প্রধানমন্ত্রীর দ্বিচারিতা

লেখক
এইচ.এন.মাহাত

সংবাদে প্রকাশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মাননীয় মোদিজী বাঙলা দখলের জন্য বাংলা ভাষা শিখছেন৷ তিনি বাঙালীর মন জয় করতে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখবেন৷ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলের বাংলা ভাষা ও বাঙলা প্রেমের অনেক নমুনা আমরা ইতোমধ্যেই পেয়েছি৷ এন.আর.সি, নাগরিকত্ত্ব আইন ও ধ্রুপদী ভাষার ক্ষেত্রে বাংলা প্রেমের মুখোশটা আগেই খুলে গেছে৷ এখন বোট আসতেই বাংলা প্রেমে গদগদ৷

এটা কেমন দ্বিচারিতা? যে দলটির মুখ্য উদ্দেশ্য হলো হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্থান প্রতিষ্ঠা করা, হঠাৎ করে তাঁর বাঙলা প্রীতি কেন? আসলে ভোট বড় বালাই৷ প্রথমতঃ হিন্দিভাষা সারা ভারতের কোনো নাগরিকের মাতৃভাষা নয়৷ পৃথিবীর মধ্যে ভারত এমন একটি দেশ যেখানে নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান, নানা প্রকারের খাদ্য, বিভিন্ন রকমের আচার ব্যবহার এতগুলো বৈচিত্রের পরেও বিবিধের মাঝে একটি মিলনের সূত্রে আমরা সকলেই ভারতীয় বা ভারতবাসী৷ এর মুখ্য কারণ হলো সকল ভাষার মিলনের ক্ষেত্র হলো সংসৃকত ভাষা৷ ভারতের প্রতিটি কেন্দ্রীয় সরকার বার বার সংসৃকতভাষাকে  অবহেলা ও অপমান করেছে৷ এই অবহেলা ১৫০/১৭৫ বছর আগে ব্রিটিশ আমল থেকেই শুরু হয়েছে৷ ব্রিটিশরা ভারতের এতগুলো ভাষার বৈচিত্র্যকে আত্মস্থ করতে না পেরে উর্দু ভাষাকে তোষণ করতে গিয়ে সংসৃকত ভাষার সংমিশ্রণে হিন্দি নামক একটি জগাখিচুড়ি ভুলে ভরা ভাষা তৈরী করলো৷ হিন্দি ভাষায় গ্রামারের, লিঙ্গের কোন বালাই (ভুলে ভরা) নেই৷ যেমন বড়ি বড়ি মোছ বালী পুলিশ খাঁরি হ্যাঁয়৷ পুলিশ পুংলিঙ্গ আর খাঁরি হ্যাঁয় স্ত্রীলিঙ্গ৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার ভারতের প্রাচীন ভাষাগুলোর কদর না করে বল পূর্বক রাজশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সকল নাগরিকের মুখে হিন্দি ভাষাকে চাপাতে বদ্ধপরিকর৷ পাশাপাশি দেখুন সাড়ে তিন হাজার  বছরের পুরনো  ভারতের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ভাষা বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি  না দিয়ে অন্য কয়েকটি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে  তাঁরা প্রমাণ করলেন বাংলা ভাষার জন্য অন্যভাষা ভাষীরা কতটা হীনমন্যতায় ভুগছেন৷ তাঁর পরিণতি হোলো তারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণার চোখে দেখে৷ আজ বাঙালীর মন জয় করতে ভোটের দরবারে নাটক শুরু করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজশক্তি কাজে লাগিয়ে ও বাংলা ভাষা শিখতে গিয়ে কী প্রমাণ করতে চলেছেন? প্রধানমন্ত্রী বাংলা শ্রেষ্ঠ

