চীন স্বৈরাতান্ত্রিক একদলীয় শাসিত একটি দেশ ৷ সেখানে ভারতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক   শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ৷ তাই এখানে দেশের স্বার্থজড়িত যেকোনো ঘটনা বিরোধীদল ও দেশবাসী জানার অধিকার আছে ৷ কিন্তু  বিরোধীদের অভিযোগ সরকার প্রথম থেকেই লাদাখ সীমান্তের ঘটনায় বিরোধী দল গুলোকে অন্ধকারে রেখেছে ৷ তারপর সর্বদলীয় বৈঠকে মোদি এই ধরণের বেসামাল কথা বিরোধীদের আরও সমালোচনার সুযোগ করে দিয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রীর সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে ৷ আভ্যন্তরীণ রাজনীতির সঙ্গে তিনি যেন আন্তর্জাতিক সীমানার সংঘর্ষকে এক না করে ফেলেন । প্রধানমন্ত্রীর কথায় আরও বেশী বিচক্ষণতার ছাপ থাকা প্রয়োজন ৷ নইলে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও দেশ বিপন্ন হতে পারে ৷