হিন্দু শব্দটা এসেছে সিন্ধু থেকে, আর সিন্ধুরা ভারতীয় নয়৷ যেমন বিজেপির নেতারা উত্তর পূর্ব ভারতের সকল রাজ্যের মানুষের মধ্যে একটি বিষয়ের মধ্যে একটি বিষের বীজ বপন করে চলেছেন---বাংলা  ভাষী মানেই বাংলাদেশী বহিরাগত৷ প্রকৃত অর্থে হিন্দুরাই বহিরাগত কারণ তাদের আদি বাসস্থান সিন্ধু প্রদেশে৷ ভারতের পরিকাঠামোগত ভাবে সনাতন বা ভাগবত ধর্মের পীঠস্থান যাহার ভিত্তি হলো তন্ত্র সাধনা বা অন্তর নিহিত ধর্মবোধের অনুশীলন৷ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মূলতঃ বৈদিক মতাবলম্বী বা ব্রাহ্মণ্যবাদকে ভারতে প্রতিষ্ঠা করেছে৷ এই ভাবধারায় মানব সমাজ আজ হাজারো ভাগে বিভক্ত হয়েছে৷ এর কারণ গুলো হলো--- মানুষের মন যত বহির্মুখী হবে ততই তাদের মধ্যে কুসংস্কার, বুজরুকিতে ভরে যাবে৷ নানা প্রকারের প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়ে হাজার দেব দেবীর পার্বণের মাধ্যমে মানুষের অন্তরমুখী মন বহির্মুখী হতে বাধ্য৷ এটার শেষ পরিণতি জাত পাত, উচু নিচু বর্ণের ভাবনা, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে লড়াই৷ তাঁরা রক্তাক্ত মানব সমাজকে এর বেশী কিছু দিয়ে যেতে পারে নি৷

অপরদিকে মোদীজীর বড় সেনাপতি থেকে চুনোপুটি নেতারা এক বাক্যে প্রচার করে আসছে বাঙালী যতই নোবেল পাক না কেন এন.আর.সি ও নাগরিকত্ত্ব আইনে বাঙালীর জাতিসত্তা ও বাঙালীকে ভারতের ভূমি থেকে বিতাড়িত করবেই করবে৷ একটি সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে কয়েক কোটি বিদেশী বাঙালী নাকি সারা ভারতে বসবাস করছে৷ এদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে কংগ্রেসের ভূলের প্রায়শ্চিত্ত করবেন! অসম রাজ্যে নাগরিকত্ত্বের নামে কয়েক লক্ষ বাঙালীকে চরম অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে৷

অসমে অনেক বাঙালীর শতবছরেরও নাগরিকত্বের প্রমান পত্র থাকা সত্ত্বেও আজ অনেকেই ডিটেনশন ক্যাম্পে নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে৷ অথচ ১৮৭২ সালের আগে অসম রাজ্যটির অস্থিত্বই ছিলো না৷ অসম অঞ্চলটি বাঙালীস্তান বা সুবা বাঙলার অধীনে ছিলো৷ অসমিয়ারা মঙ্গোলিয়ান দেশ থেকে এসেছে৷ বর্তমানে বিদেশী বহিরাগত হয়েও ভারতীয়৷ অথচ যে বাঙালীর রক্তের বিনিময়ে ভারতের স্বাধীনতা, তাঁরা নিজ মাতৃভূমিতেই বিদেশী বা বহিরাগত৷ অসমে বিজেপি সরকার ঘটনের আগে বাঙালীকে ভাঁওতা দিয়ে বলেছিলো সব বাঙালীকে  নাগরিকত্ত্ব দেবেন৷ অথচ মন্ত্রীসভা ঘটন করার পর বলছে বাঙালী মানেই বাংলাদেশী বিদেশী বহিরাগত৷ এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজশক্তিকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিম বাংলা দখল করার নেশায় মেতে উঠেছেন৷ সাবধান! বাঙালী সাবধান! কোন রাজনৈতিক দল বাঙালীর স্বার্থ ও অস্থিত্ব রক্ষা করতে পারবে না করবেও না৷ বাঙালীকে রক্ষা করতে হলে তাদের নিজ বাসভূমি বাঙালীস্তান গড়ার শপথ নিতে হবে৷